23/11/2022
পরিবারের একমাত্র কনিষ্ঠ পুত্র মাহবুব,মাকে না বলে যুদ্ধে যাওয়ায় অভিমানে হালদায় ঝাঁপ দিলেন মা-মায়রা
মোঃআরফাতুল ইসলামঃ
হাটহাজারীতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত সনদ গত ১০ই নভেম্বর(বৃহস্পতিবার) উপজেলার সেমিনার কক্ষে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও শাহিদুল আলম এ সনদপত্র ও কার্ড প্রদান করেন।এ সময় ৭১জনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ সনদপত্র ও কার্ড প্রদান করা হয়।৫৫০জনের মধ্যে ২০০জনের অধিক মুক্তিযুদ্ধাদের এ সনদ প্রদান করা হয় বলে জানা যায়।
ছবিতে মুক্তিযোদ্ধা কার্ড ও সনদ গ্রহণ করছেন বীর মুক্তিযুদ্ধা আলহাজ্ব মাহবুবুল আলম(৬৭)।যাঁর পরিচিতি নম্বর-(০১১৫০০০৮৯৫৭)।তিনি উপজেলার ছিপাতলী ইউনিয়নের আলম আজমের বাড়ির পিতা আলহাজ্ব আমিনুর রহমান ও মাতা মায়রা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।৩ বোনের ১ ভাই। বাবা মায়ের কনিষ্ঠ পুত্র থাকায়, খুব আদরের সন্তান ছিলেন। হালদা ঘেঁষে বাড়ি হওয়ায়,শৈশব কেটেছে অত্যন্ত বিলাসী,মাছ ধরা ছিল তাঁর প্রিয় সখ।তিনি ছোটকাল থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ড ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য কাজ করতেন।পাড়ার অন্য আন্যান্য ছেলেদের চেয়ে,তিনি ছিলেন একটু ভিন্নতর।বাবার হাত ধরে ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনীয়া আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি,ধীরে ধীরে মাওলানা হয়ে দেশ দশের খেদমতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন।দেখতে দেখতে তিনি শৈশব পার হয়ে যখন কৈশরের ১৫থেকে ১৬তে পা রাখেন।
অতঃপর সারা দেশে মুক্তি যুদ্ধের ডাক এলো,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তি যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ।উপজেলার পার্শ্ববর্তী রাউজান থানার কমান্ডার সি.এম.সি হাশেমের সাথে যোগদান,সে সময় রাউজান বড়ইতলা এলাকায় শামছু চেয়ারম্যানের খামার,রাবার বাগানের উত্তর পাশের ক্যাম্পে ৩৭০জন বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধার ক্যাম্প ছিল।যুদ্ধ চলছিল,দিন রাত ভারী গুলি বর্ষণ,বাতাসে মিশে গেছে গোলাবারুদের গন্ধ।মুক্তিযুদ্ধা মাহবুবুল আলমের সাথে ছিল উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম নাঙ্গলমোড়ার মুক্তিযুদ্ধা শাহাবুদ্দিন,মুক্তিযুদ্ধা জোহুরুল আলম,মোজাফ্ফরপুরের মুক্তিযুদ্ধা
নুরুল আলম।৪জনেই ঐ ক্যাম্পে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেন।শোকার্ত হয়ে মাহবুবুল আলম বলেন,মাহাদাইম্মের হাটে রাজাকারদের ইশারায় পাক্ হানাদার বাহিনীর অস্ত্রের মুখে
আমরা একজন মুক্তিযুদ্ধাকে হারায়।বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।আমি আমার "মা" মায়রা খাতুনের ঘরে ১জন পুত্র সন্তান ছিলাম বলে,মায়ের অভিমান ৩বোনের ভালোবাসা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া।মাকে না বলে যুদ্ধে চলে গিয়েছিলাম বলে, আমার মা পাগল হয়ে গিয়ে ছিলেন।মা আমার উপর অভিমান ক্ষোভ নিয়ে হালদায় ঝাঁপ দেন,আমার মেঝ বুবু হুোসনে আরা বেগম
মাকে নদী থেকে তুলে আনেন।মেঝ বুবু হুোসনে আরা বেগমসহ ২বোনের অজস্র কান্নার রোলে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।সে সময়ে বাবা তখন দেশান্তরে ছিলেন।যুদ্ধকালীন সময়ে একদিন ক্যাম্প থেকে ঘরে ফির ছিলাম মাকে দেখার আশায়।
মায়ের সাথে দেখা আর বুবুদের ভালোবাসা আমাকে একবিন্দু পরিমাণ দেশ প্রেমে থেকে বিচলিত করতে পারে নি।দেখা শেষ,এবার বিদায় নেয়ার পালা,বিদায় বেলা আমার মা মান্নাত করেন,এ দেশ যদি স্বাধীন হয়, আমি ১৯টা গরু দিয়ে খাবারের আয়োজন করবো।এবং তা করেন।৬০০/৭০০ কাণি জমিনের ধান মানুষ দিয়ে দেন।মহান রবের কাছে মা মায়রা খাতুনের একটাই চাওয়া ছিল,দেশ যেন স্বাধীন হয়,জানের বদলে যেন ছেলের জান ফিরে পাই। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ দীর্ঘ টানা ৯মাস যুদ্ধ,৩০লক্ষ শহীদের রক্ত, ২লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এদেশ ফিরে পাই লাল সবুজের পতাকা।বিজয় স্লোগানে মুখরিত রাজপথ,ছেলে ফিরে আসে ঘরে,স্বাধীনতার খুশিতে মহা আনন্দ উল্লাসে সারা দেশ।স্বাধীনতা ঘোষণার ২দিনপরে রাজাকাররা ধরা দেয় সশস্ত্রবাহিনীর হাতে।
সনদ বিতরণ শেষে, অনুষ্ঠানে ইউএনও শাহিদুল আলম বলেন,সনদপত্র ও কার্ডে কারো যদি নামকরণে ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে,তাহলে উক্ত বিষয়ে অবগত করার জন্য জানান তিনি।এসময় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধারাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।