03/04/2025
অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে আমি "Francis Hill Diary" নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলেছিলাম। ভেবেছিলাম, ভিডিও তৈরি করে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকে আমার চোখে দেখা পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের সৌন্দর্য এবং মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা তুলে ধরব। পাশাপাশি, পাহাড়ের কঠিন বাস্তবতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলব।
এই পেজ থেকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে একটি গ্রামের শুকনা মৌসুমে পাহাড়ে পানি সংকটের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছিল। সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমার ফলোয়ার সংখ্যা দ্রুত বেড়ে ৫ হাজার থেকে ১৫,৫০০-তে পৌঁছায় এবং Extreme Ad Content Monetization চালু হয়। তখন থেকেই ভাবলাম, আমি একজন প্রফেশনাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হবো—পাহাড়ের বাস্তবতা এবং সৌন্দর্য দেখানোর পাশাপাশি এখান থেকেই কিছু উপার্জন করব।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারে বেকার অবস্থায় ভিডিও করে ঘুরে বেড়ানোকে পরিবারের লোকজন কটাক্ষের চোখে দেখে, আর পাড়া-প্রতিবেশীরা এটিকে তামাশা মনে করে—কী এক নির্মম ভাগ্যের পরিহাস!
আমি উপলব্ধি করেছি, অর্থনৈতিকভাবে যারা সংকটে থাকে, তাদের জন্য কনটেন্ট ক্রিয়েশন কোনো সহজ কাজ নয়। পরিবারের কাছ থেকে মোটিভেশন তো দূরের কথা, বরং কটু কথা শুনতে হয়, যা মন ভেঙে দেয়। আমিও সেই কটু কথা শুনতে শুনতে একসময় ভেঙে পড়লাম। হীনমন্যতা এতটাই গ্রাস করেছিল যে, কনটেন্ট ক্রিয়েশন ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় এক বছর ধরে পেজে কোনো নতুন ভিডিও আপলোড করা হয়নি। আমি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলাম, ক্যামেরার সামনে স্বাভাবিকভাবে কথা বলার সাহসও হারিয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, যার খাবারের জন্য ভাত জোটে না, তার আবার কনটেন্ট তৈরি করাটা কতটা যৌক্তিক?
এই অবস্থার উত্তরণ কীভাবে সম্ভব, আমি জানি না। যেহেতু আমি পেজে ভিডিও আপলোড করি না, অনেক সময় অনেকে প্রস্তাব দেয়—"এই পেজটি বিক্রি করে দেবেন কি?"—কী দুঃখজনক কথা! আমার কাছে এটি শুধু একটি পেজ নয়, এটি আমার স্বপ্ন, যে স্বপ্নে লুকিয়ে আছে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবনধারা—যেখানে রয়েছে দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্না এবং অপরূপ সৌন্দর্য। একবার এক ব্যক্তি বলেছিল, "কাজ না করলে আমাকে পেজটা বিক্রি করে দাও, ভাই, আট হাজার টাকা দেব!"—এই পেজটিকে কেন্দ্র করে আমি যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা কি এত সহজেই বিক্রি করে দেওয়া যায়?
অনেক মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করে, "দাদা, আপনার নতুন ভিডিও কবে আসবে?" কিন্তু পরিতাপের বিষয়, হীনমন্যতা এবং ডিপ্রেশনের কারণে আমি আর ভিডিও তৈরি করতে পারিনি। পাশাপাশি কিছু ইনস্ট্রুমেন্টের ঘাটতিও রয়েছে—ভালো মানের ক্যামেরা নেই, নতুন ক্যামেরা কিনতে পারিনি, সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো করার জন্য ভালো একটি মাইক্রোফোন নেই, এমনকি একটি ভালো স্ট্যান্ডও নেই। দারিদ্র্য যেন আমার পিছু ছাড়ছে না।
এই হাজারো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমি আবার নতুন করে এই পেজটি গুছিয়ে চালু করতে চাই। প্রয়োজনীয় ইনস্ট্রুমেন্টের ঘাটতি পূরণ করে একজন প্রফেশনাল ব্লগার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই—যদি আপনারা পাশে থাকেন!