17/08/2025
🌿 প্রাইভেট মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কিছু বাস্তবতা ও অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ
আপনি কি প্রাইভেট মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে কোনোভাবে জড়িত?
👉 আপনি যদি অভিভাবক, পরিচালক, শিক্ষক বা স্টাফ হন—তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্যই।
ভাই ও বোনেরা, অনেকেই প্রাইভেট ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, আলোচনা করেন, সমালোচনা করেন। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে আমি আজ কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি—এই কথাগুলো সত্য, বাস্তব এবং কারো প্রশংসা বা নিন্দার জন্য নয়।
🔹 প্রথম বাস্তবতা:
বাংলাদেশের প্রায় ৯৫% প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভর্তুকি দিয়ে চলে।
একজন উদ্যোক্তা বা পরিচালক যখন অন্য কাজ ছেড়ে ইসলামের খেদমতের উদ্দেশ্যে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, তখন তাকে দ্বিগুণ-তিনগুণ পরিশ্রম করতে হয়। দিন-রাত একাকার করে, নিজের অর্থ-সময়-শ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করাতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো—অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অল্প সময়ের মধ্যেই ঋণের বোঝায় দমবন্ধ হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টিকে থাকে, সেটা আল্লাহর কবুলিয়াত ও সঠিক পরিকল্পনা-পরিচালনার ফলেই হয়।
🔹 দ্বিতীয় বাস্তবতা:
প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর পর সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হলো স্টাফ বা শিক্ষকদের পরিচালনা করা।
প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকরা টাকা খরচ করে সন্তানদের ভর্তি করান। তাই তারা অগ্রগতি দেখতে চান। যদি কোনো কারণে পড়াশোনা বা শৃঙ্খলার ঘাটতি হয়, তবে তারা সহজেই সন্তানকে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। ফলে পরিচালকগণ বাধ্য হন কঠোর নিয়ম-কানুন চালু রাখতে।
কিন্তু এখানেই দেখা দেয় সমস্যা—কিছু বিদ্রোহী শিক্ষক বা স্টাফ থাকেন, যারা নিয়ম-শৃঙ্খলা মানতে চান না। তারা প্রতিষ্ঠানের জন্য "ভাইরাস" বা "বিষফোঁড়া" হয়ে দাঁড়ান। অথচ নিজেদের টিকে রাখার জন্য তারা ভিন্ন কৌশল নেন—অভিভাবকদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে নেন। ফলে অভিভাবকরা ভাবেন, এই শিক্ষকই প্রতিষ্ঠানটির আসল স্তম্ভ। অথচ সেই শিক্ষক ভেতরে ভেতরে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, শৃঙ্খলা ভাঙে এবং অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করে।
🔹 তৃতীয় বাস্তবতা:
যখন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে এমন শিক্ষকদের অব্যাহতি দেন, তখন এরা আসল চেহারা প্রকাশ করে—প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ, কুৎসা, বদনাম ছড়াতে শুরু করে। তখন অনেক অভিভাবকও বিভ্রান্ত হয়ে যান।
🌿 অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ:
যদি কোনো শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বদনাম ছড়ায়, তখন সরলভাবে তাকে জিজ্ঞেস করবেন—
> “আপনি যদি এতদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের খারাপ দিকগুলো জানতেন, তবে আগে কেন আমাদের বলেননি? এখন কেন বলছেন?”
দেখবেন—সে উত্তর দিতে পারবে না, কারণ তার আসল উদ্দেশ্য তখন ফাঁস হয়ে যাবে।
আরেকটা কথা মনে রাখবেন—কোনো যোগ্য ও কল্যাণকামী শিক্ষক বা স্টাফকে পরিচালকরা কখনো অব্যাহতি দেন না। বরং তারা বহুবার সতর্ক করার পরও যদি সংশোধন না হয়, তখন নিরুপায় হয়ে অব্যাহতি দেন।
অভিভাবকদের উচিত, এই সময় প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করা। পরিচালকরা সবসময় প্রকাশ্যে কারণ বলেন না, কারণ এতে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হতে পারে। তাই সঠিক কারণ জানার চেষ্টা করুন, কেবল গুজবে কান দেবেন না।
🔹 শেষ কথা:
একজন পরিচালক কখনোই অযথা কাউকে বাদ দেন না। কারণ বাদ দিলে আবার নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে হয়—এটা পরিচালকগণের জন্য সহজ সিদ্ধান্ত নয়।
👉 তাই অভিভাবকদের অনুরোধ—আপনারা পরিচালকের উপর আস্থা রাখুন। যদি অভিভাবকরা দৃঢ়ভাবে বলেন,
> “আমাদের সন্তানের মঙ্গল পরিচালকের সিদ্ধান্তের মধ্যেই রয়েছে। তিনি যা করবেন, ইনশাআল্লাহ আমাদের সন্তানের জন্য কল্যাণকরই করবেন।”
তাহলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সহজ, সুন্দর এবং গোছানো হবে। আর দিনশেষে উপকারভোগী হবেন আপনাদের সন্তানরাই।
🌸 আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হক বুঝে কাজ করার তাওফিক দান করুন।
ইনশাআল্লাহ, সামনে আরও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ শেয়ার করব। আমাদের সাথে থাকুন।
✍️
Md Ansarul Haque