26/11/2025
খুব সম্ভবত ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো আমি পাসপোর্ট করার উদ্যোগ নেই । অনলাইনে আবেদনও করে ফেলি । কিন্তু তারপরে পিছিয়ে যাই । কারণ আমার জেলা চাঁদপুর, থাকি কুমিল্লা । যদি কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিস থেকে এপ্লাই করি তাহলে নাকি আমাকে কুমিল্লা এবং চাঁদপুর দুই জায়গা থেকেই পুলিশ ভেরিফিকেশন ফেস করতে হবে । আর সেই সময়ের অলিখিত নিয়মই হয়ে দাঁড়িয়েছিলো পুলিশ ভেরিফিকেশন মানেই প্রতিবার ১-১.৫ হাজার টাকা, সেই সাথে অল্প বিস্তর ভোগান্তি । তাছাড়াও পাসপোর্ট অফিসে দরবেশ বাবাদের (দালাল) উৎপাত এবং কর্মকর্তাদের কর্তৃক হয়রানি নাকি ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা ।
তার পরে আসলো ২০২৪ এর ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান । হাজারো ছাত্র, নাগরিক, শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে গঠিত হলো অন্তবর্তীকালীন সরকার । এই সরকারকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ অনেক বেশি থাকলেও আলোচনা-সমালোচনা অনেক বেশি । সরকারের অনেক কাজকেই আমার কাছে থিওরিটিকাল মনে হয়, যেগুলো আদৌও আমাদের ব্যক্তিজীবনে প্রভাব ফেলবে কিনা জানি না । তবে এই সরকারের একটা পদক্ষেপ প্রথমবারের মতো আমার লাইফে সরাসরি প্রভাব ফেলে । সেটা হলো পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন অফ করা এবং ছাত্রদের প্রবল চাপে পাসপোর্ট অফিসগুলো কিছুটা দালাল মুক্ত রাখার চেষ্টা করা ।
কিছুদিন আগে আমি এবং আমার আরেক বন্ধু নিজেরাই অনলাইনে আবেদন করে কোনোরকম দালালের সাহায্য ছাড়া, পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রসেসে না গিয়েই সরাসরি পাসপোর্ট করতে পারি । আমি চাঁদপুর জেলার মানুষ হয়েও কুমিল্লায় পাসপোর্ট করতে চাওয়ার সঠিক কারণ দেখিয়ে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখিয়ে উপপরিচালক বরাবর একটা দরখাস্ত লিখতে হয়েছে এবং সেটার জন্য কিছু সময় ব্যয় হয়েছে । কিন্তু সার্বিকভাবে আমার খুব বেশি ভোগান্তি হয় নি । ছবি তোলার ১৪ দিন পরে পাসপোর্ট আনতে গিয়েছিলাম । তখন অবশ্য কর্মকর্তাদের নামে বেশ কিছু অভিযোগ শুনেছিলাম ।
সামনে রাজনৈতিক সরকার আসলে আবারো পুলিশ ভেরিফিকেশন নামক এই উদ্ভট বিষয়টা চালু হয়ে যাবে কিনা জানি না । তবে পাসপোর্ট পাওয়া দেশের সকল নাগরিকের অধিকার, এই বিষয়টি মাথায় রেখেই পাসপোর্ট কার্যক্রম আরো সহজ করার চেষ্টা করা উচিত । যারা পাসপোর্ট করতে যায় তাদের বড় অংশটাই বিদেশে গিয়ে দেশের জন্য রেমিট্যান্স নিয়ে আসবে । সেটার উপর নির্ভর করেই বৈশ্বিক নানা প্রতিকূলতায়ও দেশের অর্থনীতি টিকে থাকবে । তাই তাদের এই পথটাকে সহজ করা সরকারের কর্তব্য । তবে সরকারকে বরাবরই এ বিষয়ে উদাসীন থাকতে দেখি ।
যাইহোক অন্য অনেক বিষয়ে সমালোচনা থাকলেও পাসপোর্ট কার্যক্রম সহজ করার কাজে সরকারের ছাত্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা এবং আরো কিছু মানুষ যারা জড়িত ছিলো তাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ থাকবে । ভবিষ্যতের সরকার যদি প্রত্যেক জন্ম নিবন্ধন প্রাপ্ত, এনআইডিধারী নাগরিককে পাসপোর্ট প্রদানের উদ্যোগ নেয় তাহলে তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাবো ইনশাআল্লাহ ।
[Note: ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছরের এই পাসপোর্ট করতে আমার খরচ হয়েছে ৫৭৫০ টাকা । এটা ছিলো সরকারি খরচ । এর বাইরে অন্য কোনো খরচ করতে হয় নি ]
যেসব ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়েছিলো:
১. Appointment copy (2 page)
২. Application summary (3 page)
৩. পেমেন্ট স্লিপ
৪. NID কার্ডের ফটোকপি
৫. বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি
৬. স্টুডেন্ট আইডি কার্ড
৭. নাগরিকত্ব সনদ
🇧🇩