Amirul Islam Rayhan

Amirul Islam Rayhan ✍️ Writer | 📚 Reader | 🌐 Translator |
✨ Storyteller at heart

ছেলে রেজওয়ানের সঙ্গে রাজু মিয়া। আজ শনিবার বিকেলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার তালুকজামিরা কবিরাজপাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো...
08/06/2025

ছেলে রেজওয়ানের সঙ্গে রাজু মিয়া। আজ শনিবার বিকেলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার তালুকজামিরা কবিরাজপাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো
সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে একজন বাবা কী না করেন! গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর রাজু মিয়া (৫৫) প্রমাণ করলেন, ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ থাকলে অভাব কোনো বাধা হতে পারে না।

রাজু মিয়ার গল্পটা এ রকম—অভাবের কারণে ছেলের শখের বাইসাইকেল কিনে দিতে পারেননি। ঢাকায় গিয়ে আড়াই মাস রিকশা চালিয়ে দুই হাজার টাকায় কিনে নেন একটি পুরোনো বাইসাইকেল। কিন্তু সেটি বাড়ি নেওয়ার মতো পরিবহন খরচ ছিল না তাঁর। তাই রাজধানী ঢাকা থেকে সাইকেল চালিয়ে যাত্রা করেন গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের তালুকজামিরা কবিরাজপাড়া গ্রামে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সাইকেলটি তুলে দেন ছেলের হাতে।
ছেলের শখ আর শখপূরণ—এর মাঝখানে আছে এক অন্য রকমের এক গল্প। গল্পটি হয়তো অজানাই থেকে যেত। যদি না ঈদের আগে তাঁর এই বাড়ি ফেরা নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতো।

রাজু মিয়ার এই গল্পের বিস্তারিত জানতে আজ শনিবার ঈদের দিন বিকেলে পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নে তালুকজামিরা কবিরাজপাড়া গ্রামে যান এই প্রতিবেদক। সেখান গিয়ে দেখা গেল, চারদিকে আবাদি জমি। মাঝখানে ছোট্ট দুটি টিনশেড ঘর। তার মধ্যে একটি জরাজীর্ণ। একটি ঘরে থাকে রাজু মিয়ার এক ছেলে ও মেয়ে। জরাজীর্ণ ঘরটিতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রাজু মিয়া। তাঁর বাড়িতে যাওয়ার কোনো রাস্তাও নেই। বাঁশঝাড় ও অন্যের জমির আইল দিয়ে যেতে হয় বাড়িতে।

অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন রাজু মিয়া পেশায় দিনমজুর। প্রায় তিন শতক বসতভিটা ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। এলাকায় কখনো দিনমজুরি করেন, কখনো রিকশা চালান। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে গাইবান্ধা সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। একমাত্র ছেলে রেজওয়ান মিয়া এ বছর পলাশবাড়ীর তালুকজামিরা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
রাজু মিয়ার সাইকেলের গল্প তাঁর এই ছেলেকে ঘিরে। রেজওয়ান হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করত। তার কষ্ট দেখে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মামা রবিউল ইসলাম নিজের বাইসাইকেলটি ভাগনেকে উপহার দেন। এই সাইকেলে চলছিল তার বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া। রেজওয়ান তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। একদিন তার সাইকেলটি বিদ্যালয় থেকে চুরি হয়ে যায়। তখন সে বাবার কাছে একটি বাইসাইকেল চায়। কিন্তু দিনমজুর বাবার সামর্থ্য হয়ে ওঠেনি ছেলেকে সাইকেল কিনে দেওয়ার।

রাজু মিয়া জানালেন, গত রমজান মাসে তিনি কাজের খোঁজে ঢাকায় যান। গিয়ে ওঠেন তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ার একটি মেসে। সেখানে থেকে ভাড়ায় রিকশা চালানোর কাজ বেছে নেন। প্রতিদিন উপার্জন হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে প্রতিদিন রিকশাভাড়া, থাকা–খাওয়াসহ ৭৫০ টাকা খরচ হয়ে যেত। যা বাঁচত তা থেকে কয়েক দিন পরপর বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। আর ছেলের সাইকেল কেনার জন্য কিছু কিছু করে টাকা সঞ্চয় করতেন। ঈদুল আজহার আগে তাঁর সঞ্চয় হয় ৪ হাজার ৩০০ টাকা। নাখালপাড়া থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরোনো বাইসাইকেল কেনেন।

কিন্তু সাইকেলটি বাড়ি নেওয়ার ক্ষেত্রে বিপত্তি বাধায় আর্থিক অসংগতি। রাজু মিয়া জানান, গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নাখালপাড়া থেকে সাইকেলটি চালিয়ে ঢাকার আবদুল্লাহপুরে যান। সেখানে গাইবান্ধাগামী বাসে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাসের সুপারভাইজার সাইকেলটির জন্য দুই হাজার টাকা ও তাঁর ভাড়া বাবদ তিন হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু এত টাকা তাঁর কাছে নেই। কম টাকায় তাঁকে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ কেউ রাখেনি। ট্রাকচালক ও পিকআপভ্যানের চালকদের কাছেও ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। পথে বিপত্তি বাধে যমুনা সেতুতে। সাইকেল নিয়ে সেতু পারাপারের নিয়ম নেই। সেখানে বাসের সুপারভাইজার, ট্রাকচালক ও পিকঅ্যাপ ভ্যানের চালকদের অনুরোধ করেন তাঁকে সেতু পার করে দিতে। কিন্তু কেউ তাঁর কথায় রাজি হননি। পরে একটি ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে ট্রাকচালক তাঁকে যমুনা সেতু পার করে দেন। তবে এ জন্য তাঁকে দিতে হয়েছে ৫০০ টাকা।

এরপর রাজু মিয়া আবার সাইকেল চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বগুড়ার চারমাথা থেকে মাটিডালির মাঝখানে সেনাবাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে তাঁকে থামানো হয়। তখন সাইকেল নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার গল্প শুনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে একটি ট্রাকে তুলে দেন। ট্রাকটি ভোররাতে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রাজু মিয়াকে নামিয়ে দেয়। গোবিন্দগঞ্জে কিছু সময় কাটানোর পর সাইকেল চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি বাড়ি পৌঁছে ছেলের হাতে তুলে দেন সাইকেলটি।

সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে রাজু মিয়ার কথেপকথনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
রাজু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইকেলটা ও তেইশ শ ট্যাকা নিয়্যা ঢাকাত থাকি রওনা দিচিলাম। পথোত যমুনা বিরিজ পার হওয়া, টেরাক ভড়া ও খাওয়া মিলি তেরো শ ট্যাকা গেচে। খালি এক হাজার ট্যাকা নিয়্যা বাড়িত আচ্চি। ত্যাক দিয়্যা চাউল ও সোংসারের জিনিসপাতি কিনচি। কিন্তু ঈদোত খাবার জন্নে গোশত কিনব্যার পাই ন্যাই। ঈদের দিন মানসে কিচু গোশত দিচে, তাক খামো। হামার কসটো হোক, কিনতু ব্যাটা সাইকেলকোনা পায়্যা খুবি খুশি হচে। তাতেই হামি খুশি। কষ্ট হলেও ব্যাটাক আরও নেকাপড়া করামো।’

সাইকেল পেয়ে খুব খুশি রেজওয়ান। সাইকেল হাতে পেয়ে প্রথমেই বড় বোনের বাড়ি যায়, এরপর নানার বাড়ি। আজ ঈদের দিনেও সাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুর বেড়িয়েছে সে।
রেজওয়ান জানাল, তার জন্য বাবার ওই ত্যাগস্বীকার সে কখনো ভুলবে না। লেখাপড়া করে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় সে।

‘আমার বাবার মতো বাবা সবারই হোক। বাবাকে নিয়ে আমি গর্ববোধ করি।’ বলল ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হতে চাওয়া রেজওয়ান।

সূত্র: প্রথম আলো

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন দারিদ্র্যকে কেবল অর্থের অভাব বলে মনে করেন না। তাঁর মতে, দারিদ্র্য মানে এমন এক অবস্থা, ...
06/06/2025

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন দারিদ্র্যকে কেবল অর্থের অভাব বলে মনে করেন না। তাঁর মতে, দারিদ্র্য মানে এমন এক অবস্থা, যেখানে মানুষ নিজের সম্ভাবনাগুলো পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে না। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি যখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজ বা সামাজিক মর্যাদার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তখনই সে প্রকৃত অর্থে দরিদ্র।

অমর্ত্য সেনের ‘সক্ষমতা পদ্ধতি’ এই ভাবনার ভিত্তি। তিনি বলেন, মানুষকে শুধু টাকার জোরে সাহায্য করলেই দারিদ্র্য দূর হবে না; দরকার এমন পরিবেশ, যেখানে সে নিজের জীবনকে নিজের মতো করে গড়তে পারে।

বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ, যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ২৬%। অর্থাৎ, প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে একজন চরম দারিদ্র্যের শিকার।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতিদিন যার আয় ২.১৫ মার্কিন ডলার তাদের চরম দরিদ্র হিসেবে গণ্য করা হয় যা বাংলাদেশি টাকায় ২৫০ টাকা

প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন প্রতিটি মানুষ তার সম্ভাবনাকে বিকশিত করার পূর্ণ সুযোগ পায়।
(চলমান)
-রায়হান

Address

Padua
Chittagong

Telephone

+8801758321351

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Amirul Islam Rayhan posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Amirul Islam Rayhan:

Share