28/11/2025
অস্তিত্বের নীল-বিদ্রোহ : এক মহাকাব্য
দীপক কুমার কর (কবিকঙ্কণ)
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
অস্তিত্বের প্রথম আলোঃ
রাতের কালো থেকে নয়—
অস্তিত্ব জন্ম নেয় ভোরের নীরব আলোয়,
যেখানে প্রথম পাখির ডানায় লেগে থাকে
মানুষের বহুদিনের চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস।
একটি পাতা ঝরে পড়ে—
সেখানে জন্ম নেয় অনন্তের বোধ।
নদী বয়ে যায়—
সেখানে জন্ম নেয় সময়ের উন্মুক্ততা।
একটি মৃত নক্ষত্র ছাই হয়ে ভেসে যায়—
সেখানে জন্ম নেয় পুনর্জন্মের আভাস।
আমি সেই ধুলো—
যে সময়ের ধারালো দাঁত এড়িয়ে
ফিরে আসি চক্রাকারে;
নতুন কোন নক্ষত্রের আঁধারে
লিখে রাখি নিজের জন্মপত্রিকা।
কারাবাস নয়—মুক্তির প্রতিজ্ঞাঃ
অস্তিত্ব মানে বন্দিদশা নয়,
বরং মানুষের ভিতর জমে থাকা
হাজার বছরের নিঃশব্দ বিদ্রোহ।
যে বিদ্রোহ কখনও গোধূলির অরণ্যে মেঘ হয়ে ওঠে,
কখনও নামে বিষণ্ণ বৃষ্টির জল হয়ে,
কখনও জেগে ওঠে তপ্ত শহরের ইটের দেয়ালে।
ভয়কে আমি ছাই করি—
যেমন প্রতিটি ভোর
অন্ধকারের মৃত্যু ঘোষণা করে।
বিশ্বাসের পুরোনো শিকল ভেঙে
আমি শিখেছি—
মুক্তি কোনও বাহিরের দান নয়,
মুক্তি মানুষের নিজের ভেতরের আগুন।
ব্যথা থেকে জন্ম নেয় মহাকাব্যঃ
আত্মার আর্তনাদ, শরীরের ক্ষত—
এগুলোই একদিন হয়ে ওঠে
জীবনের মহাকাব্যের পঙ্ক্তি।
প্রতিটি শব্দ হয়ে ওঠে জ্বলন্ত ধূমকেতু,
প্রতিটি নীরবতা হয়ে যায় বজ্রের মতো কঠিন।
মানুষ কাঁদে, ব্যথা পায়,
আবার উঠে দাঁড়ায়—
এই উঠেই দাঁড়ানোই তার অনন্ত গান।
যে গান আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা
অস্তিত্বের নীল-বিদ্রোহে।
প্রেম : অসীমের দরজাঃ
প্রেমকে আমি চুক্তিতে বেঁধে রাখিনি—
কারণ প্রেম কোনও দেয়ালের ভাষা নয়।
প্রেম সেই মাটির গন্ধ,
যেখানে মানুষ শেকড় খুঁজে পায়।
প্রেম সেই আলো,
যেখানে বন্ধন মানে মুক্তিরই নীরব রূপ।
যেখানে মুক্তিই—
একটি পাখির ডানা,
যাকে কেউ বেঁধে রাখতে পারে না।
নিজের মহাকাব্যের কবিঃ
তাই আমি বিদ্রোহী।
আমার অভিধান কেউ লেখেনি—
আমি নিজেই লিখি আমার মহাকাব্য,
সময়ের বিস্মৃত অন্ধকার থেকে আলো পর্যন্ত
যে পথটি মানুষ প্রতিদিন হারিয়ে ফেলে।
নিজের রক্ত দিয়ে,
নিজের বিপ্লবের আগুন দিয়ে
আমি লিখেছি অমোঘ সত্য—
অস্তিত্ব মানে শুধু বেঁচে থাকা নয়,
অস্তিত্ব মানে উঠে দাঁড়ানো।
আর সেই দাঁড়িয়ে ওঠাই
মানুষের সবচেয়ে বিস্ময়কর নন্দন।
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
সকাল ৮:২৫, ২৮-১১-২৫
সেনগাঁতি, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ।