09/06/2025
কোনদিন কারুর গায়ে হাত তুলতেন না আমার এক শিক্ষক। সেই তিনিই একবার মেজাজ হারিয়ে একজন ছাত্রকে চড় মেরে বসেছিলেন। অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে স্কুল ছুটির পর তিনি নিজে সেই ছাত্রকে নিয়ে দোকানে গিয়ে মিষ্টি কিনে পাশে বসে খাইয়েছিলেন।
মনে পড়ছে আরো একজনের কথা, বাড়িতে সবসময় কয়েকটা বাড়তি ছাতা রাখতেন। বৃষ্টির দিনে প্রাইভেট পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের জনে জনে জিজ্ঞাসা করতেন ছাতা আছে কিনা। না থাকলে বলতেন, জানি বৃষ্টিতে ভিজতে তোদের ভালো লাগে, কিন্তু সময়টা ভালো না, ভিজিস না, ছাতাটা নিয়ে যা; সামনের দিন নিয়ে আসিস।
মফস্বলের এক অতি প্রবীণ মাস্টারমশাইকে তার রোগশয্যায় "কি করতে ইচ্ছে করছে" জিগ্যেস করায় প্রিয় ছাত্রের নাম করে বলেছিলেন, ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
স্কুলের বনভোজনে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া ছাত্রীর মাথার কাছে বসে রাত জেগেছিলেন যে স্যার কিংবা স্কুলের মাঠে খেলতে গিয়ে চোট পাওয়া ছাত্রকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়েছিলেন যে মাস্টারমশাই, তাদের তখন আলাদা আলাদা নাম ছিল হয়ত, কিন্তু আজ এতগুলো বছর পেরিয়ে এসে মনে হয় তাদের একটাই পরিচয় ছিল, সেটা হলো "শিক্ষক"। তারা বাংলা, ইতিহাস, ভূগোল, অঙ্ক, বিজ্ঞানের বাইরেও কি যেন একটা শিখিয়েছিলেন, সিলেবাসে যার হদিশ মেলেনি কোনোদিন।
বিশ্বাস করুন, সিলেবাসের মধ্যে আর সিলেবাসের বাইরের অনেক জিনিস শেখানোর ফাঁকে এক মুহূর্তের জন্যেও বুঝতে দেননি এটা তাদের জীবিকা। ছাত্রের কাছে হেরে গিয়ে যে শিক্ষক আনন্দে কেঁদে ফেলেন, কিংবা ছাত্রকে শাস্তি দিয়ে যে শিক্ষক নিজেই কষ্ট পান, শিক্ষকতা শুধুই তার জীবিকা হতে পারে না।
এত বছরে সিলেবাসের মধ্যের আর সিলেবাসের বাইরের যা কিছু শিখেছি যত জনের কাছ থেকে, তাদের সকলের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। যা কিছু শিখতে পারিনি তার দায় পুরোটাই আমার; তার জন্য যা শাস্তি প্রাপ্য মাথা পেতে নিতে রাজি আছি। শুধু একটাই অনুরোধ, বহুদিন আগে যে ছাতাটা দিয়েছিলেন সেটা ফেরত দিতে বলবেন না। আপনাদের দেওয়া ওই ছাতাটার আজও বড্ড দরকার - সময়ে এবং অসময়ে। শুধু ওই ছাতার আশ্রয় পেতেই সারাজীবন আপনাদের ছাত্র হয়ে থাকব।
©সংগৃহীত