17/09/2025
পৃথিবী এক বিশাল প্রাণীজগৎ। বৈজ্ঞানিকদের মতে পৃথিবীতে প্রায় ৭৮ লক্ষেরও বেশি প্রজাতির প্রাণী আছে। প্রতিটি প্রাণীই এই বিশাল প্রকৃতির কোলে নিজের মতো করে বেঁচে থাকে। কিন্তু এই কোটি কোটি প্রাণীর ভিড়ে একমাত্র মানুষই আলাদা, কারণ মানুষকেই জীবিকার জন্য টাকা রোজগার করতে হয়।
প্রকৃতির দিকে তাকালে দেখা যায়—হরিণ বন থেকে ঘাস খেয়ে বাঁচে, সিংহ শিকার করে চলে, পাখিরা ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ায় আর ফল-মূল, শস্য, পোকামাকড় খেয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়। এদের কারোর জীবনে টাকা নামের কোনো বস্তু নেই। নদীর মাছ নদীতে থেকে খাদ্য জোগাড় করে, মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে, গরু-ছাগল প্রাকৃতিক খাদ্য খেয়ে দিব্যি বেঁচে থাকে। এদের বেঁচে থাকার জন্য মুদ্রা কিংবা অর্থ কোনো প্রয়োজনীয় বিষয় নয়।
কিন্তু মানুষ ভিন্ন। সভ্যতা আর উন্নতির নামে মানুষ নিজেকে টাকার সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে ফেলেছে যে, আজ তার বেঁচে থাকা, আনন্দ, স্বপ্ন—সবই অর্থ নির্ভর। মানুষকে শিক্ষা নিতে টাকা লাগে, চিকিৎসায় টাকা লাগে, আশ্রয় গড়তে টাকা লাগে। প্রতিদিনের খাবার থেকে শুরু করে বিনোদন, এমনকি সমাজে টিকে থাকতেও টাকার প্রয়োজন হয়। ফলে মানুষ জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য।
এখানে এক গভীর সত্য লুকিয়ে আছে। মানুষ তার জ্ঞান ও মেধা দিয়ে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে, কিন্তু সেই জ্ঞানের ফাঁদে সে নিজেই বন্দি হয়ে গেছে। অন্য প্রাণীরা প্রকৃতির নিয়ম মেনে স্বাধীনভাবে বেঁচে আছে, আর মানুষকে প্রতিদিন টাকার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে জীবন চালাতে হচ্ছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—আসলেই কি টাকা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব? প্রকৃতির শিক্ষা বলে, প্রাণ বাঁচাতে খাদ্য, জল, আশ্রয়ই যথেষ্ট। অথচ মানুষ নিজের তৈরি সমাজ ব্যবস্থার কারণে টাকা ছাড়া চলতে পারে না। হয়তো একদিন মানুষও বুঝতে পারবে প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া মানেই স্বাধীনতা।
পৃথিবীর কোটি কোটি প্রাণীর মধ্যে মানুষই একমাত্র টাকার জন্য পরিশ্রম করে। অথচ প্রকৃতির অন্য সব প্রাণী টাকা ছাড়া দিব্যি আনন্দে, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকে। তাই বলা যায়, টাকা মানুষের জন্য আশীর্বাদ হলেও একদিকে তা মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় বোঝা।