29/10/2024
বাংলাদেশে কীভাবে ধর্ম অবমা*ননার অভিযোগ এনে অন্ধের মতো গুজবে কান দিয়ে হিন্দু যুবকদের হেনস্থা করা হয় তার অন্যতম উদাহরণ হতে যাচ্ছে হৃদয় পাল। আসুন আমরা ইন্টারন্যাশনাল গণমাধ্যম সংস্থা ডয়চে ভেলের একটি রিপোর্ট পড়ি।
ঘটনাটি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার। হৃদয় পাল উপজেলার কাদিরদী ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। সোমবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে মহান_বী (সা.)-কে অবমান*নার অভিযোগে তার বিচারের দাবিতে ছাত্র ও বহিরাগতরা বিক্ষোভ করলে তাকে সেনা হেফাজতে নেয়া হয়। কাদিরদী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান মোল্যা ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পুরো কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রসহ কয়েক হাজার লোক উত্তেজি*ত অবস্থায় সমবেত হলে তার জীবন রক্ষায় আমি তাকে আমার কক্ষে আশ্রয় দিই। তাকে আশ্রয় না দিলে উত্তেজি*ত লোকজন তাকে মে*রে ফেলতো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে আমিই সেনাবাহিনীকে খবর দিয়ে তাদের হাতে তুলে দিই। তারা তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।”
"আমি তার হাতে কোনো মেবাইল ফোন দেখিনি। তবে ছাত্ররা তো মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আর তার যে ফেসবুক আইডি তা-ও নাকি আগে হ্যাক হয়েছে। এর আগেও স্কুলে পড়া অবস্থায় একই অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছিল। সে জেলেও ছিল। তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা হয়েছিল তখন।”
হৃদয় পাল নামের ছেলেটির যে ফেসবুক আইডির কথা বলা হচ্ছে, যে আইডি থেকে ধর্ম অবমা*ননাকর পোস্ট দেয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটি তার আইডি কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে। স্থানীয় সাংবাদিক কাজী আল আমীন বলেন, "যে আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে, সেই আইডির নাম কৃষ্ণা দাস রাহুল। আর ওই ছেলের নাম হৃদয় পাল। আমি এটা নিয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছি যে, কৃষ্ণা দাস রাহুল নামে ফেসবুক আইডি সে চালায় কিনা। আমাকে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি যে ওই আইডি তার।”
হৃদয়ের ভাষ্য অনুসারে, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে সে আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না৷ বিষয়টা সে কলেজের অধ্যক্ষকেও জানিয়েছে।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন নবাব ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পাঁচ মাস আগেও একবার তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করা হয়েছিল যে, সে তার ফেসবুক আইডি থেকে ধর্ম অবমান*নার পোস্ট দিয়েছে। কিন্তু সে আসলেই পোস্ট দিয়েছিল কিনা আমরা জানি না। পুলিশ তখন তাকে আটক করলেও ওই পোস্ট তার ছিলো কিনা তা ভেরিফাই করেনি। সেটা করলে এই সমস্যা হতো না। একই অভিযোগ বার বার সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে।”
এই অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার সাব ইন্সপেক্টর আব্দুর রশীদ বলেন, “ওই যুবক যে ফেসবুকে ধর্ম অবমা*ননার ষ্ট্যাটাস দিয়েছে, তার কোনো প্রমাণ আমরা এখনো পাইনি।”
“তার কাছে কোনো মোবাইল ফোন আমরা পাইনি। সে জানিয়েছে, এখন সে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। চার-পাঁচ মাস আগে যে মেবাইল ফোন ব্যবহার করতো, সেটা আমরা তার বাসা থেকে জব্দ করেছি। ওই ফোনও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি।”