25/08/2025
. 📚উপনিষদ্ রহস্য📚
'ধর্মে রহস্যুপনিষত্স্যাত্' 'ষদ্-লৃ বিশরণগত্যবসাদনেষু' ধাতু হইতে উপ তথা নি উপসর্গ পূর্বক ক্বিপ্ প্রত্যয় হয়ে উপনিষদ শব্দ নিষ্পন্ন হয়। যে বিদ্যা বা জ্ঞান দ্বারা ব্রহ্ম সাক্ষাৎকার করা যায়, তাহাকে উপনিষদ্ বলা হয়। উপনিষদের একটি অর্থ 'রহস্য'। উপনিষদ তথা ব্রহ্মবিদ্যা অত্যন্ত গূড় হওয়ায় খুব সহজেই উপলব্ধ হয়, অথ একে 'রহস্য' বলা হয়। উপনিষদে প্রায়ই ব্রহ্ম বিদ্যার প্রতিপাদন করা হইয়াছে, যার জন্য উপনিষদকে আধ্যাত্ম বিদ্যাও বলা হয়।
আধ্যাত্ম গগণের জাজ্বল্যমান নক্ষত্র হলো উপনিষদ্। উপনিষদ্ অধ্যয়নের ফলে আমাদের নিকট জ্ঞান প্রকাশিত হয়। উপনিষদ্ গম্ভীর অধ্যয়নের ফলে মনুষ্য নিজের প্রতি কঠোর তথা অপরের প্রতি উদার হয়ে যায়। এর দ্বারা শাশ্বত শান্তিলাভ হয়। উপনিষদ্ ব্রহ্মবিদ্যার মুলাধার হওয়ায় - শ্রবণ, মনন, নিদিধ্যাসন ও আত্ম সাক্ষাৎকারের উপর আধারিত। ব্রহ্মবিদ্যার জিজ্ঞাসু ব্রহ্মবেত্তা ঋষির সমীপে শ্রদ্ধার সহিত জিজ্ঞাসা হেতু যেতে থাকতেন।
উদাহরণার্থ : নচিকেতা যমাচার্যের নিকট ; সুকেশ, সত্যকাম, সৌর্যায়ণি, কৌসল্য, ভার্গব, কবন্ধী মহর্ষি পিপ্পলাদের নিকট ; শৌনক মহর্ষি অঙ্গিরার নিকট ; ভৃগু বরুণের নিকট ; দৃপ্তবালাকি অজাতশত্রুর নিকটে তথা জনক যাজ্ঞবল্ক্যের নিকটে গিয়ে ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্ত করেছে।
এখন পর্যন্ত প্রকাশিত উপনিষদের সংখ্যা ২৩৩টি, পরন্তু ১১টি উপনিষদকেই পণ্ডিতজন প্রামাণিক বলিয়া মান্যতা দিয়েছেন। সেই ১১ টি হল -
১.ঈশাবাস্যোপনিষদ্ : ঈশ্বরের সর্বব্যাপকত্ত্ব, ভোক্তার সৃষ্টিকৃত বস্তুর উপর কেবল প্রয়োগ অধিকার, অন্যের ধন আদি না নেওয়া, সকল কর্ম কর্তব্যকর্ম ভেবে করার এবং অন্তরাত্মার বিরুদ্ধে কার্য্য না করার উপদেশ করা হয়েছে।
২. কেন উপনিষদ্ : ব্রহ্মজ্ঞানের অর্থ কি? আমরা ঈশ্বরকে জানি এর অর্থ কি এরূপ ভিবিন্ন আধ্যাত্মিক বিষয়ক কথন প্রশ্নোত্তর শৈলীতে রয়েছে।
৩. কঠ উপনিষদ্ : যম এবং নচিকেতার আখ্যান দ্বারা ব্রহ্মের উপদেশ করা হয়েছে এই উপনিষদে।
৪. প্রশ্ন উপনিষদ্ : এই উপনিষদে পিপ্পলাদ মুনির নিকট সুকেশাদি মুনিদের দ্বারা প্রশ্নের উত্তররূপে - প্রাণ, অপান, ব্রহ্ম, সূক্ষ্ম শরীরাদির রহস্যাত্মক বর্নন রয়েছে।
৫. মুণ্ডক উপনিষদ্ : এই উপনিষদে সত্যের উপর অত্যধিক বল দেওয়া হয়েছে। এতে সৃষ্টি উৎপত্তির সিদ্ধান্তও রয়েছে।
৬. মাণ্ডূক্য উপনিষদ্ : সৃষ্টির অবস্থা দ্বারা পরমাত্মার বর্নন করা হয়েছে তথা ঈশ্বরের নিজ নাম ওম্ এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা রয়েছে।
৭. ঐতরেয় উপনিষদ্ : এই উপনিষদে ব্রহ্মবিদ্যার চর্চা রয়েছে যার অন্তর্গত আত্মা কিপ্রকারে গর্ভে এসে অবস্থান করে ইহার বর্নন করা হয়েছে। সৃষ্টি উৎপত্তি ও প্রলয় অবস্থার বর্ননও রয়েছে।
৮. তৈত্তিরীয় উপনিষদ্ : এই উপনিষদে ব্রহ্মবিদ্যার সহিত সাধ্যায়ের মহত্ত্ব নিয়েও বর্নন করা হয়েছে। যে শিক্ষা জিজ্ঞাসুদের জন্য আবশ্যক তাহার বর্নন করা হইয়াছে।
৯. শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ্ : জীব, প্রকৃতি এবং ঈশ্বরের অনাদিত্ত্বতা নিয়ে স্পষ্ট বর্নন করা হয়েছে।
১০ছান্দোগ্য উপনিষদ্ : এই উপনিষদে ব্রহ্ম, প্রকৃতি আদি বিভিন্ন বিষয়ের বর্নন রয়েছে।
১১. বৃহদারণ্যক উপনিষদ্ : এই উপনিষদ্ অন্যসকল উপনিষদ হইতে অধিক বড়। এতে ঈশ্বরের গুণ, কর্ম, স্বভাব তথা যাজ্ঞবল্ক্য ও মৈত্রেয়ী সংবাদের প্রকরণ রূপে জীবাত্মার স্বভাব নিয়েও বর্নন করা হয়েছে। শাকল্য এবং যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদে ৩৩ প্রকার দেবতার স্বরূপ বর্নন রয়েছে।
এছাড়াও এই উপনিষদ্ গ্রন্থাবলীতে বিবিধ বিষয়ে বিভিন্ন শৈলীতে বর্ননা করা হয়েছে।
©️অমৃতস্য পুত্রাঃ