18/10/2025
যাক কাহিনীটা পরে, মনের ভেতর এক প্রকার শান্তি অনুভব করলাম👍👍
১৪ বছর সংসার করেও তারা একসাথে থাকতে পারলনা।
ভালোবাসা ছিল, কিন্তু বোঝাপড়া ছিল না।
প্রতিদিনই ঝগড়া, অভিমান, নীরবতা—শেষমেশ সেই ভালোবাসাই একদিন ক্লান্ত হয়ে পড়ল।
ছেলে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল,
“বাবা, মা কেন আর বাসায় আসে না?”
বাবা চুপ করে ছিল।
কী বলবে? বললেই তো বলতে হবে,
“তোমার মা আর আমি একসাথে থাকতে পারি না, কিন্তু এখনো একে অপরকে ভালোবাসি।”
এই কথাটা কোনো ছেলেকে বলা যায় না।
তারা দুজন আলাদা হয়ে গেল।
ছেলেটা রইল বাবার কাছে।
প্রথমদিকে মা ফোন করত, মাঝে মাঝে দেখা করত।
তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই যোগাযোগটাও ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল।
ছেলেটা তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
একসময় স্কুলে ভালো রেজাল্ট করত, শিক্ষকরা আদর করত।
কিন্তু মা চলে যাওয়ার পর ওর চোখের আলো নিভে গেল।
স্কুলের পরে আর মাঠে খেলতে যেত না,
বাড়ি ফিরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকত—
কখনো জানালার বাইরে তাকিয়ে, কখনো ফাঁকা খাতার পাতায় কিছু লিখে।
বাবা ভেবেছিল, সময়ই হয়তো সব ঠিক করে দেবে।
কিন্তু সে জানত না—সময় কখনো কখনো আরও বেশি ভেঙে দেয়।
বছর দুয়েক পর মা নতুন জীবনে চলে গেল,
বাবাও নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল।
দুজনেই ভেবেছিল, “জীবন তো চলতেই হবে।” বিবাহ করে স্বামী-স্ত্রী মিলে নতুন সংসার শুরু করেছিল। শুরতে সবকিছু ঠিকটা কি ছিল কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ছেলেটি—রাকিবুল—কেমন জানি একাকী হয়ে পড়ল। বাবা-মায়ের কলহে ভরা সেই সংসারে তার স্থান যেন ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছিল। একসময় সিদ্ধান্ত হলো, রাকিবুলকে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হবে—দাদির কাছে।
গ্রামে গিয়ে রাকিবুল ভালোই ছিল। পড়াশোনায় মেধাবী, ভদ্র, বিনয়ী—সবাই তাকে ভালোবাসত। দাদিই ছিল তার পৃথিবীর সব। কিন্তু একদিন হঠাৎ দাদি মারা গেলেন। তখনই সে প্রথম বুঝল—যার কেউ নেই, তার জন্য পৃথিবীটা কতটা কঠিন।
দাদির মৃত্যুর পর, গ্রামের সামান্য যে জমিটুকু ছিল, সেটাও চাচারা দখল করে নেয়। ঘর থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় রাকিবুলকে। কোনো অভিযোগ না করে, নিঃশব্দে সে গ্রাম ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়ায়।
আর ফিরিনি তার বাবা মায়ের কাছে তার নিজ বাড়িতে।
তারপর কেটে যায় দীর্ঘ নয় বছর।
এই নয় বছরে রাকিবুলের জীবন আমূল বদলে যায়। কঠোর পরিশ্রম আর মেধার জোরে সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে MBBS শেষ করে, এখন সে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জন ডাক্তার রাকিবুল ইসলাম।
অনেক বছর পর সে গ্রামে তার কলেজের একটা অনুষ্ঠানে আসে, দাদির বাড়ি গিয়ে দেখে, তার বাবা এক দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়ে ফেলেছে চার বছর আগে। আগের স্ত্রীও ছেড়ে চলে গেছে, বাবা এখন একা—অসহায়। রাকিবুলের চোখে পানি এসে যায়। কিন্তু মনের ভেতর কোথাও একটা শূন্যতা থেকে যায়—সময়ের নির্মমতা তাকে আর স্বস্তি দেয় না।
ঢাকায় ফিরে আসে রাকিবুল। এরপর কেটে দীর্ঘ এক বছর। একদিন হাসপাতালে জরুরি রোগী আসে—একজন নারী, যার মাথায় জটিল টিউমার ধরা পড়েছে। ডাক্তাররা জানালেন, অপারেশনটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, দেশে সম্ভব নয়। বিদেশে নিতে হবে, তবুও রোগী বাঁচবে কি না বলা যায় না।
কিন্তু সেই নারী জানালেন—তার স্বামী মারা গেছে বহু বছর আগে, দুই সন্তান নিয়ে সে কোথাও যেতে পারবে না। দীর্ঘ এক মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর, অবশেষে সে পৃথিবী ছেড়ে যায়।
ফাইল খুলে যখন রাকিবুল রোগীর কাগজপত্র দেখছিলেন, তখনই স্তব্ধ হয়ে গেলেন—
রোগীর নাম: রাবেয়া খাতুন।
হ্যাঁ, সেই নারী তারই মা।
যে মা একদিন তাকে অবহেলায় দূরে পাঠিয়েছিল,
আজ সেই মায়ের জীবন বাঁচানোর সব চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারল না ছেলে।
প্রকৃতি যেন চুপচাপ তার প্রতিশোধ নিয়ে নিল—
কারও প্রতি রাগ দেখিয়ে নয়,
শুধু সময়ের নীরব ন্যায়বিচারে।
বাস্তব জীবন থেকে নেয়া।(copy)
বিঃ দ্রঃ -লেখকের নামটা জানতে পারিনি। এই কাহিনী
যে পড়বে তার মনটা ভালো হয়ে যাবে 👍