17/03/2024
পেটে কাঁচি রেখে সেলাই করে দিলেন ডাক্তার
শাহেদ ফেরদৌস হিরু, কক্সবাজার গর্ভজনিত প্রসর বেদনা নিয়ে ২০২২ সালের ২২ আগস্ট ডা. খাইরুন্নেছা মুন্নীর অধীনে কক্সবাজার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন মাফিয়া বেগম নামের এক নারী। ওইদিনই সিজার অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারী করান চিকিৎসক। তবে অপারেশন শেষে পেটের মধ্যে একটি কাঁচি রেখেই সেলাই করে দেন ওই নারী চিকিৎসক। ভূক্তভোগীর অভিযোগ, অপারেশনের পর থেকে প্রচন্ড পেটে ব্যাথা বেশ কয়েকবার ওই চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি স্বাভাবিক ব্যাথা বলে কিছু মেডিসিন দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর অসহ্য ব্যাথা নিয়ে দীর্ঘ ১ বছর ৫ দিন অতিক্রম করার পর বিভিন্ন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা নীরিক্ষা করেও কোন সমাধান না পেয়ে এক প্রকার নিজেই জোর করে একটি ল্যাবে গিয়ে এক্স-রে করলে পেটের মধ্যে ধরা পড়ে একটি স্টালের কাঁচি। কক্সবাজার শহরের সেন্ট্রাল হসপিটালে এমন কান্ড ঘটিয়েছেন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. খাইরুন্নেছা মুন্নী। ভুক্তভোগী মাফিয়া বেগম (৩৮) কক্সবাজার শহরের পেসকার পাড়া এলাকার মো. ইউসুফের স্ত্রী। তারা দীর্ঘবছর ধরে সেখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায়। মাফিয়া বেগম জানান, ২০২২ সালের ২২ আগস্ট প্রচন্ড প্রসব বেদনা নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র যেতে বলেন। তখন তিনি তাৎক্ষণিক কোন উপায় দেখে ডা. খাইরুন্নেছা মুন্নীর শরণাপন্ন হন। ডা. জরুরীভাবে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারী করেন। তিনদিন পর রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে যাওয়ার একদি পর পেট ব্যাথা শুরু হলে খাইরুন্নেছা মুন্নীর কাছে যান। তখন তিনি মাফিয়াকে সিজারের পর একটু ব্যাথ্য হয় বলে সান্তনা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
Mohammed Yakin
দিনের পর দিন যখন ব্যাথার তীব্রতা বেড়ে যায় ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ বাগিয়ে দেয় এর বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা ও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করেও রিপোর্টে কিছু না পেয়ে রোগীকে করতে বলেন ওই ডাক্তার। এভাবে দিনের দিন ব্যাথার তীব্রতা সহ্য করতে না কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খুলনায় বিভিন্ন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন মাফিয়া। প্রতিটি ডাক্তার পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে স্বাভাবিক আছে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সর্বশেষ ১ বছর ৫দিন পর ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের ২৭ তারিখ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখান তিনি। ডাক্তারকে এক্স-রে ও আলট্রাসোনোগ্রাফী করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। ডাক্তার তার অনুরোধে বিরক্ত হয়ে বলেন ডাক্তার আমি নাকি তুমি? কি পরীক্ষা দিতে হবে না দিতে তা আমি বুঝব বলে তাড়িয়ে দেন। পরদিন আবার টিকেট কেটে অন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনুরোধ করে এক্স- রে করেন তিনি। এক্স-রের রিপোর্ট দেখে টেকনিশিয়ান ও রোগীর পরিবারের স্বজনদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রিপোর্টে দেখা যায় আস্ত একটা কাঁচি তার পেটের ভিতর। ভুক্তভোগী মাফিয়া বেগমের স্বামী মোঃ ইউসুফ জানান, হাসপাতালের প্যাবের টেকনিশিয়ানের কাছ রিপোর্ট চাইলে তিনি ডাজারের কাছ থেকে সিজার করিয়েছি জানতে চান। পরে ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নীর নাম বললে তাদের অপেক্ষা করতে বলে একটি সিএনজিতে করে খাইরুন্নেছা মুন্নীর কাছে নিয়ে যান। সেখানে গেলে ডাঃ তাদেরকে কোন কিছু না জানিয়ে রোগীর কাছে কাকুতি মিনতি করে ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় অপারেশনের মাধ্যমে কাচি বের করে দিবে বলে সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দেয়। পরে স্বজনদের সাথে আলোচনা করতে হবে জানিয়ে বাড়ি চলে যান তারা। এর তিনতিন পর ভয়ে খাইরুন্নেছা মুন্নীর মাধ্যমে অপারেশন করবে না
তারা। রেস্ট পর পেরে বলে বলে জানিয়ে দেন তারা পরে খাইরুন্নেছা মুন্নী সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ সেলিম উল্লাহ নবাবের মাধ্যমে অপারেশন করে কাচি বের করে নেন। এবং পেটের ভিতর কাঁচির বিষয়টি গোপন রাখার জন্য রোগীর চিকিৎসা বাবদ ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিবে বলে ওয়াদা করেন খাইরুন্নেছা মুন্নী। মোঃ ইউসুফ বলেন, ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নীর ওয়াদা মতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলেও বাকী টাকা তিনি দিচ্ছেন না। এদিকে রোগীর অবস্থা দিনদিন বড় আতার ধারণ করছে। রোগী এখন অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। ঠিকমত কাজ করতে পারে না। হাটাচলা করতে পারে না। শরীর দিনদিন অবস হয়ে যাচ্ছে। এ মুহুর্তে ডাক্তারের কাছে টাকা চাইলে দিচ্ছে না। চিকিৎসার খরচ চালাতে নিজের কাপড়ের ব্যাবসা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে তার। মুন্নীর বিষয়টি মিডিয়া ও বাইরে জানাজানি করে দিবে বললে উল্টো প্রাণে মারার হুমকি সহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার। ইউসুফ জানান, তার স্ত্রী মাফিয়ার চিকিৎসার খরচ চালাজে তার কাপড়ের ব্যাবসা বাণিজ্য বন্ধ করে এখন ফুটপাতে হকারের ব্যাবসা করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছেন। খাইরুন্নেছা মুন্নীর আদালত রা প্রশাসনের কাছেও অভিযোগ দিয়ে যেতে পারছেন না। এ বিষয়ে জানতে সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ সেলিম উল্লাহ খান নবাবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অপারেশনের মাধ্যমে পেট থেকে কাচি বের করার বিষয়টি স্মরণ নেই বলে জানান। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি
@ফলোয়ার