18/10/2025
সে আমাকে চায়ের দোকানে নিয়ে গেলো, দোকানের সামনে বেঞ্চে বসলাম। বললো,
দবির ভাই দুই কাপ চা দেন, সাথে কসমস বিস্কুটের একটা প্যাকেট দেন। কথার মাঝে কনফিডেন্স, দাম্ভিকতার ভাব আছে, ডোন্ট কেয়ার টাইপের।
আমি আসলে তেমন কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না, সে আমার দূরসম্পর্কের ভাই, একটা সময় নাকি অনেক নামধাম ছিল, নদী ভাঙার পর দাম কিছুটা কমেছে, তবে ধাম একটু বেশীই কমেছে, এটা সে বিশ্বাস করতে চায় না। যার যার জায়গায় সে সে দামি, অন্যের এলাকায় আসলে এমনিতে ভ্যালু কমে যায়।
চা খেতে খেতে বলল, গল্প শুনবি?
আমি তাকালাম বিনয়ের চোখে, আমি এমনিতেই সবার সাথে কথা বলতে পারি না, বুক ধড়ফড় করে। বেশিক্ষণ কথার জালে আটকে গেলে তো আরও বিপদ। বুকে যে ব্যথা উঠে সেটা টিকতে না পেরে বাম হাত বেয়ে নেমে পড়ে। এমন অনেকবার হয়েছে আমার সাথে, আজকেও হবে আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম।
আমি বললাম, বলেন শুনি।
আমার বন্ধুর সুন্দর একটা বোন ছিল।মাত্রই ক্লাস টেনে উঠেছে। হঠাৎ একদিন একটা ছেলের সাথে পালালো। ঐ বন্ধু এবং আমরা আরো কয়েকজন মিলে খুজতে বের হলাম। কি বলব! খুজতে খুজতে তিন দিন পর খুঁজে পেলাম ঢাকা, হাজারীবাগ বস্তিতে! কত বড় স্টুপিড! এমন একটা বস্তিতে উঠেছে সেখানে আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধব থাকে। মাঝে মাঝে আমরা ওখানে আড্ডা দেই।
কি বলব! পুরা ঘরে একটা মাত্র তোষক, স্যাঁতসেঁতে, আহ! কি বাজে একটা অবস্থা। এমন একটা ছেলে ওকে নিয়ে পালিয়েছে যে কিনা মাত্রই এস এস সি পাশ করেছে। কলেজের ভর্তি ফি না থাকায় HSC তে ভর্তি হতে পারেনি। ছেলের বাবা গাঁজা খায়, থাকে অন্যের ভিটায়।
আমি বললাম, আরে জাহিদ! তুই তো ভালো ছেলে, এলাকার সবাই তোরে ভালো বলেই জানে। কেমন করলি?
জাহিদ মাথা নিচু করে বলল:ভাই আমার এত সাহস নাই, ডালিয়াই আমারে নিয়ে আসছে। এই কথা বলার সাথে সাথেই কলার ধরে ঠাস ঠাস দিলাম থাপ্পড়। মারতে মারতে বলতে থাকলাম, তুই যে ওরে এই ভাঙ্গা ঘরে আনছো, তুই কি জানিস ও কোথায় ঘুমায়! কত বড় বেয়াদব।
ওই দিন জাহিদেরে ডালিয়ার ভাই বেল্ট দিয়ে পিডাইছে, আর জুতার মালা পড়িয়ে সারা বস্তি রাউন্ড দিছে।
আমি অমি, ওনার দিকে তাকালাম। ওনার চোখে মুখে তৃপ্তি। চেপ্টা টাইপের মানুষ, মাজারি সাইজ এর লম্বা, ৫ ফিট ৪ ইঞ্চি ম্যাক্স। গায়ে ব্লেজার, জিঞ্চ পড়া, পায়ে সু, মুখে মোটা মোটা দাড়ি।
ওনার নাম রাজ।
রাজ ভাই বলল, আজকে সময় নেই, নয়ত পুরো গল্পটা বলতাম। সাড়ে সাতটায় লঞ্চ, এখনই ঘাটের দিকে না গেলে লঞ্চ মিস করব।
রাজ ভাই যেতে যেতে বলল তোর সাথে খুব শীগ্রই কথা হবে।
সন্ধ্যার মৃদু আলোয় আমি তার চলে যাওয়া দেখছি, আর ভাবছি উনি কি আমাকে কোনো ম্যাসাজ দিতে চাইলো! পুরো বিষয়টা মাথায় পাশ দিয়ে চলে গেলো।
আমার সাথে গল্প বলার আগেই সব ঠিক করা ছিল, বুঝতে পেরেছি পরের দিন সকালে। যখন তিনার মা আমার খুজে আসলেন। সংসারে সে তৃতীয় সন্তান হলেও কর্তৃত্ব খুব ভালোই। রাজ ভাই ভালো টাকা কামায়, ঢাকা শহরে মানুষ নিয়ে তার কাজ কারবার।
ওনার মা আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। তিনি ও তার পরিবার আমাকে চুজ করার যথেষ্ট লজিক আমি পরে বুঝতে পেরেছি। আমি নিরীহ, সহজ সরল। কোন ভুল করার সাহস পাবো না।
কিন্তু ভুল তো ভুলই। কাউকে কেয়ার করে তো আর ভুল হয় না। ভুল এমনি এমনি সংঘঠিত হয়।
রাজ ভাইয়ের সাজানো ভুলের প্লেনেটে আমরা চারটি মানুষ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেলাম। কি অসহনীয় যন্ত্রণা! আমরা সবাই সেই পোড়া দাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
১৮.১০.২৫
পোড়াদাগ