![#অশ্রুবন্দী #লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া #পর্ব-৭২[শেষ]ভেজা শরীরটা ড্রায়ারের সাহায্যে শুকানো হচ্ছে। শরীর জুড়ে থাকা বড়ো ...](https://img5.medioq.com/284/694/1292824762846944.jpg)
11/07/2025
#অশ্রুবন্দী
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৭২[শেষ]
ভেজা শরীরটা ড্রায়ারের সাহায্যে শুকানো হচ্ছে। শরীর জুড়ে থাকা বড়ো বড়ো লোমগুলো বাতাসের তাড়নায় ফরফর করে উড়ছে। অন্যসময় হেলেদুলে মুহূর্তটা উপভোগ করলেও আজ কেমির মুখভার৷ ঘেউঘেউ শব্দে বাড়ি কাঁপিয়ে মনিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু লাভ হয়নি। তার মনিব ফিরেও তাকাচ্ছে না তার দিকে। না কিছু বলছে। বরংচ অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে সে তার উপর কতোটা রেগে আছে। কেমির কিছু করার নেই, অসহায় চোখদুটি দিয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া।
রাগে শরীরটা এখনো জ্বলছে আরসালানের। হাউ ইজ ইট পসিবল? কেমি কীভাবে তার ডাক উপেক্ষা করতে পারল? তাও আবার যারতার জন্য? পথ থেকে তুলে এনে পেলেপুষে কুত্তাটাকে বড়ো করেছে, এ দেশে নিয়ে এসেছে তাকে এই দিন দেখানোর জন্য? আরসালানের ইচ্ছে করছে ঘাড় ধরে এটাকে বাড়ির বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য। সে অবশ্য দিলোও। মিনিট দশেক পর নিজের মানসিক অস্থিরতা আর রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বাড়ির বাইরে বের করে দিলো। বাগানের কোণে বেশ পুরোনো একটা খোয়াড় ছিল, সেটাতে থাকতে দিলো ওকে৷ নির্বাসিত হয়ে কেমির মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেল। প্লেটভর্তি খাবার পেয়েও হামলে পড়ে সেসব খেলো না। মাংসের লোভেও না৷ কেমি মাটিতে শরীর বিছিয়ে শুয়েই রইল, মাঝেমাঝে লেজ নেড়ে জানান দিলো তার অভিমান। মকবুল অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও যখন ওকে খাওয়াতে ব্যর্থ হলো এবং হতাশ হয়ে এসে আরসালানকে খবরটা দিলো। শুনে ক্ষিপ্ত আরসালান ঘর কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কুত্তার বাচ্চাটাকে ধরে আন৷ কষে কয়েকটা ঘা না লাগালে এটার ভিমরতি ছুটবে না।”
হুংকারে মকবুলের মনে হলো তার কানে তালা লেগে গেছে। কানে হাত চাপা দিয়ে বিচলিত সে ভয়ে ভিয়ে বলল, “মটকা মাইরা পইড়া আছে, উঠে না। খালি লেজ নাড়ে। জোরাজোরি করতে গেলে কামড়াইতে আসে।”
“ছুরি নিয়ে আয় তো।”
মকবুল আঁৎকে উঠল, “ছুরি কেন? কেমিরে মাইরা ফেলবেন নাকি স্যার?”
আরসালান উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না, বিরক্ত চোখে দেখল ওকে।
এই স্যারটা এতো নির্দয়? মনে মনে শয়তানের বাচ্চা গালি দিয়ে মকবুল আচমকা বলে ফেলল, “দরকার লাগে ওরে সারাজীবন খোঁয়াড়ে বন্দী কইরা রাখেন, নয়তো রাস্তায় ফেলায়ে দেন। এরপরেও এই অমানবিক কাজটা কইরেন না স্যার।”
“তুই আমাকে মানবিক জ্ঞান দিচ্ছিস? তোর মুন্ডু ঘেঁটে দেখব আমি ওখানে কতো মানবিকতা আছে, হারামির বাচ্চা।”
চোটপাট নিজের উপর এসে পড়তে পারে ভেবে সঙ্গে সঙ্গে মকবুল পগাড় পার হলো। ছুটতে গিয়ে অবশ্য দু'বার টাল হারিয়ে পড়ে যেতে নিচ্ছিল। তবে টাল হারালেও বোধবুদ্ধি পুরোপুরি হারাল না। খবরটা গিয়ে ইহসানের কানে পৌঁছে দিলো। কিছুক্ষণ তব্দা খেয়ে বসে রইল ইহসান এসব শুনে। কেমির উপর কেন ক্ষিপ্ত হয়েছে বদমাইশটা? এর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে? লনেশা-ভাং না পেয়ে মাথা কি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে? মহা যন্ত্রণায় পড়া ইহসান তড়িঘড়ি করে ছুটে গেল নিচে৷
মকবুলের কল্যাণে ততক্ষণে সারা বাড়িতে এই খবর প্রচার হয়ে পড়েছে। খবর শুনে শারাফ তার বিচলিত এলিজা আন্টিকে নিয়ে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে ছুটে এলো। ওদের পেছনে পেছনে নামলো ইজহানও। অফিস থেকে ফিরেছে সে একটু আগে। এসে দেখে বাড়িতে তার সমন্ধি আকাশ সাহেব এসেছে। তার মেয়েকে নিয়ে হনুমানটা খেলায় মগ্ন। আধঘন্টা যাবৎ নিয়ে কোলে নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে, তার কাছাকাছি ঘেঁষছে না। যদি ভাগ্নিকে আর কোলে না দেয়, এই শঙ্কায়। চুপিসারে হনুমানটার জুতা ইজহান বারান্দা দিয়ে ঝোপে ফেলে দিতেই যাচ্ছিল, কিন্তু আরসালান কেমির লেজ কেটে দিচ্ছে এই খবর শুনে সব ফেলে টেলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে। প্রথমদিকে কেমিকে অপছন্দ করলেও এখন মোটামুটি পছন্দই করে সে। কারণ অন্য কুকুরদের মতো এতো যন্ত্রণা দেয় না। কথাও শুনে খুব। হুটহাট ঘরেও ঢুকে পড়ে না। ভীষণ প্রভুভক্ত। সে তাই আদর না করলেও অনাদর করে না। রুটি, কেকও খেতে দিয়েছে দু'দিন। ইজহানের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে যখন কেমি কুইকুই শব্দ তুলে মাথা নিচু করে নিজের ভুল স্বীকার করে, মাফ চায় তখন।
সকলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে দেখল খোয়াড়ের ভেতর কেমি বসে লেজ নাড়ছে। তার চোখে একরাশ ভয়, শঙ্কা। ফল কাটার ছুরি নিয়ে উবু হয়ে বসে আরসালান বেরিয়ে আসতে বলছে, গালি ঝাড়ছে কেমিকে। কিন্তু ফরাসি ভাষায় কী গালি দিচ্ছে সেটা ইহসান ছাড়া আর কেউ বুঝল না। সে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “ছুরি নিয়ে তুই কী করছিস এখানে?”
“লেজ কাটব৷ লেজ কেটে এর লেজ নাড়ানোর নাটক আমি বের করব।”
“মানে তুই কী পাগল? যা তা করছিস একেবারে।”
ইজহান এসে গলা খাকারি দিয়ে নিজের বিরক্তি ঝাড়ল, “তোর না বাপ হয়? তো দোষটা কী তোর বাপের?”
“দোষ মানে? মহা দোষ বলো। আমার খেয়ে, আমার পরে এই কুত্তা আজকে আমার কথা অমান্য করেছে। তাও আবার কার জন্য জানো? ঝাঁকড়া চুলের আকাইশ্যার জন্য। ভাবতে পারো কেমি কুত্তাটার
স্পর্ধা কতটুকু বেড়েছে?”
যা নয় তা-ই বলছে। কাকে নিয়ে বলছে? আকাশকে? তীব্র রাগে সপাটে একটা চড় বসিয়ে দিলো ইহসান ওর গালে। পাশ থেকে ইজহানও তার গালে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলল, ‘আকাইশ্যা কেন বললি এটা তার গিফট!’
আরসালান গালে হাত দিয়ে চোয়াল শক্ত করে দু-ভাইয়ের দিকে তাকাল। তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, “আমার থেকে এই হারামি কুত্তা আর ঐ আকাইশ্যার জন্য তোমাদের এতো দরদ?”
ইজহান কিছু বলার আগেই ইহসান গর্জে উঠল, “একদম বাজে বকবি না। আকাশকে নিয়ে তো একদমই না। ওকে নিয়ে উল্টাপাল্টা বলার রাইট তোর নেই। ও তোর মতো মাথাখারাপ, উন্মাদ বাপের টাকায় ফুটানি করা রাজপুত্র না। উচ্চশিক্ষিত, খেটে খাওয়া বিনয়ী মানুষ। তুই ওর নখের যোগ্যতার ধারেকাছেও নেই। তাই উল্টাপাল্টা বলে নিজের ঠুনকো সম্মানটা হাওয়া করে দিস না।”
গমগমে কণ্ঠে কথাগুলো বলে ওর হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে নিলো ইহসান৷ আরসালানের ভেতরটা আরো টগবগ করে ফুটতে লাগল। ঐ আকাইশ্যার নখের যোগ্যতাও তার নেই? এমনটাই বলল বিগ ব্রো? এদিকওদিক মাথা নাড়িয়ে ব্যাক ব্রাশ করল সে তার মাথার অর্ধ ইঞ্চির চুলগুলোতে। মাথা নুইয়ে গাঢ় করে নিঃশ্বাস ফেলল। এরপর গলা চুলকাতে চুলকাতে মুখ
তুলল উপরের দিকে। তখনি আরসালানের নজরে পড়ল সদর দরজার বাইরে শারাফকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এলিজার উপর। মেয়েটার চোখমুখে রাগ আর তীব্র বিরক্তি। রাগে যেন কাঁপছে। এত্তো রাগ? আরসালান ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল ওর দিকে। যেন বুঝতে চেষ্টা করল অনিতা রেহমানের ছোটো মেয়েটা তাকে অসন্তোষ নিয়ে কেন দেখছে?
এলিজা এক সেকেন্ডও সেখানে দাঁড়াল না। শারাফের হাতটা মুঠো বদ্ধ করে ওকে নিয়ে ভেতরে চলে এলো। কিছুতেই বুঝতে পারছে না লোকটা কীভাবে এতো পাষাণ হতে পারে? অহেতুক, অযৌক্তিক কারণে নিজের পোষা প্রাণীকে এমন গুরুতর শাস্তি দেওয়ার কথা যে চিন্তা করতে পারে সে কী, আস্ত অমানুষ।
নীলু ফুপির বলা কথাটা মনে পড়ল ওর, ‘এই ছেলে উন্মাদ, পাগল। এর থেকে দূরে দূরে থাকিস।’
মানুষ উন্মাদ, পাগল হয়৷ কিন্তু তাই বলে এতোটা নির্দয়? এলিজার মন বিষিয়ে গেল কেন জানি!
°
ইজহান শেখের অহংকারী ছোটো ভাইয়ের অমানবিক চিন্তাধারার কথা আকাশের কানে এসেছে এইমাত্র। শুনেই সে হতভম্ব এবং বিচলিত। এতো আদুরে প্রাণীটাকে এভাবে টর্চার করার কথা চিন্তায় এনেছে কীভাবে আরসালান শেখ? এ তো আস্ত অমানুষ? ঘটনা যদি সত্যিই এমন কিছু হয়ে থাকে, তাহলে সে এই অমানুষটাকে আজ উচিৎ শিক্ষা দেবে। কোনোভাবেই পিছু হটবে না, না কুকুরটার কিছু হতে দেবে। এই ভেবে ভাগ্নিকে রেখে সে ছুটে আসে নিচে। কিন্তু নিচে নামতেই সামনে তার সামনে পড়ে গেল এলিজা। আকাশ ওকে দেখে হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ল৷ শারাফ এলিজার হাত ছাড়িয়ে ছুটে এসে ওর কোলে উঠে পড়ল। আকাশ ওকে তুলে নিয়ে এলিজাত দিকে তাকাল। হাসার প্রচেষ্টা করে বলল, “ইস্মি বলল তোমরা এখনো রয়ে গেছ, আমি দেখাই করতাম।
কিন্তু এখন শুনলাম, কুকুরের উপর টর্চার করা হচ্ছে। বিষয়টা জেনেই ছুটে এলাম। মকবুলের থেকে শুনলাম ওর লেজ কেটে দেবে। এসব তো হতে দেয়া যায় না।”
ওর উদ্বিগ্নতার কথা জানতে পেরে এলিজা বলল, “ভাইয়ারা নিয়ে আসছে ওকে। কোনো ক্ষতি হয়নি। কেমি একদম ঠিক আছে।”
একটু স্বস্তিই পেল বোধ হলো আকাশ। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলল, “যাক তাহলে। আমি তো ভেবেছিলাম ঘটনা সত্যি হলে ত্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে ইনজান শেখের একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়ব। এসব শুনলে মাথা ঠিক থাকে?”
“আমারও মাথা ঠিক নেই।”
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল ওরা৷ আকাশ বলল, “চলো বসি, বসে কথা বলি।”
দু'জনে গিয়ে বসল সোফায়। কথাবার্তা হতে লাগল টুকটাক। আকাশ জিজ্ঞেস করল, “তুমি তো টিউশন করো শুনেছিলাম। তো এখন ম্যানেজ করছ কীভাবে?”
এলিজা আন্তরিক কণ্ঠে বলল, “সপ্তাহে তিনদিন করে পড়াই। এরমধ্যে ওদের পরীক্ষা শেষে কয়েকটা দিন ছুটিও ছিল। আমার ভার্সিটিও কয়েকদিন বন্ধ গেছে। তাই এতো ঝামেলায় পড়তে হয়নি। তাছাড়া আগে কখনো কোথাও যাওয়া হয়নি, ছুটিও চাইনি। এবারই প্রথম। তাই আন্টিরা একটু ছাড় দিচ্ছে। তবে এই ছাড়ের বেশি সুযোগ নেব না, চলে যাব শুক্রবার। এরপর আবার ব্যস্ততার দিন শুরু হবে।”
“তুমি খুব পরিশ্রমী মেয়ে। ভালো কিছু করতে পারবে।”
“দোয়া করবেন।”
“বেস্ট অব লাক।”
“থ্যাংক ইউ।”
“এতো ফর্মাল হতে হবে না।”
“তা বললে চলে? আপনি আমার সিনিয়র। সিনিয়রদের আবার এলিজা রেহমান খুব সম্মান করে।”
ওর রসিকতায় আকাশ হেসে ফেলল, এলিজাও।
°
হিড়হিড় করে টেনে আরসালানকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গিয়ে ইহসানের নজরে পড়ল আকাশ এবং এলিজার উপর। তারা বসে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে। ওদের সামনে দিয়ে অমানুষটাকে নিয়ে ভেতরে যেতে বিব্রতবোধ করল সে। তাই একপাশে সরে এসে নিজের ক্রোধটাকে চাপা দিয়ে আরসালানের হাতটা ছেড়ে নিচু স্বরে বলল, “ওদের সামনে দিয়ে তোকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে চাই না। তাই এখান থেকে সোজা ঘরে যাবি।”
ইজহান আর মকবুল মিলে কেমিকে নিয়ে গেল বাড়ির ভেতরে। আরসালান তাকালও না এই বেঈমান কুকুরটার দিকে। তার কথা অমান্য করেছে, কীভাবে পারল কেমি? শীতল কণ্ঠে বলল সে, “যাব না।”
“এখানে কোনো সিন ক্রিয়েট করবি না।”
“ঐ সোফায় আমি শুয়ে ভাত খেয়েছি। আকাইশ্যা আমার সোফায় বসেছে কেন?”
ইহসান কটমট করে বলল, “মার খেয়েও তোর জেদ যায়নি? আকাশ তোকে কি করেছে?”
আরসালান বলল না আকাশ তাকে কি করেছে। অবশ্য করলে তো বলবে। কিন্তু আকাশকে তার অসহ্য লাগছে। ইচ্ছে করছে কয়েক ঘা বসিয়ে মুখের মানচিত্র পাল্টে দিতে। যেচে পড়ে জ্ঞান দিতে আসে!
ইহসান ওকে চুপ দেখে আবারও শক্ত গলায় বলল, “তুই যাবি না আমার হাতে ধোলাই খাবি? নাকি ঘরবন্দী করে রাখব?”
আরসালান শীতল চোখে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো, “আমার ড্রা গ দাও।”
“ওসব পাবি না।”
আরসালান ভ্রু উঁচিয়ে ঠাট্টার সহিত বলল, “কেন? ভালো বানাতে চাইছ আমাকে? কিন্তু আমি তো ভালো হব না।”
“তোর লাইফের গোল নেই?”
“তোমার শান্তি বিনষ্ট করা।”
ইহসান তাচ্ছিল্যভরে হাসলো, “এত অশান্তিতে রেখেও তোর শান্তি হলো না? তাহলে জেনে রাখ, তোর শান্তি হবেও না যতোদিন আমি বেঁচে আছি। আমি মরেটরে গেলে শান্তির মাকে পাস কিনা তখন বুঝে, দেখে-শুনে নিস।”
এটুকু বলে বসার ঘরে চলে গেল ইহসান আরসালানকে নিজের মতো ছেড়ে দিয়েই। সে শাণ মুখ দাঁড়িয়ে রইল সেখানে। ক্রোধ নিয়ে চলে এলো ভেতরে। কয়েকটা মুহূর্ত, এই হবে ত্রিশ-চল্লিশ সেকেন্ডের মতো সে দাঁড়াল বসার ঘরের ওখানে। ঘাড়টা বাঁকিয়ে দেখল আবার মেয়েটাকে। কথায় মগ্ন এলিজার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় কিছু একটা ইঙ্গিত দিতেই তার চোখ পড়ল শকুনের মতো ঘাড় বাঁকিয়ে তাকানো লোকটার দিকে। ও ভীষণ বিব্রত হয়ে চুপ করে গেল। নিজেকে আড়াল করল ইহসানের পাশটাতে। শারাফকে টেনে এনে কোলে বসাল। আরসালান তা দেখে বাঁকা হাসলো। এরপর সিঁড়ির ধাপ পেরুল। যা দেখে এলিজা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আবারো সহজ হয়ে এলো ওদের সাথে।
সিঁড়ি মাথায় উঠে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের গল্পের আড্ডা দেখল আরসালান। তার চোয়াল শক্ত। তার ভাই এতো কেন প্রায়োরিটি দিচ্ছে, হেসে কথা বলছে আকাশটার সাথে? তার সাথে তো এভাবে বলে না। আবার অনিতা রেহমানের ছোটো মেয়েটাও কী নিয়ে বিশ্লেষণও করছে এটার সাথে? তখন তাকে অসন্তোষ নিয়ে দেখেছে, একটু আগে নিজেকে লুকিয়েও ফেলেছে। কেন? আরসালান তীক্ষ্ণ চোখে দেখল ওকে।
°
ইহসান আসার পর অনেকটা সময় পড়াশোনা, রাজনীতি, চাকরি-বাকরি নিয়ে আলাপ হয়েছে। এলিজার কোমড় ধরে এসেছে বসে থাকতে থাকতে। তাই বিদায় নিয়ে উঠে এলো সেখান থেকে। শারাফ অবশ্য এলো না। সে কেমিকে দেখতে গেছে ইজু মামার সাথে। দোতলার করিডোরটা তখন খালি, আবছা অন্ধকার। এলিজা ধীরপায়ে হেঁটে শোয়ার ঘরটার দিকে যাচ্ছিল। তার আগেই দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষমাণ লম্বা একটা ছায়ামূর্তি হঠাৎ ওর গা ঘেঁষে পাশ কাটিয়ে গেল। ফিসফিসানো কণ্ঠে বলল, “নাইস স্মেল।”
এলিজা শিউরে উঠে তৎক্ষনাৎ দূরে সরে গেল। হতভম্ব হিয়ে বোঝার চেষ্টা করল, কী হলো এটা তার সাথে!
______
[৭২ শেষ, এরপর ৭৩ থেকে শুরু হবে। গল্পটা এখন অন্য ধারাতে চলছে, যেটা অনেকেই রিলেট করতে পারছেন না, কিন্তু আমি ভেবেই রেখেছিলাম এরকম। বলেও দিয়েছি সেটা। প্লিজ যাদের কাছে অস্বাভাবিক লাগছে তারা ইতি টানতে পারেন, কেন না আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হোক তা চাই না। আমি আমার মতো ভেবে লিখব, আপনারা নিজেদের মতো ভেবে আশাহত হবেন এটা আমার কাছে ভালো লাগবে না। আপনাদের মনমতো লিখতে না পারা আমার ব্যর্থতা, তাই আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আবার বলছি, গল্প যেমন ভেবে লিখছি তেমন করে লিখতে পারলে শেষ পর্যন্ত মনে হয় না এই গল্প আপনাদের প্রিয়র তালিকায় থাকবে বা যুক্ত হবে। তবুও আমি সেভাবেই লিখে যাচ্ছি, কেন না ভেবে রেখেছিই তেমনটা। আমার অপারগতা, ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।]
চলবে...