12/06/2025
বিয়ের ৩৮ বছর পর স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ২২ বছরের এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন একজন পুরুষ। কারণ, এত বছর পর তার মনে পড়েছে ছেলে সন্তানের কথা। ৩৮ বছরের সংসারে দু'জনেই বেশ সুখী ছিলেন। তাদের চার মেয়ে। চারজনকেই বিয়ে দিয়েছেন।
বিপাকে পড়লেন প্রথম স্ত্রী। বৃদ্ধ বয়সে এটা কীভাবে মেনে নিবেন? নিজের কথা বাদ দিলেন, মেয়েদের তো সংসার আছে, তাদেরও সম্মান আছে। মুখ দেখাবেন কী করে? মেয়েরাও লজ্জায় মুখ লুকালো। সবার পরামর্শে প্রথম স্ত্রীকে আবার ফিরিয়ে আনা হলো, সতীনের ঘর করার শর্ত সাপেক্ষে।
বৃদ্ধা স্ত্রী তার সাজানো সংসারে অন্য এক নারীর হস্তক্ষেপ নীরবে মেনে নিলেন। ৩৮ বছর যে সংসারে সময় ব্যয় করেছেন, নিজেকে শেষ করেছেন, সেই সংসার তুলে দিলেন সতীনের ঘাড়ে।
বছর পাড় হওয়ার পর সতীনের সন্তান হলো। সেই সন্তানের সর্বোচ্চ খেয়াল রেখেও বৃদ্ধার এক মুঠো ভাত জুঠে নি। জীবনে যিনি কখনোই অন্যের কাছে হাত না পেতে প্রয়োজনে উপোস থেকেছেন, আজ তিনি ক্ষুধায় জ্বালায় অস্থির হয়ে বার্ধ্যক্যের বাড়ে মাথা নুয়ে অন্যের দ্বারে হাত পেতেছেন একটু খাবারের আশায়।
তিনি চাইলেও মেয়েদের ঘরে ওঠতে পারেন নি। মুখ ফুটে বলতে পারেন নি। মেয়েদের সংসারটাও তো তাদের নিজের নয়। তারা চাইলেও জোর খাটিয়ে নিজের মা'কে রাখতে পারবে না। তাছাড়া সমাজ বলেও একটা কথা আছে! স্বামী বেঁচে থাকতে মেয়ের ঘরে থাকাটা বেখাপ্পা!
যৌবনের রঙিন সময়ে বৃদ্ধা কি বুঝেছিলেন, ভবিষ্যতে তার জন্য কি করুণ এক নিয়তি অপেক্ষা করছে? যদি বুঝতেন, তবে কি সংসারটাকে নিজের ভেবে এতো সুন্দর করে সাজাতেন? ছেলেহীন সংসারে চারটি মেয়ে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা স্বামীকে দেখে কখনো কি ভেবেছিলেন, এই মানুষটিও একদিন বদলাতে পারে?
জীবনের শেষ সময়টা বৃদ্ধার সুখকর হয় নি। তিনটি বছর সতীনের ঘর করে একদিন তিনি মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন। তবে তার আগে দেখে গেলেন মানুষ কীভাবে বদলায়, কীভাবে মানুষের ভালোবাসা বদলায়। ছেলে সন্তানের বাবা হয়ে স্বামীর উচ্ছাসটুকুও দেখে গিয়েছিলেন। কীভাবে স্বামী তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ভবিষ্যৎ সাজায়, স্বপ্ন দেখে এবং প্রতিটা মূহুর্ত রঙিন করে, সেটাও নিজের চোখে দেখেছিলেন।
অসহায় বৃদ্ধার হয়তো কিছুই করার ছিল না। হয়তো আপনমনে ভেবেছিলেন, কি ভুলে ভরা এক জগত! কি নিষ্ঠুর নিয়তি!
অতিরিক্ত বিশ্বাসের ফলে প্রতারিত হওয়ার দরুণ হয়তো বা নিজেকে দোষারোপ করেছিলেন বারংবার। হয়তো বা ভাতের খালি প্লেটে ঝরঝর করে তার চোখ থেকে পানি ঝরতো। রাতের নিস্তব্ধতায় হয়তো জীবনের সুন্দর সময়গুলোর কথা মনে পড়তো। সেসব ভেবে হয়তো বা ভাবতেন, যা হয়েছিল, সব ভুল। মানুষটা কখনোই তাকে ভালোবাসে নি।
তবে কেন সাজালো এতো বছরের সংসার? কেন-ই বা আগে ত্যাগ করলো না, যখন শক্তি সামর্থ ছিল? মাথা গুঁজানোর জায়গা ছিল। অন্তত দুইবেলা আহার জুটতো।
আজ কি এক বিভৎস পরিস্থিতি! সংসার থাক, নিয়মতো এক মুঠো ভাতও জুটে না। মৃত্যুর আগে এই নারী তার সংসার হারালেন, স্বামীকে হারালেন, ভাঙ্গা পা টেনে টেনে গাধার মতো সতীনের ঘরে কাজ করলেন। কিন্তু, বিনিময়ে একটু খাবারও পেলেন না। তিনি পরিশ্রম করেছিলেন, তবে মারা গেলেন ব্যর্থ হয়ে। প্রমাণ হলো যে, তার পুরো জীবনটাই ভুলে পরিপূর্ণ ছিল। এর চেয়ে করুণ নিয়তি আর কী হতে পারে?
আহারে জীবন! আহারে ভাগ্য!
ভাবতেই অবাক লাগে! প্রতারণা করা মানুষগুলোও একদিন ভালোবেসেছিল। নিজের সবটুকু উজার করে দিয়েছিল। নিজের জন্য তারা জায়গা করে নিয়েছিল বিশ্বাসের চরম মাত্রা। কিন্তু, সময়ের চক্রে তারাও আজ বদলে গেছে হিংস্ররূপে।
মানুষ বদলায়! প্রতিটা মূহুর্তে মানুষের ভালোবাসাও বদলায়। আজ বিশ্বাসের শিকড়ে যে জড়িয়ে আছে, ভবিষ্যতে সে যে প্রতারণা করবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
#মানুষ_মানেই_মুখোশ