
17/05/2025
নিম্ন মধ্যবিত্তের একদিনের গল্প
আয়ান আহমেদ জাহিদ
আমি একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমার রুচিও অনেকটা সেই শ্রেণির মতোই গড়ে উঠেছে। সবচেয়ে প্রিয় খাবার? ব্রয়লার মুরগি আর পাঙ্গাস মাছ! যদি হঠাৎ করেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেতাম, তাহলে জাতীয় মাছ হিসেবে পাঙ্গাস আর জাতীয় মাংস হিসেবে ব্রয়লার মুরগিকেই ঘোষণা দিতাম — অন্তত নিম্নবিত্তের পক্ষ থেকে তো বটেই!
গত কয়েকদিন ধরে বাসায় গ্যাস নেই। ব্যাচেলরদের বাসা বলে কথা— যখন ইচ্ছা হয় তখনই গ্যাস আসে, আবার হুট করেই উধাও! আজ শরীরটা খুব একটা ভালো লাগছিল না, রান্নার চিন্তা বাদ দিয়ে দুপুরে বাইরে খেতে বের হলাম।
গন্তব্য: বাড্ডা ডিআইডি প্রজেক্ট।
বড় বড় দালানের মাঝখানে একটা ঘরোয়া স্টাইলে রান্না করা বাংলা হোটেল। দামটাও সাধ্যের মধ্যে। এক পিস মুরগির মাংস নিলাম— দাম ৬০ টাকা। কিন্তু দেখি, মুরগির সাথে ঝোলটা কেমন মাছের মতো গন্ধ দিচ্ছে!
আমি দোকানিকে বললাম, “ভাই, এটা তো মনে হয় মাছের ঝোল!” তিনি হেসে বললেন, “আমি নিজে রান্না করছি, আপনি বুঝবেন কিভাবে? এটা মুরগির ঝোল!”
আমি একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম— মায়াভরা চোখে। কিছুক্ষণ পর নিজেই এসে স্বীকার করলেন, “মামা, আসলে আমার ভুল হয়েছে। মুরগির মাংসের ঝোলটা কিছুটা কম ছিল, তাই আপনাকে মাছের ঝোল দিয়েছি।”
মনে মনে ভাবলাম, আমি তো গত সাড়ে তিন বছর ধরে নিজে রান্না করে খাই। তাহলে কি আসলেই বুঝতে পারিনি? এক মুহূর্ত থমকে গিয়েছিলাম…
সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম আফতাবনগরে।
সন্ধ্যাটা কাটালাম চায়ের দোকানে। দোকানের মামার সাথে গল্প করতে করতে খেয়ে ফেললাম তিন কাপ দুধ চা। যদিও আমার পছন্দ রং চা, তবে গরুর দুধের চা থাকলে নিজেকে থামানো কঠিন হয়ে পড়ে।
সন্ধ্যার পর দেখা করলাম আব্বুর সাথে, উনি থাকেন রামপুরায়। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরলাম। যেহেতু বাসায় এখনো গ্যাস নেই, তাই ফেরার সময় পরোটা আর ডাল ভাজি কিনেই ফিরলাম।
তবে এখন শুধু রান্নার গ্যাসই নয়, পেটের গ্যাসও সমস্যা করছে! পরোটা খাওয়ার আগে ওষুধ খেলাম, তারপর একটু অপেক্ষা করে রাতের খাবারটা শেষ করলাম।
এইভাবে চলছে নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনের খাওন-দেওয়ান, আনন্দ-বেদনার গল্প।
ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।