28/08/2025
-আমরা কি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ধরে রাখতে পেরেছি, নাকি ধীরে ধীরে তা হারাচ্ছি?
সংস্কৃতি একটি জাতির প্রাণশক্তি, পরিচয়ের মূলে থাকা শক্ত ভিত্তি। সংস্কৃতি ছাড়া কোনো জাতি পূর্ণতা পায় না। ভাষা, সাহিত্য, সংগীত, পোশাক, আচার-অনুষ্ঠান, বিশ্বাস—সব মিলেই একটি জাতির সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এই সংস্কৃতিই তাকে আলাদা করে তোলে অন্যদের থেকে এবং দেয় একটি অনন্য পরিচয়। কিন্তু বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। প্রযুক্তি, ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমের কল্যাণে এই প্রভাব আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি কতটুকু রক্ষা পেয়েছে, আর কতটুকু হারিয়ে যাচ্ছে, সেটিই আজ বড় প্রশ্ন।
আজকের তরুণ প্রজন্ম পাশ্চাত্যের পোশাক, গান, সিনেমা ও জীবনধারার প্রতি বেশি আকৃষ্ট। তারা পশ্চিমা ধাঁচের খাবার যেমন বার্গার, পিজা বা সফট ড্রিঙ্ককে নিজেদের সংস্কৃতির খাবারের চেয়ে আধুনিক মনে করে। নিজের মাতৃভাষা ভাষার জায়গায় অনান্য ভাষা বা মিশ্র ভাষার ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমনকি অনেকে সচেতনভাবেই নিজের মাতৃভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজিতে কথা বলতে গর্ব অনুভব করে। পাশ্চাত্যের উৎসব যেমন ভ্যালেন্টাইন’স ডে, নিউ ইয়ার পার্টি, হ্যালোইন ইত্যাদি অনেকের কাছে এখন আনন্দ-উৎসবের প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে তাছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির স্টাইলে পালন করা ইতিমধ্যে ছড়িয়ে গেছে । অথচ আমাদের নিজেদের যেসব কৃত্য আচার অনুষ্ঠান , লোকসংগীত কিংবা উৎসব- পার্বন রয়েছে সেগুলো আজ অনেকাংশেই সীমিত হয়ে গেছে।
তবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সবকিছু নেতিবাচক নয়। তাদের থেকে আমরা অনেক ইতিবাচক দিক গ্রহণ করতে পারি। সময়নিষ্ঠা, নিয়মশৃঙ্খলা, পরিশ্রমের মনোভাব কিংবা মানবাধিকারের প্রতি সচেতনতা—এসবই পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি থেকে শেখার মতো বিষয়। বিশ্বায়নের কারণে আমরা বিজ্ঞানের অগ্রগতি, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আধুনিক শিক্ষার সাথে সহজেই পরিচিত হতে পারছি। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখনই, যখন আমরা অন্ধভাবে পাশ্চাত্য অনুকরণ করতে গিয়ে নিজেদের শেকড় ভুলে যাই।
অতএব, আমাদের প্রয়োজন নিজের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরা। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম—সবখানেই নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাশ্চাত্যের ভালো দিকগুলো গ্রহণ করতে হবে, কিন্তু নিজের শেকড়কে ভুলে গেলে চলবে না। কারণ, একটি জাতি তার সংস্কৃতি হারালে সে জাতির কোনো মৌলিক অস্তিত্ব থাকে না। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে—পাশ্চাত্যের প্রভাব থাকুক, কিন্তু আমাদের আত্মপরিচয় হবে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতেই।
ছবি: