17/06/2025
আমি মনে করি বিয়ের পর পর নবদম্পতির আলাদা বাসায় শিফট হওয়া উচিত যদি সামর্থ্য থাকে।
সামর্থ্য না থাকলেও চেষ্টা করা উচিত আলাদা থাকার ব্যবস্থা করার।
কারণ, বিয়ের পরের সময়টাই আসল সময় নিজেদেরকে ভালো ভাবে জানার বোঝার, আর এই জানাবোঝার জন্য একান্ত সময়ের প্রয়োজন।
যে সময়টা পরিবারের সাথে থাকলে পাওয়া সম্ভব না। এখানে কিন্তু পরিবার আলাদা সময় দিবেনা, ব্যাপার টা এমন না।
পরিবার নবদম্পতিকে আলাদা সময় দিতে চাইলেও সেটা তারা ব্যবহার করতে পারেনা অনেক কারণে।
ছোটখাটো কয়েকটি উদাহরণ দিই-
রাতভর গল্প করে সকালে দেরিতে উঠলে কেউ কিছু না বললেও নিজের কাছেই গিল্টি ফিল হয়, একই সাথে লজ্জাও লাগে এই ভেবে যে কে কি মনে করলো!
দুপুরের ভাত ঘুমের পর হয়তো একে অপরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে গল্প করছে, অমনি কেউ ডাক দিবে, গেস্ট এসেছে নতুন বউকে দেখতে!
সন্ধ্যায় কিংবা মধ্যরাতে বারান্দায় অপরকে বাহুতে জড়িয়ে ধরে বসতে পারা যায়না, কে কখন ডাক দিবে!
দুজনে চা/কফি কিংবা ডিনারে যেতে চাইলে একটা দ্বিধা কাজ করে, পরিবারকে ছাড়া যাওয়াটা কেমন লাগে...ছোট ভাইবোন থাকলে আরও খারাপ লাগে তাদেরকে রেখে যেতে।
৩/৪ দিনের ছুটি পেলে কোথাও ট্যুরে যাওয়ার ইচ্ছে করতে পারে, কিন্তু সেখানেও দ্বিধা, এভাবে হুটহাট যাবো বাসায় কি বলা যায়...তাদেরকে রেখে যাওয়াটা কেমন দেখায়!
যেমন ইচ্ছে তেমন পোশাক পরা যায়না, যা ইচ্ছে তা বলা যায়না, যখন তখন রোমান্স করা যায়না...
সবসময় মাথায় রাখা লাগে সবার মধ্যে আছি!
সময় মতো না উঠলে কে কি ভাবে, এই পোশাক টা পরলে কে কি ভাববে, এই সময় ইন্টিমেট হইলে কেউ যদি বুঝে কেমন লাগবে, এই অবেলায় গোসল করা যায় কি বাহানায়...
কেউ কিছু ভাবুক আর না ভাবুক, ভাবতে পারে বলতে পারে বুঝতে পারে এই ভাবনাতেই নিজেদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা সুন্দর ভাবে কাটানো সম্ভব হয়না!
শুনতে এসব খুব সাধারণ মনে হলেও ঘরে ঘরে এইসব নিয়ে অনেক অশান্তি হতে দেখেছি শুনেছি।
কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, এটাই সত্য যে বিয়ের পর প্রথম কয়েকবছর যে পরিমাণ আগ্রহ একে অপরকে মানসিক শারীরিক ভাবে চেনার জানার কাছে পাওয়ার থাকে তা একেবারেই অন্য লেভেলের!
সময়ের সাথে সাথে এক্সাইটমেন্ট টা পরিবর্তন হয়ে যায়, তখন জীবন রুটিনের মধ্যে চলে আসে। ভবিষ্যৎ প্ল্যানিং, ফ্যামিলি প্ল্যানিং, ক্যারিয়ার ইত্যাদি ইত্যাদির মধ্যে নিজেদের একান্ত চাওয়া পাওয়া গুলা কিছুটা হলেও কমে যায়...
ভালবাসা কমার কথা বলছিনা কিন্তু!
ভালবাসা থাকলে আজীবন ই থাকে।
বলছি ভালবাসার ধরণ পাল্টানোর কথা।
একটা বাচ্চা হয়ে গেলে তখন জীবনসঙ্গী শুধু জীবনসঙ্গী থাকেনা, বাচ্চার বাবা/মা হয়ে যায়। তখন নিজেদের একান্ত সময়ের ভাগ বাচ্চাকে দেয়া লাগে...বাচ্চাকে নিয়ে নানান ব্যস্ততা চলে আসে।
তাই বাচ্চা হবার আগে যতটা সম্ভব নিজেদের সম্পর্কে সময় দেয়া উচিত, বন্ডিং টা শক্তপোক্ত করা উচিত, নিজেদের অভ্যাসের সাথে পরিচিত হওয়া উচিত। বিয়ে/জীবনসঙ্গী নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন/ফ্যান্টাসি গুলা পূরণ করে ফেলা উচিত।
আর এইটার জন্য প্রয়োজন আলাদা থাকার। শুধুমাত্র দুজনা থাকলে একে অপরের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে, মায়া বাড়ে, ভালবাসার প্রকাশ বাড়ে, সম্পর্ক মজবুত হয়।
কিন্তু যেখানে ছেলের বিয়ে দিলেই মনে করা হয় পুত্রবধূ এবার ছেলেকে বশ করে নিবে/নিচ্ছে...
সেখানে আলাদা থাকার কথা বললেই তো হাওকাও বেঁধে যাবে!
যেহেতু বিয়ের পর ছেলের পরিবারের সাথেই থাকা হয়, আপত্তিও তাই ছেলের পরিবার থেকেই আসে/আসবে।
এক্ষেত্রে ছেলের দায়িত্ব এই আপত্তি যেন না আসে সেই ব্যবস্থা করা, সবাইকে বুঝানো এই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে কেন।
অবশ্য বাঙালি ছেলেরা মুখে প্রগতিশীলতার কথা বললেও নিজের ঘরে সেই আদিমকালের মতো ব্যবহার করতে চায়!
মনে করে বিয়ে করলে সেই বউয়ের দায়িত্ব তার পরিবারের দেখাশোনা করা! অথচ এইটা খুবই অহেতুক চাহিদা!
পুত্রবধূ যদি পরিবারের দেখাশোনা করে, খোজ রাখে, ভালবাসে এইটা তার ভালো মানুষী, ভদ্রতা, মানবিকতা।
কিন্তু এইসব করতে সে বাধ্য না, আর তাকে বাধ্য করা উচিতও না।
এদিকে, অনেক ছেলে বিয়েই করে মা বাবার জন্য কাজের মেয়ে পাবার আশায়! অনেকে তো আরও একধাপ এগিয়ে, বিয়ে করে বউকে বাপ মায়ের কাছে রেখে সে চলে যায় দূরে কোথাও!
এইটা কেমন আচরণ আমি আসলেই বুঝিনা!
একটা মেয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করে। আর যাই হোক স্বামী ছাড়া শ্বশুরবাড়িতে থাকার স্বপ্ন দেখেনা মোটেও!
কিন্তু তাকে বাধ্য করা হয় এমন জীবন যাপন করতে...
এই পর্যন্ত পড়ে অনেকেই মনে করতে পারেন এই মেয়ে দেখি ছেলেকে তার পরিবার থেকে দূর হবার কথা বলছে!
ভুল বুঝেছেন।
পরিবারের সাথে দূরত্ব তৈরি করা আমার উদ্দেশ্য না, আমি সে কথা বলছিও না।
পরিবারের সাথে অবশ্যই যোগাযোগ থাকবে, কথা হবে, দেখা করতে যাওয়া হবে, সময় সুযোগ সামর্থ্য মিললে একসাথে ঘুরতে যাওয়াও হবে...
সবই হবে...
শুধু থাকাটা হবে আলাদা ফ্ল্যাটে, কিংবা আলাদা বাসায়।
ভাবতে পারেন যেমনটা বিয়ের পর একটা মেয়ে তার পরিবারের থেকে আলাদা থাকে, তেমনটা।
এতে কিন্তু সম্পর্ক নষ্ট হবার কোনো চান্স নাই।
একসাথে থাকলে বরং নানান সময় নানান রকমের সমস্যা হবে, সেই সমস্যায় না পারবেন স্ত্রীর সাইড নিতে আর না পারবেন পরিবারের সাইড নিতে..
মাঝামাঝি পিষবেন।
বলতে পারেন ব্যালেন্স করে চলা যায়।
তা যায়, কিন্তু এই ব্যালেন্স করা টা খুবই কঠিন...
অন্যদিকে, দূরে থেকেও ব্যালেন্স করে চলা যায়।
যাজ্ঞে, যার যার নিজস্ব ব্যাপার।
যে যেভাবে ভালো থাকে থাকুক।
আমি শুধু আমার মতামত বললাম, যেটা কেউ জিজ্ঞেস করেনাই।
আমি বললাম আমার ইচ্ছে হইসে তাই।
কে বুঝবে, কে মানবে, কে বুঝবেনা মানবেনা এইসব আমার দেখার বিষয় না।
অনেক লম্বা পোস্ট, যারা পড়বেন, তাদেরকে ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন আপনারা, একটাই জীবন, অল্প সময়ের...তাই ভালো থাকা জরুরি এই জীবনে ❤️