02/10/2025
মেয়েটার নাম ফারহানা বিথি।[ Farhana Bithi ] আপনারা অনেকেই হয়তো চিনেন। রাজশাহীতে থাকে। নওগা বাপের বাড়ি। হতদরিদ্র ঘরের মেয়ে। ভাগ্যক্রমে বড়লোক ঘরের বউ হয়েছে। তবে শশুর বাড়ি যতই বড়লোক হোক তাতে বউমার কপাল খুব একটা খোলে না। এই মেয়ে টা ভ্লগিং করে নিজের কপাল নিজেই খুলেছে। দেশ বিদেশে ঘুরতে যায়, নামি-দামি রেস্টুরেন্টের ওপেনিং এ যায়, লেটেস্ট আই ফোন বাজারে এলেই কিনে, দামি দামী জামা কাপড় পি আর হিসেবে পায়। গত বছর ঘরবাড়ি ইনটেরিয়র করে ফাইফ স্টার হোটেল বানিয়ে ফেলেছে। আর মানুষের কাছে তার সবচেয়ে বেশী যে জিনিস টা টানে সেটা হচ্ছে ওর দুই সিট চার চাক্কার গাড়ি মাজদা।
গ্রামের একটা সহজ সরল মেয়ে নিজের টাকায় গাড়ি নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে দৌড়ে বেড়াচ্ছে এটা অনেকের চোখে লাগাটা স্বাভাবিক। ছেলেরা চিন্তা করে আমি ছেলে হয়েও যেটা পারছি না ও মেয়ে হয়ে সেটা করে বেড়াচ্ছে আর মেয়েরা ওর মতোন জীবন চিন্তা করতেও ভয় পায় সুতরাং হিংসায় গা কিটকিট করাটা স্বাভাবিক!
ওর কথা আজ বলছি করন ওর সাথে আমার একটা মিল আছে, আমার বাপের বাড়ি পাবনা ওর বাপের বাড়ির কাছেই। ও যখন একাই ওর মেয়ে পাশে বসিয়ে নিজে ড্রাইভ করে বাপের বাড়ি চলে যেতো আমার তখন খুব গর্ব হতো, আবার একটু হিংসে হতো যে ও মাত্র দুই বছরে এতো কনফিডেন্স পায় যে একা একাই এতো দূর বাপের বাড়ি চলে যায়। আর আমি পাঁচ বছরে ও শুধু মাত্র উত্তরা আর মিরপুর ছাড়া একা কোথাও যেতে সাহস পাইনা। তাছাড়া আমি ওর মতোই গাড়ি চালাতে খুব ভালোবাসি। মন খারাপ, ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তা ব্যাস গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যাই। নিজের পছন্দের কোন একটা গান চলে। মনটা ধীরে ধীরে হালকা হয়ে যায়। আগে বন্ধু বান্ধব নিয়ে খুব বের হতাম, আড্ডা দিতাম, রেস্তোরাঁয় খেতে যেতাম, শপিং করতাম, এখন একাই যাই এদিক ওদিক হালকা ঘুরে চলে আসি। তবে ঢাকা শহরে এটা খুব একটা আনকমন নয়। এখানে আমার মতোন অনেকে নারীই সাচ্ছন্দ্যে গাড়ি চালায়।
তো এখন আসি আসল কথায় গত পরশু মেয়েটার গাড়ি এক্সিডেন্ট করছে। তার শখের গাড়ির ইন্জিনের অংশটা দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। সে আর তার পাশের মেয়ে টাও বেশ আহত হয়েছে। শুধু মরে যায়নি এতোটুকুই বাকি ছিলো। তার ভাস্যমতে একটা ট্রাক কে ওভারটেক করতে গেছে, সামনে একটা অটো ছিলো তাই ওভারটেক ফেইল হয়েছে সে উপায় না দেখে গাছের সাথে লাগিয়ে দিয়েছে। আটো আলার অটোর ক্ষতি হয়েছে সবমিলিয়ে বিশ্রী একটা অবস্থা।
আহত অবস্থায় মেয়ে টা গাড়ি থেকে বের হয়ে আসছে। তার গাল বেয়ে রক্ত পড়ছে। কিন্তু আশেপাশের মানুষেরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে। কেও কেও ভিডিও করছে। কেও ওর সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। কেও এক গ্লাস পানি সামনে ধরেনি। কেও নাহ। অথচ ও কিন্তু রাজশাহীরই মেয়ে।
সে পরিস্থিতি সামলে ঘরে এসে এক্সিডেন্টের বিষয় টা ফেসবুকে শেয়ার করলো। অমনি শুরু হলো আলহামদুলিল্লাহর ঝড়। আমি অবাক হয়ে দেখলাম প্রতি ১০০ টা কমেন্টের মধ্যে ৯৫ টা কমেন্ট ঠিক হইছে, খুশি হইছি টাইপ। কেও কেও এটাও বলেছে মরে গেলে আরো বেশি খুশি হতাম। অথচ ওরা কেওই বীথি মেয়েটাকে ব্যাক্তিগত ভাবে চিনে না। অথবা এদের কারও সাথে ওর কোনো বিদ্বেষ নাই। ওকে যদি তোদের সহ্য না হয় দেখতে ইচ্ছে না হয় ওকে দেখিস না, ব্লক করে রাখ। তোরাই অলস সময়ে ওর ভিডিও দেখে দেখে ওর ভিউ বারাস। সেই ভিউ বেচে ও ডলার কামাই করে আনে। সেই ডলারে ও ফুটানি করে। ওর ভিডিও দেখা বন্ধ করে দেন ওর ফুটানি কমে যাবে। কিন্তু অপঘাতে ওকে মরতে বলার আপনি কে? ওর ঘরে যে পাঁচ বছরের শিশু আছে ওর দায়িত্ব কি আপনারা নিবেন??
এতোকথা বলতাম না। বললাম কেন গত মাসে আমার গাড়িও ছোটখাটো একটা এক্সিডেন্ট করেছিলো। যদি ও বেশির ভাগ সময়ই দোষটা ড্রাইভারের থাকে না কিন্তু সেই ড্রাইভার যদি হয় একটা মেয়ে। (পড়ুন সুন্দরী নারী) তাহলে তার দোষ আরো বেশি। যাইহোক, ঠিক করেছি আমি যতো ভালো গাড়ি চালাই না কেন, যত বছরের এক্সপেরিয়েন্স থাকুক না কেন এই অসভ্যের দেশে গাড়ি চালানো একটা মেয়ে মানুষের কম্য নয়। আমি কখনো কোনো ট্রাক বা বাস কে রিস্কি ওভারটেক করি না। শুধু মেয়ে মানুষ দেখে কতো অটোরিকশা আমাকে সাইড দিতে চায় না। গাড়ির অসভ্য ড্রাইভার গুলো আমাকে দেখে হুদাই হলুদ দাঁত বের করে হালকা একটু চাপ দেয়। একটু ঘাবড়ে দিয়ে মজা নেওয়া জন্য। আমি ঘাবড়াই না। কারো সাথে কম্পিটিশনেও যাই না।
কখনো যদি এমন কোনো গাড়ি দূর্ঘটনায় পরি। যদি আমার মৃত্যু হয় অথবা বড় ক্ষতি হয় আমার ধারণা Farhana Bithi মতো আমার চারপাশের মানুষ গুলো ও খুশি হবে। কেও হয়তো সামনের উপর বলবে না আবার কেও হয়তো সামনের উপর বলবে। যাদের বন্ধু মনে করি, আমার প্রতিবেশী, আত্নীয়, স্বজন যাদের কথাও কল্পনা ও করিনি তাঁরাও হয়তো খুশী হবে মনে মনে। বয়স যত বাড়তেছে মানুষের কদর্য রুপ ততই সামনে পড়তেছে। এখন তো মনে হয় একা থাকাই শ্রেয়, একা থাকাই ভালো। তারপর ও আমরা সামাজিক প্রাণী একা থাকতে পারি না। মানুষের সাথে মিশতে হয় কিন্তু যদি বন্ধুর মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষ গুলোর আসল চেহারা দেখা যেতো তাদের সাথে আর মিশতে হতো না।
কমবেশি আমরা সবাই ঈর্ষা করি, হিংসা করি অন্যকে। কিন্তু নিজের কথা, ভাষা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটা বিশাল বড় একটা ব্যার্থতা। অন্যর আয় উন্নতি দেখলে হয়তো আপনার গা জ্বলে যায়। নতুন গাড়ি বাড়ি কিনতে দেখলে শরীর পুড়ে যায়। তারপর যখন দেখেন সেই গাড়ির এক্সিডেন্ট হলো তখন শান্তি লাগে। যখন দেখেন বাড়িটা বিক্রি করে দিতে হলো তখন তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন। আপনি / আপনারা কেমন মানুষ আয়নার সামনে দাড়িয়ে একটু নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করবেন প্লিজ!
Collected