18/03/2025
শবে কদর (ফার্সি: شب قدر) বা লাইলাতুল কদর (আরবি: لیلة القدر) এর অর্থ "অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত" বা "পবিত্র রজনী"। ফার্সি ভাষায় "শাব" ও আরবি ভাষায় "লাইলাতুল" অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী, অন্যদিকে 'কদর' শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হল ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা।
আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেছেন,
নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।শান্তিই শান্তি,বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।(সূরা আল-কদর, আয়াত ১-৫)
যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমানের সাথে এবং আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্যে দাঁড়ালো তার পিছনের সমস্ত গুণাহ মাফ করা হয়েছে। কদরের রাত রয়েছে রমযানের শেষ দশ রাতের মধ্যে যে ব্যক্তি প্রতিদান লাভের আকাংহ্মা নিয়ে এই সব রাতে ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে আল্লাহ তার আগের পিছের সব গুণাহ মাফ করে দেবেন।
কদরের ইতিহাস:-
শবে কদরের এ রাতে মহান আল্লাহ তাআলা মক্কার হেরা গুহায় হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম -এর মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওপর পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন নাযিল করেন শবে কদরের এই রাতে। রমজান মাস সকল মাস থেকে উত্তম একটি মাস। কেননা এ মাসে সবথেকে বড় গ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়েছে। কোরআনের এই সুন্দর সংস্পর্শে লাইলাতুল কদরের এ রাত ভাগ্য অর্জন করেছে।
লাইলাতুলকদর চেনার আলামত:-
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর উজ্জ্বল একটি রাত। না গরম, না ঠাণ্ডা। সে রাতে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৩/১৭৯)
রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।নাতিশীতোষ্ণ হবে অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না। মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে। সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন। ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে। সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত। [সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ]
লাইলাতুলকদর এর আমল:-
আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে, মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শবে কদর সন্ধান করো। (বুখারি ও মুসলিম)
আরেকটি হাদিসে মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা শবে কদর সন্ধান করো। [১৪] (সহীহ বুখারী)[১৫][১৬]
তাছাড়া আমাদের উচিৎ বেশী বেশী নফল ইবাদত করা। নামাজে কিরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা। অধিক পরিমাণে তাওবা-ইস্তিগফার করা, দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা। কবর জিয়ারত করা, নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি “লাইলাতুল কদর” জানতে পারি তাহলে সে রাতে কি বলব?
তিনি বললেনঃ “তুমি বল, - আল্লহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু
আন্নি”
অর্থঃ ❝হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা পছন্দ কর।তাই আমাকে ক্ষমা করো।❞
#ইসলাম #হাদিস