30/07/2025
এই বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য এক সময় গর্বের বাতিঘর ছিল। রক্তে লেখা হয়েছিল এই ভূখণ্ডের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল কেবল একটি ভূখণ্ডের নয়, বরং একটি জাতির আত্মমর্যাদা, ভাষা, সংস্কৃতি, মানবিকতা ও ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ। কিন্তু আজ দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে এই ইতিহাস ও ঐতিহ্য এমন এক বিধ্বস্ত, অপ্রত্যাশিত ও অস্থির পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যা কল্পনাও করা যায় না।
আজকের বাস্তবতা যেন একটি প্রহসন। এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে সত্যকে আড়াল করে, ইতিহাসকে বিকৃত করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পদতলে করে নতুন ইতিহাস গড়ার চেষ্টা চলছে। একাত্তরের পর এতো লজ্জাজনক, বেদনাদায়ক ও বিভ্রান্তিকর পরিবেশ আর কখনো হয়নি।
বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনি শুধু একটি রাজনৈতিক দলের প্রতীক নন, তিনি এই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা/ জন্মদাতা। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে তিনি জড়িত। বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান মানে এ জাতিকেই অসম্মান করা। অথচ আজ তাঁকে নিয়ে রাজাকার ও তাদের আদর্শিক উত্তরসূরিরা যেভাবে নোংরামি করছে, তাতে শুধু রাজনীতি নয়, নৈতিকতা ও সভ্যতার চরম অবক্ষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আজ কেউ কেউ সাহস করে বলে—“নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে” পুরোনো সংবিধান বাতিল করতে হবে, ১৯৭১ এর ইতিহাস ভুলে যেতে হবে, এ যেন ইতিহাসের লাশের উপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যৎ নির্মাণের ব্যর্থ প্রয়াস। ১৯৭২ সালের সংবিধান আমাদের আত্মপরিচয়ের দলিল। সেটি কেবল আইনি কাঠামো নয়, বরং তা ছিল এক নৈতিক ও আদর্শিক রূপরেখা, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ও জাতীয়তাবাদের ভিত্তি রচিত হয়েছিল।
যাঁরা ইতিহাস বিকৃত করে, তারা জাতির শত্রু। তারা নতুন প্রজন্মকে ভুল ইতিহাস শেখায়, রাজাকারকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বানানোর অপপ্রয়াস চালায়, হত্যাকারীকে ‘বীর’ বানায়। আমরা কি এদের থামাবো না? আমরা কি আমাদের রক্তে কেনা স্বাধীনতার ইতিহাসকে আবার রক্ষা করবো না?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো একক দলের ব্যক্তিত্ব নন, তিনি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির রক্ত, অস্থিত্ব ও আত্মা। তাঁকে অসম্মান মানে বাংলাদেশকেই অসম্মান করা। রাজাকার ও তাঁর আদর্শিক উত্তরসূরীরা হেয় করার মাধ্যমে গোটা জাতির মুক্তির সংগ্রামকে অসম্মান করে। আমাদের বিবেক, আমাদের নৈতিকতা, আমাদের সাহস আজ যেন বন্দি কুচক্রী শক্তির খাঁচায়।
তাই বলি সাবধান! ইতিহাস বিকৃত করবেন না। ১৯৭২ এর সংবিধানকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করবেন না। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ধান্দা করবেন না।
এই বাংলাদেশ সবার, তবে রাজাকারের নয়। ভালো থাকুক বাংলাদেশ, ভালো থাকুক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালিরা। ভালো থাকুক সেই মহান আত্মারা, যারা জীবন দিয়ে আমাদের জন্য স্বাধীনতা এনেছিল।