
19/10/2023
একটি দেশের ফুটবলের প্রতি হঠাৎ আকর্ষণ ।
সৌদি আরবের অর্থনীতি তেল নির্ভর এটা কমবেশি আমাদের সকলেরই জানা। তো তারা বেশ কিছু বছর হলো এই তেলের উপর যে অতিমাত্রায় নির্ভরতা সেটা কেটে উঠার জন্য চেস্টা করছে।এর জন্য তাদের সরকার বেশ কিছু মেগা প্রজেক্টে হাত দিয়েছে।সেটারই একটা অংশ হিসেবে বিগত বছরগুলোতে তারা খেলাধুলার প্রতি খুব বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।আর এখানে ফুটবলের প্রতি আগ্রহী হবে না সেটা কেমন করে হয়?
শেষ এক বছরে ইউরোপিয়ান ফুটবলের বড় বড় তারকাকে তারা তাদের নিজেদের ঘরোয়া লীগে এনেছে।
এখন ইউরোপে খেলা ফুটবলারেরা তো এমনি এমনি আসবে না। তার উপর তাদের ঘরোয়া লীগ এতো জনপ্রিয় ও না। এখানে তারা করলো কি? তারা ফুটবলারদের মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক অফার করলো। যে টাকাটা তারা ইউরোপে বেশ কিছু বছর খেললেও পেতো না।তাদের অফারগুলো এতোটায় লোভনীয় ছিলো যে তাদেরকে না করার আগে যে কেউ হয়তো কয়েকশতবার ভাবতো।
যাই হোক সব কিছুর একটা সুন্দর শুরু না থাকলে কি হয়? তারা বোমাটা ফাটালেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা তারকাকে সাইন করিয়ে। রোনালদোকে দিয়ে (সি আর সেভেন)।
এখন কথা হচ্ছে তাদের এই অখ্যাত লীগের ক্লাবগুলো এতো টাকা পায় কোথায় থেকে? পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফ্যান্ড(পি আই এফ) নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই ক্লাবগুলোকে অর্থ দিয়ে থাকে। এই পি আই এফ আবার পরিচালনা করে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহম্মদ বিন সালমান। বলে রাখা ভালো, তারা কিন্তু সব ক্লাবকে আবার
অর্থ দেয় না।পি এই এফের মালিকানাধীন ক্লাবগুলো হলো, আল হেলাল,আল নাসের,আল ইত্তিহাদ ও আল আহলি। খেয়াল করলে দেখা যায় সব বড় বড় ফুটবলাররা এই চার ক্লাবের হয়েই সাইন করেছে।আরেকটা প্রশ্ন আসতে পারে যে এতো টাকা ক্লাবগুলো খরচ করলে লীগ কতৃপক্ষ কিছু বলে না?? আসলে তাদের লীগে আয় ব্যয়ের এতো ধরা বাঁধা নিয়মই নাই।তার উপর যেখানে সরাসরি সেই দেশের সরকার নিজে থেকেই চাচ্ছে এসব বড় বড় তারকারা এখানে আসুক। এতোমধ্যে তারা নেইমার,বেঞ্জেমা,কান্তে,মাহরেজ,হেন্ডারসন, মানে সহ আরো বড় বড় তারকাকে সাইন করে ফেলেছে। সামনের বছর গুলোতে আরো করবে সেটা অনুমান করা যাচ্ছে।
তারা তাদের লীগকে শীর্ষ ১০ টা লীগের একটার জায়গাতে দেখতে চায়।
এগুলো করে তাদের সৌদি আরবের কি লাভ??
তেল বা প্রাকৃতিক এসব সম্পদ যে সারা জীবন থাকবে না এটা জানা কথা।এজন্য তারা এখান থেকে সরে এসে তাদের আয়ের বিকল্প উৎসের সন্ধান করছে। এই ক্ষেত্রে ফুটবল দারুন একটা মাধ্যম হতে পারে।ফুটবল পুরো বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়।এর মাধ্যমে বাইরের দেশের লোকদের আকর্ষণ করা তুলনামূলক সহজ।বাইরের ইনভেষ্টাররা এখানে এসে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে।যখন তারা দেখবে বিদেশী এসব ফুটবলারকে সেই দেশের লোকজন ভালো আচরণ করছে তখন তারাও সেখানে আসতে আগ্রহী হবে।এর মাঝেই তারা বিদেশীদের জন্য দেশের নানা নিয়ম শিথিল করেছে। এর ফলে ফুটবলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিদেশি পর্যটক আসছে এবং আসবে।পশ্চিমা মিডিয়া দ্যা গার্ডিয়ান অবশ্য অন্যরকম দাবী করেছে।তাদের মতে সৌদি তাদের সরকারের ভাবমূর্তি সমুন্নত করার চেস্টা করছে। দেশ, বিদেশে তাদের বিপক্ষে চলা যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবতাবিরোধী অভিযোগ,সেগুলোকে ধামাচাপা দিতে এসব করছে।সেটা যে কারণেই হোক,তারা কিন্তু এই ফুটবলের বিষয়ে বেশ সিরিয়াস সেটা মানতেই হবে।
শেষে একটু চমকে দেই, ২০২১ সাল থেকে তারা ফুটবলে ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।আরো অবাক করা ব্যাপার হলো পি আই আফ তাদেরকে মোট ৭৭৬ বিলিয়ন ডলার শুধুমাত্র ফুটবলে খরচ করার জন্য দিয়েছে।একবার চিন্তা করেন তারা ফুটবল নিয়ে কি করতে যাচ্ছে।
লেখাঃ আবু নোমাঈর সাকিব
২০ অক্টোবর ২০২৩