MD pavel Mia

MD pavel Mia আসুন শত্রু নয় বন্ধ হয়ে বেঁচে থাকি

Permanently closed.
25/10/2023

এই নাটকটি সব মেয়েদের দেখা উচিত

06/08/2023

দূর ঘটোনার পরেও মাছ ধরার নেশা থামবে না।

05/08/2023

আমার পছন্দের হিরো আলম।

এখন পিতামাতারা গৌরব বোধ করেন যে তাঁদের পুত্রটি গুন্ডা। বাসায় একটি নিজস্ব গুন্ডা থাকায় প্রতিবেশীরা তাঁদের সালাম দেয়, মুদি...
05/08/2023

এখন পিতামাতারা গৌরব বোধ করেন যে তাঁদের পুত্রটি গুন্ডা। বাসায় একটি নিজস্ব গুন্ডা থাকায় প্রতিবেশীরা তাঁদের সালাম দেয়, মুদিদোকানদার খুশি হয়ে বাকি দেয়, বাসার মেয়েরা নির্ভয়ে একলা পথে বেরোতে পারে, এবং বাসায় একটি মন্ত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সবচেয়ে বড় গুরুমন্ত্র হল, কখনও নিজের গোপন বিষয় অপরকে জানাবে না, এটা তোমাকে ধ্বংস করে দেবে।
05/08/2023

সবচেয়ে বড় গুরুমন্ত্র হল, কখনও নিজের গোপন বিষয় অপরকে জানাবে না, এটা তোমাকে ধ্বংস করে দেবে।

30/07/2023

ভূতের কথা শুনলে ঘুম আসে না।
ঐতিহাসিক প্রেতাত্মা - শ্রীধীরেন্দ্রলাল ধর
ভূতের গল্প ছেলেবেলা থেকে শুনছি। কত জনের কত রকমের কাহিনি। কারো শোনা কথা আবার কারও-বা নিজের চোখে দেখা। কেউ অপঘাতে মরেছে তারপর ভূত হয়ে দেখা দিয়েছে, গয়ায় পিণ্ডদানের পর আর দেখা যায়নি। কেউ-বা খুন হয়েছে, তারপর হত্যাকারী ফাঁসিতে না ঝোলা পর্যন্ত তার বার বার আবির্ভাব ঘটেছে। কোথাও-বা অতর্কিতে প্রেতাত্মা কারও স্কন্ধে ভর করে অনেক গোপন কথা প্রকাশ করে দিচ্ছে। এমনি কত একক ভূতের কাহিনি। আবার দলবদ্ধ ভূতের আবির্ভাবের কথাও আছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সের যুদ্ধক্ষেত্রে হাজার হাজার সৈনিকের ছায়া দেখা দিয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আণবিক বোমায় নিহত হিরোশিমা শহরের সমস্ত নগরবাসীদের জীবন্ত ছায়া দেখা গেছে, ইত্যাদি। মৃত্যুর পরে যে একটা দুর্বোধ্য লোক আর তার রহস্যের প্রতি মানুষের ঔৎসুক্যের অভাব নেই, প্রেতাত্মার কাহিনি সেই রহস্যলোককে আরও রহস্যময় করে তোলে, মানুষ তাই ভূতের গল্প বলতে ও শুনতে ভালোবাসে।
সাধারণ ভূতের গল্প আমিও অনেক বলতে পারি, যে সব গল্প সারা রাত ধরে শুনলেও ফুরোবে না। তবে রাজা-বাদশার ভূত নিয়ে একটি গল্প আমি শুনেছি, সেই গল্পটিই বলি।
ঘটনাটা আজকের নয়, আঠারো শতকের ব্যাপার। মারাঠাদের তখন প্রচণ্ড প্রতাপ, ভারতের দক্ষিণ ও পশ্চিমপ্রান্ত থেকে তারা বার বার পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে হানা দিচ্ছে। দিল্লির বাদশা অবধি টাকা দিয়ে তাদের খুশি রাখতে উৎসুক। রাজস্থানের রাজপুতশক্তি ঘরোয়া বিবাদে নিঃস্ব ও শক্তিহীন। মধ্যভারত তখন রীতিমতো একটা অরাজক অঞ্চল। কোন রাজা যে কবে কোন রাজ্য আক্রমণ করবেন, কোন রাজা হেরে যাবেন ও তার রাজধানী লুষ্ঠিত হবে তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। লড়াই ও লুঠের একটা ঝড়ো হাওয়া শান্তি ও স্বস্তি দেশছাড়া করে দিয়েছে।
জয়পুরের মহারাজার সঙ্গে যোধপুরের মহারানার চলছিল বিবাদ। জয়পুরের মহারাজা ঈশ্বরী সিং কোনোমতেই সবদিক রক্ষা করতে পারছিলেন না। অনেকগুলি যুদ্ধে বার বার তিনি হেরে গেলেন, অনেক টাকার অপচয় হল, খানিকটা রাজ্যও ছেড়ে দিতে হল—মহারাজার মাথা গরম হয়ে গেল। ঈশ্বরী সিং কোনোদিনই খুব বুদ্ধিমান বিচক্ষণ ছিলেন না। বুদ্ধিহীন বলে তার একটা অখ্যাতি ছিল। এখন সেই বুদ্ধিহীনতা রুক্ষ খামখেয়ালিতে রূপান্তরিত হল। কখন যে কি করে বসেন তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।
রাজসভায় চিরদিনই ক্ষমতার লড়াই চলে। যে যতখানি উচ্চপদে উঠতে পারবে তার ক্ষমতা তত বেশি হবে এবং সুযোগ-সুবিধা পেলে রাজাকে হটিয়ে দিয়ে সে-ই রাজসিংহাসনে বসতে পারে। রাজ বিচক্ষণ হলে সবাইকেই আয়ত্তে রাখতে পারেন, কিন্তু ঈশ্বরী সিংয়ের সে তীক্ষ্ণ ধীশক্তি ছিল না। তার রাজকার্য পরিচালনা করতেন প্রধান সামন্ত রাজা আয়ামল্ল ক্ষত্রী। আয়ামল্পের সমকক্ষ যোগ্য রাজনীতিজ্ঞ তখন জয়পুরে ছিল না। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে কেশবদাস ক্ষত্ৰী তার স্থান অধিকার করলেন। কিন্তু বয়স কম, যত বিচক্ষণতাই কেশবদাসের থাক না কেন, দরবারে তার যোগ্যতার সম্মান দেবার মতো স্থৈর্য মহারাজের ছিল না। সামন্ত হরগোবিন্দ মহারাজকে বুঝিয়ে দিলেন—কেশবদাস তার বাপের মতো নয়, যতটা বিশ্বস্ত বলে আপনি তাকে ভাবেন, সে সততা তার নেই। শত্রুপক্ষের সঙ্গে তার চিঠিপত্র চলছে, একটু সুযোগ পেলেই সে আপনাকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে দেবে।
তাতে তার লাভ?—মহারাজ জিজ্ঞাসা করলেন—সে কি রাজা হবে নাকি?
সে কি হবে তা আমি জানি না, তবে যথেষ্ট অর্থলাভ ঘটবে এ সম্পর্কে আমি নিঃসন্দেহ। ঈশ্বরী সিংয়ের সব চেয়ে বেশি ভয় ছিল তার ভাইয়ের কাছ থেকে। ছোটভাই উম্মেদ সিং পৈতৃক রাজ্য আধাআধি ভাগ করে নিতে চেয়েছিলেন। ঈশ্বরী তাতে রাজি হননি। উম্মেদ মারাঠা ও যোধপুরের মহারানার সাহায্যে অর্ধেক রাজ্য কেড়ে নিতে চাইছিলেন। হরগোবিন্দ বললেন–বোধ হয় উম্মেদকেই বসাবে আপনার সিংহাসনে।
ঈশ্বরী সিং ক্রুদ্ধকণ্ঠে বললেন—আমি না মরা অবধি তো আর তা সম্ভব নয়। আপনাকে মারতে আর কতক্ষণ লাগবে! কোনোরকমে আপনার খাদ্যে একটু বিষ মিশিয়ে দিতে পারলেই তো হল। কোনো যুদ্ধ অবধি করতে হবে না।
মহারাজার ভ্রু কুঁচকে উঠল, বললেন—আমাকে বিষ দিয়ে মারবে, তার আগে আমিই ওকে বিষ খাইয়ে মারি না,—সব চুকে যাক।
আপনি ভাবতে ভাবতে সে কাজ হাসিল করে ফেলবে।
বটে! আমি আজই ব্যবস্থা করছি। শয়তানকে সিংহাসনের পাশে জিইয়ে রাখার কোনো মানে হয় না।
মহারাজার আদেশে সেই রাত্রেই কেশবদাসের খাদ্যে বিষপ্রয়োগ করা হল। কেশবদাস মারা গেলেন। হরগোবিন্দের মনস্কাম পূর্ণ হল। তিনিই এবার রাজ্যের সর্বময় কর্তা হলেন। রাজসরকারে কেশবদাস যাদের চাকরি করে দিয়েছিলেন, মহারাজ তাদের মাহিনা দিলেন না। তারা এসে ধরল কেশবদাসের বিধবা-পত্নীকে, বলল-আমরা কেশবদাসের অধীনে চাকরি করতাম, আমাদের মাহিনা আপনাকে দিতে হবে। মহারাজ আমাদের মাহিনা দেবেন না।
কেশবদাসের বিধবা কোনো বাদ-প্রতিবাদ করলেন না, তাদের মাহিনা দেবার জন্য সর্বস্ব বিক্রি করলেন, একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলেন।
গোলন্দাজ বাহিনীর অধিনায়ক প্রবীণ সামস্ত শিবনাথ ভায়ার কাছে ব্যাপারটা বড় খারাপ ঠেকল, তিনি বললেন—মহারাজ, কাজটা ভালো করলেন না।
কী, আমার সামন্ত হয়ে তুমি আমারই কাজের সমালোচনা করবে! আমি রাজপুত, রাজপুতেরা অন্যায়কে কোনোদিন ন্যায় বলে মেনে নিতে পারবে না। ঠিক আছে, রাজদরবারে তোমার আর স্থান নেই। তুমি কারাগারে যাও! শিবনাথ ভায়ার কারাবাসের আদেশ হল। দরবারে আর কেউ কোনো কথা বলল না। কিন্তু সবাই মনে মনে ক্ষুব্ধ হল। এ কী! কিন্তু রাজারাজড়ার অত্যাচার তখন প্রজারা স্বাভাবিক বলেই মেনে নিত। সাধারণ মানুষ জানত রাজাকে মেনে নিলে তার অত্যাচারকেও মেনে নিতে হবে। তার উপর রাজা যদি অস্থিরমতি হন তা হলে তো কথাই নেই। ঈশ্বরী সিংয়ের এই অনাচার অনিবার্য বলেই সবাই ধরে নিলে। কিন্তু মারাঠা রাজা মলহর রাও হোলকার এগিয়ে এলেন সৈন্য নিয়ে। কেশবদাস তার সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন, সেই সন্ধির শর্ত অনুযায়ী কয়েক লক্ষ টাকা হোলকারের পাওনা। কেশবদাস থাকলে টাকাটা ধীরে ধীরে দেওয়া চলত, কিন্তু এখন টাকাটা একেবারে চাই।
হোলকার জয়পুর নগরের বাইরে এসে ছাউনি ফেললেন। ঈশ্বরী সিং তাকে খুশি করবার জন্য তাড়াতাড়ি দু’লাখ টাকা পাঠিয়ে দিলেন। হোলকার বললেন—দু’লাখ টাকায় কি হবে, সব টাকা চাই।
দূত বলল—মহারাজ পরে আরো পাঠাচ্ছেন।
মহারাজের কথায় আমরা বিশ্বাস করি না। যার কথায় বিশ্বাস করতে পারতাম মহারাজ তাকে বিষ খাইয়ে মেরেছে!
দূত ফিরে এল। হোলকার টাকা নিলেন না। মহারাজ মন্ত্রীদের ডেকে পাঠালেন—কি করা যায়। সন্ধ্যার পর প্রাসাদের এক প্রশস্ত কক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠক বসল। অনেক দিক থেকে অনেক প্রশ্নের আলোচনা হল। শেষে সিদ্ধান্ত হল, পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে দূত যাক হোলকারের কাছে। হোলকার যদি টাকাটা নিয়ে ফিরে যায় তো ভালো কথা, কিন্তু যদি টাকা না নেয়, তাহলে মুখোমুখি লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
সহসা কেশবদাসের কণ্ঠস্বর শোনা গেল—হোলকার টাকা নেবেন না, যে টাকা নিয়ে যাবে মারাঠিরা তাকে হত্যা করবে!
উপস্থিত সকলে চমকে উঠল। দেখা গেল মহারাজের পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন কেশবদাস। ছায়া নয়, এ একেবারে অতি স্পষ্ট। সেই সাদা পিরান, সূক্ষ্ম জরির কাজ করা সাদা উত্তরীয়, মাথায় সাদা পাগড়ি, কানে হীরক-কুণ্ডল। সেই চোখ, সেই মুখ! এ যে জীবন্ত কেশবদাস। সবাই বিস্মিত হল, ভয় পেল।
প্রবীণতম সামস্ত কেশবদাসের পিতৃবন্ধু বিদ্যাধর সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি কিন্তু আর সবাইকার মতো অতটা ভীত হননি, তিনিই প্রথম কথা বললেন—আমরা তাহলে লড়াই করার জন্যই প্রস্তুত হই।
লড়লে আপনারা হেরে যাবেন। মারাঠিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিততে পারে এমন শক্তি হিন্দুস্থানের কোনো রাজার নেই। আপনারা যুদ্ধ করলে হেরে যাবেন!
রাজপুতেরা হেরে যাবে মারাঠিদের কাছে?
আগেকার দিন আর নেই—কেশবদাস বললেন—এখন সওয়ারে-সওয়ারে তলোয়ারে-তলোয়ারে লড়াই নয়, এখন কামানের লড়াই। একটা ভালো গোলন্দাজ এখন এক হাজার লোককে শেষ করে দিতে পারে।
আমাদেরও তো কামান রয়েছে।
থাকলেও আপনারা হেরে যাবেন।
কেন?
আমি আপনাদের জিততে দেব না। পুরুষানুক্রমে রাজবংশের সেবা করেছি, তার পুরস্কার আমি কি পেয়েছি? আমাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে, আমার বাড়িঘর, জিনিসপত্র বিক্রি করে সৈন্যদের মাইনে দিতে হয়েছে, আমার স্ত্রীপুত্র আজ পথের ভিখারী! এই অন্যায়ের আমি শেষ করব। মহারাজ ঈশ্বরী সিংকে আমি সিংহাসন থেকে নামিয়ে আনব সাধারণ মানুষে, আমার স্ত্রীপুত্রের সঙ্গে সমপর্যায়ে। যুদ্ধে আপনাদের পরাজয় অনিবার্য।
তাহলে এখন আমরা কি করব? কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। যাকে প্রশ্ন করা হল, দেখা গেল তার ছায়া মিলিয়ে গেছে। ভয়ে বিস্ময়ে সবাই বিমূঢ় হয়ে রইল কিছুক্ষণ।
এরপর আর আলোচনা জমল না। মহারাজ কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে পড়লেন, তারপর সহসা আলোচনার মাঝে উঠে পড়ে বললেন—আপনারা আলোচনা করে স্থির করুন। আপনারা যা বলবেন, আমি তাই করব। কাল সকালে আপনারা আপনাদের সিদ্ধান্ত আমায় জানাবেন।
মহারাজ উঠে চলে এলেন প্রাসাদসংলগ্ন উদ্যানে। বাগানের চারিপাশে ছড়ানো শ্বেতপাথরের আসন। মহারাজ একেবারে একপ্রান্তে একটি আসনে গিয়ে বসলেন। সামনে একটা পুষ্পকুঞ্জ। কয়েকটা গোলাপ গাছ। আকাশে পূর্ণচন্দ্র। পৌষমাসের শীতের দমকা হাওয়া চারিপাশ শান্ত স্নিগ্ধ করে তুলেছে। কিন্তু মহারাজার মনে স্নিগ্ধতার কোনো আমেজ নেই। শূন্যদৃষ্টিতে তিনি সামনের পানে তাকিয়ে আছেন, সেখানে নক্ষত্ৰখচিত আকাশ ছাড়া আর কিছু নেই। সেই আকাশের পানে তাকিয়েই মহারাজ বসে আছেন, সামনের সুন্দর রক্তগোলাপগুলির পানেও তার এতটুকু দৃষ্টি নেই। কেশবদাসের প্রেতাত্মার আবির্ভাবে তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েছেন। প্রেতাত্মা যে এমনভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে, এমনভাবে কথা বলতে পারে, এ তো বিশ্বাস করতে মন চায় না। কিন্তু কেশবদাস তো সত্যই আজ এসেছিল, সবাই শুনেছে সবাই দেখেছে।
সহসা মহারাজ চমকে উঠলেন। বাগানের লাল পথ দিয়ে এগিয়ে আসছে, ও কে? কে ও?
কেশবদাস?
ছায়া সামনে এসে দাঁড়াল, মহারাজও আসন ছেড়ে উঠে পড়লেন। তলোয়ারের হাতলটা চেপে ধরলেন।
কেশবদাস কিছু বলল না, চুপ করে তাকিয়ে রইল। মহারাজ খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে সহসা কেঁপে উঠলেন, চিৎকার করে উঠলেন—কি চাও?
মৃত্যু!
মৃত্যু?
আপনাকে মরতে হবে।
ছায়া এগিয়ে এল, মহারাজ তাড়াতাড়ি দু’পা পিছিয়ে গেলেন।
ছায়া আরো এগিয়ে এল, মহারাজ আরো দু’পা পিছিয়ে গেলেন।
ছায়া আরো এগিয়ে এল, মহারাজ চকিতে তলোয়ারখানি টেনে নিয়ে বাড়িয়ে ধরলেন। মুহুর্তমধ্যে ছায়াটি মিলিয়ে গেল। মহারাজ আর সেখানে দাঁড়ালেন না, দ্রুতপদে ফিরে এলেন প্রাসাদে ।
বিদ্যাধর তার জন্য বারান্দায় অপেক্ষা করছিলেন, বললেন—এইমাত্র সংবাদ পেলাম হোলকার সসৈন্যে এগিয়ে আসছেন। কাল প্রত্যুষেই তারা নগর-তোরণে এসে পৌছাবেন। যুদ্ধ ছাড়া আমাদের আর কোনো গতি নেই। আমি সৈন্যদের প্রস্তুত থাকতে আদেশ দিয়েছি।
বেশ করেছেন—বলে আর কোনো কথা না শুনে মহারাজ অন্তঃপুরের দিকে চলে গেলেন। সামন্ত বিদ্যাধর স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। এতবড় গুরুতর বিষয়ে এমন সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি ব্যথিত হলেন।
নিজের ঘরে গিয়ে মহারাজ শয্যায় শুয়ে পড়লেন। পরিচারককে ডেকে বললেন-রাত্রে আর কিছু খাব না, শরীর খারাপ।
মহারাজ চুপ করে শুয়ে রইলেন শয্যার উপর।
সহসা দেয়ালের গায়ে আবার সেই ছায়ামূর্তি। মহারাজ শয্যার উপর উঠে বসলেন। ছায়ামূর্তি বলল—যুদ্ধে তোমার পরাজয় অনিবার্য। হোলকার একবার তোমাকে ধরতে পারলে তোমার মাথা কেটে নেবেন। কেশবদাসের হত্যা তিনি ক্ষমা করবেন না। তার চেয়ে সসম্মানে বিষপানে আত্মহত্যা করা ভালো।
আমি বিষ খাব? না না, আমি বিষ খেতে পারব না।
ছায়ামূর্তি হাসল। সাদা দাঁতের পাটি চিক চিক করে উঠল।
ছায়ামূর্তি মিলিয়ে গেল। মহারাজ অস্থিরভাবে ঘরের মধ্যে পদচারণা করতে শুরু করলেন।
সহসা কোন একসময় মহারাজ পরিচারককে ডাকলেন, বললেন--একটা কাজ করতে হবে গোপনে, কেউ না জানে।
আদেশ করুন।
একটা কেউটে সাপ নিয়ে আসতে হবে।
এখনই?
এখনই আজ রাত্রেই এই নাও আমার পাঞ্জা ।
রাজা তাকে পাঞ্জা দিয়ে দিলেন। পরিচারক চলে গেল।
পরদিন প্রত্যুষেই হোলকার বাহিনী জয়পুর অবরোধ করল। নগরমধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দিল। সামস্তেরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে সমবেত হলেন রাজসভায়। কিন্তু মহারাজ কোথায়? অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও এই আসে এই আসে করে বেলা প্রথম প্রহর অতীত হল, তবু মহারাজের দেখা নেই। শেষে বিদ্যাধর সামস্ত মহারাজকে ডাকতে লোক পাঠালেন। লোক এসে খবর দিল—মহারাজ এখনও ঘুম থেকে ওঠেননি।
এখনও ঘুমুচ্ছেন? সে কি? তাকে ডাকতে বল, এখনই লড়াই বেধে যাবে আর তিনি এখনও ঘুমুচ্ছেন!
এবার দৌবারিক এসে খবর দিল,—মহারাজ আত্মহত্যা করেছেন। কাল রাত্রে কেউটে সাপের কামড়ে তিনি প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।
সামন্তেরা সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন।
যুদ্ধ আর হল না। দুজন প্রবীণ সামস্ত হরগোবিন্দ ও বিদ্যাধর তখনই ছুটলেন মলহর রাও হোলকারের শিবিরে। হোলকার সংবাদ শুনে বললেন—কেশবদাসের মৃত্যুর প্রতিশোধ হল।
বিনা বাধায় মারাঠারা জয়পুর অধিকার করল।*
* Fall of Mughal Empire—Jadunath Sarkar. (12th Dec., 1950)

30/07/2023

ভূতের ভয় হয়💯
আম কুড়োতে সাবধান - সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
ফুটবলম্যাচ দেখতে যাব বলে সেজেগুজে তৈরি হচ্ছিলুম। হঠাৎ কোত্থেকে এসে বাধা দিল প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। মুহুর্মুহু বিদ্যুতের ঝিলিক আর মেঘের গর্জন অবস্থাটা আরও সাংঘাতিক করে ফেলল। মনমরা হয়ে বসে রইলুম।সন্ধ্যার দিকে ঝড়বৃষ্টির দাপট যখন কমে গেল, তখন দেখলুম ছোটমামা কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরছেন। একটু পরে পোশাক বদলে একটা লণ্ঠন জেলে ছোটমামা ঘরে ঢুকলেন। আমাকে দেখে বললেন, এ কী রে পুটু? তুই অন্ধকারে ভূতের মতো বসে আছিস যে?’
বললুম, ‘ধুশ! ফুটবলম্যাচ পণ্ড হয়ে গেল।’
ছোটমামা টেবিলে লণ্ঠন রেখে বললেন, তাতে কী হয়েছে? যে আমার ঝাপুইতলা বনাম কাকুড়হাটির খেলা! ও খেলা কি দেখার যোগ্য?
বলে উনি ফিক করে হাসলেন। চাপা স্বরে ফের বললেন, ‘চল। বেরিয়ে পড়ি।’
একটু অবাক হয়ে বললুম, কোথায়?
ছোটমামা আরও চাপা স্বরে বললেন, ফেরার সময় শর্টকাটে সিঙ্গিমশাইয়ের বাগানের পাশ দিয়ে এলুম। বললে বিশ্বাস করবিনে পুটু, ঝড়বৃষ্টির চোটে বাগানের সব আম পড়ে গেছে। এই জষ্টিমাসের আম। বুঝলি তো? সবই গাছপাকা।’
‘অন্ধকারে কী করে দেখতে পেলেন ছোটমামা?’
‘তুই একটা বোকার বোকা! ছোটমামা একটু চটে গেলেন। বিদ্যুতের ছটায় দেখলুম না? সারা বাগানের তলায় পাকা আম ছড়িয়ে আছে। চল। কুড়িয়ে আনি।’
“কিন্তু ছোটমামা, বাগানে ভোলা আছে যে! ভোলা সাংঘাতিক লোক। ভোঁদা বলছিল, সিঙ্গিমশাই ভোলাকে নাকি তার বন্দুকটা দিয়েছেন। দেখতে পেলেই—
আমার কথায় বাধা দিয়ে ছোটমামা বললেন, ভোঁদা তোর চেয়েও বোকা। সিঙ্গিমশাই বন্দুক দেবেন ভোলাকে? ভোলা বন্দুক ছুড়তে জানে? তা ছাড়া বন্দুকটা বাড়িতে না থাকলে সিঙ্গিমশাইয়ের বাড়িতে ডাকাত পড়বেই পড়বে তুই জানিস? ওঠ। দেরি করা ঠিক নয়।’
দোনামনা করে বললুম, বন্দুক না পেলেও ভোলা খুব সাংঘাতিক লোক ছোটমামা! ওর গোঁফ আর চোখ দুটো দেখলেই ভয় করে।’
ছোটমামা আমার কথায় কান দিলেন না। কোথেকে একটা চটের থলে আর টর্চ নিয়ে এলেন। বললেন, ভোলা এতক্ষণ খেতে গেছে। চলে আয়। আর শোন। জুতো খুলে ফ্যাল খালি পায়ে যাব। সিঙ্গিমশাইয়ের আমবাগানটা গ্রামের শেষে মাঠের ধারে। বাগানের মধ্যিখানে একটা মাচার ওপর ছোট্ট ছাউনি আছে। ভোলা সেখানে বসে বাগান পাহারা দেয়। সে দারুণ ধূর্ত লোক। বাগানের আনাচে-কানাচেয় কেউ পা বাড়ালে কী করে সে টের পেয়ে যায় কে জানে! টের পেলেই এমন হাঁক ছাড়ে যে পিলে চমকে যায়। গতমাসে কচি আম কুডুনোর জন্য ভোঁদার সঙ্গে গিয়ে কী বিপদে না পড়েছিলুম! আমি তো দিশেহারা হয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলুম। ওদিকে ভোঁদা ওর হাতে ধরা পড়ে সে এক কেলেঙ্কারি! ভোঁদাকে শাস্তিটা অবশ্যি দিয়েছিলেন ভোঁদার বাবা হাবলবাবু! পাড়াসুদ্ধ লোকের সামনে কান ধরে ওঠবস করানোর শাস্তি—ছ্যা ছ্যা! ভোঁদা কিছুদিন বাড়ি থেকে লজ্জায় বেরুতে পারেনি। স্কুলে যাওয়া তো দূরের কথা।
সেই কথা ভেবে আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। কিন্তু ছোটমামার অবাধ্য হওয়ার সাহসও আমার নেই। তা ছাড়া ছোটমামা না থাকলে কে আমাকে শহরে কিংবা গঞ্জের মেলায় নিয়ে যাবে? পৃথিবীতে সবসময় কোথাও-না-কোথাও কত সুন্দর সব ঘটনা ঘটছে। ছোটমামা না নিয়ে গেলে আমি একা সে-সব দেখতেই যে পাব না।
সন্ধ্যার অন্ধকার আজ বেজায় গাঢ়। আকাশের কোনায় দূরে মাঝেমাঝে বিদ্যুতের ঝিলিক। চারদিকে ব্যাঙ, পোকামাকড় তুলকালাম গান জুড়ে দিয়েছে। সিঙ্গিমশাইয়ের আমবাগানের দিকে যত এগোচ্ছি, তত অস্বস্তিটা বেড়ে যাচ্ছে। ছোটমামা পায়ের কাছে সাবধানে টর্চের আলো ফেলে হাঁটছেন। তাঁর পেছনে থলে হাতে আমি হাঁটছি। কতক্ষণ পরে ছোটমামা থমকে দাঁড়িয়ে চাপা স্বরে বললেন, ভোলার কুঁড়েঘরটাতে লণ্ঠন জ্বলছে বটে, তবে বাজি রেখে বলতে পারি, ব্যাটাচ্ছেলে নেই।
‘কী করে বুঝলেন ছোটমামা?
দিঘির পাড়ে টর্চের আলো দেখলুম না? ভোলা ওখান দিয়েই তো খেতে যায়।’
‘ভোলার টর্চ আছে বুঝি?’
থাকবে না? তুই বড় বোকা পুঁটু! রাতবিরেতে টর্চ ছাড়া কেউ বাগান পাহারা দিতে পারে? তবে আর কথা নয়। আয়, তোকে বাগানের শেষ দিকটাতে একখানে বসিয়ে রাখব আর আমি আম কুড়িয়ে আনব। চুপচাপ বসে থাকবি কিন্তু!
‘ছোটমামা—’ কথাটা বলতে গিয়ে পারলুম না। ভোঁদা বলেছিল, ওই বাগানের কোন গাছে কবে কে নাকি গলায় দড়ি দিয়ে মরেছিল। তার ভূতটা এখনও আছে। তবে সে ভোলার ভয়ে বেরুতে পারে না। ভোলা বাগানে না থাকলে তবেই সে বেরিয়ে এসে লোকেদের ভয় দেখায়।
তো ছোটমামা ধমক দিলেন চাপা গলায়। চুপ! খালি ছোটমামা আর ছোটমামা! বলে এবার আমাকে প্রায় টানতে টানতে নিয়ে চললেন। জলকাদা জমে আছে ঘাসের ফাঁকে। পা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে। প্রতিবারই ধমক খাচ্ছি। টর্চের আলোর দিকে চোখ রেখে হাঁটতে কী হচ্ছে? ঠিক কথা। আসলে আমি সেই ভূতটার কথা ভেবে এদিকে-ওদিকে তাকাচ্ছিলুম। ভোলা যে এখন বাগানে নেই। কিছুক্ষণ পরে ছোটমামা আমাকে একখানে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘তুই এইখানে বসে থাক। আমি গাছপাকা আম ছাড়া কুড়োব না। ওই দাখ, কত পাকা আম!
টর্চের আলোয় হলুদ কয়েকটা আম দেখতে পেয়েই আমি ভূতের ভয়টা ভুলে গেলুম। এইসব আম নাকি সেরা জাতের আম। একটুও আঁশ নেই। একেবারে ক্ষীরের সন্দেশের মতো নাকি স্বাদ। থলে নিয়ে ভিজে ঘাসে বসে থাকা যায় না। তাই উঠে দাঁড়ালুম। ছোটমামা এদিক-ওদিকে টর্চের আলো ফেলে পাকা আম কুড়িয়ে আনছেন। মিঠে গন্ধে আমার মুখে জল আসছে। কিন্তু এখন কি আম খাওয়ার সময়?
থলে প্রায় অর্ধেক ভরে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। ছোটমামা বললেন, ‘এবার আমি যাচ্ছি বাতাসাভোগ গাছটার কাছে। খাসা আম! বুঝলি পুঁটু? তুই চুপচাপ বসে থাক। তবে কান খাড়া রাখবি কিন্তু! ভোলা বাগানে আসার সময় গান গাইতে গাইতে আসে। শুনতে পেলেই তুই ডাকবি।’
ছোটমামা টর্চের আলো ফেলতে ফেলতে আমগাছের অজস্র গুড়ির আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কোনো গাছের মাথায় পাখি ডানার জল ঝাড়ল। সেই শব্দেই আমার বুক ঝড়াস করে উঠেছিল। কিন্তু সুস্বাদু আমের মিঠে গন্ধ আমার ভয়-টয় ক্রমশ তাড়িয়ে দিচ্ছিল।
কতক্ষণ পরে ধুপধুপ শব্দে ছোটমামা এসে গেলেন। নাহ। গাছটা খুঁজে পেলুম না। ওদিকে দিঘির পাড়ে টর্চের আলো দেখলুম। ভোলা আসছে।’
‘ছোটমামা! বড় অন্ধকার যে!’
‘হু, টর্চ জ্বালি আর ভোলা দেখতে পাক! খালি বোকার মতো কথাবার্তা। থলেটা আমায় দে। আর আমার এই হাতটা ধরে থাক। ছাড়বিনে বলে দিচ্ছি।’
ছোটমামা আমভরতি থলেটা নিলেন। কিন্তু ওঁর একটা হাত ধরেই ছেড়ে দিলুম। উঃ! কী সাংঘাতিক ঠান্ডাহিম হাত!
ছোটমামা বললেন, "কী হল? হাত ছাড়লি কেন?’
আপনার হাত যে বিচ্ছিরি ঠান্ডা!
ধুর বোকা! জলকাদা ঘেঁটে আম কুড়িয়েছি। হাত ঠান্ডা হবে না? চলে আয় শীগগির!
এই সময় সত্যিই ভোলার হেঁড়েগলার গান শুনতে পেলুম। ছোটমামার বরফের মতো ঠান্ডা হাতটা অগত্যা চেপে ধরে থাকতেই হল। ছোটমামা এবার প্রায় হন্তদন্ত হয়ে দৌডুচ্ছেন। আমিও দৌড়ুচ্ছি।
কতক্ষণ দৌড়েছি জানি না। আমি এবার হাঁপিয়ে পড়েছিলুম। কাদো-কাদো গলায় বললুম, ছোটমামা আমার পা ব্যথা করছে যে!”
ছোটমামার মনে দয়া হল। বললেন, ‘হুঁ। অনেকটা ঘুরপথে আসতে হল। কিন্তু কী আর করা যাবে এবার আস্তে-সুস্থে যাওয়া যাক।
অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। এখানে-ওখানে বাকের্কাকে জোনাকি জ্বলছে। কাছে কোথায় অচমকা শেয়াল ডাকতে থাকল। একটু ভয় পেয়ে বললাম, আমরা কোথায় এসে পড়েছি ছোটমামা?
নদীর ধরে বুঝলি না? ভোলার চোখ রাতবিরেতেও দেখতে পায়। তাই পুরো গ্রামটার পাশ দিয়ে ঘুরতে হল। বলে ছোটমামা অদ্ভূত শব্দে হাসলেন। তা পুঁটু! এবার একটা আম টেস্ট করে দেখি কী বলিস? সিঙ্গিমশাইয়ের বাগানের আমের এত নামডাক। দেখি, সত্যি কিনা।’
ছোটমামা সেখানেই বসে পড়লেন। তারপর তেমনি অদ্ভূত শব্দে আম খেতে শুরু করলেন।চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি, এবার আমাকেও একটা আম খেতে দেবেন ছোটমামা। কিন্তু উনি যেন আমার কথা ভুলেই গেছেন। ক্রমাগত আম খাচ্ছেন আর আঁটিগুলো ছুড়ে ফেলছেন। শব্দ শুনে বুঝতে পারছি, ওগুলো জলেই পড়ছে।
কিছুক্ষণ পরে না বলে পারলুম না, কেমন আম ছোটমামা?
জিভে একটা শব্দ করে ছোটমামা বললেন, ফাস্টো কেলাস! তুই খেলে টের পেতিস পুঁটু! কিন্তু কী আর করা যাবে? সবগুলোই যে আমি ঝোঁকের বশে খেয়ে ফেললুম!
প্রায় ভ্যাঁ করে কেঁদে ওঠার মতো বললুম, স—ব?’
হ্যাঁ- তোর কথা মনেই ছিল না। বরং তার বদলে তোকে একটু আদর করি। বলে ছোটমামা আমার মাথায় তারপর মুখে হাত বুলোতে থাকলেন। কী অসহ্য ঠান্ডা হাত! আমি চেঁচিয়ে উঠলুম, আর না ছোটমামা! বড্ড ঠান্ডা লাগছে যে!”
আমের গন্ধ কেমন মিঠে টের পাচ্ছিস বল পুঁটু! এই নে। আমার হাত শোঁক।
ছোটমামার আঙুল আমার নাকে ঢুকতেই আঙুলটা চেপে ধরলুম। তারপরই টের পেলুম আঙুলটা বেজায় শক্তও বটে। আঙুল না হাড়? রাগে-দুঃখে কেঁদে ফেললুম। ছোটমামা আদুরে গলায় বললেন, কেঁদো না ছোনা? কাল তোমায় আম খাওয়াব। এবার আমি নদীর জলে হাত ধুয়ে আসি।
ছোটমামা যে এমন অদ্ভুত কাণ্ড করবেন, কল্পনাও করিনি। উনি উঠে গেলেন হাত ধুতে, তো :গেলেনই আর ফেরার নাম নেই। জলের ওপর এতক্ষণে তারা ঝিলমিল করছে দেখতে পেলুম। আবার একদল শেয়াল ডেকে উঠল। তখন ভয় পেয়ে ডাকলুম, ছোটমামা! ছোটমামা!
কিন্তু কোনো সাড়া এল না। আমি এবার মরিয়া হয়ে আরও জোরে ওঁকে ডাকতে থাকলুম। কিছুক্ষণ পরে একটু দূরে টর্চের আলো ঝিলিক দিল। তারপর ছোটমামার গলা ভেসে এল, পুঁটু! পুঁটু?
সাড়া দিলুম। ছোটমামা দৌডুতে দৌডুতে কাছে এলেন। তারপর টর্চের আলোয় খালি থলে দেখে প্রচণ্ড খাপ্পা হয়ে বললেন, বিশ্বাসঘাতক! এইটুকু ছেলের হাড়ে হাড়ে এত বুদ্ধি! নদীর ধারে শ্মশানের কাছে আম নিয়ে পালিয়ে এসেছে। তারপর—হায়! হায়! সবগুলো আম একা সাবাড় করেছে!’
অবাক হয়ে বললুম, ছোটমামা! আপনিই তো—’
উনি থাপ্পড় তুলে বললেন, ‘আমিই তো মানে? মিথুক কোথাকার ‘
‘না ছোটমামা! আপনিই তো আমাকে এখানে এনে আমগুলো একা খেয়ে তারপর নদীর জলে হাত ধুতে গেলেন!
শাট আপ! দেখি তোর মুখ শুকে! আমার মুখে আমের গন্ধ পেয়ে ছোটমামা আরও তর্জন-গর্জন জুড়ে দিলেন। ওঁকে কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছিলুম না। একটু পরে উনি হতাশ হয়ে ভিজে ঘাসে বসে পড়লেন। বাতাসাভোগ আমগাছটা খুঁজে না পেয়ে ফিরে এসে দেখি, তুই নেই। ভাবলুম, ভোলা আসছে টের পেয়ে তুই বাড়ি চলে গেছিস। বাড়িতে তোকে পেলুম না। তারপর তোকে ডেকে ডেকে—ওঃ! পুঁটু রে! তুই এমন করবি ভাবতেও পারিনি!’
‘বিশ্বাস করুন ছোটমামা! আমি আম খাইনি। আপনিই খেয়েছেন।’
‘আবার মিথ্যে কথা? তোর মুখে আমের গন্ধ।’
‘আপনিই তো আদর করছিলেন এঁটো হাতে। কী সাংঘাতিক ঠান্ডা আপনার হাত!’
‘আমার হাত ঠান্ডা? বাজে কথা বলবিনে!’ বলে ছোটমামা ওঁর একটা হাত আমার গলায় ঠেকালেন। বল এবার! আমার হাত ঠান্ডা না গরম?
কী আশ্চর্য! ছোটমামার হাত তো মোটেও তেমন ঠান্ডা নয়। আমনি বুকটা ধড়াস করে উঠল! তাহলে কে ছোটমামা সেজে আমাকে নদীর ধারে শ্মশানে এনেছিল? তার আঙুলটা নিরেট হাড় কেন?
আর ভাবতে পারলুম না। কাঁদো-কাঁদো গলায় বললুম, ছোটমামা! তাহলে সিঙ্গিমশাইয়ের বাগানের সেই গলায়দড়ে ভূতটা আপনি সেজে আমাকে এখানে টেনে এনেছিল।
‘শাট আপ!’ বলে ছোটমামা উঠে দাঁড়ালেন। খালি বাজে গল্প। মিত্থুক! লোভী! বিশ্বাসঘাতক। তোর শাস্তি পাওয়া উচিত। থাক তুই এই শ্মশানে পড়ে। আমি চললুম।
ছোটমামা দৌডুতে থাকলেন। আমি মরিয়া হয়ে ওঁকে অনুসরণ করলুম। ভাগ্যিস, ওঁকে টর্চ জ্বেলে দৌডুতে হচ্ছিল। তাই ওঁর নাগাল পেতে অসুবিধে হচ্ছিল না।.
যাই হোক, বাড়ি ফিরে দু’জনেই ঘটনাটা চেপে গিয়েছিলুম। ছোটমামা বলে দিলে মা ওঁকে খুব বকাবকি করতেন। আমি বললে শুধু মা নন, বাবাও আমাকে মিত্থুকের চূড়ামণি আর পেটুক সাব্যস্ত করে একটা জব্বর শাস্তি দিতেন।
ছোটমামার রাগ পড়তে তিন দিন লেগেছিল। তবে আমার কথা উনি কিছুতেই বিশ্বাস করেননি। আমার মনে এই দুঃখটা আজও থেকে গেছে। তবে ঠকে শিখেছি, আম কুড়োতে গেলে সাবধান থাকাই উচিত। আর হ্যাঁ, ভোঁদাকে ঘটনাটা চুপিচুপি বলতেই সে আমায় চিমটি কেটে বলেছিল, ‘তুই সত্যি বড় বোকা পুঁটু। গলায়দড়ে ব্যাটাচ্ছেলে যখন আম সাবাড় করছিল, তুই রাম চাইলেই পারতিস রাম নামে সব ভূত জব্দ। আমের বদলে রাম। মনে রাখিস।

30/07/2023

স্বামীরা প্রেমিক হতে অবশ্যই রাজি, তবে সেটা নিজের স্ত্রীর সাথে নয়। নিজের স্ত্রীর প্রেমিক হবার বিষয়টা কেন যেন তারা ভাবতেই চায় না।

30/07/2023

আমি সবসময় নিজেক সুখী ভাবি, কারণ আমি কখনো কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না, কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করাটা সবসময়ই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়

30/07/2023

একবার কোনো কাজ শুরু করার পর আর অসফল হওয়ার ভয় রাখবে না, এবং কাজ ছাড়বে না। যারা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে তারাই সবচেয়ে সুখী।

30/07/2023

কোনো কাজ শুরু করার আগে সর্বদা নিজেকে এই তিনটি প্রশ্ন করবে :-

আমি এটা কেন করতে চলেছি ?

এর পরিনাম কী হতে পারে ?

আমার সফলতার সম্ভাবনা কতটা ?

যদি ঐ প্রশ্নগুলির সন্তোষজনক উত্তর পেয়ে যাও, তবেই কাজ শুরু কর।

25/07/2023

বাংলাদেশে মোবাইল চোরের উৎপাত বেশি হয়ে গেছে সব চোরের উদ্দেশ্য বলা ভালো হয়ে যাও।

Address

Chittagong

Telephone

+8801757824109

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when MD pavel Mia posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to MD pavel Mia:

Videos

Share