Monir Bro

Monir Bro প্রয়োজন আইনের তোয়াক্কা করে না।

মেঘের_ওপারে_আলো #পর্ব_২  --- পাতিলে ভাত নেই কেন, আম্মা? কথাখানি বলেই চুপ হয়ে গেছে আলো। সিতারা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললেন, -- ...
16/10/2025

মেঘের_ওপারে_আলো
#পর্ব_২


--- পাতিলে ভাত নেই কেন, আম্মা?

কথাখানি বলেই চুপ হয়ে গেছে আলো। সিতারা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললেন,

-- ভাতের চালের কেজি কত জানিস? রোজ রোজ যে তোকে লোকজন দেখতে আসে, তাদের জন্য ফলফলাদি কিনতে কিনতে তোর বাপ শেষ হয়ে যাচ্ছে। চাল নেই ঘরে। বয়ামে কটা বিস্কুট আছে খেয়ে নে।

সিতারা বেগমের কথা শুনে আলোর পেটের খুদা যেন মরে গেল। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। পাতিলটা রান্নাঘরে রেখে আসার সময় দেখল একটা প্লেটে ভাত আছে। এবার যেন আলো সম্পূর্ণ ভেঙে পরল। চোখের পানি আপনাআপনি চলে এলো। সিতারা যদি তার আপন মা হত তাহলে কি আজ মেয়েকে না খাইয়ে রাখতে পারত?

মুখের ওপর ওড়না চেপে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল আলো। নিজের জন্য বরাদ্দ ঘরে গিয়ে চুপচাপ মেঝেতে পাতানো বিছানায় শুয়ে পরল সে। মাথার ওপর চরকির ন্যায় ঘুরছে ফ্যান। ফ্যাকাশে রঙা ছাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখের কোল ঘেসে পানি বেয়ে তার বালিশ ভিজছে তখন।

কাঁদতে কাঁদতে আলো ক্ষুদার্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে পরল। ক্লান্ত দেহ যেন বেমালুম পেটের খুদাকে ভুলে গেল।

সকালের মিষ্টি রোদে আলোর ঘুম ভাঙে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে পরল। কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে নিজেকে পরিপাটি করে তুলল। তারপর, তার মায়ের কাছে চলল রান্নাঘরের দিকে। গিয়ে দেখল সিতারা বেগম চুলায় ভাত চরিয়েছেন। আলোকে দেখে তিনি মুখ মলিন করে বললেন,

--- ওখানে চালনিতে কটা আলু আছে। কুচি করে কেটে দে। সঙ্গে ডিম ভেঙে দিয়ে ভাজি করব। খেতে পারবি তো নাকি?

--- পারব মা। এখন যদি বলো পাথর খেয়ে পেটের খুদা মেটাতে হবে, তাও পারব। দুনিয়াতে যেকোনো পশু এবং মানুষকে কেবল পেটের ক্ষুধা কাবু করে ফেলে। আমাকেও কাবু করে ফেলেছে।

আলোর মনের কথা মনে রইল। অবশ্য সিতারা বেগমের কাছে প্রকাশ করে লাভ কি? তার কি মন পুড়ে আলোর জন্য?

সকালের খাবার তৈরি হলো সাদামাটা আয়োজনে। ডিম দিয়ে আলু কুচি করে ভাজা, ধোঁয়া ওঠা সাদা গরম ভাত এবং চ্যাপা শুঁটকির ভর্তা। সিতারা বেগম আজ সবার আগে আলোকে খাবার বেড়ে দিলেন। হয়ত, এতিমের ওপর আজ তার মায়া হয়েছে!

গতকাল দুপুরে কোনোমতে খেয়েছিল আলো। তারপর, তো পানি ছাড়া কিছুই জোটেনি। পুরো একটা বেলা এবং রাত গড়িয়ে আজ সকালে তার পেটে দানা পরল। আলো আজ পেট পুরে খেলো৷

খাওয়ার পর বাসনকোসন ধুয়ে রান্নাঘরে রেখে নিজের ঘরে এলো আলো। বইখাতা নিয়ে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করল। তারপর, পরিপাটি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হলো। কলেজে পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে বিশমিনিট। তাই ক্লাস শুরু হওয়ার আর কিছু সময় আগে থেকে রওনা হয় আলো। যেন সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারে। অবশ্য আলোর বাবা কিন্তু আলোকে রোজ রিকশা ভাড়া দেয়। কিন্তু, আলো ওই টাকা খরচ করে না। জমা করছে। তার স্বপ্ন পূরণের জন্য রেখে দিচ্ছে। হয়ত পরিমাণে কম হতে পারে। তবুও যেন আলো স্বস্তি পায় এটুকু সঞ্চয় করে।

তাই হেঁটে কলেজে যায়। হোক না কষ্ট তাতে কি। একটা গানের লাইন আছে না "আগুনের দিন শেষ হবে একদিন" ঠিক সেইদিনের অপেক্ষায় আছে আলো।

আমি এই গল্পের লেখিকা Tahmina Akther - তাহমিনা আক্তার এই পেইজে গল্পের বাকি পর্বগুলো পেতে ফলো করুন।

ক্লাস শেষ হবার পর বাড়ির পথে রওনা হয় আলো। আজ সূর্যের তাপ অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ প্রখর। আলো মাথার অংশের ওড়নাটা আরেকটু টেনে নিলো। রোদ থেকে বাঁচার বৃথা চেষ্টা। হুট করে হোঁচট খেলো সে। জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেছে। আলো জুতাটা হাতে নিতেই তার চেহারা মলিন হয়ে যায়। মাসের শেষের দিক এখন। বাবার ওপর এমনিতেই সংসার চাপ, বাবার এবং মায়ের প্রেশারের ঔষুধের খরচ, তার পড়াশোনার খরচের চাপ। মাঝেমধ্যে খরচ বাড়ানোর বোনাস হিসেবে পাত্রপক্ষ তো আছে। এখন বাবাকে কি করে নতুন জুতা কেনার কথা বলবে সে?

এমনসময় অদূরে চোখ পরল আলোর। মুচির দোকান যাচ্ছে। অজান্তেই আলোর মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে পায়ের জুতাজোড়া খুলে হাতে নিলো। তারপর, এগিয়ে যায় সেদিকে।

--- কাকা, এই জুতাটা সেলাই করে দিন তো।

আলোর ডাকে অর্ধবয়স্ক লোকটা আলোর দিকে তাকালো। জুতা হাতে নিয়ে বলল,

--- এমন পুরনো জুতা সেলাই করে লাভ নাই।

আলো লজ্জা পেলো কথাটি শুনে। ইতস্ততভাবে বলল।

--- আপাতত বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য হলেও জুতাটা সেলাই করে দিন।

--- ঠিক আছে। কিন্তু বিশ টাকা দেয়া লাগবে।

লোকটা তৎক্ষনাৎ তার কাঠের বাক্স থেকে সুই সুতা বের করে জুতা সেলাই করতে শুরু করল। আলো মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। দুই হাত সামনেই একটা টংয়ের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু চ্যাংড়া ছেলেপেলে গুলো আলোর দিকে তাকিয়ে কি যেন বলাবলি করছিল আর হাসছিল! আলো আড়ষ্টভাবে দাঁড়িয়ে রইল। কোনোমতে জুতাটা সেলাই হলে চলে যাবে।

- নেন হইয়া গেছে সেলানি। ট্যাহা দেন?

আলো জুতা পায়ে পরল। তারপর, ব্যাগ থেকে টাকা নেয়ার জন্য হাত দিলো। কিন্তু, এ কি? টাকা নেই যে! আলো অস্থির হয়ে টাকা খুঁজতে লাগল। কিন্তু, এতটুকু ব্যাগের কোনো কোণায় টাকা নেই। "হায় হায় বাবার কাছে থেকে আজ তার টাকা নিতে মনে ছিল না!"

বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও আলো যখন টাকা বের করতে পারিনি তখন মুচি একপ্রকার বিরক্ত হয়ে বলল,

--- ট্যাহা বাইর করেন! আর কতক্ষণ অপেক্ষা করুম?

আলোর লজ্জায় মরে যেতে মন চাইল। আজই কেন তার সাথে এতকিছু হচ্ছে!

--- চাচা, আমার বাসা তিন লাইন পরে। আপনি অপেক্ষা করুন আমি টাকা নিয়ে আসি। ব্যাগে টাকা নেই।

--- ট্যাহা নাই তাইলে জুতা সেলাই করতে আইছো কেন?
আমার ট্যাহা দিয়া এরপর এইখান থেইকা যাবা।

--- আমার ব্যাগে টাকা নাই। এখন এখান থেকে যেতে বারণ করছেন! তাহলে আমি আপনাকে টাকা দেব কি করে?

--- আমি এতকিছু বুঝি না। ট্যাহা দিয়া এরপরে যাইবা। দুনিয়ায় এখন বাটপার দিয়া ভইরা গেছে। তোমারে আমি যাইতে দেই আর তুমি পগারপার হইয়া যাও। এমন হইতে দিমু না আমি।

আশেপাশের অনেক মানুষ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আলোর এত অসহায় লাগছিল প্রকাশ করা যাবে না। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছে তার৷

--- আমি জুতাগুলো আপনার এখানে রেখে যাই। দামি জুতা এইগুলো। আমি আপনার টাকা নিয়ে এসে জুতাগুলো নিয়ে যাব।

--- যদি ফিরা না আসো?

--- তাহলে জুতা জোড়া বিক্রি করে দিয়েন।

মুচিকে জবাব দিয়ে আলো খালি পায়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হচ্ছিল এমন সময় কেউ "এক্সকিউজ মিস. " বলে ডাক দিলো। আলো পেছনে ঘুরতেই দেখতে পেলো সূদর্শন এক যুবককে৷ আলো ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আলোর চেহারার অভিব্যক্তি দেখে যুবকটা দুই কদম এগিয়ে এসেও পিছিয়ে গেল।

--- আপনাকে ডাকছিলাম ।

যুবক খানিকটা ইতস্তত করে বলল। আলো বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে বলল,

--- কেন?

--- আপনি যদি মাইন্ড না করেন তাহলে আপনার জুতা সেলাইয়ের বিল আমি দিতে চাই।

--- আপনি কেন দিবেন? আপনার কাছে চেয়েছি আমি?

আলো যেন আরও বিরক্ত হলো নিজের ওপর,নিজের পরিবারের স্বচ্ছলতার ওপর, অর্থনৈতিক অবস্থা ওপর৷ সেই সঙ্গে বিরক্ত হলো সাহায্য করতে আসা ভদ্র মহাশয়ের ওপর।

--- আমি কখন বললাম আপনি চেয়েছেন! আমি তো শুধু আপনাকে হেল্প করতে চেয়েছি!

--- আপনি শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট করছেন। আমার আপনার সাহায্যের প্রয়োজন নেই।

--- আমার একটা কাজের বিনিময়ে হেল্প করতে চাই আপনাকে?

যুবকের কথা শুনে আলো চোখ ছোট করে তাকালো লোকটার দিকে। লোকটাকে কোথাও দেখেছে মনে হচ্ছে? কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে না!

--- আসলে আমি খুলশীতে থাকি। এদিকে তেমন আসা হয় না। তাই কাউকে চিনিও না তেমন। আমি একজনকে খুঁজছি আসলে।

--- আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনি যাকে খুঁজছেন,আমি তার পরিচয় জানি বলে ধারণা হচ্ছে নাকি আপনার ?

--- আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আগে আমার পুরো কথাটা তো শুনুন?

লোকটার কথা শুনে আলো এবার সত্যি ধৈর্যহারা হয়ে বলল,

--- বলুন?

--- আমার মা গতকাল সন্ধ্যায় এই কলোনির সামনে অচেতন হয়ে পরে যায়। তখন আমার মা'কে একটা মেয়ে হেল্প করে। আমাকে কল করে আমার মায়ের খোঁজ জানায়। এবং আমিও আমার মাকে সহি সালামতে ফিরে পাই। কৃতজ্ঞতা থেকেই সেই মেয়েটাকে আমার মা খুঁজছেন। সকাল থেকে আমি এখানকার বেশ কয়েকটা দোকানে মেয়েটার পরিচয় জানার জন্য চেষ্টা করেছি। কেবলমাত্র একটা তথ্য উদ্ধার করেছি। মেয়েটা নাকি পাহাড়তলী কলেজে পড়ে! আপনিও হয়ত সেই কলেজের স্টুডেন্ট? আপনার আই কার্ড তো বলছে আপনিও পাহাড়তলী কলেজের স্টুডেন্ট?

লোকটার পুরো কথা শুনে আলোর মাথা ঘুরছে। বলে কি?এত খুটিনাটি তথ্য কিভাবে খেয়াল করছে? সামান্য একটু হেল্প করাতে উনারা আলোকে খুঁজছে? আলোর কাছে এসে আলোর পরিচয়ের খোঁজ করছে? আচ্ছা এই লোকটাই কি "মেঘালয়"। হুট করে আলো মিইয়ে যায়। যদি লোকটা সত্যি সত্যি মেঘালয় হয় তো? হতেও পারে? কারণ গতকাল সন্ধ্যায় সেখান থেকে চলে আসার সময় আবছা আলোয়ে লোকটাকে দেখেছিল অস্পষ্ট দেখা আরকি? তাই হয়ত চেনা চেনা লাগছে।

চলবে....

দাঁড়া তুর সুন্নত বের করতেছি 🙋‍♂️🏃‍♀️🏃‍♀️
15/10/2025

দাঁড়া তুর সুন্নত বের করতেছি 🙋‍♂️🏃‍♀️🏃‍♀️

আমার_হৃদয়ে_তুমি_আজীবন   #পর্ব_৩৮ ফিরে এলো চার মানব-মানবী। কিন্তু কেউ মনের সুখে, আর কেউ দগ্ধ হৃদয় নিয়ে। রাকিব আর লিজার...
15/10/2025

আমার_হৃদয়ে_তুমি_আজীবন
#পর্ব_৩৮

ফিরে এলো চার মানব-মানবী। কিন্তু কেউ মনের সুখে, আর কেউ দগ্ধ হৃদয় নিয়ে। রাকিব আর লিজার জীবনে আজ সবচেয়ে খুশির দিন। এই দিনটার জন্যই তারা বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছে। আজ তারা একে অপরকে কোনো উপহার না দিলেও, করেছে মনের বিনিময়। যা সমস্ত দামি উপহারকে উপেক্ষা করে চলে যায়। কিন্তু আনন্দ, সুখ নেই দুটি হৃদয়ে। ভালোবাসায় সিক্ত হৃদয় আজ ভঙ্গুর, টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। লিজা, রাকিব বকবক করে গেলেও চুপ করে আছে মায়া ও আদ্র! লিজা মায়ার সাথে নানান গল্পে মেতে আছে, কিন্তু মায়া হ্যাঁ হুঁ ছাড়া কিছুই বলছে না। অবশেষে রাত নয়টায় গাড়ি এসে পড়ল "সুখনীড়ে"। তারা আজ বাইরেই ডিনার করবে ভেবেছিল, কিন্তু মায়া রাজি হয়নি। এমন পরিস্থিতি, আদ্রকে প্রত্যাখ্যান, এত কিছুর পরে তার গলা দিয়ে খাবার নামবে না। মায়ার অবস্থা দেখে আদ্র একবারও জোর করেনি। সত্যি বলতে তার নিজেরই খেতে ইচ্ছা করছিল না। অবশেষে সবাই ঠিক করল বাড়ি ফিরেই খাবে। তাই তো লিজা রাকিবকেও জোর করে নিয়ে এসেছে।

আদ্ররা ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই আবিষ্কার করলো আরশাফুল শেখ, হুমায়রা আর সিতারাকে। আরশাফুল শেখ মূলত কলকাতাতে একটা কাজের উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। কিন্তু মেয়ে ও ভাইঝি পিছে ধরায় বাধ্য হয়ে ওদেরকেও আনতে হয়েছে।

ওই তো ভাইয়ারা চলে এসেছে। সিতারার কথায় সবাই সেদিকেই তাকালো। হুমায়রাকে দেখে মায়ার বুকটা ধক করে উঠল। ভঙ্গুর হৃদয় ভস্ম হয়ে যাওয়ায় জোগাড়। এই মেয়েরটার ভাগ্যের উপর আজ তার হিংসা করতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু চাইলেও সে হিংসা করতে পারছে না।খুব সহজেই সে আদ্র নামক মানবটিকে পেয়ে যাচ্ছে, পাবেনা শুধু সে। কপাল খুঁড়ে মাটিতে ঢুকে গেলেও পাবেনা। কারণ পরিবার যে বাধা। আর সে নিজের সুখের জন্য আদ্রের পরিবারকে যে কষ্ট দিতে পারবেনা। তাও যদি কোনোদিন আদ্রকে পেয়ে যায়, সারাজীবন শুকরিয়া আদায় করবে সৃষ্টিকর্তার।

রাকিব আর লিজা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল, রাকিব চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো লিজাকে। তাতেই বুঝি লিজা স্বস্তি পেল।

আদ্র আর রাকিব এসে আরশাফুল শেখের সাথে কুশল বিনিময় করলো। আরশাফুল শেখ এখানে রাকিবকে দেখে খুশি হলেও, খুশি হতে পারেনি মায়াকে দেখে। এই মেয়ে কি সবসময় এখানেই পড়ে থাকে? নাকি এখনও বাড়িতেই যায়নি?

মায়া মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আরশাফুল শেখের তার দিকে ফিরে ভ্রু কুঁচকে থাকার কারণটা সে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারে। তাই আর কুশল বিনিময় করার সাহস হলোনা। হুমায়রা তাকিয়ে আছে আদ্রের দিকে, কিন্তু সে শুধু কেমন আছে জিজ্ঞাসা করেই খালাস। কি হতো আরো কিছু জিজ্ঞাসা করলে? আমি তো উত্তর তৈরি করেই রেখেছি! কিন্তু প্রশ্নের অভাবে তা অচিরেই দেবে গেল।

সিতারা ফিসফিস করে হুমায়রার কানে কানে বলল,
এই হুমা আদ্র ভাইয়াকে বলে রাকিব ভাইয়াকে আজ এখানে থাকার জন্য রাজি করা না! আজ তো ভ্যালেন্টাইন ডে। আজ একসাথে কাটাতে পারতাম।

চুপ হয়ে যা তারা! তোর কি মনে হয় আদ্র ভাইয়া আমার কথা শুনবে? সন্দেহ করবেনা এমন বললে? আর তাছাড়া আদ্র ভাইয়াকে দেখেছিস কোনোদিন ভালো করে আমার সাথে কথা বলতে?

কথা বলেনি তো কি হয়েছে! তুই এবার চেষ্টা করবি কথা বলার। দেখ এক্সাম হয়ে গেলেই সবাই ভাইয়ার সাথে তোর বিয়ের কথাটা বলবে। তার আগে তুই একটু সহজ হয়ে নে ভাইয়ার সাথে।

কিন্তু!

কোনো কিন্তু না! তুই আমার জন্য এটা করবিনা বল? আমি না তোর বোন কাম বন্ধু, তাহলে?

আচ্ছা আমি চেষ্টা করব। আর না পারলেও লিজা আপুকে বলে দেখি ম্যানেজ করতে পারি কিনা।

ওকে ডান। সিতারা তো খুব খুশি। সে ভাবতেই পারেনি আজ ফুপির বাড়িতে রাকিবকে পাবে! সিতারা ভেবেছিল আজ আশুরা আপুর শ্বশুরবাড়ি থাকবে। কিন্তু তার আব্বু নাকচ করে দেওয়ায় সে খুব কষ্টও পেয়েছিল, বোঝাতে চেয়েছিল বার বার আপুর ওখানে থাকার জন্য। কিন্তু তার আব্বু মানলে তো! কিন্তু এখন এখানে রাকিবকে দেখে মনে মনে সে তার আব্বুর প্রতি কৃতজ্ঞ হল।

আদ্র তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? শরীর কি খারাপ লাগছে?

না ড্যাড আমি ঠিক আছি। রুমে যাচ্ছি, ফ্রেশ হলে হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। বলেই আদ্র চলে গেল উপরে। আপাতত তার একা থাকা দরকার। আদ্র যেতেই রাকিবও তার পিছে পিছে চলে গেল। সে নিজেও খেয়াল করেছে আদ্রের এমন অবস্থা।

আদ্র রুমে গিয়েই দরজা লাগিয়ে দিতে যায়, কিন্তু তার আগেই রাকিব ঢুকে গেল রুমে।

তুই এখানে?

তো কোথায় যাব? আমি আসলে তো এখানেই থাকি। আদ্র দরজা লাগিয়ে দিল। চুপচাপ চলে গেল ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই রাকিব দাঁড়িয়ে গেল তার সামনে।

সামনে থেকে সর।

কি হয়েছে আদ্র! তোকে এমন কেন লাগছে? আর মায়া কি বলল? ওকে তো আজ প্রপোজ করবি বললি! তাহলে?

ও রাজি হয়নি। ফিরিয়ে দিয়েছে আমাকে।

রাকিব বেশ অবাক হয়ে বলল,
তোকে ফিরিয়ে দিয়েছে?

হ্যাঁ। কেন আমাকে ফেরানো যায়না বুঝি?

কিন্তু মায়া!

কি বলল জানিস? বলল আমার জন্য নাকি জীবন দিয়ে দিতে পারবে কিন্তু ভালোবাসতে পারবেনা কখনও!

ভালো না বাসলে কি আর জীবন দেওয়া সহজ?

সেটা কে বোঝাবে ওকে? আমার জন্য নিজেকে ওই ফাহিমের হাতে সপে দিচ্ছিল। কিন্তু আজ কত নির্দ্বিধায় বলে দিল, আমাকে ভালোবাসে না। আমাকে কি ভালোবাসা যায়না রাকিব? আমি কি খুব খারাপ? আদ্রের গলা ধরে আসল।

রাকিব জড়িয়ে ধরলো তাকে। সেও তো কাউকে ভালোবাসে। তাই ভালোবাসার মর্যাদা খুব ভালো ভাবেই বোঝে। তোকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই আমার কাছে। তবে আমি যতটুকু চিনেছি,জেনেছি মায়াকে, মনে হয় ও তোকে ভালোবাসে! হয়ত কোনো কারণে সেটা স্বীকার করতে চাইছেনা।

আমার সাথে ওর কিসের এত লুকোচুরি! এই বলে, আমি নাকি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।

লুকিয়েছিলিস তো তুইও। তখনও তো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলিস। শোন আদ্র, হয়ত এমন কিছু আছে যেটার জন্য ও কষ্ট পাচ্ছে, দূরে সরিয়ে দিচ্ছে তোকে। ভালোবাসার সত্যতা গোপন করছে।

সেটাই তো জানতে চাইছি। কিন্তু ও কি বলে জানিস! বলে কিনা সব কার্যের কারণ হয়না। আর সব কিছুর কারণ নাকি জানতে নেই। বড্ড পাকা পাকা কথা শিখেছে এই মেয়ে।

রাকিব হাসল।

তুই হাসছিস? আমার এই পরিস্থিতিতে তোর হাসি পাচ্ছে? বাহ।

আহা! রেগে যাচ্ছিস কেন? ও একবার না বলেছে বলেই কি হাল ছেড়ে দিবি নাকি? আমি হলে তো দিনরাত পিছুপিছু ঘুরতাম।

আদ্র বাঁকা হাসল, আদ্রিয়ান চৌধুরী কোনো মেয়ের পিছু পিছু ঘোরেনা।

মানে?

ডাইরেক্ট কোলে করে ঘোরানোর প্ল্যান করেছি।

কি বলিস ভাই? আমার একমাত্র বোনের দুইমাত্র ভাইয়ের সামনে এই লজ্জাজনক কথাটা বলতে তোর লজ্জা করল না?

না আমার লজ্জা সরম এমনিও কম। সেটা তুই খুব ভালো করেই জানিস। ওই মেয়েকে আমি ঠিক হৃদয়ের খাঁচায় বন্দী করে রাখবো। দেখি কোথায় পালাতে পারে!

আর বারবার বলার পরেও যদি রাজি না হয়?

এই তুই আমার বন্ধু? নাকি শত্রু? ভালো কথা তোর মুখে আসেনা? যত্তসব!

রাকিব হেসে আবার জড়িয়ে ধরলো আদ্রকে। সে খুব ভালো করেই জানে আদ্র মায়া ছাড়া কতোটা অচল। সেই প্রথম দিন মায়াকে দেখার পর থেকেই শুরু হয়েছে মায়ার গল্পকথা। সময়ের সাথে সাথে ভালোবেসে ফেলেছে গভীর ভাবে। জড়িয়ে পড়েছে মায়ার সমস্ত ভালো, খারাপে। যাকে পাওয়ায় জন্য, যার ভালোর জন্য সে পৃথিবীর সাথে লড়াই করে যাবে। ছেড়ে দিতে পারবে দুনিয়া কিন্তু পারবেনা তাকে ছাড়তে।

আরশাফুল শেখের মায়াকে দেখে রাগ হলেও, তাও মুখে হাসি নিয়েই মায়াকে ডাকল,
আরে মায়া কেমন আছো?

ভালো আছি মামা! আপনি কেমন আছেন?

আমি ভালো আছি। কিন্তু কেউ কেউ ঠিক ভালো থাকতে দিচ্ছে না।

মায়া বুঝল আরশাফুল শেখ কথাটা তাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছে। বুঝতে পেরে সে চুপ করে গেল। তবে আবরার চৌধুরী ঠিকই প্রশ্ন করে বসলেন,
কেউ ঠিক ভালো থাকতে দিচ্ছেনা মানে? কি বলতে চাইছো আরশাফুল? কে আবার তোমার ভালো না থাকার কারণ হলো?

আরে ওই নানান চাপের কথা বলছি আবরার। তুমি এত সিরিয়াসলি কেন নিচ্ছ!

তাই বলো। আমি আবার কিনা কি ভাবলাম। মায়া আর লিজা হুমায়রা ও সিতারাকে নিজে চলে গেল গেস্ট রুমে। এখন গল্পের আসর বসবে সেখানে। মায়া ভেবেছিল আজ একটু একাকী কাটাবে, কিন্তু এদের উপস্থিতি হয়তো সেটা হতে দেবেনা।

গেস্ট রুমে গল্পের আসর সর্বোচ্চে। হুমায়রা তো কথার ফাঁকে ফাঁকে বারবার রাকিব আর আদ্রকে এই ঘরে ডেকে আনার কথা বলছে, যেটাই ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে লিজা। কিন্তু বুঝতে দিচ্ছে না। সে ভেবেছে রাকিবের জন্যই হয়ত হুমায়রা বারবার ওদের এখানে আসতে বলছে। কিন্তু মায়া তো ঠিকই জানে কারণটা হলো আদ্র। হুমায়রা চাইছে আদ্রের সাথে সময় কাটাতে। কিন্তু গল্পের মাঝে উঠে যেতেও পারছে না। এবার সিতারা লিজাকে প্রশ্ন করে বসল,
আচ্ছা লিজা আপু তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই?

সিতারার কথায় কেন জানিনা রাগ হলো লিজার। অন্য সময় হলে হয়তো সত্যি কথাটায় আজ বলে দিত। কিন্তু এখন তো সেই পরিস্থিতিও নেই। সবার সামনে এখনই বলা যাবেনা। বিশেষ করে সিতারার সামনে।

না রে নেই। তোর কাছে ভালো কোনো ছেলের সন্ধান থাকলে বলিস। আমি প্রেম করবো। মায়া তখনই বেশি কিছু না ভেবে বলে উঠল,
ভালো ছেলে আমার হাতে কিন্তু আছে।

সিতারা আর হুমায়রা বেশ উৎসুক নিয়েই একসাথে বলে উঠল,
কোন ছেলে আপু? আমাদেরও বলো।
লিজা অবাক নয়নে চাইল মায়ার পানে। মায়া আপুর হাতে আবার কোন ছেলে আছে? সর্বনাশ!

কে আবার! আমার ভাইয়া! রাকিব এহসান!

রাকিবের কথা শুনে তিনজনেরই কাশি উঠে গেল। তিনজনেই মায়ার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, যেন মায়া কাউকে খুন করে তার স্বীকারোক্তি দিচ্ছে। ওদের চাহনি দেখে মায়া খানিকটা ভড়কে গেল। হঠাৎ করেই বুঝতে পারল সে হয় ভালো কোনো কথা বলেনি। আসলে না ভেবেই বলেছে তো। বিপরীত প্রতিক্রিয়ার কথা তার ভাবা উচিত ছিল। কিন্তু ভাবেনি। এখন নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে তার। না জানি কি ভাবছে এরা।

আদ্রের ব্যাপারে মায়ার উপর রাগ কিছুটা কমলেও, পুনরায় রাকিবের কথা শোনার পরে সেই রাগটা বেড়ে গেল। এই মেয়ে কি আমাদের দুই বোনের পছন্দের দিকে পড়ে আছে নাকি! অসহ্য! এই জন্যই এই মেয়েকে আমার ভালো লাগেনা। সিতারারও রাগ হল বেশ। রাকিবকে তো সে পছন্দ করে রেখেছে। বিয়ে করতে চাই তাকে। তাহলে এই মায়া আপু কোত্থেকে এসে বলছে যে, লিজা আপুর জন্য তার রাকিব ভাইয়াকে পছন্দ! মগের মুল্লুক নাকি। আমি রাকিব ভাইয়াকে কাউকে দেবনা। সে আমার, শুধু আমার হবে।

মায়ার কথা শুনে লিজার বুক থেকে যেন বড় একটা পাথর নেমে গেল। যাক মায়া আপু একবার যখন রাকিবের কথা বলেছে তখন মায়া আপুকে দিয়েই ভাইয়াকে রাজি করাবো। ভাইয়া রাজি হয়ে গেলে আম্মু আর ড্যাডকে খুব সহজেই রাজি করিয়ে নিতে পারবে। তখন মামারবাড়ীর সবাই যাই বলুক না কেন! বিয়ে তো আমি রাকিবকেই করবো। লিজা বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বিড়বিড়ালো, এই সুযোগ আপুকে খুব তাড়াতাড়ি রাকিবের কথাটা বলে দেব। এইসব ভেবে লিজা বেশ খুশি হল। তবে কাউকে সেই খুশির রেশমাত্র বুঝতে দিলনা।

মায়া সবার চাহনীতে ভড়কে গেল, আমতা আমতা করে বলল,
আসলে আমি ওভাবে বলতে চাইনি কথাটা। কেউ কিছু মনে কোরোনা প্লীজ। হুমায়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই লিজা বলল,
আরে কিছু মনে করিনি আপু। অত প্যানিক কোরোনা। জাস্ট চিল। লিজার কথা শুনে মায়া বেশ স্বস্তি পেল। যাক লিজা কিছু মনে করেনি।

সিতারা এবার মায়াকে বলল,
আচ্ছা মায়া আপু আদ্র ভাইয়া তো এখন তোমার বন্ধু হয়ে গেছে। তা তোমরা কেমন বন্ধু এখন?

সিতারার কথা শুনে হুমায়রা বেশ খুশি হলো। যাক এই সুযোগে মায়ার মনোভাব কিছুটা হলেও বোঝা যাবে।

ভালোই বন্ধু। এই কদিনে ঠিক যেমন বন্ধু হওয়া উচিত তেমনটাই। এর থেকে বেশি কিছুনা।

মায়ার কথা শুনে বেশ খুশি হল সিতারা আর হুমায়রা। তারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে আগলে রেখে দেবে সব মেয়েদের থেকে। কিন্তু আদেও কি তা সম্ভব। মেয়েগুলো তো অনেক কিছুই জানেনা। জানলে না জানি কি ঝড় বয়ে যাবে।

এই ভাবেই গল্পে গল্পে কেটে গেল অনেকটা সময়। এদের সাথে কথা বলে মায়ার মনটাও কিছুটা হালকা হয়েছে। কিন্তু গভীরে যে ক্ষত-র সৃষ্টি হয়েছে ইহজগতে তা যাওয়ার নয়। সেই ক্ষত-র একমাত্র মলম আদ্র। যাকে না পেলে সারবেনা। কিন্তু সে খুব ভালো করেই জানে, আদ্র মরুভূমির মরীচিকার ন্যায়। যাকে দেখা যায়, কিন্তু ছোঁয়া যায়না। কিন্তু আদ্র তো ছোঁয়ার অধিকার দিয়েছে। নিজের সবটাই দিতে চেয়েছে। কিন্তু মায়া তো পারলনা সেই অধিকারকে নিজের কাছে আগলে, ধরে রাখতে।

ডিনারের টেবিলে সবাই থাকলেও নেই আদ্র ও রাকিব। হুমায়রাকে আর আলাদা করে কাউকে রাজি করাতে হয়নি রাকিবকে এখানে থাকার জন্য। আদ্র নিজেই বলেছে এক রাকিব এখানে তার সাথে থাকবে। এই সুযোগে হুমায়রা আর সিতারা অনেক কিছুই প্ল্যান করে নিয়েছে, শুধু এক্সিকিউট করা বাকি।

মায়া রাবেয়া বেগমের সাথে হাতে হাতে সবাইকে খাবার পরিবেশন করছে। রাবেয়া বেগম বারবার খেতে বললেও মায়া খেতে বসেনি। সে বলল, সেও নাকি সবাইকে খাবার পরিবেশন করবে। এতে নাকি তার ভালোই লাগছে। রাবেয়া বেগম বেশ খুশি হলেন মায়ার কথায়। কিন্তু পরমুহুর্তেই সেই খুশিতে ভাটা পড়ে গেল। মেনে নিলেন বাস্তবতাকে। মেনে নিলেন হুমায়রাকে। কিন্তু মন থেকে কি পারলেন মেনে নিতে? হয়তো না।

আবরার চৌধুরী বললেন,
আদ্র আর রাকিব কোথায় রাবেয়া? ওরা কি খাবেনা?

তোমার নবাব পুত্তুর ছেলে খাবেন না। ওনার নাকি অনেক কাজ। নিজে তো খাচ্ছে না সঙ্গে ওই ছেলেটাকেও না খাইয়ে রেখেছে। এসব ভালো লাগে বলো?

আহা! তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? হয়তো দুজন একটু গল্প করছে। এক কাজ করো কাউকে দিয়ে ওদের খাবারটা ঘরেই পাঠিয়ে দাও।

তোমার কি মনে হয়! আমি সেটা করিনি? তোমার ছেলে খাবেনা বলে দিয়েছে। তারপরও আমি কিছু বলতে গেছিলাম। কিন্তু কেমন রাগে গজগজ করতে লাগল। তাই তো বাধ্য হয়ে ফিরে এলাম।

আবরার চৌধুরী বেশ ভাবুক হলেন, এই ছেলের আবার কি হলো? কারো সাথে কি আবার ঝগড়া করে আসল নাকি? একে দিয়ে বিশ্বাস নেই। ঠিক হয়তো মারপিট করে চলে এসেছে। নইলে এমনি এমনি রাগ করার মতো ছেলে তার না। সে একদম মাটির মানুষ। শুধু রেগে গেলে তার মাথার ঠিক থাকেনা। নাহ্ এই ছেলেকে নিয়ে আর পারা গেল না।

মায়া ভেবেছিল সবার খাওয়া হয়ে গেলে খেয়ে নেবে। কারণ নিজের কষ্ট, দুঃখ তো আর খাওয়ার উপরে দেখাতে পারবেনা। সেটা হলে রাবেয়া বেগমের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাকে। এমনকি সে না খেলে আদ্র শুনলে নানান প্রশ্ন করতে পারে, সেই ভেবেই খাবে ভেবেছিল। কিন্তু এখন আদ্র খায়নি আর সে খেয়ে নেবে, এটা হতেই পারেনা।

ডিনার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল। মায়া খেল না। ভাবতে লাগলো কিভাবে আদ্রকে গিয়ে খাওয়ার কথাটা বলবে। অন্যসময় হলে ঠিকই খাবার নিয়ে ওর ঘরে চলে যেত। এমন নয় যে আদ্র প্রপোজ করেছে,আর সে রিজেক্ট করেছে বলে তার ঘরে যেতে পারছে না। বরং হুমায়রার সামনে এসব করে তাকে কষ্ট দিতে চাইছে না। যতই হোক মেয়েটা তো তাকে ভালোবাসে। সে বোঝে, ভালোবাসার মানুষের পাশে অন্য কাউকে কল্পনা করলেও কতটা কষ্ট লাগে।

হুমায়রা এতক্ষণ আদ্র আর রাকিবের ঘরের দিকে বারবার উঁকি মারছিল। যেই দেখল আদ্র ছাদের দিকে যাচ্ছে, ওমনি হুমায়রা দৌঁড় দিল সেদিকে। এখনও বারোটা বাজেনি। চাইলেই ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করতে পারবে। আর সিতারা ছুটলো আদ্রের রুমে, আপাতত রাকিবের সাথে কিছুটা সময় কাটাবে সে। তাদের এই সাহসিকতার মাঝে তারা ভুলেই গেল বাড়িতে আরশাফুল শেখ আছেন।

আদ্র দাঁড়িয়ে আছে ছাদের রেলিং ঘেঁষে। দৃষ্টি তার শূন্যে, আকাশে। একটু আগেই আশুতোষ ফোন করেছিল তাকে। এবার তাকে সবার সামনে আসতেই হবে। বিজনেসে যোগ দিয়েছে যখন, তখন সমস্ত মিটিং সামনাসামনি অ্যাটেন্ড করতে হবে। তার উপর বিদেশি ডিল, অনেক টাকার ব্যাপার। কিন্তু মন থেকে ভয়টা কিছুতেই কাটাতে পারছে না। নিজের পরিচয়, পরিবার, মায়া আর তাদের সুরক্ষার চিন্তা। সব কিছুই যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে।

এত রাতে এই অন্ধকারে কি করছো ভাইয়া! একটি মেয়েলি ডাকে পিছু ঘুরে তাকালো আদ্র।
তুই এখানে? এত রাতে? ঘুমাসনি?

না আসলে ঘুম আসছিল না। তাই ভাবলাম ছাদ থেকে একটু ঘুরে আসি। কিন্তু তুমি এখানে সেটা তো জানতামই না।

জানলে কি করতিস? আসতিস না?

না না। সেটা কেন? অবশ্য তুমি থেকে ভালোই হয়েছে! একটু গল্প করা যাবে। তোমাকে তো আজকাল ঠিক করে পাওয়াই যায়না। আগে তাও ভিডিও কল করতে! এখন তো সেটাও করতে দেখিনা।

সময় পাইনা। অনেক কাজ।

শুনলাম নাকি বিজনেসে যোগ দিয়েছ?

হ্যাঁ। তোকে কে বলল?

বড়আব্বু আজ খাওয়ার টেবিলে ফুপাকে বলছিলেন! তাই তো শুনলাম।

আদ্রের ছোট্ট উত্তর ওহ। রুমে যা।

হুমায়রা তার ওড়নার একটা অংশ নিয়ে একবার আঙুল পেঁচাচ্ছে তো একবার খুলছে। কিন্তু চলে যাচ্ছে না।

কি হলো?

একটা প্রশ্ন করি ভাইয়া! যদি কিছু না মনে করো?

বল।

আচ্ছা কোনোদিন যদি শোনো ফুপি আর ফুপা মিলে তাদের পছন্দের কোনো মেয়ের সাথে তোমার বিয়ের ঠিক করেছে তাহলে তোমার রিয়েকশন কি হবে? তুমি কি রাজি হবে? নাকি বারণ করে দেবে তাদের?

আদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো হুমায়রার দিকে। এই মেয়েটার সাথে তার সখ্যতা খুবই কম। শুধু এর সাথেই নয়, সিতারার সাথেও তার তেমন সখ্যতা নেই। এমন নয় যে আদ্র ওদের পছন্দ করেনা বরং বয়সে ছোট হওয়ায়, আর তাছাড়া এত বছর বিদেশে ছিল সেই জন্যই হয়ত।

হঠাৎ এমন প্রশ্ন?

কেন জানতে পারিনা বুঝি? নাকি আমার সেই অধিকার নেই?

এখানে অধিকারের প্রশ্নই বা আসছে কেন? অবশ্যই জানতে পারিস।

তাহলে বলো, ওনাদের পছন্দ করা মেয়ে কি তোমার পছন্দ হবে?

ওনারা আমার আম্মু-ড্যাড। ওনারা যেটা করবেন অবশ্যই সেটা আমার ভালোর জন্যই করবেন। আর তার সাথে আমার পছন্দ, অপছন্দের দিকেও গুরুত্ব দেবেন। আমি ওনাদের যতটা না ভালোবাসি, ওনারা আমাকে তার থেকেও অনেক গুণ বেশি ভালোবাসেন। সুতরাং ওনারা যেটা করবেন আমার কথা ভেবে, আমাকে ভালোবেসে, আমার ভালোবাসার কথা ভেবেই করবেন।

তুমি কাউকে ভালোবাসো না? মানে কোনো মেয়েকে?

তুই এসব উদ্ভট প্রশ্ন করা কবে থেকে শুরু করলি?

বলো না ভাইয়া। আমারও তো জানতে ইচ্ছা করে।

বাসি। আদ্রের নিঃসঙ্কোচ উত্তর। আদ্রের কথায় ধক করে উঠল হুমায়রার বুক। আদ্র ভাইয়া একটা মেয়েকে ভালোবাসে? কে সে? মায়া আপু? হুমায়রার কান্না পেয়ে গেল। সঙ্গে পেল ভয়। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয় জেঁকে ধরলো তাকে। নিঃশ্বাসের গতি ক্রমশ বাড়ছে, শীতল পরিবেশেও শরীরের তাপমাত্রাও যেন তিরতির করে বাড়ছে। আদ্রের বলা সামান্য একটা শব্দ তার সারা মনকে দ্বিখণ্ডিত করে তুলছে।

হুমায়রা তার কণ্ঠের খাদ নামিয়ে পুনরায় বলল,
কে সেই মেয়ে? যাকে তুমি ভালোবাসো?

আছে কেউ। আপাতত বলা যাবেনা। জানতে চেয়েছিলিস তাই মিথ্যে বললাম না। সঠিক সময় আসলে সবাই জানতে পারবে।

হুমায়রার চোখ ফেটে পানি আসার জোগাড়। ভালো লাগছে না তার কিছু। মনে হচ্ছে সব কিছু ভেঙে, চুড়ে শেষ করে দিতে। তবুও নিজেকে শান্ত রাখল সে, আচ্ছা তাকে তুমি কতদিন ধরে ভালোবাসো?

আদ্র এবার অধৈর্য্য হল বেশ। এমনিতেও তার মন,মেজাজ ভালো নেই। তার উপর বাহ্যিক নানান দুশ্চিন্তা। সব মিলিয়ে তার মাথা যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তার উপর এই মেয়ে একটার পরে একটা প্রশ্ন করেই চলেছে। তবুও যেহেতু হুমায়রাকে সে বোন হিসাবে ভালোবাসে তাই তার সাথে খারাপ ব্যবহার সে কখনই করবেনা। সেই জন্যই শান্ত স্বরেই জবাব দিল,
অনেকদিন আগে থেকেই ভালোবাসি।

অনেকদিন বলতে?

অনেকদিন বলতে অনেকদিন। আদ্রের অনেকদিন বলায় হুমায়রা এটা ভেবে সিওর হয়ে যায়, মেয়েটা আর যেই হোকনা কেন মায়া আপু নয়। কারণ মায়া আপুকে তো ভাইয়া দেশে আসার পর থেকে চেনে। সুতরাং বেশিদিন হয়নি। কিন্তু মায়া আপু যদি না হয় তাহলে মেয়েটা কে? হুমায়রার মাথায় নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

মেয়েটা কে ভাইয়া?

তোকে আমি আগেই বলেছি মেয়েটা সম্পর্কে সবাই পরে জানতে পারবি। তাও এত প্রশ্ন যখন করছিস তখন বলে রাখি মেয়েটাকে তুই চিনিস! ইনফ্যাক্ট খুব ভালো করেই চিনিস। আদ্র হাসল কথাটা বলার সময়। মায়ার কথা বলতে গেলেই তার ঠোঁটে সবসময় কিঞ্চিৎ হাসি বিদ্যমান হয়।

আদ্রের কথা শুনে কিছুমুহূর্তের জন্য থমকে গেল হুমায়রা। পরমুহূর্তে আনন্দে ফেটে পড়ল। সে ভেবেছে আদ্র ভাইয়া তার কথায় বলছে। কারণ তার চেনা, জানা মতে এমন কোনো মেয়ে নেই যে আদ্রের ক্লোজ। একমাত্র মায়া আপু ছিল। কিন্তু তার হওয়ার চান্স তো শূন্য শতাংশ। তাই এখন সেই আছে। বোকা হুমায়রা জানলোই না আদ্র তার কথা বলেনি। তার অবুঝ মন না জেনেই অনেক কিছু বুঝে ফেলেছে। শুধু আফসোস সত্যিটা জানতে, বুঝতে পারলো না। হুমায়রা খুব খুশি। আজকের দিনটা তার জন্য সত্যিই শুভ। সারাজীবন মনে রাখবে সে। বুকভরা আনন্দ, সুখ নিয়েই নীচে নেমে আসল সে। বেচারী হয়তো জানলোই না এই সুখ তার জন্য নয়, বরং এই সুখের মালকিন অন্যকেউ।

হুমায়রা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে রুমে প্রবেশ করলো। আজকের সব ঘটনা তার বোনকে জানাবে সে। কিন্তু ঘরে এসে তার আনন্দে ভাটা পড়ে গেল অচিরেই। চোখ ফেটে পড়ল নোনা পানি। বোনের কান্নার প্রকোপে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না। ছুটে গেল তার কাছে।

তারা এই তারা! কি হয়েছে তোর? কান্না করছিস কেন এভাবে? কিন্তু সিতারার কান্না থামার নাম নেই। সে কেঁদে চলেছে বিরামহীন।

কি হয়েছে বলবি তো? এভাবে কাঁদছিস কেন বোন আমার? কি হয়েছে আমাকে বলবি না?

সিতারা জড়িয়ে ধরলো হুমায়রাকে। হুমু! হুমু রে! রাকিব.. রাকিব ভাইয়া আমাকে...

রাকিব ভাইয়া! কি করেছে তোর সাথে রাকিব ভাইয়া? হুমায়রা চমকে গেল রাকিবের কথা শুনে। মনে হানা দিতে লাগল নানান চিন্তা ভাবনা। কিন্তু না। রাকিব ভাইয়া তো এমন ছেলে না। কিন্তু সিতারার কান্নার কারণটা এখনও পরিষ্কার না তার কাছে।

কি হয়েছে না বললে আমি বুঝব কি করে তারা। কি হয়েছে বল আমায়।

রাকিব ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না হুমু। সে অন্য কেউকে ভালোবাসে। বলেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়ল সিতারা।

কি হয়েছে আমাকে খুলে বল।

তুই ছাদে যাওয়ার পরে আমি রাকিব ভাইয়ার ঘরে গিয়েছিলাম।
ভাইয়া আসবো?

একি সিতারা! এত রাতে তুমি এই ঘরে?

সিতারা একটু নার্ভাস। কি বলবে বুঝতে পারল না। তাও সাহস জুগিয়ে বলল,
আসলে আপনার সাথে কিছু কথা ছিল। তাই আর কি!

ওহ। ঠিক আছে, যা বলার কাল সকালে বোলো। আমি তো আছিই এখানে। এখন ঘরে যাও। আমি চাইছিনা এই রাতে এক ঘরে কেউ আমাদের দেখুক। বিশেষ করে তোমার আব্বু। উনি তো সুযোগ খোঁজেন লোককে অপমান করার। আমাকে যা ইচ্ছা বলুক। কিন্তু আমি চাইনা তোমাকে জড়িয়ে আমাকে কোনো কথা শোনাক। যেটা আমার পছন্দ হবেনা।

বেশ লজ্জিত বোধ করলো সিতারা। সে জানে তার আব্বু অমন। কিন্তু যেটা করেন, ছেলেমেয়েদের ভালোর জন্যই করেন। তাই বলে এভাবে কথা শোনাবেন। সিতারা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মোট কথা যেটা বলতে এসেছে সেটা বলেই ফিরবে সে।

কি হলো! দাঁড়িয়ে আছো যে?

আসলে আমি যেটা বলতে এসেছি সেটা বলাটা খুব জরুরী তাই....

ঠিক আছে বলো, তবে জলদি।

সিতারা কিছুক্ষন আমতা আমতা করল, অতঃপর চোখ বন্ধ করেই বলে উঠল,
আমি আপনাকে ভালোবাসি রাকিব ভাইয়া। যদি আপনি অনুমতি দেন, আপনার সাথে আমি আমার ইহকাল, পরকাল দুটোই কাটাতে চাই।

রাকিব হা হয়ে তাকিয়ে আছে সিতারার দিকে। সে ভাবেইনি, সিতারা এমন একটা কথা এই ভাবে, এখানে, কিছু না ভেবেই বলে দেবে। লিজা বলেছিল তাকে যে, সিতারা তাকে ভালোবাসে। কিন্তু রাকিব ভেবেছিল সিতারা মেয়েটা ভীতু। হুমায়রাকে তার মনের কথা জানালেও বাকিদের বা তাকে জানানোর সাহস সে কোনদিনও পাবেনা। কিন্তু এই মেয়ে তো রাকিবের ভাবনার থেকেও একশো কাঠি উপরে। কত নির্দ্বিধায় বলে দিল ভালোবাসার কথা।

রাকিব এবার বেশ রেগে গেল, কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল নিজের। এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে এই সব কথা বলার? হাউ ডেয়ার ইউ?

কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল সিতারা। রাকিবকে সে এভাবে কখনও কারো সাথে চিৎকার করতে দেখেনি। তাই স্বাভাবিক ভাবে সেটা নিতে পারছে না।

আমি আপনাকে ভালোবাসি ভাইয়া। সত্যি বলছি।

বাহ! যার আব্বু কিনা মেয়েদেরকে নিজের কাছে বন্দী করে রাখতে চাই। ওনার মেয়ে হয়ে তোমার, আমাকে ভালোবাসার কথা বলতে লজ্জা করেনা?

ভালোবাসায় লজ্জা কিসের! আমি আপনাকে ভালোবাসি। অন্যায় তো করিনি।

অন্যায় করেছো! আমাকে ভালোবাসে অন্যায় করেছো। শোনো সিতারা আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আর না কোনোদিন বাসবো। আমি কিন্তু আমার ভাইয়াকে তোমার আব্বুর করা অপমানের কথা ভুলিনি। কি দোষ ছিল তার? শুধুই তো ভালোবেসেছিল তোমার আপুকে। তার মানে এটা নয় যে, আমি অপমানের ভয়ে তোমাকে ভালোবাসছিনা! আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আর বিয়ে করলে তাকেই করবো। তাই ভুলে যাও আমাকে। আর প্লীজ দয়া করে এখান থেকে চলে যাও। তোমার আব্বু আছে এখানে। আমার সাথে এতরাতে দেখলে আর রক্ষা থাকবেনা। সেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো। তাই প্লীজ। রাগে, দুঃখে, অপমানে বেড়িয়ে গেল সিতারা। সে কখনও ভাবেনি রাকিব ভাইয়া তার সাথে এমন একটা ব্যবহার করবেন। হ্যাঁ এটা ঠিক তার আব্বু এসব প্রেম, ভালোবাসা পছন্দ করেননা। কিন্তু তাই বলে কি সে নিজের ভালোবাসার কথা বলতেও পারবেনা? নাকি কাউকে ভালোবাসতে পারবেনা?

সিতারা যেতেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল রাকিব। সে কখনই সিতারার সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করতে চাইনি। কিন্তু হঠাৎ করেই সে কি করে ফেলল সেটা সে নিজেও বুঝতে পারল না।

কি বলছিস কি তারা? রাকিব ভাইয়া তোর সাথে এমন ব্যবহার করেছে? তোকে অপমান করেছে?

হুঁ! উনি আমাকে ভালোবাসেন না হুমু! উনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন। বাসেন না ভালো। আমাকে বললেন ভুলে যেতে। কিন্তু ভুলে যাওয়া কি অতই সহজ। এতবছর ধরে আমি নিজের মনের মধ্যে যে ভালোবাসা ওনার জন্য গচ্ছিত রেখেছি, আজ জানলাম তার ভাগীদার অন্য কেউ। আমি নই। আমি নই। হুমায়রা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বোনকে। বোনের কষ্টে তারও বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। প্রকাশ করতে পারছেনা সে।

চলবে....

গতকাল রিপন মিয়ার কান্দার ভিডিও দেখার সময় পেছনের মহিলাকে নোটিশ করছিলাম৷ কেমন জানি খিটখিটে মেজাজে ছিলো৷ একটা পোলারে খালি ধ...
15/10/2025

গতকাল রিপন মিয়ার কান্দার ভিডিও দেখার সময় পেছনের মহিলাকে নোটিশ করছিলাম৷ কেমন জানি খিটখিটে মেজাজে ছিলো৷ একটা পোলারে খালি ধা--বড়া--নি দিচ্ছিল৷ ভিডিও দেখার সময় মনে হইতো আহা এ মহিলা এমন করে কেন!

কিন্তু আজকে জানলাম এ মহিলাই রিপন মিয়ার বউ৷ আমার মনে হয় রিপন মিয়া তার বউ এর ডরেই সবার সামনে বউরে ভাবি কইছিল৷ মহিলা যেমনে চোখ বড় কইরা ধা--বা--ড়াইছে রিপন মতন সহজ সরল লোক তো ডরাবেই 😑

(🚫এলার্ট—রোমান্টিক পড়তে না চাইলে স্কিপ করুন)প্রণয়ের_ঘোর_রাত—পর্ব--০২রাত প্রায় ১১ টা ছুঁই ছুঁই । চারপাশে নেমে এসেছে এক অদ...
15/10/2025

(🚫এলার্ট—রোমান্টিক পড়তে না চাইলে স্কিপ করুন)
প্রণয়ের_ঘোর_রাত—
পর্ব--০২

রাত প্রায় ১১ টা ছুঁই ছুঁই । চারপাশে নেমে এসেছে এক অদ্ভুত নীরবতা। বাতাসে মিশে আছে হালকা শীতলতা, যেন অচেনা কোনো হাত এসে নিঃশব্দে গায়ের উপর দিয়ে ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে। দূরে কোথাও কুকুরের ক্ষীণ ডাক সেই নীরবতাকে খানিকটা ভেঙে দেয়, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই আবার সব শান্ত হয়ে যায়। আকাশের ফাঁকা জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে অগণিত তারার ঝিকিমিকি মাঝে মাঝে কালো মেঘ এসে তাদের আড়াল করে ফেলে। গলির এক কোণে ভাঙা ল্যাম্পপোস্টের আলো কাঁপতে কাঁপতে জ্বলছে যেন সেও রাতের ক্লান্তিতে ঢলে পড়তে চাইছে।

এই শীতল বাতাসে ভাসছে এক অজানা অস্থিরতা যেন কিছু ঘটতে চলেছে। দূরের অন্ধকারে কে যেন লুকিয়ে তাকিয়ে আছে, কিন্তু মুখ স্পষ্ট নয়। নিঃশ্বাসের শব্দ নিজের কানে ভারী শোনাচ্ছে, হৃদস্পন্দনও অজান্তে বেড়ে গেছে।

বিকেলের ঘটনার ভার যেন এখনও বুকের ভেতর জমে আছে । সেই সন্ধ্যা থেকে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে মায়া নিঃশব্দে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। শীতল বাতাস এসে তার এলোমেলো চুলের গোছা মুখের উপর ছুঁড়ে দিচ্ছে, কিন্তু সে সেগুলো সরানোর চেষ্টা করছে না। চোখের পাতা ভারী, যেন অনেকক্ষণ ধরে কান্না চেপে রেখেছিল। অবশেষে কিছুটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে।

তার দৃষ্টি বাইরে, কিন্তু মন পড়ে আছে আগের সেই মুহূর্তগুলোতে, যখন কৌশিকের কাছে থাকার স্বপ্ন বুনত সে। প্রতিটি স্মৃতি যেন আজ তীক্ষ্ণ কাঁটার মতো বুকের ভেতর বিঁধে যাচ্ছে।

আনমনে, এক অদ্ভুত কষ্ট মিশ্রিত স্বরে ফিসফিস করে উঠল মায়া,
“ভুল হোক বা ইচ্ছে করেই হোক এটা কী করলাম আমি? এটা কী হয়ে গেলো আমার সাথে? এটা তো হবার কথা ছিলো না। কেন বারবার আপনি আমাকে পরীক্ষার মাঝে ফেলান, কৌশিক ভাই? আমি তো সবসময় আপনার কাছেই থাকতে চেয়েছিলাম। তখন আপনি আমাকে চাননি অবহেলা করেছেন,প্রতি মুহুর্তে। আমার দিকে তাকাতেও যেন কষ্ট হতো আপনার। আর আজ, যখন আমি সব মেনে নিয়ে নিজেকে সরিয়ে এনেছি, এখন কেন আপনি আবার আমাকে চাইছেন?”

তার গলা কেঁপে উঠল, শ্বাস যেন বুকে আটকে গেল, কিন্তু সে থামল না,
“আমি কি বোকা বলেই আমার কাছে আসা সহজ মনে হচ্ছে? যখন ইচ্ছে হবে তখন আসবেন যখন ইচ্ছে হবে না তখন আসবেন না। নাকি ভেবেছেন আমার উপর জোর খাটানো যায় বলে আপনি এগিয়ে আসছেন? দরকার নেই, কৌশিক ভাই, আমার কোনো কৌশিক ভাইয়ের দরকার নেই। আমি এমন কাউকে চাই নাআমার জীবনে।”

শেষ কথাটা বলেই মায়া কান্নায় ভেঙে পড়ল। চোখের জল আর শব্দহীন কান্না একসাথে মিলেমিশে ঘরের ভেতরে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা তৈরি করল। বাইরের অন্ধকার গাঢ় হয়ে জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ল ঘরের কোণে, যেন তার নিঃসঙ্গতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়াল। রাতের শীতল হাওয়া পর্দা দুলিয়ে তার চোখের জলে ভেজা মুখ ছুঁয়ে গেল এমন স্পর্শে সান্ত্বনা ছিল না, ছিল শুধু শূন্যতার ঠাণ্ডা ছোঁয়া।

মায়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, বাইরে ম্লান আলোয় চারপাশ কেমন যেন অস্পষ্ট লাগছিল। ঠিক সেই সময়, অপ্রত্যাশিতভাবে, তার কোমরে অনুভূত হল এক দৃঢ় হাতের স্পর্শ।

মায়ার বুকের ভেতর ধক করে উঠল। শরীরের রক্ত যেন মুহূর্তেই বরফে জমে গেল। আতঙ্ক আর কৌতূহলের মিশ্র অনুভূতিতে ধীরে ধীরে পিছন ফিরতেই তার দৃষ্টি আটকে গেল, কৌশিক কে দেখে।
কালো রঙের ঢিলেঢালা টি-শার্টে ঢেকে থাকা ছেলেটির শরীর, মুখে অদ্ভুত এক গভীরতা, চোখে অব্যক্ত কিছু।

মায়া কিছু বলার আগেই কৌশিক হঠাৎ তাকে কোলে তুলে নিল। চারপাশের নীরবতা যেন এক নিমিষে ভেঙে গেল মায়ার কাঁপা কণ্ঠে,
" ক…ক…কী করছেন ক...কৌশিক ভাই? নিচে নামান আমাকে কেউ দেখে ফেলবে! আমি চাই না আমার জন্য দুই পরিবারের মধ্যে আবার কোনো ঝামেলা হোক। প্লিজ, আমায় নামিয়ে দেন।"

কৌশিক একটিও শব্দ উচ্চারণ করল না। তার গভীর দৃষ্টি যেন মায়ার অন্তরের সব গোপন ভেদ করে ফেলছে। কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে মায়া আবার বলল,
"আমাকে নিচে নামান, কৌশিক ভাই। আচ্ছা, আপনার কি কোনো লজ্জা নেই?"

গম্ভীর স্বরে কৌশিক ধীরে ধীরে উত্তর দিল,
" কী হয়েছে? এত চেঁচাচ্ছিস কেন? তুই জানিস না,আমার এত লজ্জা-টজ্জা নেই। "

সে এখনও মায়াকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন পৃথিবীর সব সময় থমকে গেছে। মায়া বিরক্ত হয়ে বলে উঠল,
"আশ্চর্য! আমি কী করে জানবো কে হন আপনি আমার?আর আমি কি বাচ্চা মেয়ে নাকি? নামান আমাকে, কৌশিক ভাই!

কিন্তু মায়ার কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই কৌশিকের। তার ভেতরে যেন কিছু বদলে যাচ্ছে ঘুমন্ত দেহে আগুনের শিখা জ্বলে উঠছে, চোখে জমে উঠছে নেশার ঘন কুয়াশা। মায়া বুঝতে পারল, এই চাহনি স্বাভাবিক নয়। লজ্জা মিশে থাকা রাগে চোখ নামিয়ে অনুরোধ করল,
"ছাড়ুন…"

কিন্তু কোনো সাড়া নেই। মায়া আবার বলল,
"কৌশিক ভাই, ছাড়ুন আমাকে। আমার খিদে পেয়েছে, আমি নিচে যাব।"

ভারী কণ্ঠে কৌশিক বলল,
"নিচে যেতে হবে না। আমি আজ তোকে যা খাওয়াবো, তাতেই তোর পেট ভরে যাবে।"

বিস্ময়ে মায়া তার দিকে তাকাল,
"কী বলছেন এসব? আমায় নামিয়ে দিন, আমি খেতে যাব।"

চোখের গভীর নেশা আরও গাঢ় করে কৌশিক আবারও জিজ্ঞেস করল,
"আমি যা খাওয়াবো, খাবি তুই?"

এরপর কৌশিক আর এক মুহূর্তও দেরি করল না। দৃঢ় হাতে মায়ার মাথা চেপে ধরে ধীরে ধীরে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। কৌশিক এক হাতে তার শার্টের উপরের কয়েকটা বোতাম খুলে নিলো। তার বিশাল দেহের ছায়ায় ঢেকে গেল মায়ার কোমল অবয়ব। জানালার বাইরে অন্ধকারে বাতাস যেন থমকে দাঁড়াল। কৌশিকের গভীর দৃষ্টি আটকে রইল মায়ার মুখে। ধীরে ধীরে ঝুঁকে এলো, যেন নিজের আয়ত্তে নিতে চায় সরু, নরম ওষ্ঠজোড়া।

প্রথমে হতভম্ব হলেও মায়া টের পেল কৌশিকের স্পর্শে আছে এক অদ্ভুত মায়াবী আকর্ষণ। তার দেহ থেকে ভেসে আসা কস্তুরীর মোহময় সুগন্ধ মায়ার মাথা ঝিমঝিম করে তুলছে। মন-প্রাণ ধীরে ধীরে হার মানছে সেই অদৃশ্য ঘোরের কাছে।

কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে গেল। আচমকা করিডোরে ভেসে এলো কারও ডাকার শব্দ মায়াকে ডাকছে যেন কেউ। চমকে উঠে মায়া কৌশিককে মৃদু ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়াল। কণ্ঠে ব্যাকুলতা,
"কৌশিক ভাই, প্লিজ এখনই চলে যান। কেউ দেখে ফেললে অনেক সমস্যা হবে।"

কৌশিক কোনও উত্তর দিল না। শুধু গভীর দৃষ্টিতে মায়ার চোখে চোখ রাখল। পরের মুহূর্তেই, এক হাতে তার কোমর জড়িয়ে টেনে নিল নিজের বুকের কাছে। অপ্রস্তুত মায়া প্রতিরোধ করার আগেই, কৌশিক নিজের ঠোঁট মায়ার ঠোঁটে এঁটে দিল দৃঢ়, দাবিদার এক চুম্বন।

চুম্বনের গভীরে হঠাৎই আস্তে করে মায়ার ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে দিল সে, যেন অধিকার ঘোষণা করে দিল নীরবে। ব্যথা আর শিহরণে মায়ার গলা থেকে চাপা এক নিঃশ্বাস বেরোল; চিৎকার দিতে চেয়েও পারল না। কষ্টে ও লজ্জায় মৃদু ধাক্কা দিয়ে কৌশিককে সরিয়ে দিল মায়া।

কৌশিক এবারও কিছু বলল না শুধু চোখে এক রহস্যময় দৃষ্টি আর ঠোঁটে এক চটজলদি মুচকি হাসি রেখে সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তার চলে যাওয়া যেন ঘরটাকে আরও নিস্তব্ধ করে তুলল।

মায়া গভীর শ্বাস নিয়ে এলোমেলো চুল ঠিক করল। ধীরে ধীরে গিয়ে জানালার পাশে বসল, বাইরে তাকাল এক অজানা শূন্যতার দিকে। ঠিক তখনই বাইরে থেকে আবার ভেসে এলো সেই ডাক,

“মায়া... মায়া...”

এবার ডাকে ছিল এক ধরনের তাড়া। হঠাৎ রুমের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন রুবিনা পাটোয়ারী।
হকচকিয়ে উঠে দাঁড়াল মায়া। তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে পিছনে ফিরল। বলল,

"মা তু...তুমি এখানে?"

রুবিনা পাটোয়ারীর কপালে ভাঁজ পড়ল। কড়া স্বরে বললেন,
“এভাবে জানালার পাশে মেঝেতে বসে ছিলে কেন, মায়া?”

মায়া কোনো উত্তর দিল না, শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।
হঠাৎ যেন কিছু খেয়াল করে এগিয়ে এলেন রুবিনা পাটোয়ারী।
“ঠোঁটে চোট পেলে কীভাবে?”

মায়া এবার একটু ভয়ে কেঁপে উঠল, তোতলাতে লাগল,
“আ...আসলে..."

ভ্রু আরও কুঁচকে উঠল রুবিনা পাটোয়ারীর। বললেন,
“কী আসলে আসলে করছ? বলো, চোট পেলে কীভাবে?”

মায়া এবার এক মুহূর্তে চোখ নামিয়ে নিয়ে ধীরে বলল,
“আসলে মা, সুকেশ থেকে চামচ নিতে গিয়ে একটা কাটা চামচ ঠোঁটের কোনায় লেগে গিয়েছিল। সেখান থেকেই চোটটা লেগেছে।”

রুবিনা পাটোয়ারী এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন,
“একটু দেখে শুনে তো কাজ করবে। এখন চলো, খেয়ে নাও।”

মায়া মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না মা, আমার খিদে নেই।”

সঙ্গে সঙ্গেই রুবিনা পাটোয়ারীর কণ্ঠে কঠোরতা ফিরে এল,
“এত কথা আমার পছন্দ নয়। আর এক্ষুনি আমার সাথে চলো। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে সবাই একসাথে খাবে বলে।”

মায়া জানত, তার মায়ের সঙ্গে তর্ক করার অর্থ শুধু পরিস্থিতি আরও খারাপ করা। তাই কোনো কথা না বলে, মুখে এক নিঃশব্দ ক্লান্তি নিয়ে, মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে গেল নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

#চলবে........😑

Address

Khagrachari, Chittagong Division, Bangladesh
Chittagong Division
4400

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Monir Bro posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share