প্রশান্তির আলো

প্রশান্তির আলো Fellow World Islam Your Life Style 🥀

আন্তরীক্ষে কাদম্বিনী পর্ব - ০১বস, মাইয়াগুলা বেশি চিল্লাইতাছে।""বেশি চিল্লাইলে মুখের ভিত্তে কাগজ নইলে কাপড় ঢুকাই দে। শালা...
21/03/2025

আন্তরীক্ষে কাদম্বিনী পর্ব - ০১

বস, মাইয়াগুলা বেশি চিল্লাইতাছে।"

"বেশি চিল্লাইলে মুখের ভিত্তে কাগজ নইলে কাপড় ঢুকাই দে। শালা তোরে কি এইডাও এহন শিখাইয়া দেওন লাগবো?"

"সরি বস, অহনি যাইতাছি।"

"ওই হুন, মালের গাড়ি তৈয়ার করছোস? রাইতেই কিন্তু বর্ডার পার হইতে অইবো।"

"হ বস, রিয়াদে গাড়ি তৈয়ার করছে।"

"যাহ, মাইয়াগুলার মুখ বন্ধ কর। রাইতে বাইর হোওনের আগে মালগুলারে খাওন খাওয়াবি ওষুধ দিয়া। যাতে খাইয়াই ঘুমাই যায়। নয়তো শালিরা বর্ডার পার হওয়ার সময় চিল্লাপাল্লা করলে ভেজালে পড়ুম।"

"ওকে বস।"
ওকে বস বলে চলে গেলো সেলিম। যাকে বস বস করছিলো সে হলো আকাশ। এই পাচার গ্রুপের বস। তবে তারও উপরে বস আছে। যে কিনা ছোট বড় সব ক্লাইন্ট সামলায়। প্রায় বিশটার মতো মেয়ে যারা ষোলো থেকে বিশ বছর বয়সী। এদের পাচার করা হবে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একেকজনের কপালে জুটবে একেকরকম দূর্দশা। ওরা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার পার হবার।

পুরো শরীর ব্যথা সাঁতরে বেড়াচ্ছে। নিজেকে টেনেটুনে নিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসলো মেঘলা। দুহাত আর দুপা"ই বাঁধা আষ্টেপৃষ্টে। সবে জ্ঞান ফিরে নিজেকে এমন অবস্থায় আবিষ্কার করলো সে। ঘরটাতে তেমন উজ্জ্বল কোনো আলো নেই। ঝাপসা ঝাপসা লাগছে তার চোখে সবকিছু। এই ঝাপসা দৃষ্টিতে মেঘলা লক্ষ্য করলো যে, সে এখানে একা নেই। তার মতো আরো অনেক মেয়ে তার আশেপাশে তারই মতো বাঁধা অবস্থায় আছে। সবার মুখ বন্ধ। সম্ভবত এতক্ষণ অজ্ঞান থাকার ফলে তার মুখে লাগাম লাগায়নি। কতক্ষণ সময় যাবত এখানে আছে, তা ঠিক বুঝতে পারছে না মেঘলা। সেতো স্কুলের টিফিন টাইমে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো। রাস্তায় হঠাৎ একটা কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে থামলো। তারপর...

নিজেকে চোখ খুলে এখানে আবিষ্কার করলো। এমন একটা বিপদে কিভাবে আটকে গেলো সে। এই ফাঁদ থেকে বের হওয়া ওতো সহজ নয়। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়ার মেয়ে মেঘলা নয়। সে আশেপাশের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছে। হঠাৎ এমন সময় ঘরে একজন লোক প্রবেশ করলো। মেঘলা ঝট করে ঘুমের ভান ধরলো। জেগে থাকলে হয়তো সে ওই লোকদের নজরে পড়তে পারে। লোকটা এক এক করে সব মেয়েদের গণনা করলো।

গোনা শেষে বলল, "এক্কেবারে কড়ায় গণ্ডায় হিসাব ঠিক আছে। ভালায় ভালায় রাইতটা কাটাইবার পারলেই কেল্লা ফতে। আহা ট্যাকা আর ট্যাকা। তোরা সবগুলান যদি চুপ কইরা থাকোস তো তাড়াতাড়ি খাওন পাবি। নয়তো না খাইয়া শুটকি হবি। তোরা ভালা থাকলে আমরাও ভালা থাকুম।"

মেঘলা মৃদু চোখ খুলে লোকটাকে দেখলো। লোকটাকে দেখতে আসলেই ভিলেনের মতো। যারা অকর্ম করে, তাদের চেহারায় যেন সেটা ছাপা হয়ে থাকে। লোকটা সব-কয়টা মেয়েদের কাছে এগিয়ে এগিয়ে দেখছিলো। মেঘলার কাছাকাছি আসতেই মেঘলা পুরোপুরি চোখ বন্ধ করে নেয়। মেঘলার কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো লোকটা। লোকটার শরীর থেকে কড়া একধরনের বাজে গন্ধ আসছে। মেঘলার ক্ষুধার্ত পেটে হামলা হলো। নাড়িভুড়ি যেন পাকিয়ে উঠলো। নিজেকে কন্ট্রোল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে মেঘলা। একেইতো মেঘলার গন্ধটা সহ্য হচ্ছিলো না। তার উপর লোকটা মেঘলার কাছাকাছি বসে বলল, "সেলিম্মায় এই মাইয়াডার মুখ বন্ধ করলো না ক্যা? হালায় আন্ধা নাকি? খারা তোর চাকরীডা খাইতাছি।"

এই বলে লোকটা তার প্যান্টের পিছনে গুঁজে রাখা স্কস্টেপটা বের করে মেঘলার মুখে লাগিয়ে দিলো। লাগানো শেষে লোকটা রুম থেকে বের হয়ে গেলো। লোকটা বের হওয়ার সাথে সাথে মেঘলা চোখ খুলে লম্বা লম্বা নিশ্বাস নিতে লাগলো। তবুও যেন বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারছে না। পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে যাচ্ছে। সে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। এখানে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে পালাতেও পারে। মেঘলা ভাবছে, কি হবে যদি পালাতে না পারে? কোথাও কি বিক্রি করে দেবে, নাকি মেরে ফেলে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেবে? অন্যান্য মেয়েদের মতো উচ্চপর্যায়ের ভয় মেঘলার মনে জায়গা করতে পারেনি। সে একজন সাহসী ও বুদ্ধিমতী মেয়ে। বিপদের সময় নিজেকে শান্ত রেখে সমাধান খুঁজে সে।
আয়শা মাঝ উঠানে বসে বুক চাপড়িয়ে বিলাপ করছে মেয়ের জন্য। আয়শার দ্বিতীয় কন্যা মেঘলা। মেয়েটা এবার এসএসসি পরীক্ষায় বসবে। বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে স্কুল। প্রতিদিন দুপুরেই সে বাসায় এসে খাবার খায়। আজ সকালেও সে আয়শাকে বলে গিয়েছে তার জন্য চিংড়ি ভূনা করতে। আয়শা মেয়ের জন্য যত্ন করে রান্না করে রেখেছে। কিন্তু মেঘলা খেতে আসেনি। খাবার নিয়ে শেষমেশ মেঘলার বাবা রফিকই গেলেন স্কুলে। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারলেন মেঘলা নেই। সে টিফিনে বাড়ির দিকে গিয়েছে। চিন্তায় পড়ে যায় রফিক। নিজেই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। স্কুলের ছুটি সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও রফিক খুঁজলো মেঘলাকে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

বাড়ি থেকে স্কুলের পথটার দুপাশে ছোট পাহাড়। দুপাহাড়ের মাঝের রাস্তা দিয়েই বাড়ি আসতে হয়। এই রাস্তাটুকুই মাঝেমধ্যে গাড়িঘোড়া আসা ছাড়া তেমন কোনো মানুষের উপস্থিতি থাকে না। তাই মাঝ রাস্তা থেকে হঠাৎ উবে যাওয়া মেঘলার কথা কেউ বলতে পারলো না। রফিক হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন। আয়শার চিন্তার মাত্রা প্রথম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। মায়ের মন সন্তানের বিপদের সংকেত অগ্রীম জানান দেয়। আয়শারও এখন সেরকম সম্বেদন হচ্ছে। রফিকের মলিন চেহারাখানা দেখে আয়শার বুকের ধরফরানি বেড়ে গেলো। রফিক যখন পুরোটা বলল, তখন আয়শার হার্ট অ্যাটাক হবার জোগাড়। বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল পড়ে গেলো। আয়শার সাথে তার শ্বাশুড়িও বিলাপে যুক্ত হলেন। মেঘলার বাবা রফিক, দাদা হাশেম ও মেঘলার বড় ভাই মাফফুজ বের হয়ে গেলো মেঘলাকে খুঁজতে।
তিনজন মিলে বাজারঘাট থেকে শুরু করে পাড়াপ্রতিবেশি, মেঘলার ক্লাসমেট ইত্যাদি সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজলো। কিন্তু মেঘলার খবর পাওয়া গেলো না। অবশেষে পুলিশের আশ্রয় নিতে শরণাপন্ন হলো। কিন্তু সেখান থেকে তেমন রেসপন্স পাওয়া গেলো না। ঘরের মেয়েটাযে এভাবে উধাও হয়ে যাবে সেটা কল্পনার বাহিরে। তাদের ধারণা, মেঘলাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। নয়তো মেঘলা কখনো এভাবে হারিয়ে যাবার মেয়ে না। খারাপ কিছু অবশ্যই ঘটেছে।

মেঘলার হারিয়ে যাবার খবর ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ এসে মেঘলার মা-দাদিকে শান্তনা দিচ্ছে। আবার কেউবা উলটো কাজও করছে। কানাঘুষা করে বলছে, "মাইয়াডাতো বিয়ার বয়সী। মনে অয় কোনো নাগরের লগে গেছে গিয়া। নয়তো এমনে নাই হইয়া যাইবো কেন?"

তেতো এই কথাগুলো আয়শার ঠিক হজম হচ্ছে না। মেঘলা কখনোই এমন মেয়ে না। খুবই সাদামাটা ভাবে চলাফেরা তার। দুই ভাইবোনের মধ্যে বেজায় ভাব। সে যদি কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতো তাহলে মাহফুজ সেটা জানতো। প্রতিবেশী যেমন ভালো হয়, তেমন খারাপও হয়। বিপদে পড়লেই প্রকৃত মানুষ চেনা যায়। যাদের সাথে ভালো সম্পর্ক সবসময়, তাদের মধ্য থেকেও এমন বাজে ধরনের কথা আশা করেনি আয়শা। কিন্তু এসব কর্ণপাত করতে হচ্ছে তাকে।

এমন সময় হাশেম, রফিক ও মাহফুজ বাড়িতে ফিরলো। মাহফুজ এসে হাঁক ছুড়ে বলল, "শুভাকাঙ্ক্ষী হইতে না পারলে শত্রু হইয়েন না। ভালোই ভালোই কইতাছি, চইলা যান।"

একজন ভেঙচি কেটে বলতে বলতে বের হলো, "এমন একটা ঘটনা ঘটছে তা-ও কি ক্ষ্যামতা দেখায়। ছেহ, লইজ্জা বলতে নাই কিছু।"

মাহফুজ রেগে গিয়ে বলল, "আপনার মেয়ে যে গতবছর পূব পাড়ার কাশেমের লগে এক ঘরে ধরা খাইলো, সেইটা কি ভুইলা গেছেন? নিজের পাছায় গু লইয়া ঘুরেন আবার কন অন্যের পাছায় ঘু। লজ্জাতো আপনার মতো মাইনসেগো নাই। আপনারে যেন আমাগো বাড়ির আশেপাশে আর না দেখি।"

মহিলা গটগটিয়ে ওদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। যেতে যেতে কি যেন বলল। কথাগুলো অস্পষ্ট ছিল। কিছু মানুষ এমন নাক কাটাই হয়। নিজেদের দুনিয়া উলটে গেলেও তাতে সমস্যা নেই। তারা অন্যের দুনিয়ায় কাঠি ঘুরানোটাই বেশি পছন্দ করে।

পুনরায় ঘরে আরেকজন প্রবেশ করলো। তবে সে প্রথমে আসা লোকটা নয়। লোকটা এসেই যেন মেঘলার দিকে তার দৃষ্টি স্থির করলো।

চলবে...............

[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভিন্ন আঙ্গিকের একটা থিম। কেমন লাগলো? সবার মতামত আশা করছি।]

20/03/2025

আন্তরীক্ষে কাদম্বিনী - পর্ব ১ | ভয়ঙ্কর পাচারের ফাঁদ | এক সাহসী লড়াই এর একটি রহস্যময় গল্প| Golpo

#ইসলামিক_কাহিনী #নৈতিকতা #সততা #মানবতা #ইসলামী_অনুপ্রেরণা #ধর্মীয়_শিক্ষা #বাংলা_গল্প #বাংলাগল্প #গল্পপাঠ #বাংলা #গল্প #বাংলা_গল্প #গল্পসমগ্র #বাংলা_গল্পপাঠ #ইসলামিক_কাহিনী #নৈতিকতা #সততা #মানবতা #ইসলামী_অনুপ্রেরণা #ধর্মীয়_শিক্ষা #বাংলা_গল্প #বাংলাগল্প

15/06/2024

🥀❤️:বিচ্ছেদ হোক সকল পাপের সাথে
সম্পর্ক হোক মহান রবের সাথে❤️

01/05/2024

মানি না মানবো না মানতে পারি না

15/04/2024

নেতাকে কঠিন ধোলাই

14/04/2024

কি উপায় হবে আমার মরনে।

14/04/2024

আদরও করিয়া মানুষ আল্লাহ বানাইয়া কেমনে দিবেন জাহান্নামে ফালাইয়া। হাফিজুর রহমান সিদ্দিকীর নতুন গজল।

14/04/2024

Address

Barishal
Barishal

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when প্রশান্তির আলো posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category