18/06/2025
Dear batchmates (DU 104)
ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসছেন,তাদের জন্য এই লেখা।
কয়েকদিন যাবৎ ইনবক্স,গ্রুপ পোস্ট approval, newsfeed এ 'ঢাবির হল কবে নাগাদ পাওয়া যাবে' এই প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে। ২রা জুলাই যত নিকটে হচ্ছে, “হল পাওয়া", “বাসা নেওয়া" এই দুটো প্রশ্ন ক্রমাগত তার গুরুত্বের উপস্থিতি ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।
১ম প্রশ্ন : হল কবে নাগাদ পাওয়া যেতে পারে?
- কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের চুড়ান্ত ভর্তির নোটিশ দিবে, তারপর সেখানে আমাদের প্রত্যেককে hall allotment দেওয়া হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, হল allotment দেওয়া হলেই কী আমরা Hall এ উঠতে পারবো?সোজাসাপ্টা উত্তর হলো: নাহ। তবে হল কবে পাওয়া যাবে? সবাইকে হল allotment দেওয়ার পর সবাইকে Hall এ টাকা দিয়ে admit হতে হবে। ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুদিন পরে Hall গুলো শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যারা Hall এ উঠতে ইচ্ছুক তাদের application আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দিবে। Application জমা হওয়ার পর মেধাক্রমের ভিত্তিতে সাক্ষাৎকারের জন্য call করবে। সাক্ষাৎকারে required criteria সন্তোষজনক হওয়ার ভিত্তিতে Hall এ ওঠার সুযোগ হবে। এই প্রসেসটা দীর্ঘমেয়াদী হয়, তা ২ থেকে ৪ মাসের বেশিও গড়াতে পারে।
২য় প্রশ্ন : ঢাবির আশেপাশে কোথায় বাসা নেওয়া যায়?
এই প্রশ্নের সাথে আরো কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়,আপনাদের হয়ে সেই প্রশ্ন আমি করছি,তারপর ধারাবাহিকভাবে উত্তর দিচ্ছি। ব্যাচেলর হিসেবে ফ্লাট বাসা নেওয়া যাবে? Random মেস এ উঠলে কেমন হবে? হোস্টেলে উঠলে কেমন হবে এবং খরচ কত হতে পারে? বন্ধুদের সাথে ফ্লাট নেওয়া যায়? ঢাবির আশেপাশে ০৩ রুমের একটা ফ্লাটের ভাড়া কত হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমদের যেহেতু জুলাইয়ে Hall এ উঠে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না,তাই আমাদের সবারই ঢাকায় থাকার জন্য বাসা নেওয়ার প্রয়োজন হবে। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের TSC লিখে Google Map এ সার্চ করে Satellite View তে দেখবেন আবাসিক বিল্ডিংগুলো কোথায় আছে, আপনি যা দেখবেন তা হলো, কাঁটাবন,পলাশী, সেগুনবাগিচা,বকসীবাজের দক্ষতা দিক তথা জহির রায়হান রোডের দক্ষিণ দিক ও দক্ষিণ পশ্চিম দিক,আজিমপুর এসব এলাকা। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে বাসা নিতে চাইলে এসব এলাকা দেখতে পারেন। তবে ব্যাচেলরদের জন্য এই এলাকাগুলোতে নতুন high range এর বিল্ডিং গুলোতে মেস বাসা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মাঝারি ধরণার আর পুরোনো বিল্ডিং গুলোতে তিন রুমের ফ্লাট সার্ভিসচার্জ বাদে ১৬/১৭k থেকে শুরু হবে। ছাত্রদের থাকার উপযোগী মেসের সিট ভাড়া আপনাকে 3k বা উপরে ধরতে হবে। প্রথমত, জুলাই মাস থেকে নতুন বা সুন্দর ভবনগুলোতে ভাড়া হয়ে যায়নি, এমন To-Let এখন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ভালো মেসগুলোতে সিট মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই সচরাচর ভাড়া হয়ে যায়। হোস্টেলে খরচ 10k এর আশেপাশে, তবে খাবার আর সার্ভিস অন্য যেকোনো হোস্টেলের মতোই হবে। এতক্ষণের আলোচনায় বাসা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হতে পারে। আসলে বাস্তবতা এমনই, ঢাকায় ব্যাচেলর হয়ে বাসা খোঁজার কাজটি খুবই জটিল আর কষ্টকর।
প্রশ্ন ০৩: এখন তবে কী করা যায়?
প্রথমত বলি, মাসের দিন যত গড়াবে, সুন্দর বাসাগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবার সম্ভাবনা ততই বেড়ে যাবে। মাসের শেষের সপ্তাহে এসেও যেই বাসা গুলো ভাড়া হয় না,সেগুলো সবারই অপছন্দের তালিকার বাসা,তাই খালি পরে থাকে; সেটা আপনারও অপছন্দের হবে। কী করা যায়?
দ্রুতই পরিচিত কয়েকজন মিলে 'বাসা খোঁজা কর্মসূচি' তে নেমে পড়ুন, ক্লাস শুরুর আগেই থাকা-খাওয়ার বিষয়টা নিশ্চিত হলে রিলাক্সে থাকতে পারবেন।
বাসা নেওয়ার জন্য যারা বন্ধু খুঁজে রেখেছেন অথবা কিছুই করা হয় নি,ভাবছেন যে ভর্তি হতে গিয়ে বাসা খুঁজবেন,তারা জানবেন যে, যখন ভর্তির দিন আসবে ঐদিনের আগের বা পরের দিন, বাসা খোঁজার জন্য আপনার সাথে আরো ০৩ হাজারের বেশি মানুষ কাঁটাবন, আজিমপুর, বকসীবাজার, পলাশী এই এরিয়াতে To-Let খুুঁজবে,তখন বাসা পাওয়াটা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে দাঁড়াবে।
তুলনামূলক কম খরচ,পড়ালেখার ভালো পরিবেশ আছে, এমনটার জন্য আপনাকে মেট্রোরেলের রুট বরাবর ফার্মগেট,আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর ১০ এরদিকে বাসা দেখতে হবে। টিউশনের কথা ভাবলে মোহাম্মদপুর,ধানমন্ডি, মিরপুরের দিকে দেখতে পারেন। তবে যাই করুন, আগে ভাগে এসে করুন, কারণ দিন যত গড়াবে,পরিস্থিতি তত জটিল হবে।
বাসা ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হয়, তবে যে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত হবেন,
০১) বাসা ছেড়ে দিতে হলে কত মাস আগে মালিককে জানাতে হয়,১ মাস নাকি ২ মাস নাকি ০৩ মাস, তা নিশ্চিত হবেন।
০২) গ্যাস আর পানি ঠিকমতো থাকে কি না তা আশেপাশের মানুষদের থেকে খোঁজ রাখবেন।
০৩) পুরোনো বিল্ডিং, আলো-বাতাসহীন অবস্থা ইত্যাদি তথা বাসার পরিবেশের সাথে আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন কি না, তা অবশ্যই গুরত্বের সাথে বিবেচনায় রাখবেন।
০৪) বাসা ভাড়া নিচ্ছেন, তা বাড়ির মালিককে নিশ্চিত করার আগে বাসা সম্পর্কে বিস্তারিত ঢাকার কোনো বড় ভাই,বন্ধু বা পরিচিতজনের কাছে বর্ণনা করে মতামত নিবেন।
আমরা অনেকেই হয়তো প্রথমবারের মতো বাসা থেকে,পরিবার থেকে দূরে কোথাও থাকতে যাচ্ছি, এটা একদিক থেকে কষ্টের; আবার জীবনের প্রয়োজনে,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বানে পড়তে যাওয়ার আনন্দও কম না। তবে সেই আনন্দ থাকবে যখন আমরা মা-বাবাকে নিয়মিত ফোন করে বলতে পারবো, “মা, আমি সুস্থ আছি,বাবা,আমি নিরাপদ আছি,পড়ালেখা ঠিকভাবে চলছে"।
তাই, একটু আগে আসুন ঢাকায়, আশা রাখি আপনার কাঙ্ক্ষিত লোকেশনে আপনার পছন্দের বাসা পেয়ে যাবেন, ঢাকায় আপনাদের নিরাপদ ও সুস্থ থাকার প্রত্যাশায় আজ শেষ করছি। সৃষ্টিকর্তা সবার মঙ্গল করুক।