15/04/2025
“আমার জীবন থেকে নেওয়া…”
যখন ছোট ছিলাম, তখন পরিবার আমাকে অনেক শাসনের মধ্যে রাখত। আমরা পাঁচ ভাইবোন, কিন্তু আমাদের পরিবারে সবচেয়ে বেশি আদর আমাকে করা হতো ছোটবেলা থেকেই—সে হিসেবে শাসনটাও বেশি ছিল।
আমার বড় দুই ভাই, বড় এক বোন এবং ছোট এক বোন। মা-বাবার পাশাপাশি বড় ভাইরাও শাসন করত। যদিও আমার বড় বোন আমাকে শাসন করত না, আর করলেও আমি তার কথা খুব একটা শুনতাম না।
পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয় পেতাম আমার মেজু ভাইকে। আমি যখন ক্লাস ২-৩ এ পড়ি, তখন বড় ভাই বিদেশ চলে যায়। সে জন্য বড় ভাইকে কাছে খুব একটা পাওয়া হয়নি।
এখন আসি মূল ঘটনায়—
ছোটবেলা থেকে মেজু ভাই আমাদের তিন ভাইবোনকে অনেক কঠোরভাবে শাসন করত—আমি, আমার বড় বোন আর ছোট বোনকে।
ভাইয়ের অতিরিক্ত শাসনের কারণে বন্ধুদের সাথে ঠিকমতো আড্ডা দিতে পারতাম না, ঘুরতে পারতাম না। বাহিরে বের হলে মনে সবসময় একটা ভয় কাজ করত—মনে হতো, যদি ভাই জেনে যায়!
ভয়টা কতটা গভীর ছিল, সেটা একটু বোঝাই—আমি যখন ক্লাস ৬-৭ এ পড়ি, তখন ভাই নিজের পড়াশোনার জন্য ঢাকায় থাকত। আমি যদি কোনো ভুল করতাম, আম্মা তখন ভাইকে ফোন দিয়ে জানাতো। আর যখন আমি জানতাম যে ভাইকে বলা হয়েছে আমার ব্যাপারে. তখন ভয়ে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে যেত। এমনকি ভাই ঢাকায় থাকলেও তার প্রতি ভয় কখনো কমেনি।
সেই সময় আমার ভাইয়ের উপর অনেক রাগ হতো—মনে মনে বকাবকি করতাম। ভাই আমাকে অনেক মারত। তখন আফসোস করতাম, “আমার ভাই এমন কেন? অন্যদের ভাই তো এমন না!” সহপাঠীরা ঘুরে বেড়ায়, আড্ডা দেয়—আমি পারি না। হাজারটা অভিযোগ ছিল মনে। আর টিনেজ বয়সে আবেগটাই তো বেশি থাকে!
এমন না যে ভাই আদর করত না—আদর করত, পরিবারের সবাই-ই আদর করত। কিন্তু সেই আদরের মধ্যে লুকিয়ে ছিল কঠোর শাসন।
এইভাবেই আমি বড় হলাম।
বর্তমানে আমার বয়স ২২। আমিও বড় হয়ে গেছি, আর আমার ভাইও অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন সে বিদেশে থাকে—এই ২০২৫ সালেই গেছে, কয়েক মাস হলো।
এখন ২০২৫ সালে এসে আমি একটা জিনিস খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি—
আমার ভাই আমাকে যেভাবে ছোটবেলায় শাসন করেছে, তার সবটাই ছিল আমার ভালোর জন্য। এখনকার সময়ের দিকে তাকালে দেখি, বর্তমান জেনারেশনের ৯০%+ছেলে সিগারেটে আসক্ত, ৬০%+ হয়তো গাঁজা-মদে আসক্ত।
যখন এদের দেখি, ভাবি—“এরা এসব কেন করছে?" কেন খাচ্ছে? " তার কোনো উত্তর পাই না।
কিন্তু বর্তমান জেনারেশনের ৮০% + ছেলেরা খারাপ হচ্ছে পরিবার থেকে গার্ড না পাওয়ার জন্য..
শাসন করার কেউ নাই..মা-বাবা তারা তাদের মতো আছে আর সন্তান অন্য দিকে কি করতেছে সেটার দিকে কোনো খেয়াল নেই..
যাদের সাথে ছোটবেলায় মিশতাম, অনেকেই ছোটবেলায় কাজে লেগে গেছে। না আছে পড়াশোনা, না আছে শিক্ষা। ছোট বেলার সঙ্গী এবং স্কুলের সহপাঠীদের দিকে তাকালে নিজেকে নিয়ে গর্ব হয়—আল্লাহ আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন।
২০২৫ সালে এসেও কোনো ধরনের নেশায় আসক্ত হইনি—আলহামদুলিল্লাহ।
এমনও সময় গেছে বন্ধুরা পাশে বসে সিগারেট-গাঁজা খায়, কিন্তু আল্লাহ আমাকে সবসময় এসব থেকে হেফাজত করেছেন।
এখন বড় হয়ে ভাবি—
আমার মেজু ভাই যদি ছোটবেলা থেকে আমাকে শাসন না করত, তাহলে হয়তো আজ আমি অন্যদের মতো নষ্ট হয়ে যেতাম। এখন ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভাই, আপনি যা করেছেন, সবই আমার ভালোর জন্য ছিল। আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা চিরকাল থাকবে।
আর পরিবারের অবদান তো অবশ্যই আছে। মা-বাবা অনেক কষ্ট করেছেন আমাকে মানুষ করতে গিয়ে। যদিও এখনো তাদের গর্বের কারণ হতে পারিনি—but In shaa Allah, হবো।
সবশেষে বলি—
এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার জীবনের এই অংশটা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আল্লাহ হাফেজ।
⸻
আপনার অনুভূতি জানাতে পারো কমেন্টে