19/06/2025
দ্বিখণ্ডিত চক্রব্যূহ ( উপন্যাস) ৯বম পর্ব
যাদুমাখা স্পর্শ
নাহিদ সোলতানা নিপা
কি আছে ওতে?
তোমার জন্য সামান্য উপহার।জানিনা পছন্দ করবে কিনা।তবু দিয়ে দিলাম।যখনি পরবে মনে পড়ে যাবে আমাকে।
তোমাকে আমি ভুলে যাবো কি করে ভাবলে ইশিতা?
আমার ভাবনাতে কি ই বা আসে যায় বলো! মানুষের মন বড়ই বিচিত্র! আজ একরকম তো কাল আরেকরকম।তাই বড়ো ভয় হয়........
তাকিয়ে আছে আরিয়ান । গভীর মনোযোগে সেই ঠোঁট যুগলের ছটায়, পলক যেনো পড়েনা। কতো কথা জমে আছে তারও,সব আটকে জড়োসড়ো হয়ে আছে কেনো যে।শুধু ভাবছে, এতো এতো অনুভূতি গুলো কার জন্য বয়ে নিয়ে আসলো, যে বোঝেও বোঝেনা।যে পাথরে নীড় বেঁধেছে পাথর বনে।
দাও, কি এনেছো তবে দেখি।
হাত বাড়াতেই অকস্মাৎ ছুঁয়ে গেলো ইশিতার বাড়িয়ে দেওয়া কোমল হাতে। মূহুর্তে যেনো বিদ্যুৎ খেলে গেলো হঠাৎ দুটি হৃদয়ে,দুটি, মনে আর মননে, প্রাণের সাথে প্রাণে,কেঁপে উঠলো শিরশির করে আত্মার সাথে আত্মা। আহা! এ কেমন আভ্যন্তরীণ গোলযোগ। চমকে উঠে চোখে চোখ রাখলো ইশিতা ও।অসহ্য রকম মাদকতা সেই দৃষ্টিতে। সইতে পারা দায়! চোখ বুজে ফেলে আরিয়ান।
মন কথা বলে উঠে।তোমাকে ভালোবাসি ইশিতা! খুব বেশি ভালোবাসী।যতোটা বাসলে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখা যায়।যতোটা বাসলে সব ছেড়ে ছুড়ে পথে বসা যায়।
অজান্তে বেরিয়ে এলো মুখ ফুটে ,ভালোবাসি।
নড়ে উঠে ইশিতার ও ঠোঁট বলতে যাবে কিছু,,অমনি তাকে থামিয়ে দেয় আরিয়ান,
দেখো, তোমায় কিন্তু বলিনি আমি একবারও যে,আমার ভালোবাসতে হবে বলেছি,বলো? বলিনিতো। শুধু আমি বেসে যাবো একাকী নীরবে,নিভৃতে। সাজিয়ে নেবো আমার কবিতার প্রতিটা পংতিতে। ওগো চপলবতী কন্যা।
ঝড় বইছে ইশিতার প্রাণেও। প্রচন্ড কষ্টে নিজেকে কিয়দাংশ লুকিয়ে বলে বসলো, মিস করবো তোমাকে।
শুধু অতটুকুন! শুধু মিস করেই খালাস? হাহা।আর কিছুই না?
আর? কি চাও আর কিছু তুমি?
ওই পাহাড়টাকে যেটা শক্ত হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ওটাকে, ওটাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে চাই।
আমি পাহাড় না! অভিমানে বলে উঠে ইশিতা।
তুমি তার চেয়ে বেশি। তার চেয়ে তীব্র কঠিন।
আরিয়ান!
পাশাপাশি বসেছিলো দুজন দুজনার বিপরীতে, পাশ ফিরতেই লেগে যায় পিঠের সাথে পিঠ।আহ! আবার সেই বিদ্যুৎ খেলে যাওয়া শিহরণ, এ যেনো স্বর্গ থেকে স্বয়ং বিধাতার পাঠিয়ে দেওয়া উপহার,যা চুম্বকের মতো আকর্ষিত করছে বারবার ভালেবাসা নামক সাগরের ভয়ানেক করাল স্রোতে। যোয়ার এসে ধাক্কার পর ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে কতো শতবার,হাজারবার। ঠেকাবে সেই হিম্মত আছে কার?
এই পৃথিবীতে নারী পুরুষের মাঝে দুটি আকর্ষণ বিরাজ করে সময়ে অসময়ে বলে না বলে কিংবা কখনো হুটহাট।এক,শারীরিক আরেক মানষিক।
আর মানষিক হৃদ্যতা বড়েো বেশি বিপদজনক। সর্বশান্ত করে তবে ছেড়ে দেয় ভুক্তভোগী সকলকে। আর সেই মানষিক আকর্ষণ ই ঢেকে দিলো দুজনাকে কুচকুচে এক কালো মেঘে।পালতোলা এক মনের নৌকাতেই অবশেষে জায়গা হলো দুটি অশান্ত হৃদয়ের।
ছলছল চোখে বলে উঠে আরিয়ান
বিদায় তবে.........
কাল চলে যাচ্ছি এই শহর ছেড়ে।