03/12/2023
মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজা সাহেবের বিরোধীদের কয়েকটি ‘গুরুতর’ অভিযোগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন
এক.
(তিনি ‘সুদখোর।’ কারণ তিনি ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশসহ কয়েকটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য। এবং তিনি পটিয়া মাদ্রাসার ভেতরে ইসলামি ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন।)
এখন প্রশ্ন হলো:
—ইসলামি ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের চেয়ারম্যান হলে বা ইসলামি ব্যাংকিংয়ে উপদেষ্টা হিসেবে জড়িত থাকলে তাকে ‘সুদখোর’ বলা যাবে কি? বাংলাদেশের কোনো দারুল ইফতা কি এমন ফতোয়া দিয়েছে?
—তিনি সুদখোর হলে দেওবন্দি আলিমদের মধ্যে যাঁরা এই সেক্টরে জড়িত ছিলেন বা আছেন—সবাই কি ‘সুদখোর’ ছিলেন বা আছেন? (মুফতি তাকি উসমানি, মুফতি আবদুর রহমান, মাওলানা আবদুল হালিম বুখারী, মুফতি শাসমুদ্দিন জিয়া—একই সূত্রে তারাও ত ‘সুদখোর’ হয়ে যাচ্ছেন, কী বলেন?)
—ইসলামি ব্যাংকের এটিএম বুথ স্থাপনে যদি সুদি লেনদেন হয়, তাহলে ইসলামি ব্যাংকে যে কয়েক দশক ধরে মাদ্রাসার একাউন্ট রয়েছে, এ থেকেই শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন দেওয়া হচ্ছে—তা কেন সুদি লেনদেন হচ্ছে না?
—ধরে নিলাম, ইসলামি ব্যাংক সুদি ব্যাংক, তবে কেন সেই ব্যাংকের একাউন্ট ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে বারবার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুদ খেতে কেন এত উতলা হচ্ছেন?
দুই.
(তার ঈমানে ‘সমস্যা’ রয়েছে বা কেউ কেউ এককাঠি সরেশ হয়ে বলেছে, তিনি ‘কাফির-মুশরিক-ইহুদি’। কারণ তিনি মক্কায় সৌদি সরকারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত একটি ইন্টারফেইথ সম্মলনে অংশ নিয়েছিলেন। যেখানে বিশ্বের অনেক নামকরা আলেম অংশগ্রহণ করেছেন। এবং সেই সম্মেলনে কী হয়েছিল, তা ওবাইদুল্লাহ সাহেব নিজেই আত-তাওহীদে কলাম লিখে স্পষ্ট করেছেন।)
এখন প্রশ্ন হলো—
—এই ঘটনা ২০০৮ সালের। যখন তিনি মাদ্রাসার তেমন কোনো বড় দায়িত্বেও ছিলেন না। তিনি স্রেফ মাদ্রাসার পরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে মক্কায় গিয়েছেন। এই ঘটনায় তাকে দায়ী করার আগে তৎকালীন মুহতামিম সাহেবকে কেন দায়ী করা হবে না?
—ইন্টারফেইথে বিশ্বাসীদের ঈমান নেই মর্মে যে ফতোয়া পটিয়া মাদ্রাসার দারুল ইফতা থেকে দেওয়া হয়েছে, তাতে ইন্টারফেইথের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সে হিসেবে কি ওবাইদুল্লাহ সাহেবকে ইন্টারফেইথে বিশ্বাসী বলা যায়?
—যদি তা-ই হয়, তবে জামিয়ার প্রধান মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ সাহেব হুজুর কেন এই ফতোয়া দেওয়ার পরও বছর দুয়েক হামজা সাহেবের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি এবং এখনও বলছেন না?
—দেওবন্দি অনেক আলিমই তো বিভিন্ন ইন্টারফেইথ কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন। ভারতের মাওলানা আরশাদ মাদানী, মাওলানা মাহমুদ মাদানীসহ আরও অনেকেই তো বিধর্মীদের সঙ্গেও অংশ নিয়েছেন। সেখানে হামজা সাহেব তো মুসলিম স্কলারদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন কেবল? তারাও কি কাফির-মুশরিক হয়ে গেছেন?
তিন.
(তিনি ‘ইহুদি-খ্রিষ্টানদের দালাল’। কারণ তিনি ‘ইসলামে মানুষের মৃতদেহের মর্যাদা’ বিষয়ে একটি ইংরেজি বই লিখেছেন এবং সেটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্চাসেবী সংগঠন রেডক্রস প্রকাশ করেছে। এবং সেটির সুবাধে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূতবাসের একটি প্রতিনিধিদল তার মাধ্যমে পটিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছিল।)
এখন প্রশ্ন হলো:
— ‘ইসলামে মানুষের মৃতদেহের মর্যাদা’— এই বইটি পশ্চিমাদের কাছে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক দিক তুলে ধরে লেখা হয়েছে। এই বইয়ের কোন অংশটি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলবেন কি?
—রেডক্রস পুরো বিশ্বের সব দেশেই স্বীকৃত একটি সংগঠন। মুসলিম বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেয়, যেখানে রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্টের কার্যক্রম নেই। তো এই সংস্থা থেকে বই প্রকাশে কীভাবে তিনি ‘দালাল’ হলেন, বুঝিয়ে বলবেন?
—আমেরিকা যাওয়া খারাপ বুঝলাম, কিন্তু সেখানে কী কী ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র করে এসেছেন, তার কি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে?
—দেওবন্দসহ অসংখ্য বড় বড় কওমি মাদ্রাসায় বিদেশী কূটনীতিকরা বিভিন্ন সময় এসেছেন, তখনও কি তারা দালাল হয়ে গেছেন?
—২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাটহাজারি মাদ্রাসায় হেফাজত নেতাদের সঙ্গে মার্কিন দুই কূটনীতিক বৈঠক করেছিলেন এবং ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে লালখান বাজার মাদ্রাসায় অষ্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার এসে সরাসরি বৈঠক করেছেন। তো তাদেরও কি ইহুদি-খৃষ্টানদের ‘দালাল’ বলবেন?
—মরহুম আবদুল হালীম বুখারী সাহেব হুজুর যে হাজি সাহেব হুজুরের আমলের জনৈক কূটনীতিক ডগলাসের পটিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন নিয়ে গল্প বলতেন, তা কি মিথ্যা? তারাও কি নাউজুবিল্লাহ ‘দালাল’ ছিলেন?
— মনে রাখবেন, এখানে আমি উচিত-অনুচিতের প্রশ্ন করিনি। বরং বলেছি, পরিস্থিতির কারণে বা বিশেষ হেকমতের দৃষ্টিকোণ থেকে এমন কাজ কি দেওবন্দি কোনো মাদ্রাসায় আগে কখনো হয়নি? তাহলে হামজা সাহেবকে কেন একা দোষারোপ করবেন?
চার.
(তিনি ‘সরকারের দালাল এবং র-এর এজেন্ট’। কারণ তিনি সাংসদ আবু রেজা নদভীর ‘পরামর্শে’ মাদ্রাসা চালিয়েছেন। ‘সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে’ মোদিবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘বহিষ্কার’ করেছেন এবং ইফতা ‘বন্ধ’ করেছেন। তার সঙ্গে ভারতীয় দূতবাসের ‘যোগাযোগ’ রয়েছে।)
এখন প্রশ্ন হলো:
—মোদিবিরোধী আন্দোলন, বহিষ্কার ও ইফতা বন্ধের ঘটনা ২০২১ সালের। তখন তিনি নায়েবে মুহতামিম ছিলেন। মুহতামিম ছিলেন আল্লামা বুখারী সাহেব হুজুর। তার নির্দেশ ছাড়া বা তার বিরুদ্ধে গিয়ে বা মাদ্রাসার অন্যান্য উস্তাদদের বিরুদ্ধে গিয়ে এককভাবে কি তিনি ছাত্র বহিষ্কার করেছিলেন বা অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলেন? নাকি মুহতামিমসহ সবার সম্মতি নিয়ে বহিষ্কার করা হয়েছিল?
—তিনি যদি একক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তবে তখন মুহতামিম ও অন্যান্য উস্তাদরা কোথায় ছিলেন? আর যদি তা না হয়ে থাকে, তবে তিনি একা কেন এই ঘটনায় দায়ী হবেন?
—বুখারী সাহেব হুজুরের আমলেও তো প্রশাসনকে তালিকা দেওয়ার অভিযোগ ছিল। ১৩/১৪ সালে হেফাজত আন্দোলনে মাদ্রাসার যেসব ছাত্র সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল, তাদের তালিকাও পুলিশকে দেওয়ার কথা আমরা শুনেছি এবং ভুক্তভুগীদের কষ্টও নিজ চোখে দেখেছি। তবে তিনিও কি তাহলে সরকারের ‘দালাল’ ছিলেন নাউজুবিল্লাহ।
—হেফাজতের সঙ্গে পটিয়া, দারুল মাআরিফ ও বসুন্ধরার বিরোধ হয়েছিল মূলত ২০১০ সালে। একদম প্রতিষ্ঠার সময়ে। কীভাবে মুরব্বিদের ‘আবাসা গ্রুপ’ ও ‘সরকারের দালাল’ বলে অপদস্থ করা হয়েছিল— সেই গল্প কি আপনি জানেন? কারা করেছিল জানেন? কেন পটিয়াকেন্দ্রীক মুরব্বিরা বারবার হেফাজতের আন্দোলনে অনীহা দেখিয়েছেন জানেন? এসব ঐতিহাসিক বাস্তবতা না জেনে হেফাজতবিরোধিতা মানে ইসলামবিরোধিতা বা সরকারের দালালি বলছেন না তো?
—হাটহাজারী বা হেফাজতের সঙ্গে বিরোধ পটিয়ার মুরব্বিরা কখনোই চাননি। তবে উনারারই সব সময় পটিয়ার মুরব্বিদের অবমূল্যায়ন করেছেন। ১০ সাল থেকে ১৯ সাল পর্যন্ত পটিয়া, বসুন্ধরা ও দারুল মাআরিফের কাউকে কি হেফাজতের কমিটিতে রাখা হয়েছে? এরপরের কমিটিগুলোতে সহসভাপতি, সদস্য ও সহ-সেক্রেটারির মতো নামস্বর্বস্ব পদ ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে? দেখাতে পারবেন?
—আবু রেজা নদভী এমপি ও এস আলম মাসুদ সাহেবের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যদি নিন্দনীয় হয়, তবে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, সিডিএর এমএ সালাম ও শামসুল হক চৌধুরী এমপির সহায়তা নেওয়া এবং তাদের সঙ্গে বৈঠক করা কেন নিন্দনীয় নয়?
পাঁচ.
(তিনি ‘জালিম ও পাপী’। কারণ তিনি উস্তাদদের ‘জুলুম’ করেছেন। তাদের সঙ্গে ‘বেয়াদবি’ করেছেন। উস্তাদদের ‘ন্যায্য’ অধিকার বাতিল করেছেন। ছাত্রদের প্রতি ‘জুলুম-সেতম’ করেছেন। বানিয়ে জামিয়ার ব্যাপারে ‘বেয়াদবিমূলক’ কথা বলেছেন। বানিয়ে জামিয়ার পরিবারকে ‘অবমূল্যায়ন’ করেছেন। অসংখ্য ‘মিথ্যাচার’ করেছেন। কারও সঙ্গে ‘পরামর্শ’ করেননি। সময় মতো শূরা করেননি। জামিয়া রোড ও আন্দরকিল্লার ব্যবসায়ীদের ‘অসন্তুষ্ট’ করেছেন।)
এখন প্রশ্ন হলো:
—তিনি যদি উস্তাদদের সঙ্গে জুলুম করে থাকেন, তবে তিনি কি ক্ষমাও চাননি? কিন্তু তাকে সুযোগ না দিয়ে ছাত্রদের মাধ্যমে বিশৃংখলা করিয়ে কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয়েছে?
—তিনি ক্ষমার অযোগ্য হলে কি ছাত্রদের মাধ্যমে বিশৃংখলা করিয়ে তাকে অন্যায়ভাবে জোর করে বের করে দেওয়া জায়েজ?
—তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তিনি সময় মতো শূরা করেন নি। তবে এটি তো তখন বলতে পারতেন, যখন তার দেওয়া তারিখের পর বিশৃংখলা হতো। এখন তো শূরার ৫ দিন আগেই আপনারা জোর করে তাকে বের করে দিয়েছেন? কোন মুখে আপনার শূরা করেনি বলে অভিযোগ করেন?
—উস্তাদদের ২৫ শতাংশ বেতন বাড়িয়ে খাবার কমানো কি জুলুম? ছাত্রদের জন্য ক্যান্টিন বানিয়ে সিলিন্ডার ব্যবহার নিষেধ করা, বাটন মোবাইল অনুমতি দিয়ে এন্ড্রয়েড নিষেধ করা কি জুলুম?
—প্রশ্নপত্র কঠিন করা, ছাত্রদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা এবং পড়াশোনায় কড়াকড়ি করা কি জুলুম? শুবাজাতে যোগ্য শিক্ষক রেখে সেগুলোর গতি বাড়ানো এবং উন্নতি করা কি অন্যায়?
—অন্যায়ভাবে জামিয়ার সম্পদ জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং মাদ্রাসার উন্নয়নের স্বার্থে দোকানপাঠের ভাড়া বাড়ানো কি অন্যায়? যেখানে সেসব দোকানের আশেপাশের দোকানগুলো তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে?
—বানিয়ে জামিয়া ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেছেন বলা হচ্ছে, তবে এতোদিনেও কেন তার সেসব কথার একটিও কলরেকর্ড ফাঁস করতে পারেননি? বা কোনো উপযুক্ত প্রমাণ হাজির করতে পারেন নি কেন?
—বরং আমরা তো তাকে বক্তৃতায় সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেখেছি। তাকে জুলুম করে বের করে দেওয়ার মাস পেরিয়ে গেলেও এই বিষয়ে একটু টু শব্দও তাকে করতে দেখিনি আমরা। কাউকে দোষারোপ করেননি। কারও বিরুদ্ধে বিষোদগার করেননি। কারও বিরুদ্ধে একটি বক্তৃতাও ত দিতে দেখলাম না?
—তিনি যে ক্ষমতার জন্য ‘লালায়িত’ বলছেন, এই এক মাসে তার কোনো কাজেই তো প্রমাণ করতে পারেননি। তিনি ত প্রশাসনের কাছে বৈধ মুহতামিম। তবুও তো তিনি প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করেননি। আপনাদের কথা মতে, তিনি সরকারের দালাল হয়ে থাকলে, কেন তিনি সরকারের সহযোগিতায় জোর করে দখল করেননি। বরং এখনো কেন আপসের কথাই বলছেন?
—বিপরীতে আপনারা কী করেছেন? পান থেকে চুন খসলেই বিবৃতি? এটা ঠিক, ওটা গুজব! ছাত্র ও সাহেবজাদাদের ইশারায় কথায় কথায় বিবৃতি দেওয়ায় কি জামিয়ার মানসম্মান বেড়েছে? ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস ও অপরাধ করে যাওয়া ফেক আইডিগুলোকে তিরষ্কার করবেন দূরে থাক, উল্টো বগলদাবা করে ঘুরে বেড়ানোয় কি জামিয়ার শান বেড়েছে?
—পরীক্ষার প্রশ্ন সহজ করার ঘোষণা দেওয়া, মোবাইল ব্যবহারে অঘোষিত অনুমতি দেওয়া, ছাত্রদেরকে দিয়ে ছাত্রদের টর্চার করার সুযোগ দেওয়ায় কি ‘জুলুম-সেতম’ থেকে মুক্তি মিলেছে?
—উস্তাদদেরকে ছাত্রদের কথায় উটবস করানো, তাদের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করা, উস্তাদকের ছাপ দেওয়া, ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে কসম করে পোস্ট দেওয়ানো—এগুলো কি ইনসাফ এবং জামিয়ার সুষ্ঠু পরিবেশের নমুনা?
ছয়.
(তিনি ‘অবৈধভাবে মুহতামিম হয়েছেন’। কারণ তিনি মুহতামিম হওয়ার আগে বানিয়ে জামিয়ার পরিবারের সমর্থন নিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে জওক সাহেব হুজুর, এমপি শামসুকে মেনেজ করেছেন। ছাত্রদের অনুপস্থিতিতে শূরা করেছেন। এমপির সহায়তায় হাফেজ আহমদুল্লাহ সাহেব হুজুরের মাধ্যমে শূরার অন্যতম সদস্য আরশাদ রাহমানীর অনুপস্থিতিতে তাড়াতাড়ি শূরা করেছেন।)
এখন প্রশ্ন হলো:
—বানিয়ে জামিয়ার পরিবার যদি এখলাসের সঙ্গে তাকে সমর্থন দিয়ে থাকেন, তাকে বিভিন্ন বড় বড় ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে থাকেন এবং মাদ্রাসার কল্যাণকামনা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে এখন কেন তিনি খারাপ হয়ে গেলেন? স্বার্থের দ্বন্দ্ব না তো?
—দাবি মতে জওক সাহেব ও এমপি শাসমু সাহেবকে মেনেজ করে যদি মুহতামিম বানানো হয়, তবে শূরায় কী হয়েছিল? শূরার সদস্যদের অধিকাংশ কি তাকে মুহতামিম বানানোর বিরুদ্ধে ছিলেন? যদি তা-ই হয়, তবে তাদের তালিকা দেন? আর যদি নাই হয়, তবে সেই শূরাকে অবৈধ বলছেন কেন?
—হাফেজ আহমদুল্লাহ সাহেব হুজুর তার মুহতামিমিকে পাকাপোক্ত করতে সবই করলেন। বানিয়ে জামিয়ার পরিবারও সবই করলো। এখন কেন তাহলে অবৈধতার কথা আসছে? এক বছর ধরে সেই দাবি কই ছিল? আর তিনি অবৈধ হয়ে থাকলে আপনারা তাকে সাবেক মুহতামিমই বা কেন বলছেন, তিনি তো তাহলে মুহতামিমই ছিলেন না?
—শূরার একজন বা দুইজন সদস্য অনুপস্থিত থাকলে কোন আইনে তা অবৈধ হয় জানাবেন? আর কোন আইনে মাদ্রাসা খোলা রেখে ছাত্রদের মর্জি মতো মুহতামিম বানাতে হবে—দেখাবেন?
—ধরে নিলাম, অধিকাংশ শূরা সদস্য, জামিয়ার মুরব্বি উস্তাদ ও স্থানীয় এমপি উপস্থিত থাকার পরও তার মুহতামিমি অবৈধ, তবে আপনারা যে ছাত্রদের পাহারায় শূরা প্রধান, অধিকাংশ শূরা সদস্যকে না রেখে বাইরের কয়েকজনকে এনে শূরা করলেন, তা কীভাবে বৈধ হয় জানাবেন?
—এমপির সহায়তায় যদি তখন মুহতামিম হওয়া অবৈধ হয়, তবে আপনারা যে এক মাস যাবৎ এমপির সমর্থন ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ করছেন, তা কেন বৈধ হবে?
সাত.
(তিনি ‘বিতর্কিত। তাই তিনি সরে দাড়াচ্ছেন না কেন’। বা কেউ কেউ বলেছে, ‘একবার বের করে দেওয়ার পর ঢুকতে চাওয়া আকাবিরদের তরিকা নয়’। কারণ তিনি ‘বিতর্কিত’ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। এবং আমাদের আকাবিরদের মধ্যে যাদের এভাবে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে, তারা আর আসতে চেষ্টা করেননি। ওয়াকফ দেওবন্দ, বসুন্ধরা, রাহমানিয়া, দারুল মাআরিফ করেছেন।)
এখন প্রশ্ন হলো—
—তিনি যে বিতর্কিত—তার একটি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ কি এখনো পেশ করতে পেরেছেন? তার কোনো দোষ কি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দেখাতে পেরেছেন? তাহলে তাকে কেন বিতর্কিত বলবেন? তার ওপরের অভিযোগগুলোর কারণে যদি বলেন, তবে আমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন?
—তিনি কি কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত? কোনো নৈতিক স্খলনের সঙ্গে জড়িত? কোনো এমন অযোগ্যতা পেয়েছেন, যার কারণে পিটিয়ে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়া যায়? থাকলে নিরপেক্ষভাবে প্রমাণ দিন?
—তিনি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেননি; বরং তাকে জোর করা হয়েছে। আপনাকে জোর করে যদি আপনার ঘর থেকে বের করে দেয়, আপনি মানবেন? কোন যুক্তিতে তার সম্মতি ছাড়া কথিত অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করা হয়েছিল কথিত শূরায়?
—তিনি যদি বিতর্কিত হন, তবে বর্তমান মজলিসে এদারি যাঁদের বলছেন, তাঁরাও কি কম বিকর্তিত হয়েছেন? তারা কি হুমকি/ধমকির মুখে সাক্ষর করেননি? ভিডিও দেখেননি? তারা কি অন্যায় অব্যহতিপত্রে সাক্ষর করেননি? তারা কি ছাত্রদের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি? তারা কি একটি টু শব্দ করেছেন এত বড় অন্যায়ের বিরুদ্ধে? তাহলে তাদেরও তো সরে যাওয়া দরকার, নাকি?
—কোন মুখে বলেন যে—তিনি অন্য একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করছেন না কেন? অপরদিকে সন্ত্রাসীদের কাজকে ঠিক বলছেন? লজ্জা করে না? তিনি মাদ্রাসা অনেক প্রতিষ্ঠা করেছেন ইতিমধ্যে। কিন্তু কোন কারণে তার ন্যায্য দাবি ছেড়ে দেবেন—যখন তার পক্ষে একটি নিয়মতান্ত্রিক শূরা রয়েছে, শূরা প্রধান রয়েছেন, অধিকাংশ শূরা সদস্য রয়েছেন, প্রশাসনের কাছেও তিনিই বৈধ মুহতামিম এবং ইত্তিহাদুল মাদারিসের প্রায় সব মাদ্রাসা, মাদ্রাসার ফাজেলরা, মাদ্রাসার অনেক উস্তাদ-ছাত্রও তাকেই সমর্থন করছেন?
—আচ্ছা, যাদের বড় বড় মাদ্রাসা থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে, তারা যে ফিরে আসেননি—এটি কি আকাবিরদের তরিকা? এটি কি দেওবন্দি আদর্শ? এ কেমন আদর্শ—অন্যায়ের প্রতিবাদ করাও কি দেওবন্দি আদর্শ পরিপন্থী?
—যাদের বের করে দেওয়া হয়েছে, তাদের কি এভাবে হেয় করে মারধর করে বের করা হয়েছে? তাদের পরিবারকে কি আক্রমণের বস্তু বানানো হয়েছিল? তাদের মান-সম্মান নিয়ে কি ছিনিমিনি খেলা হয়েছিল? তাদেরকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছিল? কীভাবে আপনি এমন অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গাচ্ছেন?
—মাদ্রাসার একজন পরিচালককে ছাত্রদের কোলে তুলে হেনস্থা করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়া দুনিয়ার কোন আইনে বৈধ—জানাবেন?
আট.
(তিনি ইত্তেহাদকে পটিয়া থেকে বের করে পটিয়ার মরকজিয়ত ‘নষ্ট’ করছেন। কারণ তিনি ইত্তিহাদের গাড়ি ও কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছেন। এবং পটিয়া বাদ দিয়ে মোজাহেরুল উলুম মাদ্রাসায় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।)
এখন প্রশ্ন হলো:
—এক মাস ধরে কারা পটিয়া মাদ্রাসা জিম্মি করে রেখেছে? ছাত্ররা কীভাবে মাদ্রাসা জিম্মি করে রাখে? আপনারা কেন ইত্তিহাদের মাদ্রাসাগুলোর আস্থা অর্জন করতে পারলেন না? তাদেরকে আপনাদের কাছে টানতে পারলেন না কেন?
—আজকের বৈঠকে যে তিনশতাধিক মাদ্রাসার দায়িত্বশীল উপস্থিত হলেন, তারা কি ন্যায়-অন্যায় বোঝেন না? তারা কেন আপনাদের সমর্থন করছেন না? তারা কেন আপনাদের কাছে আসছেন না? কেন আপনাদের নিরাপদ মনে করছেন না?
—এক মাস যাবৎ সব কাগজপত্র, গাড়ি—সবই তো মাদ্রাসায় ছিল। আপনারা যদি ইত্তিহাদের সর্বেসর্বা হয়ে থাকেন, তবে কেন তখন তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণের নেননি? কেন আপনাদের পাঠানো চিঠিগুলোর কোনো জবাব মাদ্রাসাগুলো দিচ্ছে না?
—ইত্তিহাদের সভাপতি ও সম্পাদক যদি নির্দেশ দেন, তবে গাড়ি ও ফাইলপত্র নিতে অসুবিধা কোথায়? আপনারা তো বিকল্প কোনো সভাপতি-সম্পাদকও বানাননি? এখন সহ-সভাপতির সাইন দিয়ে বিবৃতি দিলে কি তা সভাপতি ও সম্পাদকের বিবৃতির সামনে টিকে?
—ইত্তিহাদ যদি পটিয়ায় রাখতে চাইতেন, তবে ইত্তিহাদভুক্ত মাদ্রাসাগুলো যখন ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় প্রতিবাদ করেছে, তখন তাদের প্রস্তাবকে কেন গুরুত্ব দেন নি? কেন তাদের বিভিন্নভাবে হেনস্থা ও ট্রল করা হয়েছে? জবাব আছে?
—একটি অবরুদ্ধ মাদ্রাসায় কীভাবে একটি বোর্ডের কার্যালয়ের কাজ পরিচালনা করা হবে বলেন? যেখানে সভাপতি ও সম্পাদককে ঢুকতে দেবে দূরের কথা, তাদের আশেপাশের মানুষকেও হেনস্থা করে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে?
—এবার আপনারাই বলুন, কারা ইত্তিহাদকে পটিয়া থেকে বের করার আয়োজন সম্পন্ন করেছে? কোনো আলোচনায় কারা রাজি হয়নি? কারা সমঝোতার পথ বারবার নাকচ করেছে?
—ইত্তিহাদের আজকের বৈঠকেও পটিয়ার বর্তমান ‘পরিচালনা কমিটি’র ব্যাপারে একটি টু শব্দ করেন নি ওবায়দুল্লাহ সাহেব। কোনো অভিযোগ দেননি। বরং সমঝোতার কথা বলেছেন, ভুল বোঝাবুঝির অবসানের কথা বলেছেন, সুন্দর একটি সমাধানের কথা বলেছেন। এত নোংরা ভাষায় তাকে আঘাত করা হয়েছে, হচ্ছে প্রতিনিয়ত, কিন্তু তিনি একটি প্রতিবাদ পর্যন্ত করলেন না।
এখন বলেন, তার বিরুদ্ধে চালানো আপনাদের প্রোপাগাণ্ডায় আমরা আর কতদিন বিভ্রান্ত হবো? নাকি আপনারা এবার একটু আল্লাহর ওয়াস্তে থামবেন? মনে হচ্ছে, মাওলানা ওবাইদুল্লাহ সাহেবের শরাফত, সবর ও হেকমতের কাছে ইতিমধ্যেই আপনাদের নৈতিক পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে।
আল্লাহ আমাদের ন্যায়-অন্যায় বোঝার তৌফিক দিন। হিংসুক, মিথ্যুক, ষড়যন্ত্রকারী, সন্ত্রাসী, অপপ্রচারকারীদের হাত থেকে আমাদের সব উস্তাদকে হেফাজত করুন। পটিয়া মাদ্রাসাকে সব বিতর্ক থেকে মুক্ত করুন এবং অনিষ্টকারীদের হাত থেকে হেফাজত করুন।
Ezazul Hoque