16/04/2025
যারা পহেলা বৈশাখ ও জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে একাকার করে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের সমীপে কিছু জবাব - প্রথম পর্ব ⤵️
প্রচলিত বাংলা নববর্ষের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে মুক্তাঙ্গন থেকে শাহবাগ, কাকরাইল ও রমনার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে স্লোগান দিলাম।
মূর্তির সংস্কৃতি বন্ধ হোক বন্ধ হোক।
প্যাঁচার সংস্কৃতি বন্ধ হোক বন্ধ হোক।
কোলকাতার সংস্কৃতি বন্ধ হোক বন্ধ হোক।
ভারতের সংস্কৃতি বন্ধ হোক বন্ধ হোক।
অথচ আমরাই নাকি প্রচলিত নববর্ষ উদযাপন করেছি। দূর থেকে না দেখে, না বুঝে, না জেনে সমালোচনা করা অন্যায়। আমরা মূলত যেটা চেয়েছি সেটা ছিল কলকাতার সংস্কৃতি বর্জন করে বাঙালি সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হোক। যেখানে থাকবে না প্রচলিত পহেলা বৈশাখের মতন শিরক, কুসংস্কার, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা যা সরাসরি ৯০% মুসলমানের দেশে চাপিয়ে দেওয়া হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি। আমাদের প্রত্যেকটি স্লোগান ছিল প্রচলিত পহেলা বৈশাখের বিপক্ষে। একেকটি স্লোগান যা বুলেটের চেয়ে মারাত্মক। স্বৈরাচারের আমলে এই স্লোগানগুলো দিলে সাথে সাথে জঙ্গিবাদের ট্যাগ লাগিয়ে আয়না ঘরের অন্ধকার জগতে রেখে দিত।
স্লোগানগুলো একটু লক্ষ্য করুন ⤵️
আমরাই বাঙালি আমরাই বাংলাদেশ।
আমাদের নববর্ষে আমাদের সংস্কৃতি।
বাংলাদেশের মুসলিম আমি বাঙালি মুসলামন।
মূর্তির সংস্কৃতি বন্ধ হোক বন্ধ হোক।
প্যাঁচার সংস্কৃতি বন্ধ হোক বন্ধ হোক।
কোলকাতার সংস্কৃতি বন্ধ হোক বন্ধ হোক।
ভারতের সংস্কৃতি বন্ধ হোক বন্ধ হোক।
কিছু দ্বীনি ভাই মনে করছেন আমরা প্রচলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা।
১ - প্রতিবছর যে নববর্ষ উদযাপনের নামে
শিরক, কুসংস্কার, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা হয় যা সরাসরি ৯০% মুসলমানের দেশে চাপিয়ে দেওয়া হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি এর বিরুদ্ধে আপনার অবদান কি?
শুধু মসজিদ মাহফিলে হারাম হারাম ঘোষণা করা।
নাকি রাজপথে নেমে এর প্রতিবাদ করা। আমরা সেই প্রতিবাদ টুকুই করেছিলাম। যা উত্তম তা দিয়ে মন্দ প্রতিহত করেছি
📚 এ বিষয় আল্লাহ তা'আলা কুরআনে কারীমে বলেন।
اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ السَّیِّئَۃَ
যা উত্তম তা দিয়ে মন্দ প্রতিহত কর।
সুরা আল মুমিনুন, আয়াত নং -৯৬
২ - যে সমস্ত দ্বীনি ভাইয়েরা আমাদের মিছিলের পিছনে মূর্তি লাগিয়ে পোস্ট করেছেন তাদের জন্য ধিক্কার, আমাদের আন্দোলন ছিল প্রচলিত নোংরা সংস্কৃতি ও মূর্তির বিরুদ্ধে অথচ আপনারা মূর্তির ট্যাগ লাগিয়ে আমাদের সম্মানহানী করলেন। এটাতো বিগত স্বৈরাচারের আমলের কাজ যা আপনারা পুনরায় আবার দেখালেন। অথচ আমাদের মিছিলে বাঙালির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র ছিল, রেহাল, লাঙ্গল, ৫ই মের রক্তাক্ত শাপলা, তসবিহ, হালখাতা ইত্যাদি।
এগুলো প্রচার না করে সেখানে মূর্তির ট্যাগ লাগিয়েছেন যারা তারাতো নাস্তিক তসলিমা নাসরিনের ডাইরেক্ট সহযোগী।
📚 যারা অপপ্রচার করেন তাদের বিষয়ে হাদিস শরীফে এসেছে।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سمع» . رَوَاهُ مُسلم
উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (সত্যতা যাচাই না করে) তা-ই বলে বেড়ায়। (মুসলিম)
৩ - আমাদের এই মিছিল স্রেফ প্রতিবাদ ছিল উদযাপন ছিল না। এবং সঠিক মেসেজ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া উদ্দেশ্য ছিল। এই উদ্দেশ্য সামনে রাখলে কখনোই তা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না। যেমনটি বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সম্মানিত খতিব
✒️ মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব দা.বা. তার বক্তব্যে বলেছেন - পহেলা বৈশাখ বাঙালি রীতি হিসেবে ধরলে সেটা বৈধ হবে এতে কোন আপত্তি নেই এটাকে শরীয়ত আপত্তি করে না।
তবে শিরিক, বিদআত ও কুসংস্কার থাকা যাবে না এবং শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান নামাজ, রোজা, হজ্ব যাকাতের মতন বৈধ মনে করা যাবে না।তাহলে এটা সম্পূর্ণ নাজায়েজ।
(গত জুমআর বয়ান)
✒️ মুফতী হারুন ইজহার সাহেব বলেন,
আমাদের আপত্তি বৈশাখ নিয়ে নয়, বৈশাখবাদ নিয়ে। বৈশাখ আমাদের চেতনার পরিপন্থী না, কিন্তু বৈশাখবাদ আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া শিরক, অপসংস্কৃতিতো বটেই। বৈশাখি মেলা আর মঙ্গল যাত্রা এক না। ইসলাম আইয়ামে জাহেলিয়্যার চেতনা ও সংস্কৃতি নিষিদ্ধ করেছে কিন্তু জাহেলি যুগের 'ওকাজ' ও 'মিজাল্লাহ' ও 'যুল মজায' মেলা বহাল রেখেছে কুরআন।
৪ - যারা বলতে চাচ্ছে আমরা প্রচলিত নববর্ষ কে উদযাপন করেছি তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণীত তাদের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের কাজকে বিতর্কিত করা,যার ফলে তারা হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক হিসাবে উপস্থাপন করছে।
তারা এই হাদিসটি দলিল হিসেবে দিচ্ছেন ⤵️
وَعَن أَبِي مُوسَى الأَشعَرِي أَنَّ النَّبيَّ ﷺ قَالَ المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালবাসে (কিয়ামতে) সে তারই সাথী হবে।
(বুখারী ৬১৭০, মুসলিম ৬৮৯০)
ঐ সমস্ত দ্বীনি ভাইদেরকে আমি বলব ইসরাইলের বিপক্ষে গিয়ে আমরা যেভাবে মিছিল ও সমাবেশ করেছি ঠিক তেমনি ভাবে শিরিক ও হিন্দুআনী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা মিছিল ও সমাবেশ করেছি। এ বিষয়টি সাধারণ একজন মুসলমান উপলব্ধি করতে পারবে কিন্তু আমাদের কিছু দ্বীনি ভাই জেনে শুনে না বোঝার ভান করছেন। আমরা কখনো তাদের সংস্কৃতি বা তাদের কালচার গ্রহণ করিনি।
৫ - জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে যারা আছেন অধিকাংশই বাংলাদেশের একেক জন ইসলামী সংস্কৃতির উজ্জ্বল নক্ষত্র ও বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন লেখক, কবি ও গবেষক। তারা জেনে শুনে কখনোই কোরআন ও হাদিসের বিপক্ষে গিয়ে কিছু করবেন না এটাই প্রত্যাশী। কিন্তু কিছু সংখ্যক ইসলামী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের পোস্টে জঘন্য জঘন্য কথা ফুটে উঠছে যেগুলো অপ্রত্যাশিত ও গর্হিত।
আগামীতে তাদেরকেও আমরা পাশে পাবো ইনশাআল্লাহ। হয়তো তারা জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নেই অথবা সরাসরি মিছিল ও আন্দোলনে এবার থাকতে পারেননি আশাকরি আগামীতে তাদের সু-বুদ্ধি উদিত হবে ইনশাআল্লাহ।
সম্পূর্ণ আলোচনার সারমর্ম ⤵️
১১ টা থেকে মুক্তাঙ্গন থেকে প্রচলিত নববর্ষের বিরুদ্ধে মিছিল শুরু হয়ে যোহরের আগে সমাপ্ত হয়েছে। তারপর দুপুরের লাঞ্চে গরুর গোশত ভাত ডাল ছিল। বিকাল ৪ঃ০০ টা থেকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ইসলামিক নাশিদ শিল্পীদের অংশগ্রহণে ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শুরুতেই মহাগ্রন্থ আল কুরআনে কারীমের তেলাওয়াত হয় পর্যায়ক্রমে হামদ - নাত ইসলামী সংগীত ও দেশাত্ববোধক সংগীত পরিবেশন হয়। সর্বশেষ জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি জাগ্রত কবি মুহিব খান এর গজল পরিবেশনা ও দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়। এখানে টুপিওয়ালার চেয়েও বাহিরে লোকের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতন।
তারা আমাদের অনুষ্ঠান উপভোগ করেছে এবং অশ্লীলতা বেহায়াপনা অনুষ্ঠানকে বর্জন করেছেন।
এটাও আমাদের ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের একটি বড় সফলতা।
আবারও বলছি......
আমরা প্রচলিত বাংলা নববর্ষ উদযাপন করিনি বরং বিরোধিতা করেছি এবং সঠিক মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি যা উপরে পয়েন্টে পয়েন্টে উল্লেখ করেছি আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝার তৌফিক দান করুক আমিন।
আবারো বলছি হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি ও কলকাতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে বন্ধ হোক বন্ধ হোক।
বার্তা প্রচার -
মুফতি হুজাইফা আল মাহদী
কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক
জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ( জাসাক )
লেখার সময় - ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং,সন্ধ্যা সাতটা , রোজ বুধবার।