16/02/2025
সালাত ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগকারী এবং অস্বীকারকারী-উভয়ই কাফির হয়ে যায়।
মুলঃ ইমাম ইবনে উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ।
📚 যারা সালাত (নামায) কে ইসলামের স্তম্ভ হিসেবে স্বীকার করে কিন্তু তা আদায়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ ছাড়াই অনিয়ম করে, তারা মুসলিম থাকে না। সৌদি আরবের বিখ্যাত ইমাম আল্লামা ইবনে উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ এর ‘হুকুম তারিকুস সালাত’ অর্থাৎ ‘নামায ত্যাগকারীর বিধান’ বই থেকে এই বিষয়ে আলোচনা সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হল।
📓 কুর’আন হতে প্রমাণঃ
১) সূরা আত-তাওবাহ-১১— “তবে এখন যদি তারা তাওবাহ করে, সালাত আদায় করে, যাকাত প্রদান করে, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।
এই আয়াতে দ্বীনি ভাই হওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলা কিছু শর্তারোপ করেছেন-
১ম শর্তঃ যেন তারা শিরক হতে তাওবাহ করে।
২য় শর্তঃ যেন তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে।
৩য় শর্তঃ আর যেন তারা যাকাত প্রদান করে।
অতএব, তারা যদি শিরক হতে তাওবাহ করে কিন্তু সালাত কায়েম না করে ও যাকাত প্রদান না করে তবে তারা আমাদের দ্বীনি ভাই নয়। আর দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব তখনই পুরোপুরিভাবে লোপ পায় যখন মানুষ ইসলাম থেকে সম্পূর্ণরূপে বহিস্কৃত হয়। ফাসেকী বা ছোট কুফরীর কারণে দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হয়ে যায় না।
২) সূরা মারইয়ামঃ আয়াত ৫৯– “তাদের পরে সেই অপদার্থগণ তাদের স্থলাভিষিক্ত হল যারা সালাতকে বিনষ্ট করলো আর মনের লালসা বাসনার অনুসরণ করলো। সুতরাং অচিরেই তারা তাদের অপকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। আয়াত ৬০– কিন্তু তারা নয় যারা তাওবাহ করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে; তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোন প্রকার যুলুম করা হবে না।
এই আয়াত সালাত ত্যাগকারীর কুফরী স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। আল্লাহ তা’আলা সালাত নষ্টকারী এবং লালসা-বাসনার অনুসরণ কারীদের সম্বন্ধে ৬০ নং আয়াতে বলেন যে তাদের মধ্যে তাওবাহকারী এবং ঈমান আনয়নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে।এখান থেকে একথা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, তারা সালাত বিনষ্ট করার সময়কালে মু’মিন ছিল না। (যদি মু’মিন থাকতো তাহলে আল্লাহ পাক পুনরায় ঈমান আনার কথা বলতেন না।)
📚 হাদীস হতে প্রমাণঃ
১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন— “নিশ্চয়ই মানুষ ও কুফরীর (শিরক) মাঝে পৃথককারী বিষয় হচ্ছে সালাত ত্যাগ করা।” (সহীহ মুসলিম)
২) আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের। অতএব, যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করল সে কুফরী করল।” (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)
আর এখানে কুফরীর অর্থ হলো, এমন কুফরী যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতকে মু’মিন ও কাফিরদের মাঝে পার্থক্যকারী বলে ঘোষণা করেছেন।
বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন— “সালাত ছেড়ে দেয়া তো কুফরী।” (তাফসীর ইবনে কাসীর; ১৪ নং খন্ড; ১৭৩ পৃষ্ঠা।)
সালাউদ্দীন আইয়ুবী বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে (মুক্তির) যে প্রতিশ্রুতি আছে তা হল নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দেয়, সে কুফ্রী কাজ করে।
তিরমিজি, হাদিস নং ২৬২১
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
❝বান্দা ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত বর্জন।❞
সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১০৭৮
মুসলিমঃ ১৪৮, ১৪৯
তিরমিযীঃ ২৬১৮, ২৬১৯, ২৬২০;
আবূ দাঊদঃ ৪৬৭৮,
আহমাদঃ ১৪৫৬১, ১৪৭৬২;
দারিমীঃ ১২৩৬
মিশকাতঃ ৫৬৯
❝আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হলো সালাত। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো, সে কুফরী করলো।❞
সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১০৭৯
তিরমিযীঃ ২৬২১
মিশকাতঃ ৫৭৪।
❝মু’মিন বান্দা ও শিরক-এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত বর্জন করা।
অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো, সে অবশ্যই শিরক করলো।❞
সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১০৮০
সহীহ তারগীব ৫৬৫, ১৬৬৭।
আবূ ‘ঈসা বলেন, আমি আবূ মুসআব আল-মাদানীকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বলে যে, “শুধুমাত্র মৌখিক স্বীকৃতির নামই ঈমান” তাকে ত্বাওবাহ করতে বলা হবে, ত্বাওবাহ না করলে তাকে হত্যা করতে হবে।
জামে' আত-তিরমিজিঃ ২৬২২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
যারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় আর তারাই আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। (আন নামলঃ ৩)
উমর (রা.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফির।’ (বায়হাকি, হাদিসঃ ১৫৫৯, ৬২৯১)
আলী (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফির।’ (বায়হাকি, হাদিসঃ ৬২৯১)
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৬২৯১)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়ারই। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফির হয়ে গেল (কাফিরের মতো কাজ করল)।’ (মুসলিম, হাদিসঃ ৮২; তিরমিজি, হাদিসঃ ২৬১৯)