21/08/2025
গ্রামের এক খালাম্মা গল্প করতে করতে বললেন_❝আমার দাদা আমাকে বলেছেনঃ- ❝নাতনি শুনো, আজ কিছু কথা বলবো, যে কথা গুলো তুমি সারাজীবন মনে রাখবে, এবং মেনে চলবে। তুমি যখন সন্তানের মা হবে, নানী দাদী হবে তখন তুমি তাদেরও শেখাবে।
যেমন,
১) সকাল থেকে সারাদিন যদি কোনো ভিক্ষুক আসে, ভিক্ষা দিবে। তাদেরকে কখনো ভেঙচি কেটে অবজ্ঞা করে তাড়িয়ে দিবে না। এতে তোমার উপর অভিশাপ পড়বে, বিপদ আসবে।
কিন্তু যদি কোনো ভিক্ষুক আসরের পর মাগরিবের পূর্বে (অর্থাৎ সূর্যাস্তের পূর্বে) এসে ভিক্ষা চায়, তাকে তুমি ভিক্ষা দিবে না। আগামীকাল আসতে বলবে।
২) যদি কেউ মাগরিবের পর এসে বাড়ির মসলা (মরিচ, হলুদ, লবন, ইত্যাদি) চায়, দিবে না। এতে তুমি বিপদে পাড়বে।❞
আমি আজো পর্যন্ত দাদার এই কথা গুলো মনে রেখেছি।❞
তারপর আমি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে ভাবলামঃ কিছু কথা তো ঠিক আছে, তবে কিছু কথায় সন্দেহজনক। কিন্তু এই সন্দেহজনক কথা গুলোকে যদি সন্দেহ-মুক্ত করে দেওয়া না হয়, অর্থাৎ যদি কথা গুলো আজীবন সন্দেহ-যুক্ত থেকে যায়, আর এভাবে যদি পর পর প্রজন্ম চলতে থাকে, তবে এই কথা গুলোকে অতিরিক্ত আঁকড়ে ধরে মেনে চলতে গিয়ে এক সময় হয়তো বড় বিদআতে পরিণত হবে।
তাই আরো কিছুক্ষণ ভেবে নিলাম; ঐ কথা গুলো মুরুব্বী তার নাতনিকে কেনই বা বলেছিলেন? নিশ্চয়ই এর কোনো কারণ আছে। বোধহয় মুরুব্বীর জীবনে ঐ বিষয় গুলোর ফলাফল পরবর্তীতে ভালো কিংবা খারাপ রুপ ধারণ করেছিলো।
বোধহয় তিনি যে পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন, তিনি আর চান না তার প্রজন্মের কেউ একই পরিস্থিতির স্বীকার হোক, কিংবা পতিত হোক।
তারপর সব বিষয় গুলো থেকে যা উপলব্ধি করলাম, এবার তা কৌশলে খালাম্মাকে বলতে লাগলাম_❝আপনার দাদা কেনো এই কথা গুলো বলেছেন জানেন?
কারণ হলোঃ- যেমন ধরুন, আপনি কাউকে মাগরিবের পর বাড়ির কোনো জিনিস হাওলাদ দিয়েছেন। হঠাৎ যদি মাগরিবের পর কোনো মেহমান এসে যায়, তখন আপনি রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো হাতের নাগালে পাবেন না, শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে। বাজার থেকে আনতে চাইলেও আনতে পারবেন না, হয়তো বা ততক্ষণে বাজার দোকান বন্ধ হয়ে যাবে, রাতের বিষয় বলে কথা।
বোধহয় এই জন্যই আপনার দাদা নিষেধ করেছেন, যেনো কখনো আপনি এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি না পড়ে যান।❞
যেমন, এই যুগে এসেও আমি নিজেই এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।
আমার কথা শুনে ঐ খালাম্মা এবার অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ❝হুম, হুম, ঠিক বলেছো তুমি❞ উত্তর দিলেন।
তারপর ১ নাম্বার বিষয় বুঝিয়ে বলার সুযোগ পেলেও ২ নাম্বার বিষয়ে বলার সুযোগ পাইনি। ততক্ষণে খালাম্মা চলে গিয়েছিলো, তখন আমারো কিছু কাজের তাড়া ছিলো বলে।
তবে দুই নাম্বার বিষয় যা বুঝতে পারলাম তা হলোঃ
যেমন ধরুন, তখনকার ৯০ দশকের যুগে চারদিকে চোর ডাকাত ওতপেতে বসে থাকতো। শুনেছি তখনকার ডাকাত ও চোরেরা কখনো কখনো ভিক্ষুক অসহায়ের ভেস ধরে আসতো আসরের পরে। কেননা, সূর্যাস্ত হওয়ার পূর্বে পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে যায়। চারদিকে জনমানুষ শূন্য হয়ে যায়। রাস্তাঘাট সব প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।
তবে তখনকার সময় ছিলো আরো ভয়ানক মূহুর্ত। এমনো শুনেছি দিনদুপুরে ডাকাত ও চোর হামলা দিতো!
কিংবা কোনো খারাপ মতলবের অসৎ-চরিত্র ব্যক্তি ভিক্ষুকের ভেস ধরে আসতো, বাড়িতে ঢুকতো, নারীদের ইজ্জৎ লুটে পালিয়ে যেতো!
আর এই জন্যই বোধহয় গ্রামের ঐ খালাম্মার দাদা নিজের নাতনিকে সতর্ক করেছিলেন। আজো তিনি দাদার কথা গুলো স্মরণ রেখেছেন, নিজের নাতী নাতনিদেরকেও তা শিখিয়েছেন।
বলাবাহুল্য, ঐ খালাম্মার বাবার বাড়ি ছিলো কুমিল্লা, আর শশুর বাড়ি হলো চট্রগ্রাম। ওনার দাদা নাকি পিতা, ওনাকে চট্রগ্রামের ছেলের সাথে বিবাহ দিয়েছেন প্রায় ৬০ বছর পূর্বে!
এই গল্প এটাই শিক্ষা দেয় যে_ মুরুব্বিরা জীবনে বহু অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, আর তা আমাদের শিখিয়ে যেতে চান গল্পে, কথায় কিংবা সতর্কতায়। তাঁরা চান আমরাও সমস্ত বিপদ আপদ, দুঃখ দুর্দশা, হাসি আনন্দ, জয় পরাজয় সকল পরিস্থিতিতে যেনো নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি। আর দক্ষতার সাথে যেনো বেঁচে থাকতে পারি এই দুনিয়ার বুকে।
কিন্তু সমস্যা হলো মুরুব্বিদের কোনো পরামর্শকে এমন পর্যায় না নেওয়া উচিৎ, যা বিদআত বলে গণ্য হয়!
তবে এটিও মনে রাখতে হবে যে_
_❝হঠাৎ কোনো ভিক্ষার্থী বা অসহায়ের আগমন,
চোর, ডাকাত বা সন্ত্রাসের ইঙ্গিত বহন করে না।
তবে যদি প্রাণঘাতী শত্রু কাছে থাকে,
চোর, ডাকাত বা সন্ত্রাসের প্রয়োজন হয় না!❞
Writer:- A.N.A.Sumaiya.