24/12/2022
অন্যের ভুল সংশোধনের চেষ্টায় আমাদের বড় ভুল
আমরা যারা দাওয়াত ও নাসীহার কাজ করি তাদের একটি বড় ও কমন সমস্যা হচ্ছে, কারো মধ্যে সামান্য কোনো ভুল দেখলেই খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাই। কেউ কেউ ধমকাধমকিও করি। টিটকারি তো হরহামেশা হয়। অথচ আমাদের উদ্দেশ্য ভালো। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো ঐ ভাই বা বোনটির সংশোধন। কিন্তু শুধু আমার নাসীহাহ পদ্ধতির ভুলের কারণে, কঠোর ভাষা ও কর্কশ আচরণের কারণে আমার মহৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেছেন, "আল্লাহর রহমতে আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো"। (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯) এ কথা তো আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলার মাধ্যমে আমাদেরকে আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন যে, আমরা যদি নাসীহাহ, দাওয়াতী কাজে কর্কশভাষী হই, কঠোর হৃদয়ের হই তাহলে আমাদের দাওয়াত ও নাসীহাহ কাজে লাগবে না। আমার অধীন কেউ হলে হয়তো ভয়ে আমার কথা মানবে কিন্তু অন্য কেউ কখনই মানবে না।
সালাফগণ যখন কারো কোনো ভুল দেখতে পেতেন তখন তাকে অনেক সুন্দর করে, আঘাত না করে শুধরে দিতেন। এমনকি অনেক সময় বুঝতেও দিতেন না যে তিনি তার ভুল সংশোধন করে দিচ্ছেন। এমনি একটি ঘটনার কথা আবু নুয়াঈম রহিমাহুল্লাহ তার "হিলইয়াতুল আউলিয়া" গ্রন্থের ৮ম খণ্ডের ১৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন,
"বিখ্যাত ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক রহিমাহুল্লাহ একদিন এক মজলিসে আলোচনা করছিলেন। সেখানে শ্রোতাদের মধ্যে একক লোক হাঁচি দিলো কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ বললো না। তখন ইবনুল মুবারাক ঐ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, বলুন তো, কেউ হাঁচি দিলে তার কী বলা উচিত? লোকটি উত্তর দিলো, "আলহামদুলিল্লাহ"। ইবনুল মুবারাক বলে উঠলেন, "ইয়ারহামুকাল্লাহ" (আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন)।"
আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক কিন্তু ঐ লোকটিকে ধমক দিলেন না, কর্কশভাষায় কিছু বললেন না, তিরস্কার করলেন না। তিনি সরাসরি তাকে এ কথাও বললেন না যে, আপনি হাঁচি দেয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ বলেন নি। বলুন। তিনি কৌশল করে ঐ লোকের মুখ থেকে আলহামদুলিল্লাহ বের করলেন। তারপর তিনি নিজে এর উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে তার জন্য দোয়া করে দিলেন। যা সুন্নাহ।
তিনি ঐ লোককে ভরা মজলিসে যদি হাচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ না বলার কারণ জিজ্ঞাসা করতেন বা তিরস্কার করতেন তাহলে লোকটি হয়তো অপমান বোধ করতো, কষ্ট পেতো। কিন্তু তিনি এমনভাবে বিষয়টি সামলে নিলেন যাতে "সাপও মরলো লাঠিও ভাঙ্গলো না"। এই ঘটনা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমরা কি শিখবো?