22/08/2024
বাঁধের সামনে বাঁধ নির্মাণ কি উপর্যুক্ত সমাধান?
ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ সমুদ্র তীরে অবস্থিত এবং ভাটির দেশ। সুতরাং প্বার্শবর্তী অঞ্চল গুলোতে উৎপন্ন অধিকাংশ নদী উক্ত অঞ্চলে প্রবেশ করবে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠে পতিত হবে। সমগ্র ঘটনাকে একটা ঢালুতল হিসেবে কল্পনা করা যেতে পারে যেখানে পানি গড়িয়ে পরছে। বাংলাদেশ মূলত অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই ঢালু পথ হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
মূলত এই কারনেই ইন্ডিয়ার বাঁধের সামনে আরেকটি বাঁধ নির্মান উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নয়। কেননা ভাটি অঞ্চলের হওয়ায় ইন্ডিয়ার বাধ খুলে দিলে আমাদের বাঁধ তা প্রতিরোধ করতে পারবে কিন্তু সে পানি বিপরীতে তাদের অঞ্চলে পাঠানো যাবে না। অর্থাৎ পালটা বাঁধ নির্মানের মাধ্যমে ভারতকে থ্রেটে রাখা যাবে না।
আর একটি বাঁধ মানে বিস্তীর্ণ পরিমান অঞ্চলকে স্রেফ ধ্বংস করে দেওয়া। বাঁধ নির্মাণ মানে প্রকৃতির গতিপথ বাধাগ্রস্থ করা। আর এই বাধা দূর করতে পানি ছড়িয়ে যাবে বাঁধের আশেপাশের অঞ্চলে। ফলাফল বন্যা এবং প্রক্রিয়া চলমান থাকলে হ্রদ কিংবা হাওর। বাংলাদেশের কাপ্তাই বাঁধের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পানি প্রবাহে বাধা প্রদানের কারনে তৈরি হয়েছে বিস্তীর্ণ এক জলাভূমি।
বাঁধের সামনে বাঁধ তৈরি হলেও তা তৈরি হবে আমাদের মাটিতে। কাজেই পানি ছড়িয়ে পরার কারনে পরিবেশ বিপর্যস্ত হলে তা আমাদের মাটিতেই হবে। আর ভাটির দেশ হওয়ায় পানিকে উলটো গতিপথে পাঠানো সম্ভব না। তাছাড়া বাংলাদেশ এত বিশাল পরিমান অঞ্চল নেই যা হ্রদ হতে দিয়ে বাধ নির্মান করা যাবে।
তাহলে সমাধান কি? সমাধান খুব সম্ভবত অনেকের পছন্দ হবে না। কিন্তু শেষ এবং আদি সমাধান এটাই যে, ২০১৪ সালে ইউক্রেন, ক্রিমিয়া অঞ্চলে প্রবাহিত একটি নদীর উপর বাঁধ নির্মান করে। ভৌগলিকভাবে নদীটি ক্রিমিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ন পানির উৎস বিবেচিত হওয়ায় বাঁধ নির্মান করে পানি আটকে দেওয়া একপ্রকার দমন-পীড়ন নীতি ছিলো। পরবর্তীতে রাশিয়া উক্ত বাঁধ ভেঙে দেয় ।
মূলত বাঁধ ভেঙে ফেলাই এবসোলুট সমাধান। আর আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভাটির দেশে প্রবাহিত নদীপথকে বন্ধ করা বেআইনী । কাজেই এখানে আপনাকে জবাবদিহিতার চিন্তা করতে হবে না। আর গান্ধীবাদী কিংবা বুদ্ধের শান্তির বাণী পালন করে এক গালে চড় খেয়ে আরেক গাল এগিয়ে দেওয়া কোনো সমাধান নয় । বরং এটা শত্রুর কাছে নিজেকে ধ্বংস করে দেওয়ার নামান্তর। মূলত পৃথিবীতে লড়াই ছাড়া কোনো জাতী-ই টিকতে পারে না। এই কারনেই দেখা যায় এক গালে চড় খেলে আরেক গাল এগিয়ে দেওয়ায় বিশ্বাসী শান্তিবাদী জাতিগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অত্যাচারী। চীন, ভারত কিংবা ক্রুসেডারদের দিকে খেয়াল করুন, এর উপযুক্ত উদাহরণ পাবেন। একইভাবে পরপর দুইটি লম্বা সময়ের যুদ্ধের পরও আফগানীরা টিকে আছে তাদের লড়াকু মনোভাবের কারনে। বিপরীতে “বই হাতে উঠলে অস্ত্র নিচে নামতে বাধ্য” টাইপের শিশুসুলভ কথা আওড়ানো দলগুলোর ক্রেডিট প্রায় শূন্য। কারন মুক্তিযুদ্ধের সময় যোদ্ধারা বন্দুক না নিয়ে বই হাতে নিলে আজ তারা এইসব শিশুসুলভ কথাবার্তা আওড়ানোর জন্য বেঁচেও থাকতো না।
মূলত যুদ্ধ মানবজাতির জন্য এক অনিবার্য সত্য। আপনি জুলুম করতে চাইলেও যুদ্ধ করতে হবে এবং জুলুম রোধ করতে চাইলেও যুদ্ধ করতে হবে। তাহলে কি আমি সরাসরি যুদ্ধের কথা বলছি? মোটেও না। যোদ্ধা জাতিগুলো যতটা না যুদ্ধ করে তার থেকে বেশি পরিচিত থাকে তাদের মিস্টিকের জন্য। তারা একটি মিস্টিক তৈরি করে যা অন্য জাতি কে তাদের উপর আক্রমণ করার পূর্বে চিন্তিত করে তোলে। ষষ্ঠ শতাব্দীর আরব, ভাইকিংস, সেক্সন, জারের রাশিয়ান ওয়ার মেশিন, জানিসারি ইত্যাদি সকল যোদ্ধারা শত্রুর চক্রান্ত থেকে অধিকাংশ সময় মুক্ত ছিলো নিজেদের মিস্টিকের জন্য। শত্রু চক্রান্ত করার আগে ভাবতো আমরা যদি দশটা ইটও ছুড়ে মারি তাহলে তারা এর বিপরীতে আটটা ইট হলেও ছুড়বে। সুতরাং তাকে আক্রমণ করা কিংবা ক্ষেপিয়ে তোলা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
আপনি মূলত রাশিয়া এবং আমেরিকার ক্ষেত্রে মিস্টিকের সূত্র মিলাতে পারেন। আমেরিকা পৃথিবীর এতো দেশে আক্রমণ করলেও রাশিয়ায় আক্রমণ করেনা। এমনকি সে চীনেও আক্রমণ করেনা যদিও এগুলো তার জন্য হুমকিস্বরূপ। কারন তাদের উপর আক্রমণ করা মানে সাক্ষাত নিজের উপর বিপদ ডেকে আনা। যদিও এমন হতে পারে যে তাদের সামরিক শক্তি কম এবং তর্কের খাতিরে আমরা ধরে নিচ্ছি যে তাদের সামরিক শক্তি সত্যিই কম। কিন্তু এরপরও আক্রমণ করা মানে তাদের পক্ষ থেকে কোনো না কোনো পালটা আক্রমনের শিকার হওয়া।
বিপরীতে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ এই মিস্টিক তৈরি করতে পারেনি। ১৯৭১ এর পর থেকে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা এবং সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ন হটিয়ে দেওয়ার চক্রান্তের পর প্রতিবেশি দেশগুলোর নিকট তারা পরিচিত হয়েছে শুট করা কিংবা টার্গেট প্রেকটিসের উপকরন হিসেবে। আর এর পরবর্তীতে বর্ডারে গুলি করে মেরে ফেললেও প্রতিবেশীর কাছে কোনোরূপ জবাবদিহিতা কিংবা পালটা আক্রমণ না করা তাদের এই বিশ্বাস তৈরি করেছে যে এদের মেরে ফেললেও সমস্যা নেই। এভাবেই আমাদের মিস্টিক তৈরি হয়নি আর যতটুকু হয়েছে ভেঙে দেওয়া হয়েছে তাও।
সত্যি বলতে ইন্ডিয়া যদি চীন, নর্থ কোরিয়া কিংবা আফগানেও বাঁধ খুলে বন্যা তৈরি করার সুযোগ পায় তাহলেও সে করবে না। কারন তার বিশ্বাস এতে সে চরম বাধা এবং পালটা আক্রমণের শিকার হবে। আমাদেরও এই মিস্টিক অর্জন করতে হবে। আমাদেরও নিজেদের এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন শত্রু আমাদের কথা কল্পনা করেই ভয় পায়। সে যেন মনে করে বাঁধ ছাড়লে বর্ডারে জওয়ানদের তাজা রাখা হবেনা, সেভেন সিস্টার্সকে শান্ত থাকতে দেওয়া হবে না, গুপ্তহামলার বাহিনীগুলোকে ভদ্রভাবে সাজিয়ে রাখা হবেনা।
এরকমটা করা গেলে মিস্টিক পূনরুদ্ধার করা সম্ভব, শত্রুর বুকে ভীতি তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া বাকি সব সমাধান মেকি। যুদ্ধে ভায়োলেন্স বলতে কিছু থাকেনা কিন্তু যদি থাকে তাহলে “ভায়োলেন্স ইজ দা আল্টিমেট ওয়েপন”
Copied from Youth FoundationTalora.