
14/06/2025
হেলমেট ছাড়া গাড়ি চালানো, ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো কোন ফৌজদারি অপরাধ নয়। এটি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন। মোটরযান আইনে এসব অপরাধ জরিমানাযোগ্য, এগুলো গ্রেফতারযোগ্য অপরাধ নয় (সাধারণত)।
তবে ইদানীং বিভিন্ন চেকপোস্টে এধরণের অপরাধের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেককেই যানবাহন থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। জিজ্ঞাসাবাদের ওই সময় সেসব ব্যক্তিকে দাগী আসামি হিসেবে ট্রিট করে তাদের মুখের সামনে বুম ও ক্যামেরা ধরেন দেশের নামি-দামি মিডিয়া হাউজের কথিত রিপোর্টাররা।
ইথিক্যাল রিপোর্টিং সম্পর্কে চুল পরিমাণ ধারণা না রাখা সেসব কথিত সাংবাদিকরা ফৌজদারি নয়, এমন সামান্য অপরাধে তাদের অনুমতি ছাড়া ভিডিও ধারণ করছেন, নানা প্রশ্নে জর্জরিত করছেন।
❓ প্রশ্নগুলো হচ্ছে,
– এতোরাতে এখানে কি করছেন?
– একসঙ্গে ৩ জন বাইকে কেন?
– হেলমেট ছাড়া স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছিলেন কেন... ইত্যাদি।
এমনকি পুলিশ বা সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের কথোপকথন লাইভে তুলে দিচ্ছেন। কারও কোন অনুমতি নিচ্ছেন না, অনুমতি যে নিতে হয় সেই জ্ঞান নেই ৯৫ শতাংশের।
🔍 কথিত সাংবাদিকরা যেখানে অপরাধী:
১. বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা-৪৩ এ বলা আছে, “প্রত্যেক নাগরিকের নিজের ব্যক্তি, বাসগৃহ, চিঠিপত্র এবং অন্যান্য যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকবে।”
এই অধিকার বলবত থাকে, যতক্ষণ না কেউ "public interest" বা "public place"-এ কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তবে, রাস্তায় বা চেকপোস্টে সাধারণ তল্লাশি কিংবা ট্রাফিক আইন ভাঙার ঘটনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে "public interest crime" হিসেবে গণ্য করা যায় না। সেক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক একজন সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকারে আঘাত হানছেন।
২. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮- এর ধারা ২৬ ও ২৮ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির সম্মানহানি বা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে ভিডিও ধারণ, সংরক্ষণ বা প্রকাশ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে, যদি সেই ভিডিওর ফলে অপমান, ক্ষতি বা হেয় প্রতিপন্ন হওয়া প্রমাণিত হয়।
⚖️ ৩. ফৌজদারি বিধি (Penal Code), ১৮৬০ এর ৫০০ ও ৫০৫ ধারা অনুযায়ী, মানহানি, উত্তেজনা সৃষ্টি বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে ভিডিও বা ছবি প্রকাশ করলে তা অপরাধ।
⚠️ উপরের তিনটি অপরাধই চেকপোস্ট সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত করছেন।
📹 এছাড়াও কারও অনুমতি ছাড়া ব্যক্তির মুখমণ্ডল বা পরিচিতিমূলক ভিডিও প্রকাশ, বিশেষ করে যদি সেই ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধ না করেন বা দোষী সাব্যস্ত না হন, তাকে নাজেহাল করা এথিক্যাল নয়।
এটা সাংবাদিকের কাজ না। তবে তাদের ক্ষেত্রে নীতিনৈতিকতা কথা বাদই দিলাম।
---
📣 সাংবাদিক দ্বারা বিপর্যস্ত মানুষের করণীয় কি?
যেসব ব্যক্তি পথেঘাটে এধরণের অপসাংবাদিকতার শিকার হয়ে সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন তাদের পরিত্রাণের কয়েকটি উপায় উল্লেখ করছি। সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে অবশ্যই এগুলো প্রয়োগ করতে হবে।
---
⚖️ ১. আইনগত ব্যবস্থা
✅ (ক) জিডি বা মামলা দায়ের
📄 আপনি থানায় জিডি করতে পারেন, যেখানে উল্লেখ করবেন:
– ভিডিও অনুমতি ছাড়া ধারণ করা হয়েছে
– সম্মানহানিকর বা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে
– এটি আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, মান-সম্মান ও সামাজিক অবস্থানে আঘাত করেছে
📚 প্রযোজ্য আইন:
🔸 ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ – ধারা ২৪, ২৫, ২৬, ২৯ (গোপনীয়তা, মানহানি)
🔸 ফৌজদারি বিধি, ১৮৬০ – ধারা ৫০০ (মানহানি), ধারা ৫০৫ (অপপ্রচার/গুজব ছড়ানো)
✅ (খ) মানহানি মামলা
⚖️ আপনি আদালতে একটি ফৌজদারি বা দেওয়ানি মানহানির মামলা করতে পারেন।
– যদি আপনি ক্ষতির ক্ষতিপূরণ চান, তাহলে দেওয়ানি মামলা করতে হবে।
– যদি শাস্তি চান (জেল/জরিমানা), তাহলে ফৌজদারি মামলা হবে।
🏛️ ২. প্রশাসনিক ব্যবস্থা:
✅ (ক) বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ:
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল একটি আচরণবিধি তদারকি সংস্থা। আপনি লিখিত অভিযোগ করতে পারেন নির্দিষ্ট সাংবাদিক বা পত্রিকার বিরুদ্ধে। তারা তদন্ত করে সতর্কতা, ক্ষমা বা প্রতিবেদন প্রকাশের নির্দেশ দিতে পারে।
✅ (খ) সংবাদপত্রের সম্পাদক বা কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ:
প্রিন্ট/অনলাইন/টিভি যেই মাধ্যমে ভিডিও প্রচার হয়েছে, তাদের সম্পাদক বা কনটেন্ট প্রধানের কাছে আনুষ্ঠানিক নোটিশ দিতে পারেন। প্রয়োজনে লিগ্যাল নোটিশও পাঠানো যায়।
🇧🇩 সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে, এধরণের অপসাংবাদিকতাকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।
Copyright - Md Adnan Rahman