28/07/2025
প্রত্যেক মা তাদের সন্তান নিয়ে কনসার্ন থাকেন। সেল্ফ রুকইয়াহ, ঝাড়ফুঁক কমবেশি সব মায়েরা করে থাকেন। হয়তো কেউ কেউ জোর দেননা, রিসেন্ট দূর্ঘটনা দেখে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে ধীরে ধীরে এ শোক কাটিয়ে উঠলে হয়তো আবার গুরুত্ব কমে যাবে। অথচ আল্লাহর রাসূল ﷺ আমাদের হেফাজতের জন্য অনেক সুন্নাহ রেখে গেছেন যেটা সবসময়ের জন্যই।
নিঃসন্দেহে মৃত্যু এবং তাকদীর নির্ধারিত। কিন্তু দুআ হেফাজতের শক্তি হিসাবে কাজ করে। আমরা মনপ্রাণ দিয়ে এই সুন্নাহ আমল গুলো সর্বদা করার চেষ্টা করতে পারি। ধরতে পারেন প্রতিরোধক টিকার মতো কাজ করে দুআ, যা আগত বালামুসিবত থেকে বাঁচাতে পারে ইন শা আল্লাহ।
শুধু বাচ্চা না নিজেদের জন্যও ছোট ছোট কিছু আমলের চেকলিস্ট করতে পারি।
➡️ফজর এবং মাগরিবের পরঃ-
১। আয়াতুল কুরসী (সূরা বাকারা ২৫৫)
২। সুবাহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর (৩৩বার করে)
৩। সূরা ফাতিহা
৪। সূরা ফালাক্ব, নাস, ইখলাস (৩ বার করে)
৫। কালেমাগুলো- (৩ বার)
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهٖ عَدَدَ خَلْقِهٖ، وَرِضَا نَفْسِهٖ، وَزِنَةَ عَرْشِهٖ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهٖ
(অর্থঃ আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি — তাঁর সৃষ্ট বস্তুসমূহের সংখ্যার সমান, তাঁর নিজের সন্তোষের সমান, তাঁর আরশের ওজনের সমান ও তাঁর বাণীসমূহ লেখার কালি পরিমাণ অগণিত অসংখ্য)
(উচ্চারণঃ সুব্হা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী ‘আদাদা খালক্বিহী, ওয়া রিদা নাফসিহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী।)
৬। কিয়ামতের দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি - (৩ বার)
رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا، وَّبِالْاِسْلَامِ دِيْنًا وَّبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا
অর্থঃ আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।
(উচ্চারণঃ রদ্বীতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান)
৭। কোনো কিছু ক্ষতি করতে পারবে না - (৩ বার)
بِسْمِ اللّٰهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهٖ شَيْءٌ فِي الْاَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاۤءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
অর্থঃ আল্লাহ্র নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।”
(উচ্চারণঃ বিস্মিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদ্বুররু মা‘আস্মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম)
৮। আরেকটা ফজিলতপূর্ণ দুআ যা অধিক সাওয়াব তো বটেই পাশাপাশি শয়তান থেকেও সংরক্ষণ করবে - (১০০ বার অথবা ১০, এটলিস্ট ১ বার)
لَآ اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
(উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)
৯। কিয়ামতের দিন রাসূল ﷺ এর সুপারিশ - (১০ বার)
اَللّٰهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلٰى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর।
(উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম ‘আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ)
১০। সায়্যিদুল ইস্তিগফার - (এটলিস্ট ১ বার) - উক্ত দিন মারা গেলে জান্নাত লাভ করবে ইন শা আল্লাহ। (ছবিতে ইস্তেগফার এড করে দিলাম)
১১। শিশুদের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করা - (৩ বার)
اُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّاۤمَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَاۤمَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَاۤمَّةٍ
অর্থঃ আমি তোমাদের দু’জনকে আল্লাহ্র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে নিচ্ছি যাবতীয় শয়তান ও বিষধর জন্তু থেকে এবং যাবতীয় ক্ষতিকর চক্ষু (বদনযর) থেকে।
(উচ্চারণঃ উয়িযুকুমা বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিওঁয়া হা-ম্মাহ্, ওয়ামিন কুল্লি আইনিল্লা-ম্মাহ্)
১২। সূরা তওবা ১২৯ নং আয়াত - (৭ বার)
➡️ রাতে ঘুমানোর আগে -
১। সূরা বাক্বারার শেষ ২ আয়াত
২। সূরা মূলক
৩। ইস্তিগফার
৪। ঘুমানোর দুআ
৫। আয়াতুল কুরসী
৬। কালিমা
৭। দরুদ ইব্রাহিম
➡️ বাসা থেকে নিজে কিংবা বাচ্চারা বের হওয়ার আগেঃ
১। বাম পা দিয়ে -
بِسْمِ اللّٰهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّٰهِ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللّٰهِ
অর্থঃ আল্লাহ্র নামে (বের হচ্ছি)। আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।
(উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি, তাওয়াককালতু ‘আলাল্লা-হি, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)
২। আয়াতুল কুরসী
৩। বাচ্চা বের হলে বদনজরের দুআ আবশ্যক
৪। বেস্ট হয় তিন কুলসহ পড়া
➡️ অপশনাল তবে গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু দুআ -
১। মা বাবার জন্য দুআ
২। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ
৩। জাহান্নাম থেকে আশ্রয়ের দুআ
৪। উপকারী জ্ঞান
৫। মুসলিম হিসাবে ঈমানের উপর মৃত্যু
৬। আইয়্যুব (আঃ) এর দুআ (দুঃখ কষ্ট ও অসুস্থতা থেকে মুক্তির)
৭। আদম (আঃ) এর ক্ষমা চাওয়ার দুআ
৮। আরেকটা চমৎকার দুআ আছে একের ভিতর সব কবর, জাহান্নাম, দাজ্জাল, ঋণ সবকিছু থেকে আশ্রয়ের। দুআটি -
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْٓ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ، وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْـيَا وَالْمَمَاتِ۔ اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَاْثَمِ وَالْمَغْرَمِ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে, আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই পাপাচার ও ঋণের বোঝা থেকে।
(উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিন আযা-বিল ক্বাবরি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-লি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামা-ত। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল মা’ছামি ওয়াল মাগরম।)
➡️ ডেইলি টার্গেট - (আনলিমিটেড)
১। তওবা
২। দরুদ
৩। শোকর
দুআর লিস্ট করতে গেলে আসলে কোনটা রেখে কোনটা করবো বোঝা মুশকিল। সবগুলোই মনে হয় দরকারী। তবে যেহেতু সবার পক্ষে সব সম্ভব নয় এই লিস্টের মধ্যে এটলিস্ট রেগুলার যতটুক সম্ভব হয় চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ।
⚠️দ্রষ্ঠব্যঃ দুআ কবুলের সাথে হালাল রিজিকের সম্পৃক্ততা রয়েছে। হারাম ভক্ষণে দুআ কবুল হয়না।
পাশাপাশি উচ্চারণের ক্ষেত্রে সতর্কতা মাস্ট। উচ্চারণ যদিও দিয়েছি কিন্তু আরবি উচ্চারণ কখনোই বাংলা দেখে সঠিক হবেনা। তাই যথাসাধ্য আরবি দেখে সহিহ উচ্চারণ করতে হবে। উচ্চারণ ভুল হলে দুআর অর্থও বদলে যাবে।
লেখিকা- আইরা তাহরীম উষ্মি