![#তিক্ততায়_তৃপ্তি [ ৩য় ও শেষ পর্ব ] লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজ নিরব বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই আইরিন ভয় পেতে থাকে। তাহলে ...](https://img3.medioq.com/603/395/122120871506033954.jpg)
30/09/2023
#তিক্ততায়_তৃপ্তি
[ ৩য় ও শেষ পর্ব ]
লেখক - শহীদ উল্লাহ সবুজ
নিরব বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই আইরিন ভয় পেতে থাকে। তাহলে কি সত্যিই নিরব আবার বিয়ে করতে যাচ্ছে? তাহলে কি আইরিনের জীবনে সুখ নামক কোনো কিছু নেই? আইরিন এসব ভাবছে আর অঝোরে কান্না করছে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। নিরব এখনও বাসায় আসেনি। আইরিন নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তখন নিরবের আম্মু আইরিকে ডেকে তার কাছে নিয়ে যায়।
-- বউমা এদিকে আসো।
আইরিন তার শ্বাশুড়ি সাথে শ্বাশুড়ির রুমে চলে গেলো। আইরিনের শ্বাশুড়ি কিছু গহনা বের করে আইরিনের হাতে দেয়।
-- এসব কি মা? আর এতো দামী দামী গহনা আমাকে কেন দিচ্ছেন?
-- এই সব আজ থেকে তোমার। আমি তো অনেক দিন ধরে আগলে রেখেছি এবার তোমার জিনিস তুমি বুঝে নাও।
-- মা এসব আমার দরকার নেই। আর এতো দামী গহনা আমি কখনও পড়িনি। এসব আমার লাগবেনা মা।
-- লাগবেনা বললে তো হবেনা। এসব গহনা তোমার জন্য বানানো হয়েছে। এসব তোমার তুমি রেখে দাও।
-- আমার জন্য কে বানিয়েছে এসব?
-- কে আবার নিরব। নিরব এসব তোমার জন্য অনেক আগেই বানিয়ে রেখেছে।
-- আমি ঠিক বুঝলাম না মা।
-- তোমার এতো কিছু বুঝতে হবেনা তুমি এসব নিয়ে এখন রুমে যাও। আর দেখি আমার বউমাকে কেমন লাগছে। বাহ খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।
আইরিন পুরো অবাক হয়ে গেলো। তার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। আইরিন এবার নিজের রুমে চলে যায় আর গহনা গুলোর দিকে সে তাকিয়ে থেকে। আইরিন বুঝতে পারছেনা নিরব কেন তার জন্য এসব আগে থেকে বানিয়ে রেখেছে? নিরবের তো অন্য কারোর সাথে সম্পর্ক আছে। আর নিরব তো আইরিনকে বিয়ে করছে প্রতিশোধ নিতে। তাহলে কি নিরব তাকে করুণা করছে? আইরিন এবার গহনা গুলো এই সাইডে রেখে দেয়। ঘড়িতে রাত ১১টা ৫০ বাজে এমন সময় নিরব রুমে আসে।
নিরব রুমে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। আইরিন নিরবের দিকে তাকায়। আর নিরবের আশেপাশে ও তাকায়। নিরব একাই আছে। নিরব এবার রুমের ভিতরে আসে। আইরিন গহনা গুলো হাতে নিয়ে নিরবে কাছে যায়।
-- এসব কি? আমাকে আপনি করুণা করছেন? আপনার এসব আমি চাইনা।
নিরব একটা হাসি দিয়ে বলে -- তোকে আমি করুণা করতে যাবো কেন?
-- তাহলে এসবের মানে কি?
-- সব কিছুর মানে একটু পরেই পাবে। তুমি এখন আমার সাথে চলো।
-- আমি আপনার সাথে কোথায় যাবো?
-- বেশি কথা না বলে চুপচাপ আমার সাথে চল।
নিরব আইরিনের হাত ধরে ছাদের উপরে নিয়ে যায়। পুরো ছাদ অন্ধকার হয়ে আছে।
-- আপনি আমাকে এতো রাতে ছাদের উপরে নিয়ে আসলেন কেন?
-- নিয়ে আসার তো কারণ আছে। তোকে এখন আমি ছাদ থেকে ফেলে দেবো।
নিরবের কথা শুনে আইরিনের গলা শুখিয়ে যায়। আইরিন খুব বেশি ভয় পেয়ে যায়।
আইরিনের ভয় পাওয়া দেখে নিরব মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। হঠাৎ করে ছাদের উপরে লাইট অন হয়ে যায়। হঠাৎ করে লাইট অন হতে দেখে আইরিন ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। কয়েকজনের শব্দ শুনে আইরিন চোখ খুলে তাকায়। নিরব একটা ফুলের তোড়া নিয়ে আইরিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল -- শুভ জন্মদিন আইরিন। জন্ম দিনের অনেক অনেক শুভকামনা রইলো তোমার জন্য।
সাথে সাথে ছাদের উপরে আলোর খেলা শুরু হয়ে গেলো। আইরিন সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে খুব সুন্দর ভাবে আইরিনের নাম লেখা লাইটিং দিয়ে। এসব দেখে আইরিন হতবাক হয়ে যায়। এবার নিরবের বাবা-মা এসে আইরিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। নিরব আইরিনের সামনে অনেক বড় একটা কেক নিয়ে আসে। সবাই এক সাথে কেক কাটে। তারপর সবাই নিজের রুমে চলে গেলো। ছাদের উপরে শুধুই আইরিন আর নিরব আছে। আইরিন তো পুরো থ হয়ে আছে। যে নিরব কে সে চিনত এটা কি সেই নিরব?
নিরব আইরিনের কাছে এসে বলল -- আজ থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু আইরিন। আগের সব কষ্ট ভুলে নতুন জীবন শুরু করবে। আর কোনো কষ্ট তোমাকে স্পর্শ করতে পারবেনা।
নিরবের কথা শুনে আইরিন আরো বেশি অবাক হয়ে গেলো। আইরিনের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা।
-- আইরিন। আই এম সরি।
-- সরি কেন বলছেন?
-- এতোদিন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
-- বাদ দেন এসব আপনার বউ কই? আপনি না বিয়ে করতে গিয়েছেন?
নিরব একটা হাসি দিয়ে বলল -- এসব কিছুই না। এসব আমার সাজানো নাটক ছিলো। আসলে আমি বুঝতে পারতাম তোমার খারাপ লাগছে। কিন্তু আমার কিছুই করার ছিলনা। আমি এই রাতের অপেক্ষায় ছিলাম।
-- আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। সব আমার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। আপনি আমাকে সব ক্লিয়ার করে বলুন প্লিজ। আর আমি গহনার ব্যপারে ও জানিতে চাই।
-- ওকে তাহলে শুনো। আমি গ্রামে এসে যখন প্রথম তোমাকে দেখি সেদিনই তোমাকে আমার ভালো লেগে যায়। বলতে গেলে তোমাকে আমি ভালোবেসেই ফেলি। আমি তোমার ব্যবহারে সব খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করি। আমি জানতে পারি তোমার কষ্টের কথা। সৎ মায়ের কাছে থেকে তোমার বেড়ে উঠা। কতো অবহেলা সহ্য করলে। তোমার সৎ মায়ের আচরণ। আমি সব খোঁজ নিলাম। এসব শুনে আমার খুব খারাপ লাগে। তাই আমি আগে তোমার সৎ মাকে হাত করি। আর তাকে টাকার লোভ দেখাই। কারণ আমি জানি তোমার বাবা ও তোমার সৎ মায়ের কথা রাখবে। আমার সব প্ল্যান কাজ করতে শুরু করে। যেদি আমাদের দেখা হয় প্রথম। তোমাকে এসব বলার কারণ একটাই ছিল। আমি জাস্ট তোমাকে দেখাতে চাইছি তুমি কেমন পরিবারে আছো। যেখানে টাকার জন্য তোমাকে বিক্রি করে দিচ্ছে তারা। ঐ দিন তোমাকে এসব বলার পর থেকে আমার কাছেও খুব খারাপ লাগে। কিন্তু কিছুই করার ছিলনা আমার। তোমার সৎ মায়ের একাউন্টে আমি ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। আর উনিও রাজি হয়ে তোমাকে আমার সাথে বিয়ে দেয়। আমি তোমার সাথে সব কিছুই করছি তোমার সব কষ্ট একে বারে মুছে দিতে। আর গহনা গুলো আমি অনেক আগেই বানিয়ে রাখি। কারণ আমার আত্মবিশ্বাস ছিলো আমি তোমাকে বিয়ে করবই। আর যেসব করছি সব আমার সাজানো ছিল। আইরিন আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমার সব কষ্ট দূর করে দিতেই তোমার জীবনে এসেছি।
আইরিনের চোখের পানি পড়ছে। নিরব আইরিনের চোখের পানি মুছতে যাবে এমন সময় আইরিন নিরবের হাত সরিয়ে দেয়।
-- আমাকে স্পর্শ করবেন না আপনি। আমি আপনাকে ঘৃণা করি।
এই কথা বলে আইরিন চলে গেলো। নিরব ছাদের উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরে আইরিন আবার ছাদে আসে। আইরিনের পায়ের শব্দ শুনে নিরব পিছনে তাকিয়ে আইরিনকে দেখে অবাক হয়ে যায়। নিরবের গহনা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে আইরিন। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। নিরব কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছেনা।
-- কি দেখছেন এই ভাবে?
-- তোমাকে, তোমাকে আজ অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। যেনো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা পরি।
নিরবের কথা শুনে আইরিন লজ্জা পেয়ে যায়।
-- ধন্যবাদ আপনাকে।
-- কীজন্য ধন্যবাদ দিলে?
-- সব কিছুর জন্য। এই প্রথম কেউ আমার জন্মদিন পালন করছে এতো সুন্দর করে। আমি কখনও কল্পনাও করতে পারিনি আপনি আমার জন্য এতো কিছু করবেন। আজ সত্যি আমি অনেক বেশি খুশি।
-- আইরিন আর কান্না নয়। এখন থেকে তুমি হাসবে। তোমার চোখে আর যেনো পানি না দেখি।
আইরিন কোনো কথা না বলে নিরকে জড়িয়ে ধরে। দু'জন দু'জনকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখে। নিরব আইরিনের কানের কাছে গিয়ে বলল হবে নাকি আজকে রাতে আমাদের বাসর?
নিরবের কথা শুনে আইরিন লজ্জা পেয়ে যায়। নিরব এবার আইরিনকে কোলে তুলে নিজের রুমে চলে গেলো। তারপর আর কি যা হবার তাই হলো। দুজনেই ভালোবাসার সাগরে ডুবে গেলো। এর পর থেকেই আইরিনের সব কষ্টের দিন শেষ হয়ে সুখের জীবন শুরু হয়। নিরব আইরিনের সব খেয়াল রাখে। দুজনেই খুব হ্যাপি।
সমাপ্ত।
আসসালামু আলাইকুম। তিন পর্বের একটা ছোট গল্প এটা। কেমন হয়েছে জানাবেন ধন্যবাদ সবাইকে ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।