16/06/2025
পানাম নগর ধ্বংসের ইতিহাস । Panam City Visit & History. Part-2
পানাম নগরীর গঠনপ্রকৃতি:-
--------------★★----------------
পানামের টিকে থাকা বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি উল্লেখযোগ্য।পানাম সড়কের উত্তর পাশে ৩১টি আর দক্ষিণ পাশে ২১টি বাড়ি রয়েছে। বাড়িগুলোর অধিকাংশই আয়তাকার, উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত, উচ্চতা একতলা থেকে তিনতলা। বাড়িগুলোর স্থাপত্যে ঔপনিবেশিকতা ছাড়াও মোঘল, গ্রিক এবং গান্ধারা স্থাপত্যশৈলীর সাথে স্থানীয় কারিগরদের শিল্পকুশলতার অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়। প্রতিটি বাড়িই ব্যবহারোপযোগিতা, কারুকাজ, রঙের ব্যবহার, এবং নির্মাণকৌশলের দিক দিয়ে উদ্ভাবনী কুশলতায় ভরপুর।
ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই-লোহার তৈরি ব্র্যাকেট, ভেন্টিলেটর আর জানালার গ্রিল। মেঝেতে রয়েছে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই খিলান ও ছাদের মধ্যবর্তী স্থানে নীল ও সাদা ছাপ দেখা যায়। এছাড়া বাড়িগুলোতে নকশা ও কাস্ট আয়রনের কাজ নিখুঁত। কাস্ট আয়রনের এই কাজগুলো ইউরোপের কাজের সমতূল্য বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এর সাথে আছে সিরামিক টাইল্সের রূপায়ণ।
প্রতিটি বাড়িই অন্দরবাটি এবং বহির্বাটি -এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। বেশিরভাগ বাড়ির চারদিকের ঘেরাটোপের ভিতর আছে উন্মুক্ত উঠান।
পানাম নগরীর পরিকল্পনাও নিখুঁত। নগরীর পানি সরবাহের জন্য দুপাশে ২টি খাল ও ৫টি পুকুর আছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আছে কুয়া বা কূপ। নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখতে করা হয়েছে খালের দিকে ঢালু। প্রতিটি বাড়ি পরস্পর থেকে সম্মানজনক দূরত্বে রয়েছে।
নগরীর যাতায়াতের জন্য রয়েছে এর একমাত্র রাস্তা, যা এই নগরীর মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে এপাশ-ওপাশ।
নগরীর ভিতরে আবাসিক ভবন ছাড়াও আছে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, মঠ, গোসলখানা, নাচঘর, পান্থশালা, চিত্রশালা, খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, গুপ্ত পথ, বিচারালয়, পুরনো জাদুঘর। এছাড়া আছে ৪০০ বছরের পুরোন টাঁকশাল বাড়ি।
পানাম নগর ধ্বংসের ইতিহাস :-
----------------★★------------------
মধ্যযুগে সোনারগাঁ বাংলার রাজধানী হওয়ার পর থেকে পানাম নগর ব্যাপক উৎকর্ষ লাভ করে। কিন্তু ব্রিটিশরা বাংলার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে এখানকার সম্ভ্রান্ত মুসলিমরা ব্রিটিশদের সঙ্গে অসহযোগীতা করায় ব্রিটিশরা এখানকার বাসিন্দাদের প্রভাব প্রতিপত্তি কমানোর উদ্যোগ নেয়। একই সঙ্গে তারা এখানে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের (শুধুমাত্র যারা ব্রিটিশদের সঙ্গে সহায়তা করে) পুনবার্সণ শুরু করে। ফলে এখানে ক্রমে হিন্দু ব্যবসায়ীদের অবস্থান তৈরি হয়। একই সঙ্গে অতীতে বসবাসকারী অনেক ব্যবসায়ী যারা মুসলিম তারা ক্রমে এ এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। ফলে পানাম নগরের বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেঙে ফেলা হয় অনেক বাড়িঘর। এভাবে পানাম নগরের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস হয়ে যায়।
বর্তমানে পানাম নগরে রাস্তার দুইধারে পুরানো যেসব ভবন দেখা যায় তা মূলত ব্রিটিশদের সহায়তায় গড়ে উঠা উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দির হিন্দু উচ্চ বর্ণের ব্যবসায়ীদের তৈরি। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর এসব ব্যবসায়ীদের প্রতিপত্তিও হ্রাস পায়। ফলে ভবনগুলো ক্রমে পরিত্যক্ত হতে থাকে। ফলে আস্তে আস্তে তা আশপাশের লোক দ্বারা দখল হতে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার (১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের) আগে ও পরে বাড়িগুলো ১০-১৫ বছরের ইজারা দেয়া হয় এবং পরে নবায়নও করা হয়। মূল বাসিন্দাদের অবর্তমানে ইজারা গ্রহিতাদের অযত্নে অবহেলায় এবং লুটেরারদের লুটপাটে পানাম নগর ধ্বংসের শেষ প্রান্তে পৌঁছায়।
বাধ্য হয়ে সরকার ২০০৯ সালে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে পানাম নগরীকে সম্পূর্ণভাবে দখলমুক্ত করা হয়।
#পানাম_নগর
#পানাম_নগর_ভ্রমণ
#পানাম_নগর_গঠনপ্রকৃতি
#পানাম_নগর_ধ্বংসের_ইতিহাস
#সোনারগাঁও_পানাম_নগর
#সোনারগাঁ
#একদিনে_সোনারগাঁও_ভ্রমণ
#প্রাচীন_স্থাপত্য
#হারানো_নগরী
#পানাম_নগর_ইতিহাস
#পানামনগর
,
#নারায়নগঞ্জ_দর্শনীয়_স্থান
#পানাম_সিটি_ভ্রমণ