23/08/2025
স্কলারশিপ বা ফান্ডিং পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হওয়ার কিছু নেই, পাওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ধরে রাখা ততটাই!
বিদেশে পড়াশোনার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো টাকা। পরিবারের সব সঞ্চয় খরচ করেও অনেক সময় টিউশন ফি, থাকা খাওয়ার খরচ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে বা অনেকের পক্ষে সম্ভব না। তাই তখন সবার মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে কীভাবে ফান্ডিং বা স্কলারশিপ ম্যানেজ করা যায়?
ধরুন,আপনি আমেরিকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করলেন । ফুল ফান্ডিং পেলেন, প্রথমেই টিউশন ফি
মওকুফ হলো, কিন্তু এরপরও তো বাসা ভাড়া, খাবার খরচ, যাতায়াত, হেলথ ইন্স্যুরেন্স সব মিলিয়ে মাসে অনেক টাকা লাগে। এখন যদি কোনো প্রফেসরের ল্যাব
এ কাজের সুযোগ পান, তিনি আপনাকে মাসে বেতন দিবেন। সেই টাকায় আপনি থাকার খরচ, খাবার খরচ সহ যাবতীয় এমনকি সামান্য সেভিংসও করতে পারবেন। মানে ফুল ফান্ডিং পেলে সব কিছু কভার হবে
খেত্রবিশেষে।
অন্যদিকে ধরুন, আপনি DAAD বা Chevening বা Erasmus এর মতো কোনো স্কলারশিপ পেলেন। এখানে কাজ করতে হবে না, শুধু পড়াশোনায় মনযোগ দিলেই হবে। টিউশন ফি থেকে শুরু করে ভাড়া, খাবার, হেলথ ইন্স্যুরেন্স সব কিছুর খরচ ওরাই বহন করবে। মাস শেষে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা সরাসরি আপনার একাউন্টে চলে আসবে। মনে হবে যেন পরিবারের কেউ নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছে। এটা হচ্ছে স্কলারশিপ।
বিদেশে পড়াশোনার জন্য ফান্ডিং বা স্কলারশিপ দুটোই বড় সহায়তা। তবে দুটির প্রকৃতি আলাদা। যেমন ধরুন, DAAD, Chevening, Erasmus এর মতো গভমেন্ট স্কলারশিপ। এগুলো মূলত সরকার বা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে দেওয়া হয় এবং আসলেখুব প্রতিযোগিতা মূলক। কারণ সিট থাকে সীমিত, কিন্তু আবেদনকারী হয় হাজার হাজার। সবকিছু মিলিয়ে সেরা প্রার্থীদের বেছে নেয়া হয়। তাই এসব স্কলারশিপ পাওয়া মোটেও সহজ নয়। একেবারে যে কঠিন আবার তাও না প্রত্যেক
বছর অনেক বাংলাদেশি তো পাচ্ছে।
অন্যদিকেআমেরিকার ইউনিভার্সিটি ফান্ডিং এর বিষয় টা একটু ভিন্ন। আমেরিকায় প্রচুর সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যা পুরো ইউরোপ জুরেও নেই এবং প্রায় প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেই প্রফেসররা তাদের গবেষণার জন্য আলাদা আলাদা গ্রান্ট পান। সেই গ্রান্ট দিয়ে তারা ল্যাবে ছাত্র নিয়োগ দেন এবং RA/TA/GA আকারে ফান্ডিং অফার করেন। এর ফলে সুযোগ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। তবে এখানে মূল শর্ত হলো প্রফেসরকে বোঝাতে হবে যে আপনি তার গবেষণার কাজে আসতে পারবেন। এজন্য একাডেমিক ব্যাক গ্রাউন্ড, গবেষণা অভিজ্ঞতা, আর যোগাযোগ দক্ষতা অনেক গুরুত্ব পায়।
তাই বাস্তবতা হলো, গভমেন্ট স্কলারশিপ পাওয়া অনেকটা লটারির মতো সিট কম, প্রতিযোগিতা প্রচণ্ড। আর আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ফান্ডিং অনেকটা মাছ ধরার মতো অসংখ্য প্রফেসর ও ইউনিভার্সিটি আছে, সঠিকভাবে চেষ্টা করলে পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
তবে ফান্ডিং হোক বা স্কলারশিপ দুটোর সাথেই কিছু শর্ত জড়িত থাকে। স্কলারশিপ সাধারণত CGPA বা ফলাফলের সাথে যুক্ত। এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করলে বা নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে নামলে স্কলারশিপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে প্রথমে ওয়ার্নিং দেওয়া হয়, পরে উন্নতি না হলে পুরো স্কলারশিপ বাতিল হয়। ফান্ডিং আবার প্রফেসরের ল্যাব বা ডিপার্টমেন্টের কাজের সাথে যুক্ত। এখানে কাজ ঠিকমতো না করলে বা বারবার ফেল করলে নিজের একাডেমিক রেজাল্ট সিজিপিএ নিদিষ্ট গ্রেড পযন্ত ধরে রাখতে না পারলে ফান্ডিং চলে যাবে। প্রফেসরেরও বিশ্বাস হারানোর ঝুঁকি থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো এমন কি কোন স্টুডেন্ট আছে যিনি কি না ফুল ফান্ড স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন কিন্তু ফান্ডিং বা স্কলারশিপ চলে গিয়েছে? আসলে এমন উদাহরণ কয়েকশত আছে। নাম মেনশন করে কিছু বলতে চাচ্ছিনা। যাইহোক হাজারো চেলেঞ্জের মধ্যে একাডেমিক রেজাল্ট ধরে রাখতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে এগুলো ধরে রাখা যায়? প্রথমত, বিদেশে গিয়েই শুরু থেকে সিরিয়াস হতে হবে। অনেকেই ভাবে আগে মানিয়ে নেই, উপভোগ করি পরে মন দেব এটাই বড় ভুল। স্কলারশিপ ফান্ডিং টিকিয়ে রাখতে হলে প্রথম সেমিস্টার থেকেই ভালো CGPA ধরে রাখা জরুরি। দিতীয়ত সময় ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে, বিশেষ করে Funding থাকলে পড়াশোনার পাশাপাশি ল্যাবের কাজ বা TA দায়িত্ব সামলাতে হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রফেসরের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা। কোনো সমস্যা হলে লুকিয়ে না রেখে খোলাখুলি বললে অনেক সময় তারাই সমাধান খুঁজে দেন। পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি একাডেমিক সাপোর্ট সেন্টার গুলো ব্যবহার করলে পড়াশোনায় সাহায্য পাওয়া যায়। আর সবশেষে, স্বাস্থ্য ভালো রাখা জরুরি। শরীর খারাপ থাকলে পড়াশোনা আর কাজের মধ্যে ব্যালেন্স রাখা মুশকিল হয়ে যায়।
Copy :Hasan Sajid