26/09/2025
**শিরোনাম: “বাইকটা ছিল একমাত্র সঙ্গী”**
---
**পাত্র: রিদওয়ান**
বয়স ২৬। একটা সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে ৫ বছর ধরে।
অবস্থাপনা: মধ্যবিত্ত।
বাসা: পুরান ঢাকার একটা পুরোনো ফ্ল্যাটের এক চিলতে ঘরে মা-বাবা আর ছোট বোনের সাথে।
কথা খুব একটা বলে না। শহরের হইচই, বন্ধুদের আড্ডা, প্রেম—সব কিছুর বাইরে এক রকম নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।
তবে একটা জিনিস আছে যা তাকে এখনও ঠেকে রাখে—তার বাইকটা। একটা পুরোনো **Bajaj Pulsar 150**।
---
# # # **বাইকটা কিভাবে এলো?**
এই বাইকটা তার বাবা কিনে দিয়েছিল যখন সে অনার্স শেষ করে বিসিএস কোচিং শুরু করল।
বাবা তখন বলেছিল:
> “তুই যদি রাস্তায় দাঁড়ায়েও চাকরির খোঁজ করিস, বাইকটা তোকে সময় বাঁচাতে সাহায্য করবে।”
কিন্তু বাইকটা তখন শুধু সময় বাঁচানোর একটা যন্ত্র ছিল না। ধীরে ধীরে বাইকটাই হয়ে গেল রিদওয়ানের সব—তার একমাত্র সঙ্গী।
---
# # # **বন্ধুরা একে একে হারিয়ে গেল**
ক্লাসমেটরা চাকরি পেয়ে একে একে সরে গেল। কেউ বিদেশে চলে গেল, কেউ কর্পোরেট অফিসে ঢুকল, কারও বিয়ে হয়ে গেল।
আর রিদওয়ান?
সকাল ৭টায় বাইকে উঠে কোচিংয়ে যায়, বিকালে লাইব্রেরি, তারপর সন্ধ্যায় বাসায়। মাঝে মাঝে চুপচাপ বাইক নিয়ে শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।
ভেতরে একরাশ হতাশা, কিন্তু বাইকে বসে হাওয়ার টানেই যেন সব ভুলে যায় কিছু সময়ের জন্য।
---
# # # **একবার এক মেয়েকে ভালো লেগে গিয়েছিল**
কোচিং সেন্টারের পাশের বইয়ের দোকানে এক মেয়েকে প্রায়ই দেখত। মেয়েটার মুখে সব সময় একরকম শান্ত হাসি থাকত।
একদিন হঠাৎ হিম্মত করে মেয়েটিকে বাইকে করে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। মেয়েটা খুব অবাক হলেও কিছু বলেনি, শুধু বলেছিল:
> “তোমার বাইকটা পুরনো, কিন্তু তোমার চোখে ক্লান্তির পাশে একটা আশা আছে।”
সেই কথা এখনো কানে বাজে।
কিন্তু মেয়েটা আর কখনও দেখা দেয়নি। হয়তো বিয়ে হয়ে গেছে, বা হয়তো নতুন শহরে চলে গেছে।
রিদওয়ান কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
---
# # # **বেকার ছেলের সাথে বাইকের সম্পর্কটা অন্যরকম**
বাইকটা অনেক কিছুর সাক্ষী।
* চাকরির ইন্টারভিউ থেকে ফিরেই কাঁদা চোখে হেলমেট খুলেছে সে।
* মায়ের জন্য ওষুধ আনার তাড়ায় ট্রাফিক ভেঙেছে।
* বন্ধুদের সাথে দেখা না হলেও, বাইক ছিল পাশে।
* একা একা রাতে বসে গিয়েছিল নদীর পাড়ে – বাইকের ট্যাংকের উপর হাত রেখে মনে করেছিল – **"আমার না থাকুক কেউ, তুই তো আছিস।"**
---
# # # **শেষ দৃশ্য:**
সেদিন ছিল রিদওয়ানের ৫ম বিসিএস প্রিলির রেজাল্ট।
ফেইল করেছে।
বাইকে বসে চুপচাপ ছুটে গিয়েছে শহরের একদম বাইরে – গাজীপুরের দিকে।
বৃষ্টি পড়ছিল।
রাস্তার পাশে বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছিল।
কেউ ছিল না, শুধু বাইকটার ইঞ্জিন তখনও গরম।
সে হেলমেটটা রেখে বাইকের ট্যাংকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বলেছিল:
> “তোকে বেচে দিতে বলছে মা। নতুন চাকরি নাই, তেল কেনার টাকাও নাই। কিন্তু তোকে বেচলে আমি শেষ হয়ে যাবো রে ভাই।”
বাইকটা নীরব। কিন্তু যেন একটা অদৃশ্য বন্ধনের মত বলে –
**“আমি তোর সঙ্গেই থাকব, যতদিন তুই হাল ছাড়িস না।”**
---
# # # **শেষ কথা:**
বাইকটা একটা যন্ত্র, হ্যাঁ।
কিন্তু একজন মধ্যবিত্ত বেকার ছেলের কাছে সেটা একটা ভালোবাসা, একটা যুদ্ধের সঙ্গী, একটা নিঃশব্দ সাক্ষী।
**সে হয়তো সমাজের চোখে কিছুই না।
কিন্তু তার বাইকের চোখে, সে একজন যোদ্ধা।**
---