
02/07/2025
হজরত খিজির আলাইহি ওয়াসাল্লামার সাথে সুলতান মাহমুদ গজনবী রহমতুল্লাহ আলাইহি এর জিয়ারতের একটা ঘটনা:
একটু সময় নিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো।
একদিন সুলতান মাহমুদ গজনবী রহমতুল্লাহ আলাইহি তাঁর দরবারে বসে ফরমালেন:
"আমার অন্তরে প্রবল ইচ্ছা জাগছে, আমি আল্লাহর এক মহীয়ান নবী ও ওয়ালী, হযরত খিযির আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যিয়ারত করতে চাই।"
এই কথা শুনে দরবারে উপস্থিত এক দরিদ্র লোক দাঁড়িয়ে গেলো এবং বিনয়ভরে বলল:
"হুযুর, আমি আপনাকে হযরত খিযির আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যিয়ারতের ব্যবস্থা করে দিতে পারি, তবে একটি শর্ত আছে। আমি গরিব মানুষ, আমার ছেলে-মেয়েদের ছয় মাসের খরচ যদি আপনি বহন করেন, তবে আমি কাজে লেগে যাই।"
সুলতান বললেন: "ঠিক আছে, আমি ছয় মাসের খরচ বহন করব।"
ছয় মাস পর সেই গরিব লোককে ডেকে সুলতান জিজ্ঞেস করলেন:
"তোমার ওযীফা কি শেষ হয়েছে? হযরত খিযির আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাতের ব্যবস্থা কী হলো?"
সে বলল: "হুযুর, কিছু আমল এখনো বাকি আছে। আরও ছয় মাস সময় দরকার।"
সুলতান বললেন: "তবে ছয় মাস সময় পেয়ে যাও।"
এক বছর পর সেই ব্যক্তিকে আবার ডেকে সুলতান জিজ্ঞেস করলেন:
"তোমার আমল কি পূর্ণ হলো? হযরত খিযির আলাইহি-এর সাক্ষাতের সম্ভাবনা কি তৈরি হয়েছে?"
গরিব লোকটি মাথা নিচু করে বলল:
"হুযুর! আমি তো গরিব, আমার এত সাধ্য কোথায়! আমি আপনার সাথে মিথ্যা বলেছিলাম, ক্ষমা করবেন।"
সেই সময় সুলতানের দরবারে ছিল এক মহাশ্রদ্ধেয় সমাবেশ—যেখানে আউলিয়া, গাউস, কুতুব, আবদাল, মুহাদ্দিস, মুফাসসিরগণ উপস্থিত ছিলেন।
সুলতান তাঁর একজন মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন:
"বলো তো, যদি কেউ বাদশাহকে মিথ্যা বলে, তার কী শাস্তি হওয়া উচিত?"
মন্ত্রী বলল: "তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক।"
এ কথা শুনে এক নূরানি মুখাবয়ব বিশিষ্ট বুযুর্গ বলে উঠলেন:
"হুযুর! মন্ত্রী ঠিকই বলেছে।"
এরপর সুলতান আরেক মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন:
"তোমার মতে, এই মিথ্যাবাদীর শাস্তি কী হওয়া উচিত?"
সে বলল: "ওকে কুকুরের সামনে ছেড়ে দাও, যেন তারা চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নেয়, আর ও বুঝতে পারে যে বাদশাহের সাথে প্রতারণা করা কত বড় অপরাধ!"
নূরানি বুযুর্গ আবার বললেন:
"এই কথাও ঠিকই আছে।"
তারপর সুলতান প্রিয়জন হযরত আইয়ায রহমতুল্লাহ আলাইহি-এর দিকে তাকিয়ে বললেন:
"তুমি কী বলো?"
হযরত আইয়ায রহমতুল্লাহ আলাইহি শান্ত কণ্ঠে বললেন:
"বাদশাহ সালামত! সে একজন গরিব মানুষ। তাঁর মিথ্যা বলাতে আপনার শান বা ইজ্জতে কোনো কমতি হয়নি। বরং আপনি তো এক বছর তার পরিবারের খরচ বহন করে মহান দানশীলতার নজির স্থাপন করেছেন। অতএব, আমার পরামর্শ—আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন।"
নূরানী বুযুর্গ বললেন:
"সালামত! এটাই সবচেয়ে উত্তম কথা।"
সুলতান মাহমুদ আশ্চর্য হয়ে বললেন:
"একজন বলছে গলা কেটে দাও—সে ঠিক।
আরেকজন বলছে কুকুর ছেড়ে দাও—সে-ও ঠিক।
আর আইয়ায বলছে ক্ষমা করে দাও—সে-ও ঠিক!
এ কেমন কথা!"
বুঝুর্গ বললেন:
"হুযুর! যিনি গলা কাটার কথা বললেন, তিনি ছিলেন কসাইয়ের বংশধর—তার রক্তে আছে রুক্ষতা।
যিনি কুকুর ছাড়ার কথা বললেন, তাঁর পূর্বপুরুষ ছিলেন বাদশাহদের কুকুর ধোয়ানোর কর্মচারী—তাঁর রক্তেও সেই আচরণ প্রকাশ পেল।
আর যিনি ক্ষমার কথা বললেন, তিনি তো একজন সৈয়্যেদ।
তাঁর রক্তে আছে কারবালার ধৈর্য, ত্যাগ আর ক্ষমা।
তাঁর পূর্বপুরুষ ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কারবালায় লুটে গেলেন, তবু আফও (ক্ষমা) ছাড়া কিছু উচ্চারণ করেননি।
তিনি এই উম্মতের জন্য কান্না করে শহীদ হয়ে গেছেন।
এই সৈয়্যেদগণই তো হলেন আহলে বায়ত, যাঁরা দুনিয়ার নয়, আখেরাতের ব্যবসায় সফল।"
এই কথা শুনে সুলতান মাহমুদ গজনবী কাঁপতে কাঁপতে নিজের সিংহাসন থেকে উঠে দাঁড়ালেন।
তিনি বিস্ময়ে বলে উঠলেন:
"আইয়ায! তুমি তো আজ অবধি কখনো বলেনি যে তুমি আহলে রাসূল, সৈয়্যেদ!
এতদিন ধরে তুমি আমার পাশে থেকেও এমন এক সত্য গোপন রেখেছো!"
হযরত আইয়ায রহমতুল্লাহ আলাইহি সশ্রদ্ধ কণ্ঠে বললেন:
"হুযুর, আজ যিনি আমার বংশের গোপন রহস্য প্রকাশ করলেন, আমি এখন আপনার সামনে একটি রহস্য প্রকাশ করতে চাই।"
সুলতান বললেন: "কি রহস্য?"
হযরত আইয়ায রহমতুল্লাহ আলাইহি বললেন:
"এই নূরানি বুযুর্গ যিনি আজ পুরো ঘটনাকে উন্মোচিত করলেন,
তিনিই হলেন—হজরত খিজির আলাইহি ওয়াসালাম।
সুবহানাল্লাহ!
এভাবেই সুলতান মাহমুদ গজনবী তাঁর ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে পেলেন এক দরবেশের রূপে আসা আল্লাহ ﷻর ওয়ালী হযরত খিযির আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যিয়ারতে। আল্লাহ ﷻর রহমত কখন, কিভাবে, কার মাধ্যমে আসে, তা শুধু আশেকদের হৃদয়ই উপলব্ধি করতে পারে।
মহান আল্লাহ ﷻ আমাদেরকেও ওয়ালীদের মহব্বত দান করুন।
🙏আমিন।