Monir Bro

Monir Bro প্রয়োজন আইনের তোয়াক্কা করে না।

আমার_হৃদয়ে_তুমি_আজীবন   #পর্ব_৩৭ ( অবশিষ্টাংশ )দুই পক্ষের হাতাহাতিতে ওষ্ঠাগত অবস্থা উভয় পক্ষের। কেউ কারো থেকে কম যায়ন...
18/09/2025

আমার_হৃদয়ে_তুমি_আজীবন
#পর্ব_৩৭ ( অবশিষ্টাংশ )

দুই পক্ষের হাতাহাতিতে ওষ্ঠাগত অবস্থা উভয় পক্ষের। কেউ কারো থেকে কম যায়না। অপরপক্ষের সংখ্যা অনেক হলেও আদ্র একা। তবে আজ একাই সে বীর বিক্রমে লড়াই করে চলেছে। নিজেকে বাঁচানোর লড়াই, মায়াকে বাঁচানোর লড়াই। হাতাহাতির এক পর্যায়ে ক্লান্ত সবাই। বসে পড়ল মাটিতে। আদ্রকে ঘিরে সবাই বসল তবে একটু দূরে। এই ছেলে যে তাদের এত মারবে সেটা তাদের ধারণার বাইরে ছিল। নইলে আরও লোক নিয়ে হাজির হতো।
মায়া এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখছিল, চাইলেও সে থামাতে পারবেনা এসব। আদ্রকে বারবার বলছিল থামার জন্য। কিন্তু সে থামলে তো! আদ্রের মুখ, ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ছে। মায়ার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো আদ্রকে দেখে। নিজেকে অসহায় মনে হল বড্ড। সে যদি আজ আদ্রকে সাহায্য করতে পারত কতই না ভালো হতো। তার জন্যই তো মার খেয়েছে সে। মায়া নিজেকে সামলাতে পারল না, এবার শব্দ করে কেঁদে দিল। কি করবে সে! এই পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিত তার ধারণার বাইরে। আহত ছেলেদের সরিয়ে মাটিতে বসা আদ্রের কাছে গেল। চোখে মুখে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল আলতো ভাবে। আদ্র আবেশে বন্ধ করে নিল তার নেত্রযুগল। ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকালো মায়ার দিকে। এই যে মায়া কাঁদছে! তার কি ভালো লাগছে? একদম লাগছে না।

কাঁদলে তোকে একদম পেত্নীদের মত লাগে। কান্না থামা। নইলে সবাই ভয় পেয়ে যাবে। মায়ার কান্নার বেগ আরও বেড়ে গেল, বসা অবস্থায় জড়িয়ে ধরলো আদ্রকে। তাতেই যেন আদ্রের সব কষ্ট লাঘব হল। এই মেয়ে যে তার সকল কষ্ট দূর করার ওষুধ, সেটা সে আগে থেকেই জানে।
আজ বাঁচবে কিনা জানেনা। তবে মরার আগে হলেও প্রিয়তমার ছোঁয়া সে পেয়েছে। জুড়িয়ে গেছে তার হৃদয়। এখন তো মরেও শান্তি।

মায়া আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
আমার জন্যই সব হল। আমার জন্যই ফাহিমের সাথে তোর শত্রুতা। এখন মনে হচ্ছে তোর সাথে আমার দেখা না হলেই হয়তো ভালো হতো। অন্তত আজ তোকে এই দিনটা দেখতে হতো না।

আদ্র হাসল, কার সাথে কার পরিচয় হবে, কে কার আপন হবে সেটা তো ঠিক করবেন সৃষ্টিকর্তা। আমরা তো সাধারণ মানুষ। আমাদের কি আর সে সব ঠিক করার সাধ্য আছে? নেই!

মায়া আস্তে আস্তে দাঁড় করালো আদ্রকে। হাতাহাতিতে অনেকটাই আহত হয়েছে সে। তবে শরীরের আঘাতের থেকে মনের আঘাত তীব্র। এই যে মায়া নিজের ইচ্ছায়, শুধুমাত্র তাকে বাঁচানোর জন্য ওদের হাতে ধরা দিতে চাইছিল, সেটা তার পছন্দ হয়নি। মেনে নিতে পারছেনা কিছুতেই। বারবার মায়ার এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখের সামনে ফুটে উঠছে। নিজের জীবন বাঁচাতে, কখনই সে মায়াকে ওদের হাতে তুলে দেবেনা।

এদের দুজনের কথা সহ্য হচ্ছে না ফাহিমের। আলগোছে উঠে দাঁড়ালো সে। মাটিতে পড়ে থাকা পিস্তল উঠিয়ে তাক করলো আদ্রের দিকে। আগে পিছে না ভেবেই গুলি করল। চিৎকার করে উঠলো মায়া।আদ্রকে সরিয়ে দিল, সঙ্গে সে নিজেও পড়ে গেল মাটিতে। গুলি লাগতে গিয়েও লাগল না। বাতাসে ভেসে গেল নিমেষেই। ফাহিম মাটির উপর নিজের পা দিয়ে লাথি মারলো, গুলি করতে গেল পুনরায়। না এবার এর হল না, পিস্তলের গুলি শেষ। ইতিমধ্যে দুটি বন্দুকের এগারোটা গুলি শেষ করে ফেলেছিল। অবশিষ্ট গুলিটাকেও কাজে লাগাতে না পেরে, মেজাজ হারালো। মারতে গেল আদ্রকে। আদ্র, মায়া দুজনেই তখনও মাটিতে পড়ে। কিন্তু ওদের কাছে যেতেই আশেপাশে থেকে মানুষের আওয়াজ ভেসে আসতে লাগল। তবে একটা দুটো না, প্রায় বিশ-পঁচিশ জন মানুষের আওয়াজ। এই ফাঁকা মাঠের মধ্যে এই লোকগুলো কোথা থেকে এল, বুঝলোনা তারা। তবে আদ্র- মায়া শুকরিয়া আদায় করল সৃষ্টিকর্তার কাছে। নিজেদেরকে বাঁচিয়ে নেওয়ার সেই আশা ফুটে উঠল তাদের মাঝে।

লোকগুলো কাছে আসতেই তারা করল ফাহিমদের। ফাহিম তো আগেই সুযোগ বুঝে কেটে পড়েছে। কারণ সে পরিচিত মুখ, তাকে মানুষ সহজেই চিনে ফেলতে পারে। পার্টির হয়ে অনেক স্লোগান, মিছিল করেছে সে। ভোটের আগে নিউজ চ্যানেলে তার অহরহ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাই তো আগেই পালিয়ে গেছে। তবে যাওয়ার আগে আদ্রকে বলে গেছে "আজ বেঁচে গেছিস মানে এটা ভাবিসনা পরের বারও বেঁচে যাবি।" তোর জান আর এই মায়া দুটোই আমার হবে। পারলে বাঁচিয়ে নিস। আজ তোর লাক ভালো। তবে প্রতিবার সেটা হবেনা। আদ্র হাসল ফাহিমের দিকে ফিরে। তার গা জ্বালানো হাসি দেখে আরো জ্বলে উঠল ফাহিম। তবে এখন তাকে যেতেই হবে।

গ্রামের লোকের তাড়া খেয়ে পালিয়ে গেল ফাহিমের ভাড়া করা ছেলে গুলো। সঙ্গে তার ডানহাত আলফাজ। এমনিতেও মার খেয়ে তার বেহাল অবস্থা তার উপর এমন দৌঁড়ানি। সব মিলিয়ে যায় যায় অবস্থা তার।

কয়েকটা মহিলা ও পুরুষ ছুটে আসল মায়া ও আদ্রের দিকে। ধরে তুলল তাদের। শেষ বার পড়ে যাওয়ার ফলে তীব্র ব্যথা পেয়েছে আদ্র। অতি কষ্টে উঠে দাঁড়ালো সে। তবে হাত বাড়িয়ে মায়াকে টেনে নিল নিজের কাছে। জড়িয়ে নিল বুকে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। মায়াও আজ বাঁধা মানলো না। ভুলে গেল আরশাফুল শেখকে দেওয়া কথা। জড়িয়ে ধরে রাখলো আদ্রকে। আশেপাশে কে আছে, কি ভাবছে সে সবে খেয়াল নেই দুই মানব মানবীর। তারা এখন অনুরাগের প্রহরে ব্যস্ত। সে কি অত সহজে শেষ হওয়ার?

একজন বয়সজ্যেষ্ঠা লোক অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছে তাদেরকে। তার প্রখর দৃষ্টিই বলে দিচ্ছে কি ভাবছে সে দুজনকে নিয়ে। এবার তিনি প্রশ্ন করে বসলেন,
তোমরা কারা? আর এত রাতে এখানেই বা কি করছো? আগে তো কখনও এদিকে দেখিনি!

আদ্র-মায়ার ধ্যান ভাঙলো এবার। মায়া লজ্জায় পড়ে গেল এতগুলো মানুষের সামনে। তবে আদ্রের মাঝে সে সবের হেলদোল নেই। এমন ভাব করে দাঁড়িয়ে আছে যেন কিছুই হয়নি।

আমাদের বাড়ি কলকাতায়! একটা বিয়ে উপলক্ষে এখানে এসেছিলাম, কিন্তু পথে মধ্যে কিছু দুষ্কৃতির কবলে পড়ি। তাই এই রাস্তায় এসে পড়েছি। আপনারা না আসলে আজ আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত। মেরে ফেলত ওরা আমাদের। আপনাদেরকে অনেক অনেক শুকরিয়া। আদ্র ভেঙে আসা কন্ঠে বলল, তার আর ক্ষমতা নেই দাঁড়িয়ে থাকার। মায়া বুঝল আদ্রের অবস্থা, আগলে নিল নিজের দুহাতে। মায়ার এই যত্নে মুগ্ধ হল আদ্র। মেয়েটা তাকে কষ্ট না দিতে সবার সামনেই আগলে নিয়েছে। আর কি চাই! চাই তো অবশ্যই। পুরো মেয়েটাকেই যে চাই তার।

একটা মহিলা মায়াকে দেখে বলে উঠল,
এই মেয়ে তুমি ওকে এমন ভাবে ধরে আছ কেন? কে হয় ও তোমার? মহিলার রাগি কণ্ঠের কথা শুনে মায়া কি বলবে বুঝতে পারল না! সত্যিই তো কে হয় আদ্র ওর? শুধুই তো বন্ধু! এছাড়া তো আর কোনো সম্পর্ক নেই তাদের মাঝে।

কি হলো? চুপ করে আছো কেন? উত্তর দাও। মায়া কিছু বলতে যাওয়ার আগেই আদ্র বলে উঠল,
ও আমার ওয়াইফ,বউ আমার।

আদ্রের মুখে " ও আমার ওয়াইফ, বউ আমার"- কথাটা শুনে মায়ার শিরদাঁড়া বরাবর শীতলতা বয়ে গেল। ফর্সা গালের চিবুক রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।

বললেই হল! আজকাল ছেলে মেয়েদের কিভাবে বিশ্বাস করব? তোমরা যে আকাম করতে গিয়ে মার খাওনি, তার কোনো প্রমাণ আছে? এই মেয়েকে দেখে তো কোনদিক থেকেই মনে হচ্ছে না যে, সে বিবাহিত। বিবাহের কোনো চিহ্নই তো তার মাঝে নেই।

মহিলার কথা শুনে বেশ রাগ হলো মায়ার। এ যেন পুরো শেলেনা বেগম। অন্তত কথার ধরণ তো তাই বলে। তবে রাগ হলেও মায়া নিজেকে সামলে নিল,
এদের জন্যই তো আজ তারা বেঁচেছে। তাই এমন হাজার কথাও ঠিক হজম করে নেবে।

বিবাহের কোন চিহ্ন থাকুক বা না থাকুক, সত্যিটা তো আর পালটে যাবেনা। ও আমার বউ, বউই থাকবে। আপনাদের মানা, না মানাতে কিছু যায় আসবে না। আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমাদের বাঁচানোর জন্য। এখন যেতে দিন আমাদের।

এই ছেলে এই! এত বড় বড় কথা কোথা থেকে আসছে তোমার! এখন তো আমাদের সত্যিই মনে হচ্ছে কোনো ঘাপলা আছে তোমাদের মধ্যে। নইলে রাতের বেলা এই নির্জন মাঠে কি করবে তোমরা?

সেটা আপনাদের বিকৃষ্ট মস্তিষ্কের ধারণা। আপনারা মনে করেন,
রাতের বেলা দুটো ছেলে মেয়ে একসঙ্গে দেখা মানেই তাদের মধ্যে কোনো খারাপ সম্পর্ক আছে। আর যদি সত্যিই থাকত তাহলে ওই ছেলেগুলো এভাবে পালিয়ে যেত না। ওরাই ধরিয়ে দিত আমাদের আপনার কাছে। কিন্তু সেটা তো করেনি। উলটে পালালো।

আদ্রের কথাটা সবাইকে ভাবালো। সত্যিই তো। এরা যদি সত্যিই খারাপ কিছু করে থাকত তাহলে ওরা কেন পালিয়ে যাবে!

বয়স্ক লোকটি আদ্রের সামনে এসে দাঁড়ালো। অস্ফুটে বলল,
মানলাম ওরা তোমাদের ক্ষতি চাইছিল কিন্তু এতে তো এটা প্রমাণিত হয়না যে, তোমরা বিবাহিত!

আচ্ছা আংকেল একটা কথা বলুন তো, ধরে নিন আমরা বিবাহিত নই, আমরা বন্ধু। তাও দুজন একসাথে ট্রাভেল করছিলাম। এখন, আজ আমাদের সাথে যা যা ঘটেছে। যদি সেগুলোই ঘটত। তাহলে আপনারা এক্সাক্ট কি করতেন আমাদের সাথে?

অবশ্যই তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিতাম।

"বিয়ে দিয়ে দিতাম" কথাটা শোনা মাত্রই চমকে উঠল মায়া। কি বলছেন এরা এসব? চেনা নেই , জানা নেই। শুধুমাত্র বিপদে পড়েছিল, আর দুজন ছেলে-মেয়ে বলেই এদের বিয়ে দিয়ে দেবে? কেমন মানুষ এরা?

বাহ আংকেল বাহ। এটাই আশা করা যায় আপনাদের থেকে। ভাবতেই অবাক লাগে, আপনারা এখনও সেই পুরানো যুগেই পড়ে আছেন। দুটো ছেলে মেয়েকে একসাথে দেখলাম, নে লাগিয়ে দে বিয়ে। ওরা নিশ্চয় কোনো আকাম করে বেড়াচ্ছিল! তাই না?
তারা যে কতটা বিপদের মধ্যে থেকে নিজেদের বাঁচিয়েছে সেই খোঁজ কেউ রাখেনা! শুনুন আংকেল যদি আকাম করারই থাকতো তাহলে ভালো ভালো হোটেল ছিল, আপনার এই পাড়াগাঁয়ে আসার প্রয়োজন পড়ত না। আর এভাবে দুজনকে বিয়ে দিয়ে আপনারা কি প্রমাণ করতে চান? আপনারা খুব বড় মনের মানুষ! খুব ভালো কাজ করেছেন? তো শুনে রাখুন, আপনারা সম্পূর্ণ ভুল। আর আপনাদের ভুলের মাশুল দিতে হয় দুটো নিরপরাধ ছেলে মেয়েকে। আপনারা তো বিয়ে দিয়ে খালাস। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন, তারা তাদের পরবর্তী জীবন কীভাবে কাটাবে? তারা তো শুধুমাত্র পরিস্থিতির শিকার হয়ে বিয়েটা করতে পারে! মেনে নিতে পারলে ভালো, নইলে আর কি ডিভোর্স। সম্পর্ক তো ছিন্ন হয়ে যাবে কিন্তু যে চরিত্রের দাগ দিয়ে আপনারা জোর করে ওদের বিয়ে দিয়ে দেন, সেই আপনাদের কি কখনও ক্ষমা করে তারা? করেনা। করতে পারেনা। কষ্ট হয়তো কেটে যায়। কিন্তু তার দাগ সারাজীবন মনেই রয়ে যায়। বরং যতবারই মনে পড়বে ততবারই অভিশাপের শিকার হবেন।

মায়া মনোযোগ দিয়ে শুনছে আদ্রের কথা। এই ছেলের মানসিকতা মুগ্ধ করছে তাকে। কত সুন্দর ভাবে বাস্তবতার প্রতিটি মুহূর্ত ব্যক্ত করল সে। হুমায়রা থাকলে হয়তো পুনরায় প্রেমে পড়ে যেত। কিন্তু সে কি পড়েনি? পড়েছে তো। আবার নতুন করে পড়ে গেছে আদ্রের প্রেমে, জড়িয়ে গেছে তার মায়ায়।

এই ছেলে! ভুল করে আবার বড় বড় কথা? আর আমাদের পাপ, অভিশাপের কথা শেখাচ্ছ? বাঁচাতে চাইছো নিজেদের?

কোনটা ভুল! আমাকে দেখে, আমার অবস্থা দেখে কি আপনার মনে হচ্ছে আমি ওসব কাজ করতে এসেছিলাম? আর তাও যদি বিশ্বাস না হয়ে থাকে তো পাশেই আমাদের গাড়ি আছে। আপনারা নিজেরা যান আর চেক করে নিন। চাকায় গুলি পেলেও পেতে পারেন। কিন্তু দয়া করে আমাদের সম্পর্ককে নোংরা জায়গায় দাঁড় করাবেন না। আমাদের সম্পর্ক পবিত্র সম্পর্ক তাতে কোনো নোংরার ছায়া পর্যন্ত নেই। আশা করব আপনি বা আপনারা আমাদের সম্পর্ককে কুলষিত করবেন না। আদ্র আর কথা বলতে পারছে না। ধরে আসছে তার গলা। শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে।

আদ্র পড়ে যেতে নেয়, মায়া তার নরম হাতে আদ্রকে আগলে রাখলেও বলিষ্ঠ শরীরের সঙ্গে পেরে ওঠেনা। আদ্রকে পড়ে যেতে দেখে বয়স্ক লোকটি তাকে ধরে নেয়। হাত, পা থেকে রক্ত ঝরছে প্রচুর। কয়েকজন লোক ধরাধরি করে নিয়ে গেল আদ্রকে। পিছন পিছন আসল মায়া। তার জীবনে যেন কষ্টের শেষ নেই। লোকে যেন পণ করেই রেখেছে, মায়ার কাছের মানুষদের কষ্ট দেবে, আঘাত করবে। শেষে হয়তো মেরেও ফেলবে। মায়া তো একবার সহ্য করে নিয়েছে। কিন্তু বার বার পারবেনা। সম্ভব না তার দ্বারা।

আদ্রকে ধরে নিয়ে যাওয়ার মধ্যেও সে নিজের হাত বাড়িয়ে দিল মায়ার দিকে। মায়া এসে আঁকড়ে ধরলো আদ্রের হাত। আদ্রের তাতেই শান্তি। গ্রামে ঢুকে একটা বাড়িতে আনা হলো আদ্রকে। বাড়িটা করিম মিয়ার, অর্থাৎ বয়স্ক লোকটির। তিনি এই বাড়িতে একাই থাকেন। স্ত্রী অনেক বছর হলো গত হয়েছেন। একমাত্র ছেলে কাজের সূত্রে শহরে থাকে, বিয়ে করে সেখানেই একরকম ঘাঁটি গেড়েছে। আর দুই মেয়ে শ্বশুরবাড়ি। মাঝে মাঝে আসে, খবর নেয়। দু একদিন থেকে যায়।

আদ্রকে শুইয়ে দেওয়া হল একটি খাটে। মায়া এখনও তার হাত ধরে আছে। আদ্রের সারা শরীরে পরখ করে দেখছে কোথায় কোথায় চোট লেগেছে। নিজের ওড়না দিয়ে আলতো ভাবে মুছে দিচ্ছে রক্ত।

আপনারা একটু ডেটল বা সেভ্নল আর একটু সুতি কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন? আসলে ওর ক্ষত গুলো ড্রেসিং করা দরকার। নইলে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।

তার দরকার নেই আরু। আমি ঠিক আছি।

একদম চুপ। কি ঠিক আছি হ্যাঁ? কতটা জখম হয়েছিস তার কোনো খেয়াল আছে? বেশি কথা বললে খাট থেকে ফেলে দেব।

মায়ার কথায় হাসল আদ্র! এই মেয়ে তাকে চোখ রাঙাচ্ছে!

বয়স্ক লোকটি ঘরে থাকা সবাইকে ইশারা করে বাইরে যেতে বলল। আর একজন মহিলাকে ডেটল আর সুতি কাপড়ের ব্যবস্থা করতে বলে দিল। সবাই চলে যেতেই বয়স্ক লোকটি বলল,
বরকে এভাবে তুই করে বলতে নেই। তুমি করে বলবে! তুমি বলার মধ্যে কিন্তু একটা আলাদায় ভালোলাগা থাকে।

ঠিক বলেছেন আংকেল। এটা আপনি ওকে বোঝান তো। কতবার বললাম তুমি করে বলতে। কিন্তু এই মেয়ে বললে তো।

লোকটি হাসল। আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা! সত্যি বলতে আমরা কখনও এমন ভাবে ভেবে দেখিনি। আজ বুঝতে পারলাম। পারলে মাফ কোরো। আসলে সেই পুরানো যুগের মানুষ তো। এসবে অভ্যস্ত নই আমরা।

না না আংকেল। মাফ চাইবেন না। আপনি মুরুব্বী মানুষ, আমাদের লজ্জা দেবেন না।

আদ্রের আন্তরিকতায় বেশ খুশি হলেন লোকটি। আজকাল মানুষকে কিছু না বললেও তারা কথা শুনিয়ে চলে যান। অথচ তারা এই ছেলে মেয়েকে কতই না খারাপ কথা বলেছে। তাও তারা নিঃশ্চুপ। বরং কত ভালোবেসে কথা বলছে।

খুব ভালো লাগলো তোমাদের সাথে কথা বলে। আজ এখানেই থেকে যাও। তোমাদের গাড়িটা গ্যারেজে পাঠিয়ে দিয়েছি। এত রাতে তো আর ঠিক হবেনা, তবে কাল সকাল সকাল ওরাই ঠিক করে দেবে। আর টেবিলে তোমার ফোন আর চার্জার রেখেছি। ওটা গাড়ির মধ্যেই ছিল। তাই আমাদের গ্রামের এক ছেলে এনে দিয়েছে।

আংকেল আপনি প্লীজ ফোনটা একটু চার্জে বসিয়ে দিতে পারবেন? আসলে বাড়িতে একটু কথা বলতাম।

হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়। লোকটি আদ্রের ফোনটা চার্জে বসিয়ে বেড়িয়ে গেল। ততক্ষণে মহিলাটি ডেটল, সুতি কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মায়া দরজা বন্ধ করে আদ্রের ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করিয়ে দিল। তবে আদ্র একবারও আর মায়ার দিকে তাকালো না বা কথা বলল না।

এই তো সব ঠিক ছিল। এই ছেলের আবার কি হলো? আদ্র তোর কি কোথাও কষ্ট হচ্ছে?

হচ্ছে তো। ঠিক এখানে, আদ্র নিজের ডান হাতের একটা আঙ্গুল বুকে ঠেকিয়ে বলল। মায়া আঁতকে উঠল। কি বলছিস? ওখানে কি মারপিট করতে গিয়ে লেগেছে? কই দেখি! মায়া আদ্রের বুকে হাত দিতে গেলে আদ্র মায়ার হাত সরিয়ে দেয়।

বাইরের আঘাত না হয় দেখা যায়, কিন্তু ভিতরের আঘাত? সেটা কি দেখা যায়?

মায়া বুঝলোনা আদ্রের কথা। নির্বাক চেয়ে রইল তার দিকে। আমার কি কোনো ভুল হয়েছে আদ্র?

ভুল না। অন্যায়। অন্যায় করেছিস তুই। যার ক্ষমা নেই। তাই চুপ থাক।

মায়া কেঁদে ফেলল,
তবে সেই কান্না আদ্রকে গলাতে পারলো না। বরং মায়ার কান্নায় রাগ উঠে গেল তার। কাঁদতে হলে বাইরে গিয়ে কাঁদ। ভালো লাগছে না আমার। জাস্ট লিভ।

মায়া কেঁপে উঠল। আদ্রের এমন রুড ব্যবহারের কারণ তার অজানা।
আমি বাইরে যাবনা। আগে কি করেছি সেটা বলতে হবে। অন্যায় যখন করেছি, তখন সেই অন্যায়টাও জানতে চাই। এই অপরাধীর অপরাধের কারণটা কি জানতে পারি?

তুই কোন সাহসে নিজের সম্মান ওই ফাহিমের হাতে তুলে দিচ্ছিলিস? তোর বুক একবারও কাঁপেনি? যেই তুই, সেদিন নিজেকে বাঁচাতে এত কিছু করলি! এমনকি গাড়ির নীচেও পড়লি। আর আজ শুধু আমাকে বাঁচাতে চলে যাচ্ছিলিস ওদের কাছে? কেন? হোয়াই হোয়াই হোয়াই? আনসার মি ড্যামেড! গর্জে উঠল আদ্র!

আমি তো শুধু!

কোনো অজুহাত না! আজ কোনো অজুহাত না। যেই আমি চেষ্টা করছিলাম তোকে বাঁচাতে, আর সেই তুই কি করলি? চলে যেতে চাইছিলিস! তোর কি মনে হয় তোকে পেয়ে গেলে ওরা আমাকে ছেড়ে দিত? বোকা তুই? ফাহিমকে চিনিস না! তাও কেন?

মায়ার কান্নার বেগ বেড়েই চলেছে। চোখ, মুখ লাল সত্যিই সে ভুল করেছে, না না ভুল না অন্যায়। কিন্তু সে তো শুধু তার ভালোবাসার মানুষকে বাঁচাতে চেয়েছে। তার জন্যই নিজেকে সপে দিতে চেয়েছে ওই শয়তানদের হাতে।

আমি তো শুধু তোকে বাঁচাতে?

আমাকে বাঁচাতে কেন? মরে যেতাম আমি। মরতে দিতিস। মায়া আদ্রের মুখ চেপে ধরলো।

এমন বলিসনা আদ্র। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি......

আমার কিছু হয়ে গেলে যেত তাও এটা ভেবে খুশি হতাম অন্তত আমি বেঁচে থাকতে কেউ তোর কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। কিন্তু না... তুই সেটা হতে দিলে তো। নিজের সম্মান একটা মেয়ের কাছে কতটা কোমলীয় সেটা তুই খুব ভালো করে জানিস। তাহলে কেন?

আর কখনও করব না। বিশ্বাস কর। তাতে যায় হয়ে যাক না কেন?

আদ্র এবার একটু শান্ত হল। আমার কি বিশ্বাস করা উচিত তোর কথায়?

মায়া মাথা নাড়ল। হাসল আদ্র। মুখে প্রকাশ না করলেও আজ সে সত্যিই ভয় পেয়ে গেছিল। এই মেয়েটাকে হারানোর ভয় তার হৃদয়ে জেঁকে বসেছিল। শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে তারা আজ সুস্থ, নিরাপদ। বাকি রইল দেহের ক্ষত সে তো অল্প সময়েই ঠিক হয়ে যাবে।

*****

ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে সময়টা ভোররাত। আদ্র রাকিবকে ফোন করে জানিয়েছে লিজাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে। তারা একটু পিছনে পড়ে গেছে, তাই ফিরতে লেট হবে। রাতের ব্যাপারটা সে সম্পূর্ণ চেপে গেছে। আপাতত রাকিবের সাথে দেখা হলে সে এই নিয়ে ডিসকাস করবে। এখন অযথায় আর টেনশন দিতে চাইছে না। আরু!

গাড়ি ঠিক হলেই আমরা বেরিয়ে পড়বো। আর শোন বাড়িতে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই এই বিষয়ে। অযথায় টেনশন করবেন ওরা।

কাউকে বলবনা। তুই চিন্তা করিসনা। গাড়ি ঠিক হলে যথাসময়ে তারা বেরিয়ে পড়ল কলকাতার উদ্দেশ্যে।

চলবে.....

আমার_হৃদয়ে_তুমি_আজীবন   #পর্ব_৩৭ গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আশুরা তার সিক্ত নয়ন মুছে নিচ্ছে বারংবার। মাহিদ তাকে সামলাতে ব্য...
18/09/2025

আমার_হৃদয়ে_তুমি_আজীবন
#পর্ব_৩৭

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আশুরা তার সিক্ত নয়ন মুছে নিচ্ছে বারংবার। মাহিদ তাকে সামলাতে ব্যস্ত। প্রেয়সীর চোখের পানি তার সহ্য হচ্ছে না। আহা আশুরা আর কেঁদোনা। এভাবে কাঁদলে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু তাও থামছে না আশুরার কান্না। যতই হোক সারাজীবনের জন্য সে বাপের বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে শ্বশুরবাড়িতে। এখন বাপের বাড়িতে সে মাত্রই একজন অতিথি। মেয়েদের জীবনটা কেমন একটা তাই না? যেখানে জন্মালো, বড় হলো সেই ভিটে ছেড়েই একদিন চলে যেতে হবে অন্যের ঘরে, বাড়িতে। সত্যি বলতে মেয়েদের নিজেদের কোনো ঘর হয়না। হয় শুধু বাপের বাড়ি নয়তো শ্বশুরবাড়ি।

আরেকবার কাঁদলে কিন্তু তোমাকে তোমার বাপের বাড়ি রেখে আসব। মাহিদের বলতে দেরী কিন্তু আশুরার কান্না থামাতে দেরী হলোনা। তবে ভাঙা গলায় বলল,
হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো দিয়ে আসবেই। বিয়ে হয়ে গেছে না! এখন আর আমাকে ভালো লাগবে না। এখন অন্য মেয়েদের ভালো লাগবে। দিয়ে এসো আমাকে। নিয়ে যেতে হবেনা। আশুরার কথা শুনে মাহিদের অবস্থা কাহিল। সে তো শুধু আশুরার কান্না থামাতে কথাটা বলেছিল। আর সে এসব ভেবে নিয়েছে। ওই জন্যই বলে, মেয়েদের তাল বললে ওরা তালপুকুর পৌঁছে যায়।

মাহিদের অবস্থা দেখে রাকিব হেসে ফেলল। ভাইয়া তাহলে কি গাড়ি ঘোরাবো? না মানে আমরা এখনও কিন্তু বেশিদূর আসিনি। চাইলেই ভাবীকে ফেরত দিয়ে আসতে পারবো।

রাকিবের কথা শুনে বেজায় চোটে গেল মাহিদ। তুই চুপ করবি। সব ঘরের শত্রু বিভীষণ।

ও মা! তুই-ই তো বললি রেখে আসবি। এখন আমি রেখে আসতে চাইলেই দোষ?

হ্যাঁ দোষ। তুই আমার আর আমার বউয়ের কথায় কান দিবিনা। এক কাজ কর তুই লিজার সাথে কথা বল।

লিজা এতক্ষণ বাইরের দিকে তাকিয়ে নানান ভাবনায় মত্ত ছিল। কত আশা করে ছিল এবার ভ্যালেন্টাইন ডে টা সে রাকিবের সাথে কাটাবে। এটাও ভেবে রেখেছিল রাকিব হয়তো তাকে ওই দিন নিজের মনের কথাটা বলে দেবে। নিজের মধ্যে নানান স্বপ্ন বুনে রেখেছিল। কিন্তু সেটা হয়তো আর হবেনা। কারন আজ বিয়ে বাড়িতে সিতারা তার মনের সব কথা জানিয়েছে হুমাইরাকে। যেটা সে শুনে নিয়েছে। হয়তো আরো কিছু কথা নিয়ে আলোচনা করছিল কিন্তু সেটা শোনার আর ইচ্ছা হলোনা তার। লিজা জানে রাকিব তাকে ভালোবাসে। কিন্তু সিতারাও তো ভালোবাসে! এখন সে সিতারাকে কিভাবে বোঝাবে আর নিজেকে কিভাবে বোঝাবে সেটাই ভেবে চলেছে। লিজা আপন মনেই এসব ভেবে চলেছিল, বাকিরা কে কি বলছে তার সেদিকে খেয়াল নেই। কিন্তু মাহিদের মুখে নিজের নাম শুনে তার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটল।

কিছু বলছো ভাইয়া?

বলছি তো অনেক কিছুই। কিন্তু তুমি কোন ভাবনার জগতে ছিলে? আমাদের কোনো কথায় শোনোনি?

আসলে ভাইয়া আমি বাইরের এই অন্ধকার পরিবেশ দেখছিলাম একটু। খুব ভালো লাগছিল তাই হারিয়ে গেছিলাম সেখানে। সেইজন্য খেয়াল করিনি আপনাদের কথা।

ভালোয় হয়েছে খেয়াল করোনি। নইলে তুমিও হয়তো মজা করা শুরু করে দিতে। যাইহোক তুমি রাকিবের সাথে কথা বলোতো। ও আমার আর আমার বউকে খুব ডিস্টার্ব করছে। উল্টোপাল্টা বলছে।

মোটেও না। আমি শুধু তোর কথাটায় সায় দিয়েছি।

ঠিক ঠিক। আমার দেবর ঠিক বলেছে। বরং তুমি আমাকে রেখে আসার পায়তারা করছিলে।

আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষ্যামা দেন প্লিজ। মাহিদের কথা বলার ধরন দেখে হেসে ফেলল আশুরা। আশুরার হাসি দেখে মাহিদের অশান্ত মন দ্রুতই শান্ত হয়ে গেল। এবার আশুরা প্রশ্ন করল,
আচ্ছা মায়া তো এই গাড়িতেই ছিল হঠাৎ করে ওখানে চলে গেল কেন?

অন্যরা কিছু বলার আগেই মাহিদ বলল,
হয়তো পড়াশোনা নিয়ে ডিসকাস করবে! এতোদিন তো পড়াশোনা কিছুই করতে পারেনি। যাইহোক বাদ দাও। এক কাজ করো তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। আশুরা আর বিষয়টা নিয়ে ঘাটল না। বড্ড ক্লান্ত সে তাই তো চোখ বন্ধ করে মাহিদের কাঁধে মাথা দিয়ে, অল্প সময়েই তলিয়ে গেল ঘুমের দেশে।

রাকিব ড্রাইভিং-এর পাশাপাশি লিজাকেও পরখ করছে। সে বেশ খেয়াল করেছে বিয়েতে আসার পর থেকেই লিজা কেমন হঠাৎ হঠাৎ-ই অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। আগে কখনও লিজাকে সে এমন ভাবে দেখেনি। তাই তো ব্যাপারটা তাকে বেশ ভাবাচ্ছে। রাকিব পিছনে তাকিয়ে দেখল তার ভাইয়া-ভাবী ঘুমে বেঘোর। তাই লিজাকে প্রশ্ন করল,
আর ইউ ফাইন লিজা?

হ্যাঁ। ঠিক আছি।

কিন্তু তোমাকে দেখে তো সেটা মনে হচ্ছে না। অন্যরকম মনে হচ্ছে।

কেমন মনে হচ্ছে? লিজা বেশ কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করল।

মনে হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে খুবই চিন্তিত। হয়তো একটু ভয়েও আছো। যা তোমার চোখ, মুখে স্পষ্ট ভেসে উঠছে।

তা কতজনের চোখ, মুখের দিকে দেখেন আপনি?

রাকিব লিজার কথায় থতমত খেল। মনে মনে বলল,
সুযোগ পেলেই তো তোমাকে দেখি। অন্যকারো দিকে তাকানোর কি আর সময় আছে? কিন্তু মুখে বলল,
আসলে আমার সিক্স সেন্স খুব প্রখর। আমি মানুষ দেখলেই ঝট করে তার মনের ভাব বুঝে ফেলতে পারি।

সত্যিই পারেন?

সত্যিই পারি।

ভুল। পারেন না। আপনার আরও অনেক কিছু বোঝা উচিত ছিল। কিন্তু আপনি তা বোঝেননি।

রাকিব ভ্রু কুঁচকে তাকালো লিজার দিকে। লিজা ঠিক কি বলতে চাইল তার বোধগম্য হলনা। তাই চুপ করে গেল। লিজাও আর কিছু বলল না। পরিবেশটা হঠাৎ করেই কেমন যেন শান্ত হয়ে গেল।

******

মায়াদের গাড়ি আরও ধীর গতিতে চলছে। মূলত আদ্র চাইছে মায়ার সাথে একটু বেশি সময় কাটাতে। তাই তো সাড়ে ছয় ঘণ্টার রাস্তাকে টেনেটুনে দশ ঘন্টা বানাতে চাইছে। মায়া অবশ্য বিরক্ত হচ্ছে না। এই নির্জন রাতে ভালোবাসার মানুষকে পাশে নিয়ে চলতে তার বেশ লাগছে। বাইরে ফুরফুরে হাওয়া। যদিও ঠাণ্ডা, তবে সেই ঠাণ্ডা মায়াকে কাবু করতে পারছে না। মনের উষ্ণতায় শরীরও উষ্ণ হয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। তবে সেটা আদ্রকে বুঝতে দিচ্ছে না। আদ্র আড় চোখে অবশ্য মায়াকে অনেকক্ষণ লক্ষ্য করছে। সে আসলে মায়ার ভাবভঙ্গি দেখতে চাইছে! মায়ার ভাবভঙ্গিই বুঝিয়ে দিচ্ছে সে কত খুশি। আদ্র অজান্তেই হাসল। এই মেয়েটার সান্নিধ্য তাকে বড্ড শান্তি দেয়।
সামনের রাস্তাটা বেশ নির্জন। আদ্র একান্তে সময় কাটাবে বলে হাইরোড ছেড়ে এই রাস্তাতে এসেছে আর সেটাই হয়তো তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। আদ্র অনেকক্ষণ ধরে দেখছে একটা গাড়ি তাদেরকে ফলো করছে, এত রাতে পিছন পিছন আসায় আদ্রের বেশ সন্দেহ হল। সিওর হওয়ার জন্য কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে নিজেদের গাড়িটা দাঁড় করালো। আর পিছনের গাড়িটাও দাঁড়িয়ে গেল। আদ্রের সন্দেহ এবার বাস্তবতায় পরিণত হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে একটা মাস্ক নিয়ে পড়ে ফেলল আর মায়াকেও একটা দিল।

এটা তাড়াতাড়ি পড়ে নে।

কিন্তু কেন? এই রাতের বেলা মাস্ক পড়ে কি হবে?

অত প্রশ্ন করিসনা। পড়তে বলছি পড়। আদ্র গাড়ি স্টার্ট করল। নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল সুইচ অফ। মনে মনে নিজেকে গালি দিতে ভুলল না। এক্ষুনি এটাকে মরতে হল। উফ আল্লাহ আমি এখন কি করবো? হাইরোড তো এখান থেকে অনেক দূরে আর আমি তো এই রাস্তাটাও চিনিনা। কেন যে পাকামো করে আসতে গেলাম! এবার আরুকে কি করে বাঁচাবো? আল্লাহ হেফাজত করো। আজ যায় হয়ে যাক না কেন! আমি মরে যায় যাবো। কিন্তু আমার আরুর যেন কোনো ক্ষতি না হয়। তাহলে যে আমি নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারব না। আমার প্রাণের বিনিময়ে হলেও ওকে বাঁচিয়ে দিও আল্লাহ্! ওকে সুস্থ রেখ।

এত জোরে কেন গাড়ি চালাচ্ছিস আদ্র? আস্তে চালা। আদ্র গাড়ির স্পীড কমালো না বরং আরো বাড়িয়ে দিল। একটা হাতে মায়ার কোমল হাত স্পর্শ করে বলল,
আমার কথা মন দিয়ে শোন আরু! আজ অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তুই আমাকে কথা দে। সুযোগ পেলে পালিয়ে যাবি? তাতে আমার যায় হয়ে যাকনা কেন? বাঁচিয়ে নিবি নিজেকে। হেফাজত করবি সব কিছুর থেকে? কথা দে!

মায়া বুঝল না আদ্র তাকে আসলে কি বলতে চাইছে। তুই এসব কি বলছিস আদ্র? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি পালাবো কেন? আর তোকে রেখেই বা পালানোর প্রশ্ন আসছে কেন?

পিছনে একটা গাড়ি অনেকক্ষণ আমাদের ফলো করছে। হয়তো ওরা কোন ভাবে জেনে গেছে আমার কথা।

কিন্তু ওই গাড়িতে হয়তো অন্য কেউ থাকতে পারে? তোর ভুলও তো হতে পারে?

না কোনো ভুল হচ্ছে না আমার। আমি পরীক্ষা করে দেখে... আদ্রের কথা শেষ হলোনা তার আগেই একটা গুলি এসে লাগল আদ্রের গাড়িতে। মায়া চিৎকার করে উঠল। আদ্র...

পরপর আরও গুলি বর্ষণ হতে লাগল। মেঠো পথ দিয়ে আদ্রের গাড়ি চলছে দূর দিগন্তে। আদেও কোথায় যাচ্ছে তারা জানেনা। মায়া ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে আছে। আদ্রের একটা হাত খামচে ধরে রেখেছে। আদ্র তাকালো মায়ার ভয়ার্ত মুখের দিকে। আজ তার সত্যিই মনে হচ্ছে, বাড়িতে না ফিরলেই হয়তো ভালো হত। অন্তত তার জন্য মায়া তো বিপদে পড়ত না। আবার এটা ভেবেও রাগ হলো মায়াকে না নিয়ে আসলেই হত। মাথা তার কাজ করছে না এই মুহূর্তে। মায়াকে কিভাবে বাঁচাবে সেই চিন্তাতেই মগ্ন সে। কিন্তু অপরপক্ষের গুলি বর্ষণ থামার নাম নেই। হঠাৎ করেই আদ্রের সামনে চলে আসল আরেকটি গাড়ি, টাল সামলাতে না পেরে আদ্র গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে নামিয়ে ফেলল মাঠে। তবে কৌশলে দুটি গাড়িকে টেক্কা দিয়ে উঠে পড়ল আবার মেঠো রাস্তায়। চলতে শুরু করল আবার দ্রুত। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পরে গাড়ির চাকায় একটা গুলি এসে লাগল। না চাইতেও সঙ্গে সঙ্গে আদ্র থামিয়ে দিল গাড়ি। এবার তার ভয় আরো বেড়ে গেল। না আজ আর হয়তো বেঁচে ফিরতে পারবেনা। এখানেই শেষ।
তাদের থামতে দেখে পিছনের গাড়ি দুটোও থেমে গেল। গাড়িতে থাকা ফাহিম ক্রূর হাসি দিল। তার মামার পাখিকে তারা পেয়ে গেছে। এবার তার ডানা কেটে দেওয়ার পালা। ফাহিম গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে এল। হাতে তার পিস্তল।
এই সবাই নেমে আয়। শিকার অবশেষে ধরা দিয়েছে। আজ ওর বীজ সমেত শিকড়টাই উপড়ে নেবো। জানেনা কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছে।

ফাহিমের গলা শোনা মাত্রই আদ্র, মায়া দুজনেই চিনতে পেরে গেল। মায়ার ভয় এখন দ্বিগুণ। মরে যাবে ভেবে যতটা না ভয় পেয়েছিল তার থেকে বেশি ভয় পেয়েছে ফাহিমের এখানে আসা নিয়ে। পুরানো কথা সে ভুলে যায়নি। আর না ভুলেছে ফাহিম। সুযোগ পেলে যে ঘুমানো বাঘ জেগে উঠবে সেটা তারা খুব ভালো করেই জানে।

ফাহিম এখানে? এবার কি হবে আদ্র? ওরা তো আমাদের চিনে ফেলবে? আর ও যদি আমাকে...

আদ্র ভয় পেলেও মায়াকে অভয় দিয়ে বলল,
ভয় পাসনা আরু! দরকার হলে জীবন দিয়ে দেব তাও তোর কোনো ক্ষতি হতে দেবনা।

মায়া আদ্রের দিকে করুণ মুখে তাকালো, অস্পষ্ট স্বরে বলল,
আমি একা বেঁচে থেকে কি করব যদি তুই-ই না থাকিস?

আমার থাকাটা কি জরুরী?

খুব! মায়া করুণ চোখে তাকালো আদ্রের দিকে। এই ছেলেটি যে তার পৃথিবী। নিজের পৃথিবীকে হারিয়ে কিভাবে থাকবে সে! পারবে না কখনও। তাকে নিজের করে না পাক, অন্তত সুস্থ থাক। ভালো থাক। তাতেই সে খুশি। আর কিচ্ছু চাইনা তার।

আদ্রের আজ খুব করে মন চাইল মায়াকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু ধরলোনা। মায়ার দৃষ্টিতে নিজের দৃষ্টি মেলালো। সেখানে দেখল ভয় আর নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা।

কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি তো সেটা মেনে নেবেনা। আমার থাকা হবেনা। আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওদেরকে গাড়ি থেকে বার করে ফাহিমের সামনে আনল তার লোকজন।

বস এদেরকে এনেছি।

মুখের মাস্ক খোল। ফাহিমের ডান হাত আলফাজ ওদের মুখের মাস্ক খুলে দিতেই ফাহিম হা করে গেল। নিজের চোখকেই যেন সে আজ বিশ্বাস করতে পারছে না।

তুই আদ্রিয়ান চৌধুরী?

নাহ্। আমি আদ্র। আমি আদ্রিয়ান চৌধুরী কেন হতে যাব? আর সেও বা কে?

না। আজ তোর মিথ্যে ঢাকা পড়ে গেছে সত্যের আবডালে! তোর উপর তো আমার আগেই সন্দেহ ছিল। কিন্তু এটা কখনও ভাবিনি যে তুই আদ্রিয়ান চৌধুরী!

ভুল। আমি আর আরু একটা কাজে এসেছি। আমাদের ছেড়ে দে। কাকে না কাকে আমার সাথে গুলিয়ে ফেলছিস।

অতই সহজ এই ফাহিমের হাত থেকে বাঁচা? তুই আদ্রিয়ান চৌধুরী হোস আর না হোস। তুইও আমার শিকার। পুরোনো কথা আমি একটাও ভুলিনি আদ্র! আমাকে করা প্রত্যেকটি আঘাতের কথা আমার মনে আছে। আর আজ সেটারই পুনরাবৃত্তি করব আমি। তবে আজ আমার জায়গায় থাকবি তুই আর তোর জায়গায় আমি।

তোর যা করার আমার সাথে কর। কিন্তু আরুকে ছেড়ে দে।

ছেড়ে দেব? তাও মায়াকে? হাসালে বৎস হাসালে!
কি ভেবেছিস তুই! মায়াকে হাতের নাগালে পেয়ে ছেড়ে দেব? অতই সহজ? সেদিন যা যা হয়নি আজ তার সবটাই হবে। তবে আজকে স্পেশাল কিছু থাকবে, মানে এই ধরো সেদিন যা হতো সব বদ্ধ ঘরের মধ্যে হত। কিন্তু আজ, যা যা হবে সব হবে সবার সামনে। ইনফেক্ট তোর সামনে। তোরই সামনে তোর জানের বন্ধুকে আমি ভোগ করব। আর তার চাক্ষুস সাক্ষী থাকবি তুই।

মায়া আঁকড়ে ধরা হাতের বাঁধন আরও দৃঢ় করল। হাতের বাঁধন দিয়েই বোঝাতে চাইল, সে এই ফাহিমের ভোগের শিকার হতে চাইনা। আদ্র অসহায় চোখে তাকাল মায়ার দিকে। সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করল মায়ার হেফাজতে। কিন্তু সে কি পারবে? লড়াই করে কি বাঁচাতে পারবে তার আরুকে? আজ নিজের কাছেই নিজেকে বড্ড অসহায় লাগল তার। সৃষ্টিকর্তার কাছে আর্জি করল,
আজ শুধু বাঁচিয়ে দাও ওকে। শুধু বাঁচিয়ে দাও। প্রয়োজনে আমি শেষ হয়ে যাব। কিন্তু ওকে বাড়িতে সশরীরে, সুস্থ ভাবে পাঠিয়ে দাও। পাঠিয়ে দাও।

এই ধর ওদের। আর ওই মেয়েকে আমার কাছে দে। আজই আমাদের বাসর হবে। এই খোলা মাঠে, বলেই কুৎসিত একটা হাসি দিল ফাহিম। একজন কাছে এগিয়ে মায়াকে ধরতেই তাকে লাথি মেরে ফেলে দিল আদ্র। সে উলটে গিয়ে পড়ল ফাহিমের পায়ের কাছে। তাতে আরো তেতে উঠল ফাহিম। তবে মুখে হাসি বজায় রেখে বলল, পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।

একদম। তবে কথাটা তোর জন্য প্রযোজ্য ফাহিম। আমাকে দূর্বল ভাবিসনা। আমি নিজেই ধরা দেব তোর কাছে। শুধু আরুকে ছেড়ে দে। ওকে যেতে দে।

না! আমি তোকে ছেড়ে কোথাও যাবনা। একদমই না।

চুপ। একটা কথাও বলবিনা আরু! আমার যা হয় হোক। তুই চলে যা। প্লীজ আরু প্লীজ। ফাহিম তুই আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারিস। কিন্তু ওকে ছেড়ে দে।

না বললাম তো। কেন তর্ক করছিস? আমি তোকে একা রেখে যাবনা। কিছুতেই না।

ফাহিম হাতে তালি দিতে দিতে বলল,
কি প্রেম বাব্বা কি প্রেম। এদের প্রেম দেখে তো আমার চোখ দুটো ঝলসে গেল। আহা রে। কিন্তু একটা জিনিস কি জানিস। তোদের দুজনেরই কেউই আজকে বাঁচতে পারবে না আমার, এই ফাহিমের হাত থেকে। তাই এসব নাটক বন্ধ কর। ফাহিম নিজের হাতে থাকা পিস্তল তাক করল আদ্রের দিকে। আদ্রের দিকে বন্দুক তাক করায় ভয় পেয়ে যায় মায়া। তার সর্বাঙ্গ কাঁপতে লাগল ভয়ে, পায়ের শিরশিরানিতে নীচের মাটি সরে যাওয়ায় জোগাড়।

মায়া জানু! চলে এসো আমার কাছে।

না ও যাবেনা।

আরে আসবে আসবে। শোনো মায়া তোমাকে একটা ভালো অফার দিচ্ছি। আমার কাছে চলে এসো। সেটাই তোমার জন্য ভালো হবে। নইলে কিন্তু এই পিস্তলের সব গুলি তোমার এই জানের বন্ধুর কপাল ফুঁড়ে বেরোবে। এবার তুমি কি করবে, তোমার ব্যাপার!

ফাহিমের কথায় মায়া আরো ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু তাকে ধরা দিতে হবে। নইলে যে আদ্রকে মেরে ফেলবে সে।

ফাস্ট। অত সময় নেই আমার কাছে। দেরী করলে তোমার লস।

একদম না আরু! যাবিনা। শুনবিনা তুই ওর কথা।

ঠিক আছে। আসতে হবেনা। তাহলে মর তুই! বলেই আদ্রের দিকে তাক করে রাখা পিস্তলের ট্রিগার চাপলো। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠল মায়া।

নাহ্! ওকে কিছু করবেনা ফাহিম। আমি আসছি তোমার কাছে।

আদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মায়ার দিকে। এই মেয়ে কি করতে চাইছে? তাকে বাঁচাতে নিজের ইজ্জত এদের হাতে সপে দিতে চাইছে? আদ্র অবাক হয়ে গেল মায়ার কথায়! হারিয়ে ফেলল নিজের মুখের ভাষা! কি বলছে এই মেয়ে! ধরা দিতে চাইছে ওদের কাছে? আর আমাকে বেঁচে থাকতে এটা দেখতে হবে। একদম না। কিছুতেই ওদের কাছে যেতে দেবেনা সে মায়াকে।
পাগল হয়ে গেছিস তুই? হ্যাভ ইউ গন ম্যাড! কি করতে চাইছিস? ধরা দিতে চাইছিস ওদের কাছে?

এই শুরু হল আবার নাটক! এই নিজেদের নাটক বন্ধ কর। অত সময় নেই আমার কাছে। মায়া ভালোই ভালোই বলছি, সুযোগ দিয়েছি, সো আমার কাছে এসো। বিশ্বাস করো তুমি যদি আজ আমাকে আমার মনের মত করে, আমার মনোরঞ্জন করতে পারো, বিশ্বাস করো আমি সত্যিই আদ্রকে ছেড়ে দেব। ভুলে যাব পুরানো সব কিছু। যেতে দেব ওকে। এবার দেখ তুমি কি করবে। আমার ডিলটা কিন্তু মন্দ না।

ফাহিমের কথা শুনে আদ্র তেড়ে যেতে নেয়, কিন্তু তাকে থামিয়ে দেয় মায়া। এখন মাথা গরম করলেই আদ্রের বিপদ। এমন নয় যে ফাহিমের কথা শুনে মায়ার খারাপ লাগেনি! রাগ, কষ্ট, ঘৃণা মিলেমিশে একাকার। তবুও সে শান্ত আছে। মায়া আদ্রকে আটকে দেওয়ায় রাগ হলো তার। গরম চোখে তাকালো সে মায়ার দিকে। কিন্তু মায়ার সেদিকে হেলদোল নেই।

কি হলো এসো? মায়া আসছেনা দেখে ফাহিম পিস্তলের ট্রিগার চাপলো, তাক করল আদ্রের দিকে।

মায়া ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আরেকবার আদ্রের দিকে তাকাল, তারপরে পুনরায় ফাহিমের দিকে এগিয়ে যেতেই আদ্র হ্যাঁচকা টানে কাছে নিয়ে এল মায়াকে। চড় বসালো তার নরম গালে। আদ্রের বলিষ্ঠ হাতে চড় খেয়ে মায়া পড়ে যেতে নেয়। কিন্তু আদ্র তাকে পড়তে দেয়না। আগলে নেয় নিজের বাহুডোরে। যাতে চাইলেও পালাতে না পারে।

সেটা দেখে রেগে যায় ফাহিম। অনেকক্ষণ ধরে তোদের নাটক দেখছি। ফাহিম এগিয়ে এসে মায়ার হাত ধরতে গেলে এক প্রকার হাতাহাতি বেঁধে যায় আদ্রের সাথে। বাকি লোক গুলোও ঝাঁপিয়ে পড়ল আদ্রের উপর। আদ্র একা পারছে না তাদের সাথে। কিন্তু সেও হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না। মায়াকে বাঁচাতে তাকে লড়াই করতেই হবে। শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত হলেও আটকে রাখতে হবে এদের। লড়াই করার মাঝেই মায়াকে বারবার বলছে চলে যেতে, কিন্তু তার একটাই কথা আদ্রকে ফেলে সে যাবেনা। তাতে যাই হয়ে যাকনা কেন!

পালিয়ে যা আরু! পালা। আল্লাহর ওয়াস্তে পালা। ইজ্জত, জান বাঁচানো ফরজ। চলে যা। আমি এদেরকে দেখে নেব।

কিন্তু মায়ারও জেদ। বাঁচতে হলে দুজন বাঁচবে। নইলে এখানেই মরবে দুজন। আদ্রকে ছাড়া যে মায়ার দুনিয়া অন্ধকার। সে আদ্রকে পাক বা না পাক, অন্তত এটা ভেবে খুশি থাকবে আদ্র ভালো আছে, সুস্থ আছে। সেটাই তার জীবনের অনেক বড় পাওনা। কিন্তু যাকে ছাড়া তার দুনিয়া অন্ধকার তাকে এখানে বিপদে ফেলে সে যায় কি করে? পারবে না সে যেতে। হতে পারবেনা স্বার্থপর।

কথা কেন শুনছিস না? এতটা অবাধ্য কবে হলি? আমার শেষ ইচ্ছাটাও রাখবি না।

আদ্রের মুখে শেষ ইচ্ছার কথা শুনে ধক করে উঠল মায়ার বুক। আদ্র ওদেরকে মারতে মারতেই কথা বলছে মায়ার সাথে। ওদিকে ফাহিম নীচে পড়ে থাকা পিস্তল নিয়ে গুলি করল তখনই। মায়া আদ্র বলে চিৎকার করে উঠল। এই বুঝি হারিয়ে গেল সব কিছু। হারিয়ে ফেলল তার পুরো দুনিয়াকে। এই নিষ্ঠুর মানুষগুলো বাঁচতে দিলনা তাদের। কেড়ে নিল সর্বস্ব। যা কিছু ভালোবেসে আগলে রেখেছিল, যত্নে রেখেছিল নিজের হৃদয়ের কোঠরে।

চলবে...

আমার_হৃদয়ে_তুমি_আজীবন  #পর্ব_৩৬ বৌভাতের আমেজে রাকিবদের বাড়ির পরিবেশ গমগমে। সবাই আজ কি পড়বে, কিভাবে সাজবে, সেই সব নিয়...
18/09/2025

আমার_হৃদয়ে_তুমি_আজীবন
#পর্ব_৩৬

বৌভাতের আমেজে রাকিবদের বাড়ির পরিবেশ গমগমে। সবাই আজ কি পড়বে, কিভাবে সাজবে, সেই সব নিয়েই ব্যস্ত। কিন্তু রাকিব, মাহিদ আর আদ্রের কাজের যেন ফুরসত নেই। আদ্র মামা বাড়ি যেতে চাইলেও যেতে পারল না। মূলত ইচ্ছা করেই গেল না। এতকাজ, তার মধ্যে সেগুলো রাকিবদের হাতে একা ফেলে তো আর সে যেতে পারেনা। যতই হোক বন্ধু। বন্ধুত্বের মর্যাদা তো তাকে রাখতেই হবে। তবে এই ব্যস্ততার মধ্যেও সে মায়াকে নিয়ে চিন্তিত। কাল এখানে আসার পর থেকে একবারও ওর সাথে কথা হয়নি। না এবার একটা ফোন কিনে দিতেই হবে। আগের ফোনটা যে ভেঙে গেল, সেটা তো ঠিক করে দেওয়ায় হলোনা। আদ্র ঠিক করল কলকাতা ফিরেই ওর জন্য একটা নতুন ফোন কিনে দেবে।

শেখ বাড়িতে ড্রয়িংরুমে বসে আছে বড়রা। আশুরার মামা, মামীরা নানান খোশগল্পে মেতে উঠেছে। রান্নাঘরে রান্নায় ব্যস্ত তিন রমণী। মূলত তারা সকালের নাস্তা আর চা বানাচ্ছে। অন্যান্য খাবার সব বাবুর্চিই বানিয়ে দেবে। মায়া সিঁড়ি দিয়ে নেমে ড্রয়িং রুমে সকলকে বসতে দেখে সেখানে আর গেল না। সোজা চলে গেল রান্না ঘরে।

একি আন্টি কি করছেন! রাবেয়া বেগম চমকে উঠলেন। চা টা হাতে পড়ার আগেই মায়া গ্যাস বন্ধ করে দিল। তবে হাতে না পড়লেও গ্যাসের চারিপাশে চা অনেকটাই পড়ে গেছে।
দেখে কাজ করবেন না একটু? এক্ষুনি চা হাতে পড়ে যেত। কি হতো বুঝতে পারছেন? মায়ার কথায় রাবেয়া বেগমের কোনো হেলদোল দেখা গেল না। তিনি নির্লিপ্ত। মায়ার কথার উত্তরও দিলেন না। যেটা দেখে মায়ার একটু কষ্টও হয়েছে অবশ্য। আজকাল সবার ভালোবাসা পেয়ে পেয়ে তার অভ্যাসটাই খারাপ হয়ে গেছে।

তাই তো আপা তুমি কি করছিলে? দেখে কাজ করবেনা? ভাগ্যিস মায়া এসেছিল, না আসলে কি হতো বলতো! হাতটাই তো পুড়ে যেত।

এসব ছোট খাটো ব্যাপারে আমার কিছু হয়না ভাবি। তোমারা এত ব্যস্ত হোয়োনা আমাকে নিয়ে। নাস্তা গুলো নিয়ে যাও আমি আসছি চা বানিয়ে। রাবেয়া বেগমের কথায় রুমানা বেগম ও সুজানা বেগম চলে গেলেন নাস্তা নিয়ে। রান্না ঘরে এখন রাবেয়া বেগম আর মায়া। রাবেয়া বেগম এবার মায়াকে বললেন,
রাতে ঘুম হয়েছে মায়া? রাবেয়া বেগম মায়াকে প্রশ্ন করলেন। তবে ওর দিকে না ফিরেই। ওনার দৃষ্টি সসপ্যানের দিকে। একটা কাপড় দিয়ে গ্যাসের আশেপাশে মুছে নিচ্ছেন, নিজের দক্ষ হাতে।

হ্যাঁ আন্টি হয়েছে তো।

তাহলে তোমার চোখ, মুখ এমন কেন লাগছে? লাল হয়ে আছে। মুখটাও ফোলা ফোলা। এবার রাবেয়া বেগম মায়ার দিকে তাকিয়ে বললেন কথাটা।

রাবেয়া বেগম হঠাৎ করেই মায়ার দিকে তাকাতে মায়া ভড়কে যায়। যেন চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। কিন্তু সে ভেবে পেলনা রাবেয়া বেগমের প্রশ্নের কি উত্তর দেবে!

কি হল চুপ করে আছো যে?

আসলে আন্টি নতুন জায়গা। আর কাল রাতে একা ছিলাম। তাই ঘুম আসছিল না।

একা তো তুমি আমাদের বাড়িতেও থাকতে। বরং তখন তুমি অসুস্থ ছিলে। কই কোনোদিন তো এমন দেখায়নি তোমাকে। এতটা বিধ্বস্ত লাগেনি।

রাবেয়া বেগমের প্রশ্নের বানে জর্জরিত মায়া। কি বলবে সে এখন? যে, আপনার ছেলের বিরহে সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি। এটা বলবে? নাকি বলবে আমি আপনার ছেলেকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখতে পারব না। কষ্ট হবেনা আমার। কোনটা বলবে সে? মায়াকে চুপ থাকতে দেখে রাবেয়া বেগম পুনরায় বললেন,
আদ্রকে তোমার কেমন লাগে মায়া?

রাবেয়া বেগমের কথা শুনে মায়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। হিঁচকি উঠে গেল এক রকম। মায়ার অবস্থা দেখে রাবেয়া বেগম তাড়াতাড়ি একগ্লাস পানি দিলেন। আস্তে। হঠাৎ কি হলো তোমার?

জানিনা আন্টি। মায়া পানিটুকু পান করে গ্লাসটা পাশেই রেখে দিল। গলাটা ভিজিয়ে এখন বেশ ভালো লাগছে তার। মায়াকে চুপ থাকতে দেখে রাবেয়া বেগম পুনরায় বললেন,
আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেনা তো মায়া!

কোন প্রশ্ন?

এরই মধ্যেই ভুলে গেলে? ওই যে বললাম,
আদ্রকে তোমার কেমন লাগে?

ভালোই আন্টি। আপনার ছেলের মত ছেলেই হয়না। আপনি অনেক লাকি জানেন, যে ভাগ্য করে এমন একজন ছেলে পেয়েছেন। নিজের পরিবার, কাছের মানুষগুলোর জন্য সে জীবনও দিয়ে দিতে পারে। অন্তত আমি এই কদিনে যেটা বুঝছি। এমন ছেলেই তো প্রতিটি মা- বাবাই চাই। একজন ভালো মানুষ হওয়ার জন্য যা যা গুণ থাকা দরকার সেই সবটাই ওর মধ্যে আছে। সেই ছেলেকে কারো ভালো না লাগার সাধ্য কি আছে? নেই।

মায়ার কথা শুনে রাবেয়া বেগম বেশ খুশি হলেন, তবে ওনার খুশিটা বেশিক্ষণ টিকলোনা। মায়ার পরবর্তী বলা কথাতে ওনার মুখের খুশির ঝলকানি ধপ করে নিভে গেল।

হুমায়রা খুবই ভাগ্যবতী, সে আদ্রকে পাবে। আমি খুব খুশি আন্টি। দেখবেন ওরা খুব ভালো থাকবে। ওদের জীবন রাঙিয়ে উঠবে নতুন রঙে।

তুমি সত্যিই খুশি?

খুশি কেন হবো না আন্টি? আমার বন্ধুর বিয়ে হবে বলে কথা, তার উপর এত সুন্দর একটা মেয়ে তার বউ হয়ে আসবে। আমি কি খুশি না হয়ে থাকতে পারি? আমার এত আনন্দ হচ্ছে এত আনন্দ হচ্ছে যে আমি কাউকে কথায় ব্যক্ত করতে পারব না।

মায়ার কথা শুনে রাবেয়া বেগম ধরেই নিলেন মায়া আদ্রকে অমন চোখে কোনোদিন দেখেইনি। অবশ্য উনি দুজনকে একসাথে খুব কমই দেখেছেন। তাই একে অপরের প্রতি অনুভব না থাকাটাই স্বাভাবিক। রাবেয়া বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ভাবলেন আদ্রকে একবার জিজ্ঞাসা করবেন। পরক্ষণে আবার ভাবলেন না থাক। দরকার নেই। সে যদি রাজি হয় হুমায়রাকে বিয়ে করতে তাহলে আমি কেন বাঁধ সাধবো? ওরা যাকে নিয়ে ইচ্ছা হয় ভালো থাকুক। মা হিসাবে আমার দোয়া সব সময় তাদের সাথে থাকবে।

রাবেয়া বেগম চা নিয়ে চলে গেলেন ড্রয়িং রুমে। উনি যেতেই মায়ার অবাধ্য চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আলগোছে মুছেও নিল সে। আর কাঁদবেনা সে। কিছুতেই কাঁদবেনা। প্রেমে পড়ে মেয়েটা বড্ড দূর্বল হয়ে গেছে। কই আগে তো হঠাৎ হঠাৎ এমন করে কাঁদত না। জীবনটা তো তার কখনই সহজ ছিল না। তাহলে এখন কেন? কেন?

মায়া আজ নীলশাড়িতে নিজেকে সাজালো। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। কিন্তু সেদিকে তার হুস নেই। বুকের পীড়নে ক্ষতবিক্ষত সে। আজই শেষ। এরপরে আদ্রের মন রাখতে আর কোনকিছুই করবেনা সে। করবেনা আর নিজেকে দূর্বল। সরে আসবে তার জীবন থেকে। মনে মনে আরশাফুল শেখকে যে কথা সে দিয়েছে, তার মান সে রাখবে। মায়ার ভাবনার মাঝেই তার জন্য বর্ধিত রুমে প্রবেশ করল আদিল। মায়াকে দেখেই একদফা কারেন্টের ঝটকা খেল সে। এই মেয়েটার রূপ, সৌর্ন্দয্য দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। যা বারবার মোহিত করছে আদিলকে। আদিলকে তার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে মায়া অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। কিন্তু তার অস্বস্তির কথা মুখ ফুটে বলতেও পারল না।

কিছু বলবেন ভাইয়া?

হ্যাঁ? হ্যাঁ। হ্যাঁ। বলবো। বলবো। বলছিলাম গাড়িতে জায়গা অনেক কম। আমি বাইক নিয়ে যাচ্ছি। তুমি চাইলে আমার সাথে আসতে পারো।

মায়ার হঠাৎ মনে পড়ল আদ্রের বলা কথাটা,
"আদিলের থেকে দূরে থাকবি।"
পুনরায় মনে পড়ল আরশাফুল শেখের বলা কথা,
"নিজেকে এভাবে বিকিয়ে দিওনা।"

কিছু মনে করবেন না আদিল ভাইয়া। আসলে আমি ছেলেদের সাথে অত কমফোর্ট নই। একান্তই যদি যাওয়ার জায়গা না থাকে, প্রয়োজনে আমি যাবনা।

মায়ার কথা শুনে ব্যথিত নয়নে চেয়ে রইল আদিল। জায়গা না থাকাটা তো একটা বাহানা মাত্র। সে চেয়েছিলো এই সুযোগে মায়ার সাথে একটু সময় কাটাবে। কিন্তু সেটা আর হবেনা।
ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না। আমি ম্যানেজ করে নেব। বলেই চলে গেল আদিল।

আদিল যেতেই মায়া স্বস্তি পেল যেন, অন্য ছেলেদের সান্নিধ্য সে একেবারেই সহ্য করতে পারেনা। অস্বস্তি ধেয়ে আসে শরীরে, মনে। আদ্র কিছু না বললেও আজ সে যেত না আদিলের সাথে।

গাড়িতে উঠে মায়া দেখল সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা আছে। এখনও চাইলে দুজন বসতে পারবে। কিন্তু আদিল তাকে কেন মিথ্যে বলল সে বুঝলো না। আপাতত বুঝতে চাইও না। তার ভালো লাগছেনা কিছু।

বিয়ে বাড়িতে মায়ার সাথে সবার আগে দেখা হল লিজার সাথে।
ওয়াও আপু। কি সুন্দর লাগছে। এই শাড়িটা কোথায় পেলে গো? বাকি শাড়িগুলোর মধ্যে তো ছিলনা।

এটা আমাকে... বলার আগেই হুমায়রা এসে লিজাকে জড়িয়ে ধরলো। লিজা আপু! লিজা আপু! কেমন আছো?

হুমায়রার এমন কান্ডের কারণ বুঝলোনা লিজা। তবে মায়া ঠিকই বুঝে নিল।
কি হলো তোর? এমন কেন করছিস? কাল রাতেই তো সবার সামনেই ছিলাম।

ও পাগল হয়ে গেছে লিজা আপু তাই এমন করছে। সিতারার কথায় হুমায়রা বলল,
হ্যাঁ পাগল হয়েছি পাগল। পাগল হয়েছি।

হ্যাঁ সত্যিই হয়েছিস। যা বুঝলাম। সিতারা হুমায়রাকে নিয়ে ওদিকে যা। ফুচকার স্টল আছে গিয়ে ফুচকা খেয়ে নে।

ডেকে নাও ডেকে নাও। কয়েকদিন নাম ধরে ডেকে নাও। তারপরে এই আমাকেই তোমায় ভাবী বলে ডাকতে হবে আপু। মনে মনে বলেই একটা সুন্দর হাসি দিয়ে চলে গেল হুমায়রা।

ওরা চলে যাওয়ার পরে লিজা আবার কিছু বলতে গেলেই তার ডাক আসে। আশুরা তাকে ডাকছে।
তুমি থাকো আপু। আমি আশুরা আপুর কাছ থেকে একটু ঘুরে আসি।

আচ্ছা যাও। লিজা যেতেই মায়া একা হয়ে গেল। তাও দাঁড়িয়ে রইল ঠাঁই। একবারও চেষ্টা করলনা আদ্রকে খোঁজার। তার সামনে না পড়লেই ভালো। নইলে হৃদয়ে লুকায়িত ভালোবাসা আমার ডানা ঝাপটাবে। যেটা সে চাই না।

তাই তো বলি পূর্ণিমার চাঁদ এখানে! আর আমি তাকে সারা আকাশ খুঁজে বেড়াচ্ছি।

আদ্রের গলা শুনে পিছনে তাকালো মায়া। মায়া তাকাতেই আদ্র মৃদু কন্ঠে আওড়ালো,

"তোমার স্নিগ্ধ পরশে হারিয়েছি
বারেবার
কি মায়া লাগিয়েছো কন্যা
খুঁজে পাইনা আর নিজেকে হায়।"

মেয়েটা সত্যিই মায়াবতী। আদ্রের একান্ত ব্যক্তিগত মায়াবতী। যার প্রতিটা নিঃশ্বাসেও আদ্রের অধিকার বিরাজমান। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। নিজের করে নেবে সে মেয়েটাকে। সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আগলে রাখবে নিজের কাছে। নিজের বাহুডোরে।

আদ্রকে দেখেই মায়া নিজের দৃষ্টি সংযত করল। অন্যের হবু স্বামীকে সে দেখবে না।

থ্যাংকস।
ধন্যবাদ কিসের জন্য?
আমার দেওয়া এই শাড়িটা পড়ে আসার জন্য।

সে তো আগের শাড়ি, ড্রেস গুলোও তোর দেওয়া। এ আর নতুন কি?

তুই বড্ড বোকা আরু! কিছুই বুঝিস না।

মায়া মনে মনে বলল, সত্যিই আমি বোকা। তা না হলে কি আর অবাধ্য জিনিসে হাত বাড়ায়! পরক্ষণেই আবার ভাবল আচ্ছা আদ্র বোকা কেন বলল আমাকে। ও কি মিন করতে চাইছে। আচ্ছা কোনোভাবে ও আমাকে... না না এসব আমি কি ভাবছি? তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে মায়া। নইলে আর এসব ভাবতে পারিস?

এসেছিস তো অনেকক্ষণ আমাকে কি মনে পড়েনি? নাকি ভুলেই গেছিস? আদ্র ভ্রু উঁচিয়ে বলল হুঁ?

আদ্রকে ভুলে যাওয়ার সাধ্য কি মায়ার আছে? নেই। কোনদিন নিজেকে ভুলে যাবে। কিন্তু আদ্র নামক ব্যক্তিটিকে ভুলবেনা।

তুই কি আজ মৌনব্রত পালন করছিস নাকি?
মানে?
মানে আমার কোনো কথার ঠিকঠাক জবাব দিচ্ছিস না।

মায়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখল আদ্রের পিছনে আরশাফুল শেখ আর আবরার চৌধুরী আসছেন। ওনাদের দেখে মায়া একরকম দৌঁড়ে চলে গেল সেখান থেকে। মায়ার হঠাৎ করে এমন চলে যাওয়াতে আদ্র অবাক হয়ে গেল।
এই মেয়ের আবার কি হয়েছে? আচ্ছা ওই বাড়িতে কি কেউ কিছু বলেছে ওকে?

আরে আদ্র এখানে একা দাঁড়িয়ে যে?

আদ্র হেসে বলল,
আসলে মামা সারাদিন শুধু দৌড়ঝাপের মধ্যেই কেটেছে। তাই তো একটু দাঁড়িয়ে আছি। ভালো লাগছে বেশ। আরশাফুল শেখ হাসলেন আদ্রের কথায়। আচ্ছা দাঁড়িয়ে না থেকে ওদিকে গিয়ে বসো। শুনছি আজ রাতেই নাকি তোমরা ফিরে যাচ্ছ?

হ্যাঁ মামা। আপু আর মাহিদ ভাইয়াকে নিয়ে আজই চলে যাব। আর লিজা, রাকিব ও যাবে।

আর মায়া?

সেও যাবে। মায়া যাবে শুনে আরশাফুল শেখ রেগে গেলেন। তবে নিজের মধ্যে স্বাভাবিকতা বজায় রেখেই বললেন,
মেয়েটা বড্ড ভালো। আরও একদিন থাক না আমাদের এখানে। তোমার আম্মুর সাথে ওকে পাঠিয়ে দেব।

মামার কথায় আদ্র চাইল তার ড্যাডের দিকে। ওনার ভাবভঙ্গি নির্লিপ্ত।
আদ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরবার চৌধুরী বললেন,
হ্যাঁ মায়া মামণি থাক। আমাদের সাথে একেবারে কাল নিয়ে যাব।

না। আদ্র বেশ জোরেই বলে উঠলো। পরবর্তীতেই নিজের কণ্ঠের খাদ নামিয়ে বলল,
না মানে কাল আমাদের ইনিস্টিটিউটে খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা ক্লাস আছে। তাই যেতেই হবে। এই আমি তো ওখানে নতুন, মিস খান না থাকলে আমার খুব সমস্যা হয়ে যাবে।

একটা দিন সমস্যা হয় হবে। তুমি ম্যানেজ করে নেবে। আর আমি কিছু শুনতে চাইছি না। মায়া মামণি আমাদের সাথে যাবে মানে আমাদের সাথেই যাবে।

আদ্র আজকাল তার ড্যাডের ভাবভঙ্গি বুঝতে উঠতে পারেনা। তবে মায়ার থেকে তাকে যে দূরে রাখতে চাইছে সেটা সে ভালো রকমই বুঝতে পারছে। কিন্তু কারণটা তার অজানা। তবে সেও কম যাইনা। তার আরুকে চাই মানে চাই।

সারা বিয়ে বাড়ি মায়া আদ্রকে এড়িয়ে চলেছে। তা দেখে আদ্রের মেজাজ তুঙ্গে। একে তো তার ড্যাড তার সাথে মায়াকে যেতে দেবেনা বলেছে, অপরদিকে মায়ার এই এড়িয়ে চলা। সব মিলিয়ে তার রাগ সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেছে। রাগে রাগে সে বিয়ে বাড়ির ভাড়া করে আনা ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বার করে কয়েকটা খেয়ে নিল। এতে যদি তার মাথাটা একটু ঠাণ্ডা হয়। কিন্তু না। সেটা কিছুতেই হচ্ছে না।

একি আদ্র তুই এই ঠাণ্ডার মাঝে এত আইসক্রিম কেন? ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো?

লাগুক।

কি হয়েছে ভাই?

কি হয়নি সেটা বল। তোর বোন আর আমার ড্যাড মিলে আমার না হওয়া সংসারটা ভাঙতে চাইছে।

মানে ড্যাড বলছে আমার সাথে আরুকে যেতে দেবেনা। আরুকে নাকি ড্যাড কাল ওনার সাথে নিয়ে যাবেন।

কিন্তু তোর সাথে গেলে কি সমস্যা?

সেটা আমি কি করে জানবো কি সমস্যা?

আমার মনে হয় আংকেল তোকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। না মানে তুই বিলেত ফেরত ছেলে। লিজা ঘুমিয়ে পড়লে সেই সুযোগে যদি তুই মায়ার সাথে কিছু করে বসিস!

রাকিবের কথা শুনে আদ্র একটা ঘুষি দিল তার পেটে। তোর আমাকে এমন মনে হয়? আমি মায়াকে একান্তে পেয়ে এইসব করব?

করতেই পারিস। আমি বাবা আবার কাউকে বিশ্বাস করিনা।

আদ্র হাতে থাকা আইসক্রিমটা ফেলে দিয়ে গজগজ করে চলে গেল। আদ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাসল রাকিব। আপাতত তার কাজ মায়াকে আদ্রের সাথে নিয়ে যাওয়া। মায়াকে ওই বাড়িতে রেখে বাড়ি গিয়ে সে কিছুতেই যে শান্তি পাবেনা, সেটা রাকিব বেশ জানে।

রাকিব ফাঁক বুঝে লিজাকে ডাক দিল।
কিছু বলবেন ভাইয়া?
হ্যাঁ বলবো তো।
তাহলে বলুন।
আসলে লিজা হয়েছে কি... আজ তো আমরা ফিরছি এখন আদ্র চাইছিল আমাদের সাথে মায়াও ফিরুক। এখন আংকেল বলছিলেন মায়াকে উনি কাল নিয়ে যাবেন।

আপুকে কাল নিয়ে যাবেন মানে? আমি আপুকে একা রেখে যাব না। রাকিব মনে মনে ভাবলো যাক আমার কাজটা সহজ হয়ে গেল।

তাহলে যাও তোমার ড্যাড আর মামাকে বোঝাও। আসলে আমরা সবাই ফিরে যাচ্ছি। আমার বোন না গেলে আমার ঠিক ভালো লাগবে না।

হুম বুঝেছি বুঝেছি। আমি ঠিক মানিয়ে নেবো ড্যাড আর মামাকে।

*************

আদ্র কাউকে খুঁজছো?

হ্যাঁ মানে ওই মায়াকে খুঁজছিলাম।

একটা কথা জিজ্ঞাসা করব তোমাকে আদ্র? অবশ্যই তুমি যদি কিছু না মনে করো তবেই!

আরে করো না। আমার সাথে আবার তোমার কিসের ফর্মালিটি মাহিদ ভাইয়া?

আসলে আমি একটা জিনিস জানতে চাইছিলাম তোমার থেকে! মাহিদ কিছুটা ইতস্ততা নিয়েই প্রশ্ন করল,
তুমি কি মায়াকে ভালোবাসো?

মাহিদের কথা শুনে চমকালো না আদ্র। স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল,
ও আমার শুধুই বন্ধু ভাইয়া। এছাড়া আমাদের মধ্যে আর কিছুই নেই।

না মানে তুমি ওর এত খেয়াল রাখো, যত্ন করো, আগলে রাখো তাই আমি ভেবেছি তুমি ওকে...

কি যে বলো ভাইয়া! কাউকে খেয়াল রাখলে, যত্নে রাখলে বুঝি তাকে ভালোবাসা হয়? জানা ছিল না তো।

ওহ। মাহিদ মনে মনে ভাবতে লাগলেন। তাহলে কি আমি ভুল ভেবেছি? আদ্রের চোখে মুখে স্পষ্ট মায়ার প্রতি ভালোবাসা ফুটে ওঠে। শুধু বন্ধুত্বের খাতিরেই এত যত্নে, আগলে রাখবে? তাহলে আমি ভুল ভেবেছি আদ্র। কিছু মনে কোরো না।

আদ্র হাসল। তুমি ঠিকই ভেবেছো ভাইয়া। আমি ওকে ভালোবাসি। ভীষণ রকমের ভালোবাসি। হয়তো সেই ভালোবাসা মুখে ব্যক্ত করা সম্ভব নয়।

কিন্তু এক্ষুনি যে তুমি বললে, তুমি ওকে ভালোবাসো না। তাহলে?

বলেছি তার কারণ আছে ভাইয়া। পরে তোমাকে সব বলব। তবে এই ব্যাপারে এখনই তুমি কাউকে জানিও না। এমনকি আপুকেও না।

কিন্তু তোমার আপু জানলে কি সমস্যা?

কি সমস্যা, সেটা আমি জানিনা। শুধু এক্ষুনি কেউকে জানাতে চাইছি না। আগে আমি নিজে আরুর সাথে কথা বলি। তার পরে না হয়।

আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে।

মায়া ঠাঁই দাঁড়িয়ে, ওর সামনে আরশাফুল শেখ গভীর চিন্তায় মগ্ন। আগেরদিনের রাতের ঘটনা আর আজকে বলা আদ্রের কথা উনি কিছুতেই মেলাতে পারছেন না। তাহলে কি উনি সত্যিই ভুল ভাবছেন? আদ্র আর মায়ার মধ্যে কোনো সম্পর্কই নেই। কিন্তু যেটা চোখে দেখল? যাই হোক আদ্র নিজে মুখে বলেছে মানে মিথ্যে বলবে না। ছোট থেকেই তার মাহিদের সাথে বেশ ভালোই সম্পর্ক। তাই তাকে মিথ্যে বলবে বলে মনে হল না।

মায়ার অবস্থা কাহিল। সে দাঁড়িয়ে নিজের অশ্রু বিসর্জনে ব্যস্ত। সে ভেবেছিল আদ্র হয়তো তাকে ভালোবাসলেও বাসতে পারে। কিন্তু না ও আজ প্রমাণ করে দিল, মায়া শুধুই তার বন্ধু। বন্ধুত্বের অধিকারে এত যত্ন, আগলে রাখা। তবে আরশাফুল শেখ বেশ খুশি হলেন। ওনার বুকের থেকে একপ্রকার পাথর নেমে গেল।

কি বলেছিলাম তোমাকে মায়া? দেখলে তো! আদ্র তোমাকে ভালোবাসে না। সে তোমাকে বন্ধু ভাবে। যাই হোক, তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে কথা বলেছি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আসলে মেয়ের বাবা তো...

না না মামা আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন? আপনার কোনো দোষ নেই। আপনার জায়গায় আমি থাকলে আমিও এই একই কাজটা করলাম।

তুমি খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে। আশাকরি আদ্র যেটা বলেছে সেই পর্যন্তই সব থেমে থাকবে। আর হ্যাঁ তুমি কলকাতা গিয়ে এবার নিজের বাড়ি ফিরে যাবে। চব্বিশ ঘন্টা একটা ছেলের আশেপাশে না ঘোরাই ভালো। এতে তার মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরে যেতে পারে। আর তোমাদের ওই কলেজেও ওর থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখো কেমন। মনে থাকবে?

মনে থাকবে মামা! খুব মনে থাকবে!

আরশাফুল শেখ যেতেই মায়া দূরে দাঁড়ানো আদ্রের দিকে তাকাল তবে এবার আর তার কষ্ট হলোনা। আদ্র তাকে ভালো নাই বা বাসল। কিন্তু মানুষ হিসাবে সে খাঁটি সোনা। আর ওর মতো একজন বন্ধুকে সে পেয়েছে। আজকাল তো কাছের মানুষরাই কষ্ট দেয়, অত্যাচার করে। সেখানে ও আগলে রেখেছে পুরো দুনিয়া থেকে। আজ শুধু এই মানুষটার জন্য না চাইতেই সে সব পেয়ে গেছে। তাহলে কষ্ট কেন পাবে? কষ্ট পেলে ওকে অসন্মান করা হবেনা বুঝি? হবে তো। যে মানুষটা আমাকে কষ্ট পেতে দেবেনা বলে নিজের বাড়িতে রাখল। যার পরিবার ছায়ার মত মায়াকে হেফাজত করছে, শুধু সে ভালোবাসেনা বলে মায়া কষ্ট পাবে? একদম পাবেনা। বরং তার রাগ হলো আগের করা কাণ্ডে। কেন কেঁদেছিল সে? আর শুনলে রাগ করবেনা বুঝি? খুব রাগ করবে।
মায়া চাই এই মানুষটা ভালো থাকুক। সে আর কাঁদবে না। বরং সারাজীবন দূর থেকেই ভালোবেসে যাবে। আদ্র... ভালো যখন তোমায় বেসেছি তখন #আমার_হৃদয়ে_তুমি_আজীবন থাকবে। যতদিন এই প্রাণ থাকবে, তার প্রতিটা প্রশ্বাসে তুমি থাকবে। আমার ভালোবাসা হয়ে। আমার হৃদয়ে।

**********

লিজা চলে গেল তার মামা আর আরশাফুল শেখকে মানাতে। কিন্তু সত্যি বলতে লিজাকে কোনো কষ্টই করতে হয়নি। আরশাফুল শেখ একবারেই মায়াকে তাদের সাথে যেতে দিতে রাজি হয়ে গেছেন। তবে এই মীরাক্কেলটা কিভাবে ঘটলো তার জানা নেই। কিন্তু সে আপাতত এসব জানতে ইচ্ছুক না। মায়া আপু তার সাথে ফিরে যাচ্ছে এতেই সে খুশি।

********

সকলে বেড়িয়ে পড়ল কলকাতার উদ্দেশ্যে। শেখ বাড়ির গিন্নিরা মেয়ের বিয়ের রাতে যতটা না কেঁদেছিল, বরং তাদের কান্নার জোর এখন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর পাবেই না কেন? বড় আদরের মেয়ে আশুরা। বংশের বড় মেয়ে হওয়ায় আদর, যত্ন বরাবরাই তার একটু বেশি। সেই মেয়ে তাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে কলকাতা। না চাইলেও যেতে হবে। কারণ মাহিদ সেখানেই চাকরি করে। বউ ফেলে নিশ্চয় সে আর একা একা চলে যাবেনা! শেখ বাড়ির দুই গিন্নির কান্না কেউ থামাতে পারছে না। রাবেয়া বেগম তাদেরকে নানান ভাবে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

ভাবি তোমারা কেঁদো না। আমি তো আছি ওখানে। সব সময় গিয়ে দেখা করে আসবো। আর আশুরা চাইলে সব সময় আমাদের বাড়িতে আসতে পারবে। তোমরা ভেবোনা। মা, চাচীর কান্না দেখে আশুরাও হাউহাউ করে কেঁদে উঠলো। পুরো শেখ বাড়ি তিন রমণীর কান্নায় ভিজে যাওয়ার জোগাড়। আরশাফুল শেখের মতো কঠিন ব্যক্তিরও আজ চোখ ফেটে পানি বার হল। কিন্তু কাউকে দেখালেন না। আলগোছে সবার অগোচরে মুছেও নিলেন। ওনার দূর্বলতা কাউকে দেখাতে চাননা।

অবশেষে সবাই বিদায় দিয়ে দিলেন সবাইকে। আশুরা, মাহিদ, রাকিব আর মায়া এক গাড়িতে। আর ওদিকে লিজা আর আদ্র আরেকটা গাড়িতে। তা দেখে আরশাফুল শেখ কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেন। কিছুদূর গিয়ে অবশ্য রাকিব আর আদ্র যুক্তি করে মায়াকে নিজের গাড়িতে নিয়ে নিয়েছে। এখন আপাতত গাড়িতে করে যাচ্ছে মায়া আর আদ্র। আরশাফুল শেখ মায়ার প্রতি আর রুষ্ট না থাকলেও তিনি আপাতত আদ্রকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে আছেন। এই ছেলে যদি মায়ার প্রেমে পড়ে যায়, না জানি কি হবে। যাওয়ার আগে অবশ্য তিনি মায়াকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন। ওনার বিশ্বাস আদ্রো কাছে আসতে চাইলেও মায়া তাকে দূরে সরিয়ে দেবে। ঠিক দেবে। মানুষ চিনতে তার ভুল হয়না। এবার শুধু মায়া তাকে ভুল প্রমাণিত না করলেই হয়।

মায়া যেতেই আদিলের মনটা খারাপ হয়ে গেল, এই দুদিনেই সে মেয়েটার প্রতি আরও দূর্বল হয়ে পড়েছে। মেয়েটা যে তাকে কীভাবে বশ করে ফেলেছে সে নিজেও জানেনা। আদিল তাদের গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইল যতক্ষণ দৃষ্টির আড়ালে না গিয়েছে ততক্ষণ দেখতে লাগল। আমি আসব মায়া খুব তাড়াতাড়ি আসবো তোমার কাছে। আর বলব নিজের মনের কথা। যা নিহিত আছে আমার অন্তরে।

আমাকে এই গাড়িতে এনেছিস কেন? আমি আপুর সাথে কেমন গল্প করছিলাম! মায়া প্রশ্ন করল আদ্রকে। আর আমরা এত স্লো কেন যাচ্ছি? রাকিব ভাইয়া তো কত এগিয়ে গেল। আমি ওই গাড়িতে যাব। মায়া যে এত কথা বলছে আদ্রের সেদিকে কোনো হেলদোল নেই। সে নিশ্চিন্তে ড্রাইভ করছে।

আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি আদ্র! চুপ কেন করে আছিস? আদ্র নীরবতা ভেঙে এবার বলল,
সারা বিয়ে বাড়ি আমাকে এভয়েড করার কারণ কি?
আদ্রের কথায় মায়া বিচলিত হল না। সে জানতো সুযোগ পেলেই আদ্র এই কথাটা জিজ্ঞাসা করবে।

এভয়েড কেন করবো? বিয়ে বাড়ি কত্ত লোকজন। আমি তো তাদের সাথে কথা বলছিলাম।

কিন্তু আমি তোকে অন্যদের সাথে কথা বলতে খুব কম দেখেছি। বেশিরভাগ সময় একা দাঁড়িয়ে ছিলিস। বরং আমি তোর আশেপাশে গেলেই তুই অন্যদের সাথে কথা বলতে চলে যাচ্ছিলিস।

মোটেও না।

মোটেও হ্যাঁ।

হ্যাঁ তো হ্যাঁ। করছিলাম তো করছিলাম।

এটা আমার কেমন কথা?

যেমন কথা, তেমন কথা।

মায়ার কথা শুনে আদ্রের হাসি পেল, শব্দ করে হেসেও ফেলল। মায়া অপলক চেয়ে রইল সেই হাসির দিকে। এই হাসিটাও মায়াকে বড্ড জ্বালাচ্ছে। আবেগী করে তুলছে সদ্য ক্ষতবিক্ষত হওয়া হৃদয়।

এভাবে হাসবিনা আদ্র?

আদ্র প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
কেন?

তোকে খুব বাজে লাগে। আর আমি চাইনা আমার বন্ধুকে বাজে লাগুক।

এই কথাটা শোনার পরে যে কারো রাগ হতে পারে। আদ্র তো আদ্রই। আরো জোড়ে জোড়ে হেসে উঠল। মায়া এবার বিরক্ত হল। এই ছেলে কি আমাকে শুধু জ্বালাবে নাকি? কি হতো রাগ করে একটু না হাসলে। কিন্তু এই ছেলে তো উলটো। আগে তো কত ভদ্র সেজে থাকত। আর এখন..

আদ্র হঠাৎ হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল,
হেসেছি মানে এই নয় যে, তোর এভয়েডের ব্যাপারটা ভুলে গেছি। সুযোগ পেলে এই শাস্তি ঠিকই পাবি।

শাস্তি আর আদ্র দুটো একসঙ্গে বেমানান।

সেটা তো সময় বলবে মিস খান। মায়া এবার চুপ হয়ে গেল। সে আরশাফুল শেখকে কথা দিয়েছে আদ্রের থেকে দূরে দূরে থাকবে। অবশ্য আদ্র তো তাকে ভালোবাসেনা। তাই তার কাজটা সহজ হয়ে যাবে। নিজের শত কষ্ট হলেও নিজের অনুভূতিকে সে ডুবিয়ে রাখবে নিজের অন্তরে। কাউকে পেতে দেবেনা তার হদিস।

আদ্র নানান কথা বলে যাচ্ছে মায়ার সাথে মায়াও হ্যাঁ হুঁ উত্তর করছে। কিছুদূর যাওয়ার পরেই একটা গুলি এসে লাগল আদ্রের গাড়িতে তারপর...

চলবে......

Address

Khagrachari
Chittagong Division
4400

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Monir Bro posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share