09/12/2024
তারে দেখেছিনু খুব কাছ থেকে
সালাহউদ্দিন আকন্দ
জেসিকা আলবার্টার সাথে আমার দেখা হয় জয়নাগাছা ক্যাথলিক চার্চে। টাঙ্গাইলে চাকরি করার সুবাদে মধুপুর জাতীয় উদ্যানে গিয়েছিলাম ঘুরতে। উপজাতী অধ্যুষিত মধুপুরে যদিও এখন আর তেমন তিব্বতীয় বংশোদ্ভুত গারোদের দেখা যায় না তবে করোটিয়ার পন্নীদের জমিদারির সময় সিংহভাগ আদিবাসিই ছিল গারো। খ্রিস্টানদের মধ্যে ক্যাথলিকদের প্রভাব বেশি থাকায় পৃথিবীতে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানদের প্রায় সবাই ক্যাথলিক। তাই ক্যাথলিকদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই মূলত চার্চে যাওয়া। তারও আগে বিশপ পুনেন ফাদারের সাথে পরিচয় ছিল। তাই আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। যাই হোক জয়নাগাছা নয়া বাজারে সামান্য চা-বিস্কুট খেয়ে হাটা ধরলাম চার্চের পথে। ডিসেম্বর মাসের আগমনে চার্চ সেজেছে নতুন রুপে। দুই পাশে বাঁশ এবং পিলারের বেড়া দেয়া এবরো -থেবরো মাটির রাস্তা ধরে এগুচ্ছি তখন দুপুর প্রায় ১২ টা বাজে। ১২ টায় নিজের ছায়া মাটিতে পড়ে না। জেসিকার ছায়া আমি দেখিনি, শুধু তাকেই দেখেছিলাম। বাদামী চুলের ঝুলফি সাদা স্কার্ফের দুপাশ দিয়ে দুলছিলো। আমাকে দেখে ঝাউ গাছের আড়ালে লুকিয়ে গেল সে। আমি ভাবলাম হয়তোবা চার্চের নানরা একটু লজ্জাবতীই হয়। আমি আরেকটু এগিয়ে গেলাম। চারবার পিছনে তাকিয়েছিলাম। তাকে আর দেখতে পাইনি। অবশেষে ফাদারের সাথে দেখা হলো। গল্প করছি, তখন জানতে পারলাম জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের জগৎ বিখ্যাত সেইন্ট জাস্টিন চার্চ ( Justinuakirche) থেকে একদল সন্যাসী এসেছে। আমার বুঝতে বাকি রইলো না আমার দেখা মেয়েটা জার্মানি থেকে আসা ওই দলেরই। ফাদার জানালো ওরা ইংরেজি বুঝে না। তাই এখানে একটু অস্বস্থিতে আছে। তারপর আবার দোভাষীও পাওয়া যাচ্ছে না। পরশু ওরা চলে যাবে তাই আমি যদি একটু দোভাষীর কাজটা করে দিই তবে ভালো হয়। আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম! ফাদার বললেন সমস্যা হবে না আমি তোমার ধর্ম প্রকাশ করবো না। আপাদত সালভাদর নামটা তুমি নিয়ে নাও। কেবল তো একদিনেরই কাজ। রাজি হয়ে গেলাম।
জেসিকার সাথে আমি প্রথম কথা ছিল Hallo, ich bin Salvador. এরপর আমাদের আরো অনেক কথা হয়। অনেক অজানা কথাও, যেগুলো আমি বাংলায় অনূবাদ করিনি কখনো। জেসিকার সন্যাসী হওয়ার গল্প, হো'স্ট (HOCHST) শহরে আসার গল্প, আরো অনেক কিছু। আমিও তাকে জানালাম আমার বেপরোয়া জীবনের গল্প, অঘোষিত সন্যাসী হওয়ার গল্প। খুঁজে পেলাম আমাদের মিল কেবল একটা জায়গাতে নয়, বহুকিছুতে। সে নান, আর আমি? আমিও সেই একই পথের পথিক শুধু সেটার বৈধ কোন দলিল নেই। আমরা বই পড়তে ভালোবাসি, কীটস, শেলি কিংবা সেক্সপিয়র-ইয়েটস। ঘটনাটা লেখার কোন ইচ্ছে ছিল না। তবে যেদিন জেসিকার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসি সে এক টুকরো কাগজ হাতে দিয়ে বলেছিল, এটা আমি জার্মানি চলে গেলে পরে খুলে দেখো। আজ যখন এটা খুলি তাতে লেখা ছিল, Wirst du bei mir in Deutschland sein?
বই মেলা দেখার জন্য ফ্রাঙ্কফুর্ট যেতে চেয়েছিলাম। মেইন নদীর পাড়ে বসে একটা রাতে নাৎসি বাহানীর ধংসস্তুপেও টিকে থাকা ১২০০ বছরের পুরনো সেইন্ট জাস্টিনের ক্রুশের ওপরে তারাভরা আকাশটা দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।