21/06/2025
শুচিবায়ু বা ওসিডি
কোন কিছু দুইবার চেক করা একটি নরমাল বিহেইভিয়ার। যেমন ধরুন, গেটের তালা লক করেছেন কিনা সেটা চেক করা কিংবা বাইরের রুমের লাইট নিভিয়েছেন কিনা সেটা যাচাই করা। কিন্তু আপনি দরজা লক করেছেন কিনা কিংবা লাইট নিভিয়েছেন কিনা এমন ঘটনা যদি ২০ বার বা ৩০ বারের মতো মনে সন্দেহ জাগায়, তখন এটাকে নরমাল বলা যায় না। এটি চিন্তাবাতিকগ্রস্থ ও বাধ্যতাধর্মী আচরণের (শুচিবাই) একটি উদ্বেগজনিত রোগ। সারা বিশ্বে প্রতি ৫০ জনে ১ জন জীবনের কোনো না কোনো সময় এই রোগে ভোগে। এই রোগে আক্রান্ত মানুষেরা সামাজিক ও ব্যাক্তিগতভাবে খুবই দুশ্চিন্তায় ভোগে।
একটু ব্যাখ্যা
ধরা যাক কারো মনে হলো, তার হাতে বা গায়ে ময়লা লেগে আছে। যদিও তিনি ভালো করেই জানেন কোথাও ময়লা নেই, তরপরও চিন্তাটি বারবার আসতে থাকে এবং তিনি বারবার হাত ধুতে যান। এমনকি বারবার সাবান ব্যবহার করতে থাকেন। এখানে ময়লার চিন্তাটি হলো ‘অবসেশন’, আর হাত ধোয়া হবে ‘কম্পালশান’। এ দুটি মিলিয়েই রোগটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার’ বা ‘ওসিডি’ যাকে বাংলায় ‘শুচিবাই’ বলা হয়।
কাদের হয় ও কেন হয়?
সাধারনত টিনএজ গ্রুপ থেকেই এই রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়। তবে যেকোনো বয়সেই শুরু হতে পারে। ছেলে-মেয়ে সমানভাবেই আক্রান্ত হয়। এটি একটি মাইনর মেন্টাল ডিসঅর্ডার। অনেক মানসিক রোগের মতোই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এর কারণ এখনো জানা যায় নি। তবে জেনেটিক, বায়োলজিক্যাল এবং এনভায়রনমেন্টাল কিছু কিছু কারণেও এই রোগ হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। যাদের পরিবারিকভাবে এই রোগের ইতিহাস আছে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পাঁচগুণ।
ওসিডি রোগের লক্ষণ কী কী?
১) অবসেসিভ থটস
অবসেসিভ থটস বা আবেশিক চিন্তা ভাবনায় রোগী মথিত হয়। রোগীর মনের ভিতর একই বাক্য বা গানের সুর বারবার তার অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভেসে আসে, কোনোভাবেই তিনি তার থেকে বের হতে পারেন না।
২) অমূলক ভয়
রোগীর মধ্যে জটিল কিছু রোগ সম্পর্কে ভয়-মিশ্রিত চিন্তা বারবার দেখা দেয়। তিনি ভয় পেতে থাকেন। তাঁর হয়তো ক্যানসার, এইডস বা সিফিলিস হবে। যদিও এসব তাঁর অমূলক ভয়।
৩) অশ্লীল চিন্তা
অশ্লীল চিন্তা অনিচ্ছাসত্ত্বেও এদের মনে বাসা বাঁধে।
৪) কাজ করেও না করা ভাবা
চিঠি ডাকবাক্সে ফেলে কিছুক্ষণ পরে মনে হয়, চিঠি বোধহয় ফেলা হয় নি। একই কাজ বারংবার করেও ভাবে যে সে তা করে নি।
৫) একই কাজ বারংবার করা
এই রোগী সংশয় ও সন্দেহের বশে বাধ্য হয়ে একই কাজ বারংবার করে।