03/05/2024
__ “ তোমার পা দুটো একবার ছুঁতে দিবে? একটু..... ”
__ “ আর একবার যদি আমাকে স্পর্শ করার ট্রাই করেন, তো হয় আপনাকে জানে মেরে ফেলবো না হয় নিজে মরবো। এক্ষুণি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যান বলছি, নইলে চিৎকার দিবো আমি। ”
__ “ তাহলে তো কাল ব্রেকিং নিউজ আসবে ' রাতে হাজবেন্ড কে ঘর থেকে বের করে দিলো ওয়াইফ ' ”
__ “ কেনো! নিউজ কি আপনি বের করবেন? ”
__ “ কেনো গো! এতো চেতছো কেনো! তুমি এতো রাতে বের করে দিলে বাড়ি ওয়ালী আন্টি এই সব রটিয়ে বেড়াবে। তুমি বোঝো না নাকি! ”
__ “ কে বলেছিলো আপনাকে আমার হাজবেন্ড এর পরিচয় দিতে? ”
__ “ হাজবেন্ড এর পরিচয় না দিলে তোমাকে বাসা ভাড়া কে দিতো শুনি!”
__ “ তার ফায়দা লুটে নিচ্ছেন! ”
__ “ কি আজব তুমি! এখন তো আমরা রিয়েল হাজবেন্ড ওয়াইফ!”
__ “ আমি কখনোই মানি না এই বিয়ে! ”
__ “ আমি মানি! একদিন তোমার হৃদয় জয় করেই ছাড়বো! ”
__ “ না পারলে জোর খাটাবেন? ভন্ড!”
আর কোন কথা না বলে উল্টো দিকে মুখ দিয়ে শুয়ে পড়ে সাইমা। সজীব আস্তে করে বেডে উঠে, সাইমার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো ,
__ “ ভালোবেসে না পেলে একটু তো জোর করতেই হবে। ”
সাইমা উল্টো ঘুরে সজীব কে এক ধাক্কায় ফেলে দেয় নিচে ।
__ “ আর একবার ও যদি আমার কাছে আসতে চেষ্টা করেন! তাহলে! ...... ”
__ “ তাহলে কি! একশো বার যাবো! ”
সাইমা চোখ বন্ধ করলো, “ এখন থেকে কি এই বাজে ছেলের অত্যাচার সহ্য করতে হবে! কিভাবে করবো সহ্য! আমার যে ওকে ভালোবাসা সম্ভব না! সে বুঝেও কেনো আমার সাথে এমন করলো! ”
__ “ ভালোবাসি তাই! ” সাইমা ভাবনার ছেদ করে সজীব এর একটা কথায় চমকে যায়।
__ “ আমি যে আপনাকে ভালোবাসি না! ” সাইমা আস্তে করে বলে।
__ “ ভালো তুমিও আমাকে বাসো! জেদ ধরে আছো তাই! দেখবে কিছুদিন পর তুমি নিজেই আমার কাছে এক মুঠো ভালোবাসা চাইবে। আর আমি এক সিন্ধু ভালোবাসা দিবো। ”
__ “ বাজে কথা বলবেন না! আমি ঘুমাবো, কাল অফিস আছে! দয়া করে ঘুমাতে দিন। ”
সাইমার কথার উত্তরে সজীব বলে,
__ “ আমি কোথায় ঘুমাবো! পাশে তো নিবে না জানি! ”
সাইমা একটা বালিশ আর চাদর নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ে। এরপর বলে,
__ “ আর বিরক্ত না করে ঠিক মতো ঘুমাতে দিন। ”
__ “ নিচে শোবে না! ঠাণ্ডা লেগে যাবে। ”
__ “ নাহহহ! আপনার কোলে গিয়ে ঘুমাবো! ডিসগাস্টিং। ”
__ “ তাই তো চাই! ”
সাইমা উল্টো দিক ঘুরে শুয়ে পড়ে, চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। কি থেকে কি হয়ে গেলো! দুচোখ বেঁয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। এমন জীবন তো সে চায় নি। চেয়েছিলো ভালোবেসে ঘর বাঁধতে। একটা ঝড় তার জীবন টাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। এক বিপদ থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেক বিপদের মাঝে এসে পড়েছে। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় সাইমা বুঝতে পারেনা।
সকাল ৬ টা,
সজীবের ঘুম ভাঙে সাইমার অস্ফুট স্বরে, সাইমা বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে। সজীব বেড থেকে নেমে সাইমার পাশে গিয়ে বসে। সাইমা ঘুমের ঘোরে বলছে,
__ “ আলিফ! আমাকে ছেড়ে যেওনা! ফিরে এসো! খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। ”
সজীব ইচ্ছে করে সাইমার কানের কাছে গিয়ে বলে,
__ “ কখনো ছেড়ে যাবোনা। ”
সজীব সাইমার হাত নিয়ে নিজের গলাতে দেয়, সাইমাও ঘুমের ঘোরে সজীব কে আঁকড়ে ধরে। হৃদস্পর্শে তোমাকে আমার করে নিবো সাইমা। সজীব চোখ বন্ধ করে, সাইমার নিঃশ্বাস এর গরম বাতাস উপভোগ করতে থাকে।
সকাল ৭ টা,
ফোনে এলার্ম এর শব্দে চোখ খুলে সাইমা। সজীব কে জড়িয়ে আছে দেখেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে যায়। জোরে করে ধাক্কা দেয় সজীব কে। সজীব উঠে যায়, বলে,
__ “ এমন করে ধাক্কা দিচ্ছো কেনো! ”
__ “ আপনার সাহস হয় কিভাবে আমাকে স্পর্শ করার! ”
__ “ নিজের বিয়ে করা বউকে স্পর্শ করেছি, ক্ষতি কিসের। ”
সাইমা এলার্ম বন্ধ করে, ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। ৯ টায় অফিসে যেতে হবে, অনেক কাজ আছে তার। এখন ওর সাথে তর্ক করে সময় নষ্ট করার মানেই হয়না। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে রান্নাঘরে ঢুকে। এক কাপ চা বসাতে গিয়ে মনে হয়, সজীব তো আছে। আরেক কাপ পানি দিয়ে দেয়। তাড়াতাড়ি করে ব্রেড এ জেলি মাখিয়ে নেয় সাইমা।
একটা প্লেটে করে সজীবের সামনে দিয়ে আসে,
__ “ আমি তো ভেবেছিলাম তুমি একাই খাবে! ”
সাইমা মাথা ঘুরিয়ে মুখ বাঁকিয়ে চলে আসে রান্নাঘরে। নিজে কোনরকম খেয়ে নিয়ে চা কাপে নেয়। সজীব কে এক কাপ দিয়ে নিজেও এক কাপ নিয়ে নেয়।
__ “ আলিফ আলিফ করে চিৎকার করছিলে! তাই তোমার কাছে গিয়েছিলাম। ”
__ “ একশবার আলিফ কে ডাকবো! আর ভুলেও কাছে আসবেন না! ”
__ “ একদিন দেখবে তুমি নিজেই আমার কাছে আসবে। যাই হোক! অফিসে যাও দেখেশুনে, আমাকে আমার বাসায় যেতে হবে। কাল থেকে তোমার সাথে আছি, বাসাতে খবর ও দিইনি। সবাই নিশ্চিত টেনশন করছে। ”
__ “ যান যান! আর আসবেন না এখানে। ”
__ “ রেডি হয়ে নাও, একসাথে বেরুবো! তোমাকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে তারপর বাসায় যাবো। ”
সাইমা কথা না বলে রান্নাঘরে ড্রেস নিয়ে ঢুকে যায়। এক রুমের ছোট্ট বাসা, চাকুরীর জন্যই নিজের শহর ছেড়ে এতদূর আসা। সজীব ই এই রুম টা ঠিক করে দিয়েছে তাও হাজবেন্ড ওয়াইফ পরিচয় এ। ফেসবুকে একটা গ্রুপ থেকে সাইমা আর সজীব এর পরিচয় হয়। গ্রুপে দুজনেই এডমিন ছিলো, কিন্তু সাইমাকে সব সময় সজীব খুব রাগাতো। সজীব কে এই জন্য পছন্দ করতো না সাইমা। সজীব ইচ্ছে করেই সব সময় সাইমার সাথে ঝগড়া করতো।
__ “ আলিফ সম্পর্কে সব কিছু জানার পরও কেনো বিয়ে করলেন আমাকে? ”
রেডি হয়ে এসেই সজীব কে জিজ্ঞেস করে সাইমা।
__ “ তোমাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম তাই! ”
__ “ হুহ! প্রথম দেখা। ”
__ “ জানো! তোমাকে ভালোবাসতাম অনেক আগে থেকেই। কিন্তু বলার সাহস পাইনি। কারণ তুমি সব সময় আলিফের নাম জপতে। খুব কষ্ট পেতাম তখন জানো! ”
__ “ আলিফ কে আমি এখনো ভালোবাসি! ওর কাছেই ফিরে যাবো আমি। ”
__ “ পারবেনা এই বন্ধন ছেড়ে যেতে। চলো তোমার অফিসে দেরি হয়ে যাবে। ”
সাইমা বাধ্য মেয়ের মতো বেরিয়ে পড়ে, সজীব নামার আগেই সিএনজি পেয়ে যায়। সজীবের অপেক্ষা না করেই উঠে যায় সাইমা।
সারাদিন কাজের পর দুপুরের ব্রেক এ লাঞ্চ করে নেয় সাইমা, রিলাক্স হয়ে বসে ভাবতে থাকে আলিফের কথা।
ভার্সিটি লাইফের প্রেম,
__ “ সব সময় তোর হাত টাই ধরে রাখবো। ” সাইমার হাত জড়িয়ে আলিফ সব সময় এই কথা বলতো।
চোখ খুলে সাইমা, জল গড়িয়ে পড়ছে, “ আলিফ তুই কোথায় চলে গেলি! নিয়ে যা আমাকে। আমি আর পারছিনা রে সহ্য করতে। এভাবে কতো দিন সজীবের থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো রে! আমি ওকে ভালোবাসি না! তাও সে আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে। কিভাবে মুক্তি পাবো আমি এই কষ্ট থেকে। ”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলিফের নাম্বারে আবার ডায়াল করে সাইমা,
The number you are calling is currently switched off, please try again later.
“ উফফ এই ডায়ালগ শুনতে শুনতে পাগল হয়ে গেলাম। ”
চোখ মুখে পানি দিয়ে আসে সাইমা। অফিসের কাজে মন দেয়।
,,,
সজীব কে বাড়িতে দেখে খুব রেগে যায় ওর মা কামরুননাহার।
__ “ কি রে বেয়াদব ছেলে, কাল থেকে কতো বার ফোন দিয়েছি তুই দেখেছিস! ”
__ “ মা! আমি বিয়ে করেছি কালকে! ” কোনরকম ভনিতা ছাড়াই বললো সজীব।
__ “ কি বললি তুই! বেরিয়ে যা বাসা থেকে, আজ থেকে জানবি তোর মা মরে গেছে। ”
__ “ মেয়েটা কে জোর করে বিয়ে করেছি, মানে বাধ্য করেছি বিয়ে করতে। এখন কি করে মানিয়ে নিবো সেটা না বলে বলছো বের হয়ে যা! তাহলে জন্ম কেনো দিয়েছিলে, ছেলের বিপদে যদি মা হয়ে পাশে না থাকো তো?”
কান্নায় ভেঙে পড়েন কামরুননাহার,
__ “ তুই ছেলে হয়ে এই কথা বলতে পারলি! জানিস তুই কতো টেনশন করেছি তোর জন্য। ”
__ “ এতো কেঁদো না তো! আমি মরিনি! ”
__ “ মেয়েটা কে? ”
__ “ সাইমা ওর নাম! যাই হোক ওর আগে একবার বিয়ে হয়েছিলো দুইদিন পর ডিভোর্স হয়ে গেছে। তাই ও বিয়ে করতে চাইনা। জোর করে বিয়ে করেছি! এখন তুমি বলো ওকে কি মেনে নিবে? ”
__ “ হায় আল্লাহ রে! দেশে কি আর মেয়ে ছিলো না? কপাল পুড়াইলি তুই আমার রে! ”
__ “ তার মানে মেনে নিবেনা, তাইতো! ”
__ “ স্বামী ছাড়া মেয়েকে তুই বিয়ে করেছিস, দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে। আর কখনো আসবি না তুই। ”
__ “ হুমম আমি চলেই যাবো! ভালো থেকো! ”
সজীব বাসা থেকে বের হতে গেলে কামরুননাহার বলে,
__ “ ওই মেয়েরে তালাক দিয়ে দে, যদি তুই আমাকে ভালোবাসিস তাহলে তালাক দিবি । নইলে আমার মরা মুখ ও তুই দেখতে পারবি না। ”
__ “ মা! ”
__ “ তোর মা নাই! বের হো বাড়ি থেকে। ” কোনরকম সজীব কে বের করে দিয়েই কাঁদতে বসলেন কামরুননাহার।
সজীব চুপচাপ সাইমার ঘরের আরেকটা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঘরে বসে থাকে। অফিস শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে সাইমা, দরজা তে তালা নাই দেখে অবাক হয়। নক দিতেই সজীব দরজা খুলে দেয়। সাইমা জোরে করে চিল্লিয়ে উঠে.......
__ “ কি করছেন কি আপনি! গোটা ঘরে পানি কিসের? ”
সাইমা ঘরে ঢুকেই দেখে সজীব কাকভিজা হয়ে ভিজে আছে, ঘরেও পানি পড়ে অনেক। রেগে গিয়ে জোরে করেই কথাটা বলে সেই জন্য।
__ “ মাথা টা গরম হয়ে ছিলো! তাই ঠান্ডা করার জন্য ঝর্না ছেড়ে রেখেছিলাম। ওখানে ই এতক্ষণ ছিলাম, ঘরে কিভাবে পানি এলো দেখিনি। ”
__ “ আপনি কি ঠিক করেই রেখেছেন! এখানে থাকবেন আর আমাকে অত্যাচার করবেন। ” কথাটা বলতে বলতে রুমে ঢুকে পা টিপে টিপে, নইলে স্লিপ খেয়ে পড়ে যাবে সাইমা। অফিসে সারাদিন গাধার খাটুনি খেটে এসে বাসায় একটু রেষ্ট নিবে কিনা, পুরো রুম এর অতিরিক্ত পানি ছেঁকে ফেলে ঘর মুছে নিজেও ফ্রেশ হতে ২ ঘন্টা লেগে গেলো সাইমা। এদিকে সজীব আগেই ফ্রেশ হয় বেডে গিয়ে ঘুম দিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসে যে একটু রেষ্ট নিবে তার উপায় নেই। ভন্ড টা বেডে হাত পা ছেড়ে শুয়ে আছে।
খুবই বিরক্ত হয়ে ফ্লোরে একটা টাওয়েল আর চাদর বিছিয়ে সেখানেই শুয়ে পড়ে। ক্লান্তির দরুণ ঘুমিয়ে পড়ে সাইমা।
°°°
সজীব কে সে মোটেও সহ্য করতে পারতো না আগে থেকেই, কিন্তু সজীব সব সময় সাইমার সাথে ঝগড়া ও করতো মানসিক সাপোর্ট ও দিতো। সাইমা নতুন জব পায় ঢাকাতে, সজীব কে খুশি হয়ে বলে জবের কথা।
__ “ জব তো পেলে, এখন ঢাকায় একা কিভাবে থাকবে শুনি? ”
__ “ যদি এতো চিন্তা হয় আমার জন্য, একরুমের একটা বাসা ঠিক করে রাখলেই তো পারেন।”
__ “ সে আর বলতে! অবশ্যই করবো, জানিই তো তোমার এই দুনিয়ায় আপন বলতে কেউ নেই। ”
__ “ যদি মনে করেন করুণা করছেন, তাহলে কিছুই করতে হবেনা। ওকে ”
__ “ না না! তুমি আসো তো, আমি স্টেশন এ তোমাকে নামিয়ে নিবো। অসুবিধা হবে না তোমার। ”
যেদিন সাইমা প্রথম ঢাকা যায়, সেদিন ই সজীবের সাথে প্রথম দেখা হয় সাইমার। এতো দিন তো ফেসবুকে কথা বলেছে, ছবি দেখেছে সজীব। সাইমা কে দেখে হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকে অনেক্ষণ।
সাইমা কাছে গিয়ে বলে,
__ “ আমার মনে হয় আপনি সজীব, তাইনা! ”
__ “ চলুন যাওয়া যাক। ”
__ “ আগে তো তুমি করে বলতেন! এখন আপনি করে বলছেন যে! ভয় পেলেন নাকি?”
__ “ না মানে! মেয়েদের সাথে আমি তেমন কথা বলতাম না, কখনো সামনাসামনি কথা হয়নি। তাই....”
__ “ যাই হোক! চলুন ”
__ “ হুমম চলুন মানে চলো। ”
একই রিকশা তে সেদিন সজীবের সাথে উঠে সাইমা। দুজনের একটু ইতস্তত লাগলেও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সজীব আড় চোখে সাইমা কে বারবার দেখতে থাকে, সজীবের চোখে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী সাইমা। সাইমা ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বলে,
__ “ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে মজা নেই বোধ হয়। ”
__ “ মানে? ”
__ “ কিছুনা।” আবার দুজনেই চুপ হয়ে যায়।
বাসার রুম টা চার তলায়। সাইমা অনেক ক্লান্ত বলে সজীব ই লাগেজ নিয়ে উঠে। সাইমা রুমে ঢুকে দেখে একটা ডবল খাট, প্রয়োজনীয় বাসন পত্র, একপাশে এক্টা টেবিল কিনে রাখা আছে।
__ “ এগুলো কার? ”
__ “ তোমার জন্য কিনেছিলাম, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। লাগেই তো সব সময়। ”
__ “ ওকে, খরচ কতো হয়েছে বলুন, নেক্সট মান্থে দিয়ে দিবো। ”
__ “ লাগবেনা, মানে ফ্রেন্ড হিসেবে আমার তরফ থেকে গিফট। ”
তখনই বাড়ি ওয়ালী আন্টি আসে, এসেই সজীব কে বলে,
__ “ ও মা! কি কিউট বউ তোমার, একেবারে যেনো পরী। ” এরপর সাইমার দিকে তাকিয়ে বলে, “ নাম কি তোমার মা? ”
সাইমা অবাক হয়ে সজীবের দিকে তাকায়, সজীব চোখ ইশারা করে আন্টির সাথে কথা বলতে বলে।
__ “ জ্বী আন্টি, আমি সাইমা। এই বাসা টা কি আপনাদের! অনেক সুন্দর তো। একদম মনের মতো এই ঘর টা। ”
__ “ তুমি নিজে সুন্দর, তাই ঘর ও সুন্দর। যেহেতু তোমরা আজ প্রথম এসেছো! রান্না তো করোনি, দুপুরে আমার বাসায় খাওয়ার দাওয়াত দিতে এলাম গো। ”
__ “ জ্বী আন্টি, এসবের কি দরকার ছিলো বলুন, আমরা তো কিনে নিতে... ”
মুখের কথা কেড়ে আন্টি বলে,
__ “ কেউ দাওয়াত দিলে কবুল করতে হয় বউ, বুঝেছো। ”
সাইমার এইখান থেকেই সজীবের উপর রাগ উঠে যায়, না পারছে কিছু বলতে না পারছে সহ্য করতে। আন্টিকে হাসিমুখে বিদায় দিয়ে সজীব এর দিকে ঘুরে তাকালো। সজীব কানে হাত দিয়ে ইশারায় সরি বলে,
__ “ আমি আপনার স্ত্রী? ”
__ “ আরে রাগ করছো কেনো? ঢাকায় সিংগেল মেয়েকে কে বাসা ভাড়া দিতো শুনি। এই রুম টা অনেক সুন্দর, তোমার উপযোগী। তাই মিথ্যে বলে বাসাটা নিয়ে নিয়েছি। এতো রাগ করো না তো, ফ্রেশ হয়ে চলো দাওয়াত খেতে যাই। ”
°°°
সাইমার ঘুম ভাঙে সজীব এর ডাকে, ফ্লোরে শুয়ে থেকে মাজা ব্যথা হয়ে গিয়েছে সাইমার।
আড়মোড়া ভেঙ্গে সাইমা বললো,
__ “ কি হলো! ডাকছেন কেনো? “
__ “ রাতের খাবার খেয়ে নাও, এরপর গিয়া বিছানায় ঘুমাও। ”
__ “ রান্না কে করেছে? ”
ভাত আর ডিমভাজি, ডাল রান্না করেছে সজীব।
__ “ এতো কথা না বলে খেয়ে নাও। ”
__ “ আপনি কি এখানেই থাকবেন, বাসায় কি যাবেন না? ”
__ “ আমি এখানে থাকলে কি প্রব্লেম তোমার? ”
__ “ আমার ভালো লাগে না আপনাকে, বুঝেন না? ”
__ “ কিছুই করার নেই, এখন ভালো লাগেনা পরে ভালো লাগবে। ”
__ “ তার মানে আপনি কিছুতেই যাবেন না, আমাকে ই চলে যেতে হবে তাহলে! ”
সজীবের খুব রাগ উঠে যায় সাইমা চলে যেতে চেয়েছে তাই। সজীব সাইমাকে জোর করে চুমু খায়। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সাইমার কান্নার জন্য।
__ “ বাধ্য মেয়ের মতো থাকলে এসব জোর কখনোই করতাম না, সরি। এখন খেয়ে নিয়ে আমাকেও খেতে দাও। নাকি গো ধরে বসে থাকবে, আমাকে আরোও খারাপ বিহেভ করিয়ে নিবে তোমার সাথে। ”
সাইমা উঠে এসে অল্প একটু খেয়ে নেয়, সজীব বেশি করে খেতে বাধ্য করে, নিজেও খেয়ে নেয়।
সাইমা কান্না স্বরে বলে,
__ “ আজ যা করলেন, নেক্সট টাইম এমন হলে আমার মরা মুখ দেখবেন। ”
__ “ আত্মহত্যা মহাপাপ, করলে শাস্তি তুমি পাবে! ”
°°°
আলিফ কে ছোট থেকেই খুব পছন্দ করতো সাইমা, ম্যাচিউর হবার পর থেকে আলিফের সাথে ৪ বছর প্রেম করে সাইমা। বাসায় যখন জানাজানি হয় সাইমার বাবা বিয়েতে অস্বীকার করেন। আলিফ কে তার পছন্দ না! কিছুতেই মেনে নিবেনা উনারা আলিফ কে।
সাইমা তখন মহা বিপাকে পড়ে, বাসায় বন্দী করে রাখে ওর বাবা। একদিন এর ভিতর এক পঞ্চাশ উর্ধো বুইড়া লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় সাইমার। সাইমা বাধ্য হয়ে বিয়ে করলেও মন থেকে মেনে নিতে পারেনি।
সাইমা কে অবশ্য মোহরানা বাবদ কিছু টাকা দেওয়া হয়। নিজের কাছেই রেখে দেয় সাইমা। আলিফ কে ভালোবেসে স্বামীর অত্যাচার মেনে নিতে পারেনি। সাইমার বাবা ভাবে বিয়ের পর সাইমা সব মানিয়ে নিতে বাধ্য। বিয়ের দুইদিন পর সুযোগ বুঝে সাইমা পালিয়ে আসে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট নিয়ে। বান্ধবীর সাহায্যে এক টা মেসে উঠে। আলিফের সাথে অনেক যোগাযোগ করার ট্রাই করে।
কিন্তু নাহ! আলিফ যেনো দুইদিন এ হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে।
৬ টা মাস সাইমা প্রচুর কষ্ট করে, তিনটা টিউশনি করে যা টাকা পেতো তার কিছুটা করে জমিয়ে রাখতো। বৃদ্ধ স্বামী মেয়ের পালিয়ে যাওয়াতে ডিভোর্স দুইদিন পরই দিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু সাইমার বাবা সাফ জানিয়ে দেয়, মেয়ে তাদের কাছে মৃত।
সাইমা ও মনে মনে ঠিক করে নেয়, যে বাবা মা মেয়ের ক্ষতি করতে পারে, তাদের বাবা মা পরিচয় নাই বা দিলাম। ৭ মাস পর ফাইনাল এক্সাম শুরু হয়, টিউশনি করে এক্সাম খুব একটা ভালো হয়না সাইমার। তবুও নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার লড়াই তো করতেই হবে সাইমার।
খারাপ সময় গুলো তেই পরিচয় হয় সজীব এর সাথে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে। সাইমা সুখের দুঃখের সব কথা এই ছেলেটাকে বলে দিতো। এই ছেলেটার সাথে রোজই সাইমার ঝগড়া হতো আবার সজীব ই সাইমা কে কাছে টেনে নিতো।
ঢাকায় প্রথম দিন হাজবেন্ড ওয়াইফ পরিচয় এ দেওয়ার পর সজীব এর উপর রাগ করে থাকতো সাইমা। প্রথম মাস অফিস চলছে, খুব কাজ থাকতো। একদিন সজীব ফোন দেয় সাইমা কে।
__ “ হুম বলেন কি বলবেন? ”
__ “ তুমি আজ দেখা করতে পারবে? ”
__ “ অফিসে তো প্রচুর কাজ।”
__ “ সন্ধ্যার পর আসিও। আমি তোমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবো না হয়। ”
সজীব এই কাজ টা প্রায়ই করতো, অফিস শেষ এ সাইমা কে নিয়ে ঘুরতে যেতো। হয়তো টং এর দোকানে চা, না হয় হাটাহাটি, কিংবা রেস্টুরেন্ট এ ডিনার।
সাইমার ভিতরের রাগ প্রকাশ করতো না কখনো, ক্ষতি তো আর করছেনা সজীব।
দুই মাস এভাবেই চলে, হুটহাট সাইমার বাসায় আসা, বেড়ানো। দুইমাস পর সাইমাকে শুক্রবার দুপুরের আগে পার্কে ডাকে সজীব। সাইমা ও যায়, কারণ সজীব সব সময় তাকে সাহায্য করে আসছে। একটু ঘুরতে তো যাওয়া ই যায়।
পার্কে গিয়ে সজীব আগে থেকেই বসে থাকে, সাইমা কে দেখে থমকে যায়। শাড়ি পড়েছে মেয়েটা আজ। যেনো স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন অপ্সরা তার দিকে এগিয়ে আসছে। নীল শাড়ি তে যেনো নীল পরীর মতো লাগছে।
সাইমা কাছে আসতেই বুঝে সজীব ওকে দেখে চমকে গিয়েছে। হাতে তুড়ি মেরে বলে,
__ “ আসলে কলিগের বিয়ে ছিলো, খুব করে ডেকেছিলো। বাধ্য হয়েই শাড়ি পড়ে গিয়েছিলাম। আপনি এমন সময় দেখা করতে চাইলেন। চেঞ্জ করে আসার সময় ই পাইনি আসলে। ”
__ “ পরীর মতো লাগছে! তুমি এতো ই সুন্দরী। ”
__ “ বাদ দিন, বলুন কি বলতে ডাকলেন। ”
সজীব সাইমার হাত ধরে, সাইমা নিজেও অবাক হয়ে যায়। দুইমাসে একটা ছেলে কখনো ই তার হাত ধরেনি। আজ কিনা সেইই হাত ধরেছে।
সাইমা কে অবাক করে দিয়ে সজীব বলে,
__ “ ভালোবাসি তোমাকে, অনেক আগে থেকে।
হবে কি চলার পথের সঙ্গী আমার। ”
__ সাইমা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, “ সম্ভব না! ”
__ “ তুমি চাইলেই সম্ভব। তোমার আলিফ এক বছরেও ফিরেনি! তার জন্য কিসের এতো অপেক্ষা করবে তুমি! আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি সাইমা, পারলে তুমি সময় নাও। কিন্তু বিয়ে টা হয়ে গেলে তোমার সাথে সাক্ষাত এ পাপ হবে না। যদি তোমার আলিফ ফিরে আসে, চলে যেও তুমি। মুক্ত করে দিবো তোমায়। প্লিজ ফিরিয়ে দিও না ।”
সাইমা উঠে যেতে চাইলে সজীব হাত ধরার চেষ্টা করে, সাইমা বেকায়দায় সজীবের উপর পড়ে যায়। ওপেন প্লেসে এই অবস্থায় কেউ দেখলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়া টাই স্বাভাবিক। এলাকার কিছু ছেলে এসে চারিদিকে মুহুর্তের মধ্যে ভিড় করে আজেবাজে কথা বলা শুরু করে ওদের।
চলবে...............
ডিভোর্সি কে বিয়ে
পর্ব:০১
লেখক : অজানা