17/09/2025
সাবেক এমপি আলমগীর হায়দার খান : এক রাজনৈতিক যাত্রার গল্প
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা। এখানকার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এক অনন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব— আলমগীর হায়দার খান।
জন্ম ১৯৪৯ সালে, ফরিদগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারে।
শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত, সাহসী এবং নেতৃত্বগুণে ভরপুর।
গ্রামের সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, আর দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা তাকে ধীরে ধীরে রাজনীতির দিকে টেনে নিয়ে আসে।
রাজনীতিতে পদার্পণ
আলমগীর হায়দার খান মূলত জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।
ধীরে ধীরে তার সক্রিয়তা, সাহসী নেতৃত্ব এবং সংগঠক হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
সাধারণ মানুষ তাকে কাছে টেনে নেয়, কারণ তিনি ছিলেন সহজ-সরল, মাটির মানুষ।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়।
তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বহু বছর।
তার নেতৃত্বে ফরিদগঞ্জ ও আশপাশের অঞ্চলে বিএনপি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলে।
সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৬ (বর্তমানে চাঁদপুর-৪, ফরিদগঞ্জ আসন) থেকে তিনি বিএনপি প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন।
জনগণের বিপুল সমর্থনে নির্বাচিত হন।
এটাই ছিল তার সংসদীয় জীবনের প্রথম পদক্ষেপ।
এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করেন।
২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনবার এমপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
প্রতিবারই তার জয়ের পেছনে ছিল সাধারণ মানুষের অগাধ ভালোবাসা ও বিশ্বাস।
সংসদে তিনি ফরিদগঞ্জসহ চাঁদপুর জেলার উন্নয়ন নিয়ে সরব ছিলেন।
তিনি এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক উন্নয়নের কাজকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
রাজনৈতিক জীবনের চ্যালেঞ্জ
কিন্তু আলমগীর হায়দার খানের জীবন ছিল না একেবারেই মসৃণ।
২০০২ সালে তিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে (ব্রেন স্ট্রোক) আক্রান্ত হন।
দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায় কাটাতে হয় তাকে।
রাজনীতির ময়দানে সক্রিয়ভাবে থাকতে না পারলেও তিনি দলের সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত ছিলেন সবসময়।
তার এই অসুস্থতা রাজনৈতিক জীবনে একটি বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
ব্যক্তিগত জীবন
আলমগীর হায়দার খান ছিলেন পারিবারিক মানুষ।
এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার পরিবার গড়ে ওঠে।
রাজনৈতিক ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সন্তানদের শিক্ষা ও নৈতিকতায় মনোযোগী ছিলেন।
পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন স্নেহশীল ও আন্তরিক।
শেষ অধ্যায়
দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল, মাত্র ৬৫ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ফরিদগঞ্জসহ চাঁদপুর জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তার জানাজায় ভিড় জমায়, স্মরণ করে তার কর্ম ও অবদান।
স্মৃতিতে তিনি
আলমগীর হায়দার খানকে ফরিদগঞ্জের মানুষ আজও মনে রাখে একজন জননেতা হিসেবে।
তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থে “গণমানুষের নেতা” —
যিনি রাজনীতিকে ব্যবহার করেছেন ক্ষমতার জন্য নয়, বরং মানুষের সেবার জন্য।