Untold Love Feelings অব্যক্ত ভালবাসার অনুভুতি

Untold Love Feelings অব্যক্ত ভালবাসার অনুভুতি গল্প প্রিয় বন্ধুদের স্বাগতম...

24/03/2025
23/03/2025

#অনূভূতি

08/01/2025

Titanic Movie Lovely Moment Clip..

________অশরীরী প্রেম-২___________________পর্ব-২_____________________অপরিচিতা__________হলি চাইল্ড স্কুল, কক্সবাজার। স্কুল...
19/09/2023

________অশরীরী প্রেম-২________
___________পর্ব-২_____________
________অপরিচিতা__________
হলি চাইল্ড স্কুল, কক্সবাজার। স্কুলের সব শিক্ষক/শিক্ষিকা আজ একজন নতুন শিক্ষিকা বরণ করে নিলেন। নাম অর্থি।
অর্থি প্রথম দিনে ক্লাস নিতে গেল থ্রিতে। ছোট ছোট বাচ্চারা নতুন শিক্ষিকা দেখে চুপচাপ বসে আছে। শেষের একটা বেঞ্চে একদম শান্ত হয়ে বসেছিল একটা ছোট বাচ্চা। অর্থির চোখ গেল তার উপর। তাকে দেখে বড় মায়া লাগল অর্থির। কিসের একটা টান যেন অনুভব করল সে। অর্থি গেল বাচ্চাটার কাছে। বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করল: বাবু, তোমার নাম কি?
--আমার নাম মিরাজ।" বাচ্চা ছেলেটা জবাব দিল।
--তোমার কি মন খারাপ? কি ভাবছ?
--ম্যাডাম, আজ আমার বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকী। তাই আমি বাসায় যেতে চাই।
--নাম কি তোমার আব্বু আম্মুর?
--আব্বুর নাম শিহাব, আর আম্মুর নাম মারিয়া।"
অর্থি কোন কথা বলতে পারলনা। অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকল বাচ্চাটার দিকে। বাচ্চাটার কপালে একটা চুমো খেয়ে বলল: যাও বাবু, তোমার ছুটি।"
মিরাজ খুশি হয়ে বলল: সত্যি বলছেন ম্যাডাম?
--হ্যা বাবু, সত্যি বলছি।"
মিরাজ খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি বই/ব্যাগ গুছিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল। অর্থি তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল অনেক্ষণ। তারপর ক্লাসে মন দিল।


স্কুল শেষে অর্থি বের হল স্কুল থেকে। হঠাৎ অর্থি দেখল মিরাজ রাস্তা পার হচ্ছে, খুব স্পিডে একটা গাড়ি আসতেছে, সে খেয়াল করেনি। অর্থি ডাক দিল: মিরাজ.......
মিরাজ অর্থির ডাক শুনেনি। এই মুহূর্তে কাছে গিয়ে অলৌকিক কিছু করা সম্ভব না, সবাই বুঝে ফেলতে পারে সে যে মানুষ না! যা করার দূর থেকেই করতে হবে। গাড়িটা মিরাজকে ধাক্কা দেয়ার আগ মুহূর্তে, অর্থি চোখের ইশারায় গাড়িটাকে উপরে তুলে ফেলল। মিরাজ রাস্তা পার হয়ে গেলে, অর্থি চোখের ইশারায় আবার গাড়িটাকে শূন্য থেকে নিচে নামিয়ে আনল।
এই ঘটনায় হঠাৎ অনেক লোক জমা হল ঘটনাস্থলে। সবাই ঘটনা কি জানতে চাই। গাড়ির ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করা হলে সে জানাল যে, সেও কিচ্ছু জানেনা। মাঝপথে গাড়ি ব্রেকফেল করায় তার গাড়ি স্পিডে আসছিল, যখন ছেলেটাকে রাস্তা পার হতে দেখল, ড্রাইভার ভয় পেয়ে যায়। আজ নিজেও বাঁচবেনা, এই ছেলেটাও বাঁচবেনা হয়তো। আচমকা এই ঘটনায় ড্রাইভার নিজেও অবাক। সে নিজেও আসল ঘটনা জানতে চাই। কিন্তু এ প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারলনা।
অর্থি এসে বুকে জড়িয়ে নিল মিরাজকে। তারপর জিজ্ঞেস করল: রাস্তা পার হচ্ছ গাড়ি দেখনি?
--স্যরি ম্যাডাম, আমি খেয়াল করিনি।"
--এবার থেকে দেখেশুনে রাস্তা পার হবে। কিন্তু তুমি এতক্ষণ বাসায় যাওনি কেন? তোমাকে তো অনেক আগে ছুটি দিয়েছিলাম।
--আমি আমার আব্বুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। প্রতিদিন আমার আব্বু আমাকে নিতে আসে। আজ আর আসবেনা ভেবে চলে যাচ্ছিলাম।
--চল, আমি পৌঁছে দিচ্ছি তোমাকে।"
অর্থির কথা শেষ না হতেই একজন লোক এসে মিরাজকে কোলে তুলে নিল। অর্থির চোখ আটকে গেল লোকটার উপর। অনেক বছর পর দেখা। তার প্রাণের প্রিয় শিহাব। শিহাব হয়তো তাকে চিনেনি, চিনবে কি করে? এই দেহটাতো তার না। বুক ফেটে যাচ্ছিল অর্থির। খুব ইচ্ছে হল তার, একবার শিহাবকে জড়িয়ে ধরে বলতে: শিহাব, আমি তোমার ইভা, এই দেখ আবার ফিরে এসেছি।"
কিছুই বলতে পারলনা সে, শুধু নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকল শিহাবের দিকে। মিরাজ তার আব্বুকে বলল: আব্বু, ইনি আমার নতুন ম্যাডাম।
শিহাব অর্থির দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়ে বলল: আমি শিহাব, মিরাজের আব্বু। আপনার নাম?
শিহাবের কথা যেন অর্থির কানে পৌঁছেনি। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিহাবের মুখের দিকে একইভাবে।
শিহাব আবারও ডাক দিল: ম্যাডাম......
অর্থি হঠাৎ নিজেকে সামলিয়ে বলল: ও হ্যা, আমি অর্থি। মিরাজদের স্কুলে নতুন জয়েন করেছি।
--পরিচয় হয়ে ভালো লাগল। চলুননা আমাদের বাসায়, আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী।
অর্থি কিছু না ভেবেই বলল: হ্যা, চলুন।


শিহাব তার স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল অর্থির। কতবছর পর তার বোনের সাথে দেখা, তবুও বোন বলে ডাকতে পারেনি তাকে অর্থি। মারিয়া বলল: আপনি এখানে বসুন, আমরা একটু ঐদিকে অতিথিদের রিসিভ করি।" বলে আর অপেক্ষা করলনা, মারিয়া শিহাবের বাহু ধরে সামনে এগিয়ে গেল। অর্থি তাকিয়ে থাকল তাদের চলে যাওয়ার দিকে। যে জায়গায় তার থাকার কথা, সে জায়গায় আজ মারিয়া। বেঁচে থাকতে যদি শিহাবের সাথে তার বিয়ে হত, তাহলে আজ শিহাব আর তার বিবাহ-বার্ষিকী পালন করা হত। কিচ্ছু হলনা। জীবনটাই বৃথা ছিল তার।
অর্থি একা বসে রইল। বিবাহ বার্ষিকীতে আসা অতিথিদের দেখতে লাগল সে। কতদিন মানুষের কোলাহল থেকে দূরে ছিল সে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। এত লোকজনের ভীড়ে অর্থির চোখ খুঁজতে লাগল শিহাবকে। হঠাৎ তার অতৃপ্ত চোখ খুঁজে পেল শিহাবকে। দেখল, শিহাব আর মারিয়া অতিথিদের রিসিভ করতেছে। কিন্তু একটা পকেটমার পেছন থেকে প্রায় হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে শিহাবের পকেটে। অর্থি চোখে কি যেন ইশারা করল। পকেটমার আর হাত বের করতে পারলনা শিহাবের পকেট থেকে। শিহাবের পকেটের সাথে তার হাত আটকে রইল। অনেক চেষ্টা করেও বের করতে পারলনা। হঠাৎ তার চোখ গেল অর্থির দিকে। অর্থি চোখ বড় বড় করে তাকাল তার দিকে। পকেটমার ভয় পেয়ে গেল। ছলছল চোখে সে তাকাল অর্থির দিকে, যেন বলতে চাইছে তাকে রক্ষা করতে। অর্থি ইশারা করে বলল, শিহাবের পকেট থেকে যা নিয়েছে, তা রেখে দিতে। পকেটমার তাই করল। অবশেষে সে তার হাত বের করতে পারল। অর্থি ইশারায় তাকে কাছে ডাকল। পকেটমারটি তার পাশে এসে মুখ নিচু করে দাঁড়াল। অর্থি নিচুস্বরে বলল: দরিদ্রতার কারনে তুমি এসব করছ জানি, তাই তোমাকে বাঁচিয়ে দিলাম। ভবিষ্যতে আর এসব করবেনা। নিজে কাজ করে খাবে।"
পকেটমারটি লজ্জিত হয়ে বলল: ভুল হয়ে গেছে, আর হবেনা এরকম।"
--হুমমম.... যাও এবার।"
লোকটা চলে গেলে অর্থি আবারও একা একা তাকিয়ে রইল শিহাবের দিকে।


অতিথিদের আপ্যায়ন করে বিদায় দিতে দিতে রাত হয়ে গেল। অর্থি এখনও যায়নি। এবার সে বিদায় নিল। মারিয়া বলল: আপনি একা একটা মেয়ে রাতে কি করে যাবেন? এখানেই থেকে যান।
--না, আমি যেতে পারব।
--আচ্ছা চলুন, আমি আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি, আপনি থাকেন কোথায়?
--আরে না না, আমি একা যেতে পারব। এইতো সামনে আমার বাসা।
--আরে চলুন তো, আমি পৌঁছে দিচ্ছি আপনাকে।
অগত্যা শিহাবের সাথে বের হল অর্থি। দুজন পাশাপাশি হাটছে। অর্থি ভাবল, নিজের পরিচয়টা দিয়ে দেবে শিহাবকে। পরক্ষণে কি যেন ভেবে পরিচয় দিলনা আর। পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল তার। আগেরবার যখন সে আত্মা হয়ে এসেছিল, তখন কত যে মিশেছে শিহাবের সাথে। আর আজ এত কাছে থেকেও অপরিচিতার মতো থাকতে হচ্ছে তাকে।
এদিকে শিহাব ভাবল অন্য কথা। আজ হঠাৎ ইভার কথা খুব মনে পড়ছে তার। বাতাসে একটা পরিচিত ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে। এই মেয়েটাও সেই একই পারফিউম ইউজ করেছে। কে এই মেয়েটা? তার পাশাপাশি হাটতে এতো ভালো লাগছে কেন তার?
(চলবে......???

26/03/2022

Guyes all of you guess where it is..??

31/07/2021

প্রিয় নিজের খেয়াল রেখো❤️

13/08/2020

Dear Soulmate...

I hope your smile... is as beautiful as I see in my dreams..💃💃
I am waiting for you...in a sea of 7 billion...🌏
Dear Soulmate...
I am here...
I am learning to take care of myself...So that i can take care of you in the future..💑
I am alone..😒
But I am not lonely..😌
These lips have kissed...all the wrong peole😋
So I can learn to kiss you the right way...😘
I am going through heart breaks..These heart breaks that hurt like hell..😞
So i can understand true love..😍The love that I will give you..🌹🌹
And..
I am practicing being alone...🚶🚶So we can be alone together..💑
When shall we meet?? ☕☕
Meet me at the right place,at the right time..💒
When I am the right person..😎
For now,,I will be here,,chasing my dreams..😴
I will be here,, gathering expriences and trying to understand the world🌏
Making myself happy and whole..
Because..
I know then..
And only then..
Is when we will meet...☕☕

18/07/2020

#আরশি_জ্বীননাত
#পর্ব_০৪_০৫
আস্থা রাহমান শান্ত্বনা (দ্বীনের গল্প)

"একটা আয়নার জ্বীন আমার পিছনে পড়েছে। এর থেকে কিভাবে মুক্তি পাব বুঝতে পারছিনা।" নেওয়ালের কথা শুনে প্রিয়া অবাক হয়ে বলল, "হুশে আছিস! কি আবোল-তাবোল কথা বলছিস! এসব বলতে কিছু হয় নাকি। জ্বীন তাও আয়নার তোর পিছনে কেন পড়বে?"
-- জানতাম বিশ্বাস করবিনা, কিন্তু এটা সত্যি। এই যে আয়নাটা দেখছিস এটা থেকে জ্বীনটা বের হয়। আমার রুপ ধরে আমার সামনে আসে, কথা বলে।
প্রিয়া ভালো করে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল, "তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আয়নায় জ্বীন থাকতে পারে! আর যদি থাকত ও সে এখন বেরিয়ে আসতনা।"
-- তুই যে তখন বললি তোকে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে, এটা সেই জ্বীনের ই কাজ। আমি বাসায় তোকে নিয়ে এসেছি এটা তার পছন্দ হয়নি। এই জ্বীন চায় আমি তাকে সঙ্গ দিই কিন্তু এটা কি করে সম্ভব বল! এই যে আমার ক্ষতি করবেনা তার কি গ্যারান্টি আছে।
-- আচ্ছা সত্যি যদি জ্বীন থেকে থাকে, তবে সে আমার সামনে আসছেনা কেন? নাকি তার ওই হিম্মত নেই প্রিয়ার সামনে এসে দাড়ানোর!
-- এসব কেন বলছিস? সামনে আসলে খুব খারাপ কিছু একটা করবে। এই জ্বীন নিজেই বলেছে সে একটা খারাপ জ্বীন। তোকে নাকি নাকানি-চুবানি খাইয়ে তাড়াবে!
-- এত্ত সোজা! কোথাকার কোন শক্তিধর এলেন রে!
বলতে না বলতে প্রিয়ার গায়ে একজোড়া আরশোলা এসে পড়ল। প্রিয়া ভয় পেয়ে সেগুলো ঝাড়তে গিয়ে ওইগুলো জামার ভিতরে ঢুকে গেল। নেওয়াল ভয়ার্ত গলায় বলল,
-- ঠিক এই ভয়টাই পেয়েছিলাম।
প্রিয়া লাফাতে লাফাতে জামা খোলার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর তার চিৎকারের আওয়াজ শুনে নেওয়াল এগিয়ে এসে দেখে প্রিয়ার মুখে-গায়ে কমেডের ময়লা লেগে আছে।নেওয়াল ওখান থেকে দ্রুত আয়নার সামনে এসে বলল, "আপনি এসব বন্ধ করুন। এমন করলে আমি কিন্তু দোয়া পড়তে বাধ্য হব।"
আয়নায় থাকা ওর প্রতিবিম্বটা বলে উঠে, "সে হিম্মত দেখতে চেয়েছিল তাই কমেডের ফ্লাশে তাকে চুবিয়ে সেটা দেখিয়েছি। আমাকে সাবধান না করে তাকে কর, জ্বীনের শক্তি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার ফল এমন ই হবে।"
-- দয়া করে আর কোনো ঝামেলা করবেননা।
প্রিয়া ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ব্যাগপ্যাক করে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেয়। নেওয়াল তার হাত টেনে বলে,
-- এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস?
-- এখানে আর এক মূহুর্ত ও আমি থাকবনা। এই ভয়ংকর জ্বীনের আস্তানায় তুই থাক, আমি গেলাম।
প্রিয়া তাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে যায়।
নেওয়াল ব্যালকুনিতে চুপচাপ বসে আছে, মাথার মধ্যে তার হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। পাশে কেউ বসে আছে টের পেয়ে মুখ তুলে তাকায়। এই কয়েকদিন নিজের প্রতিবিম্বকে এতবার মুখোমুখি দেখেছে যে এখন আর দেখলে ভয় হয়না।
-- আপনি নিজের আসল রুপে আসতে পারেননা?
-- কফি খাবি? নেওয়াল বড় বড় চোখ করা তাকায়। কিছু বলার আগে কফিভর্তি কাপ তার মুখের সামনে ধরে রাখে জ্বীনটা। নেওয়াল নিবে কি নিবেনা চিন্তায় পড়ে যায়। একটু পরে কাপটা নিয়ে চুমুক দেয়, কফিটা ভালোই বানিয়েছে।
-- আপনি আসলে কে বলুন তো? কেন ই বা আমার সঙ্গ চাচ্ছেন?
-- আমার পরিচয় একটাই আমি একজন খারাপ জ্বীন। মানুষের সঙ্গ পেতে ইচ্ছে হল তাই চাচ্ছি। এত কথার দরকার কি তোর! আমি তোর কোনো ক্ষতি করবনা, তবে কোনো চালাকি করলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
নেওয়াল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কফির কাপ নিয়ে রুমে চলে আসে। যা হচ্ছে হতে দেওয়াটাই ভাল হবে। এই জ্বীন খুব ভয়ানক, যা খুশি করে বসতে পারে। আপাতত এর কথা অনুযায়ী চলা যাক, ভাবগতিক দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
নেওয়াল তার মা মিথী আনোয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল,
-- খালা কি পুরোপুরি সুস্থ এখন? সত্যি কি জ্বীন ভর করেছিল তার উপর! তার মা জবাব দিলেন,
--হ্যা দেখে তো সেটাই মনে হয়েছিল। এখন সুস্থ অবশ্য, তবে কারো সাথেই কথা বলছেনা। হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার-চেচামেচি করে বাড়ী মাথায় তুলছে।
তোর মামীরা ভয়ে তাকে রাখতে চাচ্ছেনা, বলছে সাথী থাকলে তার জ্বীন ওদেরকে মেরে ফেলবে। পাগলাগারদে পাঠিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছে, ওঝা ডেকে চিকিৎসা করানোর ও কথা উঠছে। আমি চেয়েছি আমার সাথে নিয়ে আসতে, তোর নানু কিছুতেই দিলেননা। তার ও ভয় সাথীর জ্বীন এখানে আসলে আমাদের ক্ষতি করবে।
নেওয়ালের কেন জানি খালার জন্য আফসোস হচ্ছে। মানুষটা কত ভালো, কেন যে বারবার তার সাথেই এমন হচ্ছে আল্লাহ জানেন!

নেওয়ালের প্রতিবিম্ব এক পায়ের উপর অন্য পা তুলে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে গুনগুন করছিল। নেওয়াল ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এই দৃশ্য দেখে দ্রুত রুমের দরজা লক করে দিল। তারপর হাতের তোয়ালেটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে বলল, "আপনি এখন এখানে বসে আছেন কেন? বাসায় মা আছে, যদি একসাথে কখনো এভাবে দেখে নেয় কি হতে পারে বুঝেন?" প্রতিবিম্বটা ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বলল,
-- আমাকে তুই ছাড়া আর কেউ ই দেখতে পায়না। তারা ই আমাকে দেখে যাদের আমি স্বেচ্ছায় দেখা দিই।
নেওয়াল জ্বীনটার সাথে কিছুটা সহজ হয়ে গেল। যদি মাঝে মাঝে জ্বীনটার পাগলামিতে সে অতিষ্ঠ হয়ে যায়। সেদিন রাতের বেলা বলে, আমাকে মিষ্টি খাওয়া তো একটু। বাসায় ও সেদিন মিষ্টি ছিলনা, তার যে কি পাগলামী! পরে ইউটিউব দেখে অল্প সময়ের মধ্যে হালুয়া বানিয়ে দেওয়ায় তবে সে শান্ত হয়েছে। একটা জ্বীন এত পাগলামী করতে পারে, এত চঞ্চল হতে পারে তার জানার বাহিরে ছিল।
নেওয়াল বসে বসে ল্যাপটপে নোটস রেডি করছে। তার রূপে থাকা জ্বীনটা মুখোমুখি বসে বলল,
" চল, একটু বেরিয়ে আসি।" নেওয়াল চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাল। অস্ফুটস্বরে বলল,
-- এখন রাত ১:৪৫ বাজে।
-- তাতে কি হয়েছে? এখন রাস্তায় মানুষ থাকবেনা, ঘুরতে ভালোই লাগবে।
-- পারবনা আমি। বাসায় আজ মা আছে, তার উপর আমার নোটসগুলো কমপ্লিট হয়নি। কথাটা বলামাত্রই জ্বীনটা তার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকায়। তারপর তাকে শূণ্যে ভাসিয়ে ব্যালকুনি দিয়ে ফেলে দেয়। নেওয়ালের তখন মনে হচ্ছিল সে বোধহয় নিচে পড়ে এক্ষুণি মরে যাবে, চিৎকার করার চেষ্টা করছিল বারবার। ভয়ে চোখ বুজে ফেলেছিল, একটু পর চোখ খুলে দেখে না সে নিচে পড়েনি। মাটি থেকে কিছুটা দূরত্বে ভাসছে। কেউ যেন আস্তে করে তাকে মাটিতে দাড় করিয়ে রাখল।
-- বারবার বলেছি আমাকে রাগাবিনা। যা বলি তা শুনবি। নাহলে আমি কিন্তু অনেক খারাপ কিছু করে ফেলব। চল, ফাকা রাস্তায় হাটি কিছুক্ষণ।
নেওয়াল মন খারাপ করে মাথা নিচু করে হাটতে থাকে। রাস্তাটা এই সময় বেশ ফাকা, মাঝে মাঝে দু-একটা গাড়ি যাতায়াত করছে শুধু। মোড়ে মোড়ে ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বলতে থাকা রাস্তা আলোতে পরিপূর্ণ। ওপাশ থেকে প্রশ্ন আসে, "মন খারাপ করেছিস?"
নেওয়াল উত্তর দেয়না, দিনদিন জ্বীনের অত্যাচারগুলো অসহ্য পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে নিজের মাথায় নিজে আঘাত করে মরে যাক। সেদিনের পর থেকে প্রিয়া ও তার সাথে কথা বলেনা, তার ধারণা কোনো ক্ষোভ থেকে সে ইচ্ছে করে প্রিয়াকে জব্দ করার জন্য জ্বীন এনেছিল। ইদানিং ও কারো সাথে কথা বলতে পারেনা, মনে হয় যেন জ্বীনটা তার কোনো ক্ষতি করে ফেলবে।
এখন তো সে বাড়ী থেকে বেরিয়েও জ্বীনের হাত থেকে নিস্তার পায়না। জ্বীনটাও তার সাথে সাথে সবজায়গায় যায়। সেদিন পছন্দের মানুষটিত সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল, সে তাকে একসাথে কফি খাওয়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু জ্বীনটা ওপাশ থেকে তার হাত ধরে টানাটানি করছিল, তার মাথাটাকে এদিক ওদিক নাড়িয়ে দিয়ে অসম্মতিসূচক ভঙ্গি প্রকাশ দিয়েছিল। ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি, পাবলিক প্লেসে পছন্দের মানুষটিকে চড়-গুতো, সুড়সুড়ি দিয়ে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল জ্বীনটা। এরপর থেকে সে মানুষটি তাকে দেখলে আর কোনো কথা ই বলেনা, এড়িয়ে চলে।
একে একে এসব ঘটনায় ক্ষোভ জমে গেছিল নেওয়ালের মনে। এখন সে ঠিক করে ফেলেছে, সে হুজুর ডেকে যে করে হোক জ্বীনের ব্যাপারটা বন্ধ করবে। এসব আর নেওয়া যাচ্ছেনা।

আনমনে ভাবতে ভাবতে অনেকটা দূর চলে আসে নেওয়াল। এক পর্যায়ে থমকে দাঁড়িয়ে আশেপাশে জ্বীনটার অস্তিত্ব খুজে, কিন্তু জ্বীনটা তার কাছে-কিনারায় নেই। একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে না থেকে বাসার দিকে রওনা দেয় সে৷
এমনসময় দুইটা বাইকভর্তি ছেলেরা তাকে দূর থেকে দেখে শিস বাজায়, নেওয়াল ভয়ে দ্রুত হাটা দেয় কিন্তু ছেলেগুলো ওকে চারপাশ থেকে ঘিরে ওড়না আর হাত ধরে টানাটানি করতে থাকে। নেওয়াল চিৎকার করতে থাকে, এক পর্যায়ে একজনের হাতে কামড় বসিয়ে দৌড়াতে থাকে। ছেলেগুলোর চোখ ফাকি দিয়ে একটা চিপা গলির ভিতরে ঢুকে যায়। ভয়ে এখনো তার বুক ধুকপুক করছে। অন্ধকার গলিতে নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে, আপাতত কিছুটা সময় এখানে দাড়াতে হবে। ছেলেগুলো চলে গেলে বেরিয়ে বাসায় চলে যাবে।
কিন্তু তার মনে হচ্ছে এখানে সে ছাড়াও আরো একজন আছে যার বুকের কাছে সে লেপ্টে আছে, কিন্তু অন্ধকারে তার চেহারা দেখতে পাচ্ছেনা। কিছু জিজ্ঞেস করতে যেতেই একটা বলিষ্ঠ হাত তার মুখ চেপে ধরে হুস শব্দ করে চুপ থাকতে বলে। নেওয়াল হতভম্ব হয়ে যায়! হাতটা তার মুখ ছেড়ে হাত ধরে গলি থেকে বাহিরে নিয়ে এসে হাটা ধরে।
নেওয়াল অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ছেলেটা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, কেন নিয়ে যাচ্ছে এসবে তার খেয়াল নেই।
একপর্যায়ে ছেলেটা তার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
-- বাসা কোনটা আপনার? নেওয়াল ধ্যান ভাঙ্গল, সে এইদিক ওদিকে চেয়ে দেখল সে তার বাসার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। সে ভালো করে ছেলেটার দিকে তাকাল। সাদা রঙ্গের টি শার্ট আর একটা ট্রাউজার পড়ে আছে ছেলেটা, বেশ মায়াবী চেহারার ফর্সা ধরণের-গাল দুটো লাল হয়ে আছে। চোখের পাপড়ি আর মনি মেয়েদের মত বড় বড়। গালে হালকা চাপদাড়ি, চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে উচ্চবিত্ত কোনো ঘরের ছেলে।
নেওয়াল কিছু না বলে আঙ্গুল দিয়ে বাসা ইশারা করে দেখাল। ছেলেটা "বাসায় যান" বলে উলটো দিকে হাটা ধরে।
নেওয়াল কিচ্ছুক্ষণ ঘোরের বশে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে তারপর বাসায় ঢুকে যায়।

নেওয়াল চুপচাপ ড্রয়িংরুমে বসে আছে, এদিকে মিথী আনোয়ার বকাবকি করেই চলেছে "এতরাতে কোথায় বেরিয়েছিলি!" নেওয়াল কি উত্তর দিবে ভেবে পায়না, যখন বেরিয়েছিল তখন তো জ্বীনটা তাকে ব্যালকুনি দিয়ে নামিয়েছিল। বাসায় ঢোকার সময় কথাটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল, তার ফল হিসেবে এখন তার মায়ের এত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মিথী আনোয়ার একটু চুপ থেকে মেয়ের পাশে গিয়ে বসে, কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মেয়ে বেশ প্রাণোচ্ছল-চঞ্চল, কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছেন সে কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। কাজের চাপে মেয়েকে তেমন সময় দিতে পারেননা, অনেকদিন মন খুলে কথাও বলা হয়না। আজ যেন মেয়ের পরিবর্তনটা খুব চোখে পড়ছে তার। মেয়ের মুখটা অনেকটা চুপসে গেছে, উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারায় চোখের নিচে কালিগুলো স্পষ্ট।
" নেওয়াল, তুই কি কিছু নিয়ে খুব আপসেট?" নেওয়াল চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকায়, এত আবেগঘন দিয়ে মা জিজ্ঞেস করেছে তাকে, তার ইচ্ছে করছে জ্বীনের ব্যাপারটা এক্ষুনি মাকে বলে দিতে। কিন্তু মা এসব জানলে খুব চিন্তায় পড়ে যাবে, এমনিতেও খালাকে নিয়ে আতঙ্কে আছে।
" তেমন কিছুনা মা, পড়াশুনার চাপটা একটু বেড়েছে। এই যে দেখো, এখন বের হতে হল এক্সট্রা এ ফোর পেপারের জন্য।"
মিথী আনোয়ার সন্তোষজনক উত্তর পেয়েও যেন আশ্বস্ত হতে পারলেননা। গভীর আবেশে মেয়েকে বুকের কাছে টেনে নেন।
নেওয়ালের প্রতিবিম্বটা অনেকক্ষণ ধরে নেওয়ালের থেকে কিছুটা দূরত্বে বসে আছে। নেওয়ালের দিকে বারবার তাকিয়ে ভ্রু কুচকাচ্ছে, তাতে নেওয়ালের কোনো ভ্রক্ষেপ নেই। সে আপনমনে নোটস রেডি করছে। হঠাৎ তার নোটস পেপারের উপর অনেকটা রক্তের ছিটকে এসে পড়ে, সে আতকে উঠে প্রতিবিম্বের দিকে তাকায়। প্রতিবিম্বটা ভয়ানক হাসি দিয়ে বলল, "আমাকে চোখে পড়েছে তাহলে?"
নেওয়ালের রাগ উঠে যায়, এর বাড়াবাড়ি আর মানা যাচ্ছেনা
" কি সমস্যা কি আপনার? যখন যা ইচ্ছে তা করবেন! কাল রাতে কি করেছিলেন আপনি? একা একটা মেয়েকে বের করে রাস্তায় বিপদে ফেলে চলে গিয়েছেন। লজ্জা করেনা? ওহ আপনার জাতিতে তো আবার লজ্জা নেই। আমার ই ভুল আপনার মত একজন কাপুরুষকে সঙ্গ দেওয়া।"
এক নিঃশ্বাসে কাপা গলায় কথাগুলো বলে থামল নেওয়াল। প্রতিবিম্বটার চোখ প্রচন্ড লাল হয়ে গেছে, দাত-মুখ খিচে খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে ঘনঘন। নেওয়ালের বুকটা ভয়ে কাপতে লাগল, নিজের এত ভয়ানক রুপ সে আর কখনোই দেখেনি। তার মনে হচ্ছে জ্বীনটা এক্ষুনি তার উপর আক্রমণ চালাবে। জ্বীনটা হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল, এরপর পুরো ঘরে তান্ডব চলতে লাগল। কোথা থেকে দমকা হাওয়া এসে সব জিনিসপত্র ভেঙ্গেচুরে ফেলতে লাগল, মেঝেতে রক্তের ছড়াছড়ি। নেওয়াল কান দুটো দুহাতে চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগল, "এসব থামান বলছি।"
তাতে যেন তান্ডব আরো জোরালো হল। নেওয়াল আর সহ্য করতে পারছিলনা, বেডটেবিল থেকে ল্যাম্পটা নিয়ে আয়না বরাবর ছুড়ে মারল। মূহুর্তে আয়নাটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে চারদিকে ছিটে গেল। এক টুকরো এসে নেওয়ালের কপাল একপাশ বরাবর ঢুকে গেল, ব্যথায় সে মেঝেতে বসে পড়ল। ততক্ষণে তান্ডব থেমে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেছে।
তার ভীষণ কান্না পাচ্ছিল, এমনসময় দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। নেওয়াল মা এসেছে ভেবে দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলল, আজ মাকে সবকিছু বলবে সে। এই আতংকে সে আর দিন কাটাতে পারছেনা, আজ জ্বীনটা প্রচন্ড রেগে গেছে ওকে ছাড়বেনা এটা সে নিশ্চিত।
দরজা খুলেই সে জড়িয়ে ধরল। বেশ কিছুক্ষণ মন খুলে কাদতে লাগল, "মা আমাকে বাচাও, আমি আর এসব নিতে পারছিনা। ওই আমাকে ছাড়বেনা।"
একটা কোমল ঠান্ডা হাত তাকে ভরসা দিয়ে বলল,
" শান্ত হোন।" গলাটা পুরুষের বুঝতে পেরে নেওয়াল তাকে ছেড়ে দিয়ে পিছনে সরে যায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে এ তো সেই ছেলেটা, যে কাল রাতে তাকে বাসায় পৌছে দিয়েছে।
নেওয়াল এক নজরে ছেলেটার বুকের দিকে তাকায়, তার কপালের রক্ত ছেলেটার সাদা টি-শার্টে ছড়াছড়ি হয়ে গেছে।
কোনোরকম নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
-- আপনি এখানে?
-- মিথী আনোয়ার নামে এক মহিলার কাছে এসেছিলাম। এটা কি উনার ই বাসা?
-- জ্বী। কিন্তু উনি তো এখনো বাসায় ফিরেননি। আপনি ভিতরে এসে বসুন। মা একটুবাদেই চলে আসবেন।
ছেলেটা ভিতরে না এসে নেওয়ালের দিকে সরে এসে কপাল থেকে একটানে কাচটা খুলে নেয়, তাতে যেন রক্ত আরো গলগল করে পড়তে লাগল।
" বাসায় এড ফাস্ট বক্স আছে? ইমিডিয়েটলি নিয়ে আসুন।"
নেওয়াল যেন হতভম্ব হয়ে বক্স নিয়ে এসে ছেলেটার হাতে দিল। ছেলেটা খুব দ্রুততার সাথে নেওয়ালের কপালে ব্যান্ডেজ করে দিল।
-- কালকের ব্যাপারটার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়নি। অনেক ধন্যবাদ। নেওয়ালের কথার প্রতিউত্তরে ছেলেটা কিছু বললনা। চুপচাপ বাসা থেকে বেরিয়ে গেল, নেওয়াল বুঝতে পারলনা মূহুর্তে কি হল!

নেওয়াল রুমের সবকিছু পরিষ্কার করে বিছানায় বসে আয়নার দিকে তাকাল। এই পছন্দের আয়নাটা তার জীবনে কাল হয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সে আয়নাটা আর এখানে রাখবেনা। মিস্ত্রী লোক ডাকিয়ে আয়নাটা পুরোটা ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলে। এতে কিছুটা আশ্বস্ত হয় সে। আর কখনো হয়ত সেই জ্বীনের ছায়া তার উপর পড়বেনা।
ভাবতে ভাবতে ব্যালকুনিতে এসে দাঁড়ায় সে, এতদিন পর নিজেকে বেশ হালকা লাগছে। মুক্ত পাখির মত এদিক ওদিক উড়াউড়ি করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
হঠাৎ চোখ পড়ল তার বরাবর পাশের ব্যালকুনিটায়। সেই অদ্ভুত ছেলেটা এখানে দাঁড়িয়ে একা একা বিড়বিড় করছে। নেওয়াল চিন্তায় পড়ে গেল, ছেলেটা এখানে কি করছে!
-- এই যে, শুনছেন।
ছেলেটা একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। কি একটা ভেবে ব্যালকুনি থেকে রুমের দিকে চলে গেল। নেওয়াল ছেলেটার এমন অদ্ভুত আচরণের কারণটা বুঝতে পারলনা।
" মা কাল একটা ছেলে তোমার খোজে এসেছিল। তোমাকে না পেয়ে চলে গেছে।"
" দেখা হয়েছিল আমার সাথে। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটটায় ও ভাড়া নিয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। কাল উঠে যাওয়ার কথা ছিল, বাসার মালিক আমার কাছে চাবি দিয়ে গিয়েছিল সেটা নিতেই এসেছিল। কেন তোর কি পছন্দ হয়েছে নাকি?" বলেই মিথী আনোয়ার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
-- কিসব স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের মত কথা বলো! খালার কোনো খবর পেলে তুমি?
-- তোর খালাকে পাগলাগারদে পাঠিয়ে দিয়েছে, এত করে বললাম সবাইকে কেউ আমার কথা রাখেনি। তোর মামারা উপরন্তু আমাকে ধমকেছে। আমার কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে বিশ্বাস কর, কি থেকে কি হয়ে গেল! ও আমাদের সবার চোখের মনি ছিল। হঠাৎ কি এক পরিবর্তন ওকে আমাদের সবার থেকে দূরে নিয়ে গেছে।

নেওয়াল বিছানায় হাত-পা মেলে শুয়ে আছে, এতটুকু নড়ার শক্তি নেই তার মধ্যে। তার উপর ভেসে আছে সেই জ্বীনটা। অন্ধকারে তার চেহারা নেওয়াল দেখতে পাচ্ছেনা, তবে এইটুকু আন্দাজ করল সে এখন আসল রুপে ই নেওয়ালের সামনে উপস্থিত। বিচ্ছিরি হাসি দিয়ে বলল,
" আমার থেকে এত সহজে তোর নিস্তার নেই। আয়না সরিয়ে দিলেও আমাকে তুই তোর থেকে কখনো সরাতে পারবিনা। এতদিন আমার ভালো রুপ টাই তোকে দেখিয়েছি, কোনো জোর-জবরদস্তি করিনি। কিন্তু তুই সেটাকে গুরুত্ব দিলি না।
আজ আমি তোর উপর জোর খাটাব শুধু আজ নয়। আজ থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে তোকে তিলে তিলে শেষ করব।"
নেওয়াল বারবার ঠোট নাড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছে, কিন্তু কোনো আওয়াজ ই বের হচ্ছেনা মুখ থেকে। জ্বীনটা হাসতে হাসতে বলল, "আজ কিছুই বলতে পারবিনা, বাধাও দেওয়ার ক্ষমতা নেই তোর। এখন আমি তোর সাথে শারীরিক সঙ্গম করব, আজ থেকে প্রতিরাত তুই আমার কাছে ধর্ষিত হবি।
এটাই হচ্ছে তোর গুরুতর শাস্তি। প্রচন্ড কষ্ট আর যন্ত্রণা দিয়ে তোর সাথে শারীরিক মিলন করব।"
বলেই অন্ধকারে হিংস্র চোখগুলো জ্বলজ্বল করে উঠে। হাতটা নেওয়ালের শরীরের দিকে এগিয়ে আসে, গায়ের ওড়নাটা সরিয়ে নেয় আর ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে বিবস্ত্র করার, তার শরীরে নখ দিয়ে হাত বুলানোর। নেওয়ালের চোখ বয়ে পানি ঝরতে থাকে, এই মূহুর্তে তার মনে হচ্ছে কিছু একটা দিয়ে নিজেকে সে নিজে শেষ করে দেয়।
(চলবে)

26/05/2020

#আরশি_জ্বীননাত
#পর্ব__০২__০৩
আস্থা রাহমান শান্ত্বনা (জিনের_গল্প)

নেওয়াল ভয় পেয়ে তক্ষুনি বিছানা থেকে নেমে উঠে একপাশে দাঁড়ায়। আয়নার দিকে উকি মেরে দেখে এখন তার প্রতিচ্ছবি আর দেখা যাচ্ছেনা, ভাবতে থাকে সে কি ঘুমের ঘোরে ভুল দেখেছে!
সে গুটি গুটি পায়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে আরেকনজর আবার তেমন কিছু হয় নাকি দেখতে, কিচ্ছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পরও কিছু না দেখতে পেয়ে চোখের ভ্রম ভেবে সরে আসে সে। কিন্তু আয়নায় থাকা তার প্রতিচ্ছবি তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে কুৎসিত ভাবে হাসছিল। নেওয়ালের তা চক্ষুগোচর হলনা।
সকালবেলা মায়ের পাশে বসে নেওয়াল বলতে থাকে,
" কালকে খালার জ্বীনের গল্পগুলো আমার মাথায় গেথে গেছে। মাঝরাতে উঠে আয়না দেখে সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।"
মিথী আনোয়ার এসে মেয়ের গা থু থু ছিটিয়ে বলল, "জ্বীনের গল্প বলিসনা তো, তুই মানিস আর না মানিস জ্বীন ঠিক ই আছে। কোর আনে ও তা উল্লেখ আছে।"
" মা আমি জ্বীনকে অবিশ্বাস করছিনা, কিন্তু আয়নার সাথে জ্বীনের সম্পর্ক আমার কাছে নিছক গল্প মনে হচ্ছে। তুমি জানো আমি আয়না দেখতে ভীষণ ভালোবাসি। এভাবে আমার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিলে তো আমি আয়নার নিজের প্রতিচ্ছবিকেও ভয় পাব।"
"যেটা তোর কাছে নিছক গল্প সেটা আমরা সত্য বলেই মানি। কাল রাতে হয়ত জ্বীনের কথা শুনে নয়, তুই এমন কিছু দেখেছিস বিধায় ভয় পেয়েছিস।" বলতে বলতে নেওয়ালের খালা নেওয়ালের পাশে বসলেন।
" এটা আমার মস্তিষ্কের ভ্রম খালা। সারাদিন এসব নিয়ে খুব ভেবেছি তাই কিছুটা প্রভাব পড়েছে। এসব নিয়ে আমি আর ভাবতে চাইনা।"
নেওয়াল আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে কাল রাতের ঘটনাটা মনে করতে থাকে। আয়নায় বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গি করে নিজের প্রতিচ্ছবির সাথে মিলায়, হঠাৎ তার প্রতিচ্ছবি থমকে গিয়ে তার দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে হাসতে থাকে। নেওয়াল কিছু বুঝে উঠার আগে সব ঠিকঠাক। নেওয়াল আয়নার সামনে থেকে সরে এসে নিজে নিজে বিড়বিড় করতে থাকে,
-"খালা আমার মাথায় কিসব ঢুকিয়ে দিল, এখন আয়নার দিকে তাকালেই ভ্রম হচ্ছে। রিলেক্স হতে হবে।"

ইদানিং রাতে নেওয়ালের অনুভূত হয় আয়নার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকে কেউ তাকে দেখছে। শুধু তাই নয়, খুব সকালবেলা আয়নায় বড় বড় অসংখ্য হাতের ছাপ দেখতে পায়। বেলা হতে হতে তা ভোজবাজির মত মিলিয়ে যায়। নেওয়াল একপ্রকার চিন্তায় পড়ে যায়, এসব কি ভ্রম থেকে হচ্ছে নাকি খালা তার সাথে রসিকতা করার জন্য মজা করছে। খালা সন্দেহ করার কারণ হচ্ছে, খালা প্রায়সময়ই খুব চেষ্টা করে নেওয়ালকে আয়নার সাথে জ্বীনের সম্পর্কের ব্যাপারটা বিশ্বাস করানোর।
নেওয়াল চিন্তা করে, আজ রাতে সে ঘুমানোর ভান করে বিষয়টা দেখবে। নেওয়াল আজ আয়না বরাবর না শুয়ে একপাশ হয়ে শোয় যেখান থেকে ও আয়নাটাকে দেখতে পাবে কিন্তু আয়নায় তার প্রতিচ্ছবি দেখা যাবেনা।
প্রতিদিনের মত নেওয়াল টের পায় তার আয়নার সামনে কেউ পায়চারি করছে, আর একটু পরপর কিছুসময়ের জন্য থেমে যাচ্ছে। নেওয়াল দেরী না করে চোখ খোলার চেষ্টা করল, একি সে চোখ খুলতে পারছেনা কেন? সে উঠে বসার আপ্রাণ চেষ্টা করল কিন্তু তাতেও বিফল। সামান্য আঙ্গুল নাড়ানোর শক্তি ও পাচ্ছেনা।
এইসময় মনে হল, কেউ আয়নায় আঙ্গুল দিয়ে ঠকঠক আওয়াজ করছে। চোখ মেলে শোয়া থেকে উঠে বসে নেওয়াল, ফোনের ফ্ল্যাশলাইট টা জ্বালিয়ে পুরো রুমটা একবার দেখে নেয় সে। বাহিরে থেকে আযানের আওয়াজ ভেসে আসছে। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে সে, তাহলে এতক্ষণ যা অনুভব করছিল সব ই তার স্বপ্ন ছিল। ব্যাপারগুলো ওর মাথায় এত গভীরভাবে গেথে গেছে যে ও রীতিমত এসব স্বপ্নে অনুভব করে ভয় পাচ্ছে। আয়নার দিকে ফ্ল্যাশলাইট তাক করল নেওয়াল, সেখানে কোনো হাতের ছাপ নেই।
নেওয়াল ঠিক করে নেয়, কয়েকদিন সে আয়না দেখবেনা। সকালেই সে বড় পর্দা দিয়ে আয়নাটা ঢেকে দেয়। খালা দেখে জিজ্ঞেস করে, "বিশ্বাস করেছিস তাহলে!"
নেওয়াল কিঞ্চিত বিরক্ত হয় সেটা প্রকাশ না করে মাথা নাড়ায়। ও নিশ্চিত খালা তাকে বিশ্বাস করানোর জন্য হাতের ছাপ দিয়ে রাখত আয়নায়। এখন যেহেতু ও খালাকে আশ্বাস দিয়েছে সে বিশ্বাস করেছে এবং আয়না পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। খালা আর এসব নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করবেনা।
বেশ কয়েকদিন নেওয়াল বেশ স্বস্তিতেই ছিল, মাথায় গেথে থাকা ব্যাপারগুলো দূর হয়ে গেছে। খালাও আর এসব নিয়ে কথা তুলেনা।

ফোনের রিংটোনের শব্দে নেওয়ালের ঘুম ভাঙ্গল। ভার্সিটি থেকে ফিরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফোন রিসিভ করে শোয়া থেকে উঠে বসল নেওয়াল। ওপাশ থেকে মিথী আনোয়ার বললেন,
- নেওয়াল আমি অফিস থেকে সোজা তোর নানুর বাড়ীতে যাচ্ছি। আজ রাতে নাও ফিরতে পারি। তুই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়িস।
- হঠাৎ এত জরুরী নানুর বাড়ীতে কেন যাচ্ছো?
- তোর খালা কাউকে না জানিয়ে বিকালে নাকি ওই বাড়ীতে চলে গেছে, আর বেশ পাগলামী করছে। তোর মামার ফোন পেয়ে ব্যাপারটা দেখতে যাচ্ছি।
নেওয়াল বেশ চিন্তায় পড়ে গেল, হঠাৎ খালার কি হল! ভার্সিটি থেকে ফিরেও তো বেশ ভালো দেখল খালাকে। সে যে নানুর বাড়ীতে যাবে এটা তো নেওয়ালকে বলেও নি। ভাবতে ভাবতে নেওয়াল উঠে রান্নাঘরের দিকে যায়। এক ঘুমে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তার ক্ষুধা লেগেছে বেশ, চুলায় কফির জন্য পানি বসাল।
কখন থেকে মাকে কল করে যাচ্ছে নেওয়াল। কল ই ঢুকছেনা, সেখানে কি হল? মা গিয়ে পৌছাল কিনা জানা দরকার তার। মামা, নানুকেও কল দিল কয়েকবার কেউ ই রিসিভ করছেনা। অনেকক্ষণ ধরে টিভি দেখে আর ফোন টিপে বেশ বোরিং লাগছে তার। কেন জানি সময় ই কাটছেনা, এদিকে অনেকক্ষণ টানা ঘুম হওয়ায় আর ঘুম ও পাচ্ছেনা।
কি করবে ভাবতে ভাবতে নিজের আলমারিটা খুলে শাড়ির তাকে রাখা শাড়িগুলো নাড়াচাড়া করতে লাগল। শাড়ি তার খুব প্রিয়, কোনো শাড়ি দেখে পছন্দ হলেই চট করে কিনে ফেলে সে। তবে কখনোই তেমন শাড়ি পড়া হয়না তার, পুরোপুরি শাড়ি সামলাতে পারেনা বলে পড়ে কোথাও বের হওয়ার সাহস করেনা। শাড়িগুলো বেশ যত্নে দিনের পর দিন আলমিরাতেই পড়ে থাকে।
তবে যেদিন বাসা ফাকা থাকে, সেদিন রাতে শাড়ি পড়ে বেশ সাজে নেওয়াল। আয়নায় নিজেকে নিজে দেখে মুগ্ধ হয়। মা থাকলে শাড়ি পরতে ওর অস্বস্তি লাগে, মিথী আনোয়ার এমন করতে দেখলেই বলে, "এবার তাহলে বিয়েটা দিয়ে দিই, প্রতিদিন শাড়ি পড়ে সাজতে পারবি।" এই লজ্জায় নেওয়াল কখনো আর মায়ের সামনে শাড়ি পড়ে সাজে না।
আকাশীরঙ্গা শাড়িটা বের করে পড়ে নেয় নেওয়াল, মাঝে মাঝে শাড়ি বের করে নিজে নিজে পড়ে বলে বেশ ভালোই শাড়ি পরতে শিখে গেছে।
শাড়ি পড়ে আয়নার পর্দাটা সরিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে সে। প্রায় ৪-৫দিন পর সে নিজেকে ভালো করে আয়নায় দেখছে। এতদিন পর মনটা বেশ উৎফুল্ল লাগছে, এখন থেকে আবার সে ঘন ঘন আয়না দেখতে পারবে।
হালকা সেজে কোমড় সমান চুল গুলো ছেড়ে দেয় নেওয়াল। শাড়ীর আচলটা মাথায় দিয়ে বেশ সুন্দর ভঙ্গিতে আয়নায় নিজেকে দেখে। আজ মনে হচ্ছে তাকে একটু বেশী ই সুন্দর লাগছে। নিজেকে দেখে নিজে'ই মুগ্ধ হচ্ছে।
কয়েকটা মিরর সেলফি তুলল সে, ছবিগুলো সেভ করতে গিয়ে দেখে আয়নায় থাকা হাতের ছাপ গুলো ছবিতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। নেওয়াল আয়নার কাছে এসে ভালো করে তাকায় কিন্তু কোথাও হাতের ছাপ গুলো দেখতে পায়না সে।
তবে আয়নার কাছে ঝুকে মনে হচ্ছে আয়না থেকে কারো গরম নিঃশ্বাস তার মুখে এসে পড়ছে। সেখান থেকে সরে যায় নেওয়াল, নিজের নিঃশ্বাস ই কি তার গায়ে পড়ছে!
আবার তাকিয়ে দেখে তার প্রতিবিম্ব টা সেই গা হিম করা গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে। নেওয়াল চোখ ডলতে ডলতে ওয়াশরুমে ঢুকে চেঞ্জ করে নেয়। বাসায় একা থাকায় আবার একই ভ্রমগুলো হচ্ছে। আপাতত এখন ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে।
বিছানায় শুয়ে এইপাশ ওপাশ করছে সে কিছুতেই ঘুম আসছেনা। বিকালে একটানা ঘুমালে এই সমস্যা হয় তার। ফোন হাতে নিয়ে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান অন করে দেয় নেওয়াল। এতে যদি ঘুম আসে একটু! হঠাৎ তার ওপাশে খুটখুট শব্দ শুনল। মনে হচ্ছে কেউ পা নাড়াতে নাড়াতে কিছুতে ঠেকাচ্ছে। ইয়ারফোন খুলে ল্যাম্প জ্বালিয়ে পাশ ফিরে তাকায় সে।
দেখল বিছানার পাশের টুলে সে নিজে বসে আছে, পা নাড়াতে নাড়াতে বিছানার পায়াতে শব্দ করছে আর হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটোতে সেই হিম করা চাহনী। নিজের সামনে নিজেকে দেখে নেওয়াল চিৎকার করে উঠল।
#আরশি_জ্বীননাত
#পর্বঃ০৩

নেওয়াল চিৎকার করা মাত্র তার মুখোমুখি বসে থাকা প্রতিবিম্ব রাগান্বিত চোখে ঠোটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে তাকে চুপ থাকতে ইশারা করে। নেওয়াল ভয়ে দুহাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে রাখে, বিড়বিড় করে দোয়া পড়তে থাকে। প্রতিবিম্বটা ওর দিকে এগিয়ে এসে ভয়ানক কন্ঠে বলে, "দোয়া পড়া বন্ধ কর, নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।"
তারপর নেওয়ালের মুখোমুখি বসে মিটিমিটি হেসে বলল,
" আয়নার মত আমাকে তোর পছন্দের সঙ্গী করে নে।"
নেওয়াল কিছুটা থমকে গেলেও প্রচন্ড সাহস সঞ্চার করে জোরে জোরে দোয়া পড়া শুরু করে। প্রতিবিম্বটা ভীতমুখে ওর থেকে সরে গিয়ে দ্রুত আয়নায় মিলিয়ে যায়।
নেওয়াল যেন হাফ ছেড়ে বাচল। সারারাত তার আর ঘুম হলনা, বার বার আয়নার দিকে চোখ যাচ্ছিল মনে হচ্ছিল এই বুঝি আবার প্রতিবিম্বটা বেরিয়ে এল।
সকাল হতেই আয়নাটা ভাল করে পর্দায় মুড়িয়ে সে। এরমধ্যে মিথী আনোয়ারের ফোন এল।
" কাল রাত থেকে তোর খালাকে পাওয়া যাচ্ছেনা রে নেওয়াল। সবাই হন্য হয়ে খুজছে, ভীষণ টেনশান হচ্ছে।"
-- কাল কি কিছু নিয়ে ঝগড়া করেছিল খালা?
-- তেমন কিছুই হয়নি। আমি আজও ফিরবনা, তুই পারলে এখানে চলে আয়।
নেওয়াল ফোন রেখে ভাবতে লাগল, খালা হঠাৎ কোথায় চলে গেল? খালা তাকে যে আয়না নিয়ে ভুল কিছু বলেনি তার প্রমাণ সে কাল রাতেই পেয়েছে। খালার সাথে এই ব্যাপারে কথা ও বলবে ভেবে রেখেছিল। তাই খালার হঠাৎ উধাও হওয়ার ব্যাপারটায় তার খারাপ লাগছে। ভার্সিটিতে এ্যানুয়েল প্রোগ্রামের আয়োজন নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে সে, এই মূহুর্তে ইচ্ছে করলেও নানুবাড়ীতে যাওয়া সম্ভব হবেনা। এদিকে বাসায় একা থাকতেও ভয় করছে তার, যতবার আয়নার দিকে চোখ পড়ে ততবার অজানা এক আতঙ্কে কেপে উঠে সে। সন্ধ্যার দিকে ভার্সিটি থেকে ফিরে নেওয়াল নিজের স্বাভাবিক কাজকর্মে মনোযোগ দেয়। তাও কাল রাতের ঘটনা প্রতিনিয়ত ওর মনে উকি দিচ্ছে।
কফিকাপে চুমুক দিতে দিতে সে ভাবে, "প্রতিবিম্বটা যদি কোনো জ্বীন হয়ে থাকে, তবে কি চায় সে! শুধুমাত্র ভয় দেখানো'ই এর উদ্দেশ্য! নাকি ওর ক্ষতি করতে চায়?"
কৌতূহলবশত নেওয়াল আয়নার পর্দাটা সরিয়ে একপলক চেয়ে থাকে, কিন্তু সবকিছুই স্বাভাবিক। হঠাৎ তার প্রতিবিম্ব নড়ে উঠে এক লাফে আয়না থেকে বেরিয়ে আলমিরার উপরে পা গুটিয়ে বসে তার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়।
নেওয়ালের ইচ্ছা করছিল জোরে একটা চিৎকার দিতে, নিজেকে অনেক কষ্টে সংবরণ করে নিজেকে একটা চিমটি কাটে। নাহ সে সজ্ঞানে এবং বাস্তবেই আছে।
-- কে আপনি?
প্রতিবিম্বটা হেসে হেসে দীপ্ত পুরুষকন্ঠে বলে, "আমি একজন জ্বীন।" নেওয়াল কি বলবে বুঝতে পারেনা। একটা জ্বীন তাকে হেসে হেসে পরিচয় দিচ্ছে এটা অভাবনীয়।
"আপনি আমার রুপ ধরে বারবার আমার সামনে আসছেন কেন? কি চান আমার কাছে?"
" কারণ তুই বারবার আয়নায় নিজেকে দেখছিস। বলতে গেলে বিশেষ কিছুই চাওয়ার নেই। আমি তোর সঙ্গ চাই, তোর সাথে সর্বক্ষণ একজন সঙ্গী হয়ে থাকব।"
নেওয়ালের অবাকতা এবার মাত্রা ছাড়িয়ে গেল।
জ্বীনটা হাসতে হাসতে আলমিরা থেকে নেমে বলল, "তোর তাতে সম্মতি কিংবা আপত্তি আছে কিনা সেটা আমার জানার বিষয় নয়। আমাকে যদি বাধা দিস বা সরানোর চেষ্টা করিস আমি কিন্তু তোর অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলব। আমি অনেক খারাপ প্রকৃতির জ্বীন। তবে কথা দিচ্ছি, আমার কথা মেনে চললে তোর কোনো ক্ষতি আমি করবনা।" নেওয়াল ভীষণ বিরক্ত হয়ে বলল,
-- অদ্ভুত কথাবার্তা। একজন জ্বীনকে আমি সঙ্গ দিব, এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। কাল ই আমি হুজুর ডেকে যা ব্যবস্থা করার করব।
জ্বীনটা প্রচন্ড রাগ নিয়ে নেওয়ালের দিকে তাকায়, সাথে সাথে নেওয়াল শূণ্যে ভাসতে থাকে। ভাসতে ভাসতে ব্যালকুনি দিয়ে বের হয়ে বাহিরে চলে যায়।
" এখান থেকে যদি ফেলে দিই তোকে, কি হবে বুঝতে পারছিস। তোর চেহারা ও চেনা যাবেনা। আর এটা ভাবিসনা আমি তোকে এত সহজে মারব। তিলে তিলে যন্ত্রণা দিয়ে পাগল বানিয়ে তবেই মারব।"
নেওয়াল দিশেহারা হয়ে যায়, কি করবে বুঝতে পারেনা। তবে এইটুকু বুঝতে পারছে এই জ্বীনের কথায় যদি সে সায় না দেয় তাহলে এই জ্বীন তাকে অতিষ্ঠ করে তুলবে। বাধ্য হয়ে সে কাপা কন্ঠে বলে, " আপনি যা চান, তাই হবে।"

নেওয়াল ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে, দিনের আলো থাকতে থাকতে সে নানুবাড়ী চলে যাবে। বাসায় একলা থাকতে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাসা থেকে বেরিয়ে বাসের টিকেট কাটার জন্য কাউন্টারে আসে সে। দূর্ভাগ্যবশত জানতে পারে, ওইদিকে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ চলছে৷ শহরের কোনো গাড়ি ওইদিকে যেতে পারছেনা, ওইদিক থেকে কোনো গাড়ি শহরে আসতে পারছেনা। নেওয়াল হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে আসে, মাকে কল দিয়ে ব্যাপারটা বলার চিন্তা করে।
-- মা তুমি কখন আসবে? জ্বীন....
-- হ্যা রে, তোর খালাকে বোধহয় জ্বীনেই ধরেছে। দেখিসনি আমাদের বাড়ীতে সারাক্ষণ জ্বীন নিয়ে গল্প করত, কালরাতে আবার নিজে থেকে কোথায় থেকে জানি ফিরে এসেছে। আসার পর কারো সাথে কোনো কথা বলছেনা।
আর এদিকে কি একটা ঝামেলা হয়েছে, গাড়ি চলাচল একদম বন্ধ। তুই আর দুটোদিন ম্যানেজ করে নে, আমি অবরোধ খুলে গেলেই চলে আসব।
নেওয়াল ফোনটা বিছানার উপর ফেলে দিল। মা তার কোনো কথা না শুনে নিজের কথা বলে ফোন কেটে দিল। এখন সে কি করবে? বাসা থেকে বেরিয়ে কোনো বান্ধবীর বাসায় দুদিনের জন্য থাকবে? এটা বলতেই বেড সাইডের ফুলদানিটা নিজে নিজে মেঝেতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। নেওয়ালের বুঝতে বাকি রইলনা এটা কার কাজ!
-- দোস্ত বাসা তো পুরা ফাকা! হবে নাকি পার্টি?
-- এসব একদম না। আমার সাথে লক্ষী মেয়ের মত দুইদিন থাকবি, যা ইচ্ছে করিস কিন্তু বাসার মধ্যে জোরে হৈ-হুল্লোড় করিসনা।
-- চুপ থাক তো। দেখ না কেমন মজা হয়!
বেস্টফ্রেন্ড প্রিয়াকে মা আসা অবধি নিজের কাছে নিয়ে এসে কিছুটা আশ্বস্ত হয় নেওয়াল। সাথে কেউ তহআকলে তো নিশ্চয়ই জ্বীনটা কিছু করবেনা। নিশ্চিন্ত হয়ে বড় একটা নিশ্বাস ফেলে সে।

" দোস্ত, তোর ড্রেসিংটেবিলটা অনেক সুন্দর হইসে। আমিও ভাবতেছি এমন একটা বানানোর জন্য অর্ডার দিব, ঠিক এমন জায়গায় রাখব যেন ঘুম থেকে উঠেই আয়নায় নিজের ঘুম ঘুম ভাব কিউট ফেস টা দেখতে পারি। শুভ তো প্রায় বলে, তোমার ঘুম ঘুম ভাব থাকা চেহারাটা খুব সুন্দর।"
নেওয়াল মিটিমিটি হাসতে হাসতে ভাবে,
" বিছানা বরাবর আয়না থাকার কি পরিণাম সেটা হাড়ে হাড়েই টের পাচ্ছি আমি।"
প্রিয়া লাউডস্পীকারে সাউন্ডবক্সে গান বাজিয়ে উরাধুরা নাচতে থাকে। এমনসময় জোরে জোরে হাসা শুরু করে।
-- নাচতে নাচতে এভাবে হাসছিস কেন?
-- দোস্ত আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে খুব সুড়সুড়ি দিচ্ছে। পুরো কথা শেষ করার আগে হাসতে হাসতে প্রিয়া ফ্লোরে শুয়ে যায়। নেওয়াল গান বন্ধ করে প্রিয়াকে টেনে তুলে। ততক্ষণে হাসি বন্ধ হয়ে তার কাশি শুরু হয়ে যায়।
-- দোস্ত কি হচ্ছে এগুলা বল তো? মনে হচ্ছে কেউ আমার নাকের ডগায় শুকনো টালা লাল মরিচ ধরে রেখেছে।
নেওয়াল ব্যাপারটা সামলে নেওয়ার জন্য প্রিয়া ওয়াশরুমে পাঠায়।
-- কি সমস্যা আপনার? এসব কি শুরু করেছেন?
অদৃশ্য কন্ঠে জ্বীনটা বলতে থাকে,
-- এখনো কিছুই করিনি। আমার সঙ্গ থেকে বাচার জন্য একটা নাচুনে কাঠিকে নিয়ে এসেছিস, একে তো আমি নাকানি-চুবানি খাইয়ে তাড়াব।
-- এসব একদম করবেননা। এটা ঠিক হচ্ছেনা আপনার।
ওপাশ থেকে আর কোনো কথা হলনা। নেওয়াল হতাশ হয়ে চিন্তা করল, কি করবে এখন! প্রিয়াকে কি সত্যিটা বলবে?
(চলবে)

Address

Chittagong

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Untold Love Feelings অব্যক্ত ভালবাসার অনুভুতি posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Untold Love Feelings অব্যক্ত ভালবাসার অনুভুতি:

Share

Category