27/05/2025
"সেই হাইস্কুলের সকালগুলো..."
ঘুম থেকে উঠেই এক চোখে আধা বন্ধ চোখে বইয়ের দিকে তাকিয়ে ইংরেজি পড়তে যেতাম। তবে একটু দেরি করেই যেতাম, কারণ আমার ঘুম—সে ছিলো যেন গভীর কোনো সাগরের মতো।
ক্লাসে গিয়ে দেখি, আমার বন্ধুরা আগে থেকেই জড়ো হয়ে গেছে। কেউ মোবাইল ঘেঁটে ফ্রিফায়ারে ব্যস্ত, কেউ আবার গল্পে গা ভাসিয়েছে।
একসাথে হতেই যেন এক অদ্ভুত আনন্দ ছড়িয়ে পড়ত চারপাশে।
স্যারও একটু দেরিতেই আসতেন। তবে এসেই পড়াতে লেগে যেতেন না। বরং শুরু হতো গল্প—নিজের জীবন, পরিবার, অভিজ্ঞতা, এমনকি কিছু দুঃখের কথাও। আমরা শ্রোতা হয়ে শুনতাম, কেউ কেউ মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিতো, কেউ মুচকি হাসত।
এভাবে পুরো প্রাইভেট টাইমটাই কখন যেন শেষ হয়ে যেত। শেষে স্যার বলতেন, "আচ্ছা এবার একটু পড়া দেখি।" তারপর সময় থাকত মাত্র ২০ মিনিট।
আর সেই শেষ ২০ মিনিটে এমনভাবে পড়াতেন যে মনে হতো—এই মানুষটা যদি প্রতিদিন ৬০ মিনিট এমন করে পড়াতেন, তবে আমরা সবাই বিদ্যাসাগরকে ছাড়িয়ে যেতাম!
প্রাইভেট শেষে দৌড়ে বাসায়, তারপর খাওয়া-দাওয়া সেরে স্কুলের পথ ধরি। তবে স্কুলের প্রতি আমার টান ছিলো একটু কম—সপ্তাহে ২-৩ দিনই ক্লাস করতাম। আর এজন্য কম শুনতে হয়নি, স্যারদের ঝাড়ি, বন্ধুরা টিটকারি সব ছিলো একসাথে।
ক্লাসের সবচেয়ে প্রিয় বিষয় ছিলো—চুল! হ্যাঁ, স্যারদের যেন আমাদের চুলের দিকেই সব মনোযোগ। কেন স্যার আপনাদের নেই বলে কি আমাদের বয়সেও চুল বড় করাটা আটকাবেন।
পাঠদানের ফাঁকে এক স্যার পড়া শেষ করেই চলে যেতেন। যদি স্যার আসতে একটু সময় লাগত তাহলেই শুরু হতো মনোমুগ্ধকর সব কর্মকাণ্ড।
হঠাৎ এক বন্ধু বলে উঠতো, "স্যার, ওয়াশরুম!"
গন্তব্য যে কেবল ওয়াশরুমই ছিলো না, এই বিষয়টা না হয় তোরা বুঝে নে।
আর ৪র্থ পিরিয়ডের পর? কেউ পেট ব্যথা, কেউ মাথা ঘোরা, কেউ আবার বুক ধড়ফড়—কার কী সমস্যা কে জানে!
হেডস্যার ছুটি দিলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি, আর না দিলে কেউ কেউ জানালা দিয়ে দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিতেও রাজি!
ছুটি হলে সবাই যার যার বাসার পথে রওনা দিত। কিন্তু সেই সময়টুকু ছিলো অসীম আনন্দের।
বন্ধুরা—তাদের উপস্থিতি ছিলো যেন ভালোবাসারই আরেক নাম।
ওদের সঙ্গে থাকা মানেই ছিলো হাসি, দুষ্টুমি আর মনে রাখার মতো প্রতিটি মুহূর্ত।
দুইটা বছর যেন হাওয়ার মতো উড়ে গেল। এখন আর কেউ আগের মতো নেই।
সবাই ব্যস্ত, সবাই নিজের নিজের পথে।
তবুও সেই সময়, সেই মানুষগুলো, সেই চেনা ভবনটি, সেই সকাল-বিকেল… খুব মিস করি।