15/04/2025
চীনের সহায়তায় ডিমলায় ১০০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ কেন উপযুক্ত হবে ? বিশদ যুক্তিসহ উপস্থাপন করলাম।
১. সরকারি খাসজমির প্রাপ্যতা , নির্মাণের প্রস্তুত পরিসর
✅ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর অধীনে ডিমলায় হাজার একরের বেশি খালি জমি রয়েছে।
✅ এই জমিতে হাসপাতালের পাশাপাশি নার্সিং ইনস্টিটিউট, মেডিকেল কলেজ, হেলিপ্যাড, অ্যাম্বুলেন্স লেন, রিসার্চ সেন্টার নির্মাণ করা সম্ভব।
✅সরকারি খাসজমি হওয়ায় জমির অধিগ্রহণে বাড়তি সময় বা খরচ লাগবে না।
২. প্রান্তিক চরাঞ্চল — স্বাস্থ্যসেবায় অবহেলিত জনগোষ্ঠী
✅ ডিমলা তিস্তা নদীঘেঁষা একটি চরাঞ্চল, যা ভাঙনপ্রবণ এবং স্বাস্থ্যসেবায় খুবই পিছিয়ে।
✅ হাসপাতালে সরাসরি সুবিধা পাবে চরবাসী, যারা সাধারণত চিকিৎসার জন্য দূর দূরান্তে যেতে বাধ্য হয়।
✅ একাধিক ইউনিয়নের হাজারো দরিদ্র মানুষ আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় আসবে।
৩. ভৌগোলিক অবস্থান — তিন জেলার সংযোগস্থল
✅ নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সংযোগস্থলে অবস্থান, যা হাসপাতালের সেবা এলাকা (Coverage Zone) বড় করে তুলবে।
✅ তিন জেলার রোগীরা কম দূরত্বে চিকিৎসা সুবিধা পাবে।
৪. নির্মাণবান্ধব এলাকা
✅ ডিমলার ভুমি সমতল ও জলবায়ুগত দিক থেকে স্থায়ী স্থাপনার জন্য উপযোগী।
✅ নদীর পাড়ে হওয়ায় "Nature-integrated Hospital" ডিজাইন বাস্তবায়ন সম্ভব, যা রোগীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য উপকারী।
৫. তিস্তা মহাপরিকল্পনার সঙ্গে সম্ভাব্য সংযুক্তি
তিস্তা মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাসপাতাল ভবিষ্যতে হতে পারে—
*স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্র (River Health Research),
*জলবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট,
*দুর্যোগকালে রেসপন্স সেন্টার।
৬. আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা
🛣️ সড়কপথ:
✅ ডিমলা(তিস্তাপাড়) থেকে জেলা শহর নীলফামারী, জলঢাকা, হাতিবান্ধা ও লালমনিরহাটে সরাসরি বাস চলে। ঢাকা সহ অন্যান্য জেলার বাস সংযুক্ত করা যাবে।
✅ হাসপাতালের পয়েন্ট থেকে জেলা মহাসড়ক বিদ্যমান — সহজে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল সম্ভব।
✅ বড়খাতা দিয়ে একটি এশিয়ান হাইওয়ে টাচ করেছে আবার পাগলাপীর থেকে একটি এশিয়ান হাইওয়ে টাচ করেছে।
🚂 রেলপথ:
✅ বড়খাতা স্টেশন থেকে ঢাকা, রংপুর, কুড়িগ্রামসহ ট্রেন চলাচল করে।
✅ ডোমার স্টেশন থেকে রাজশাহী ও দিনাজপুরের সাথেও সংযোগ আছে — রোগীদের সাশ্রয়ী যাতায়াত।
🛫 আকাশপথ:
✅ সৈয়দপুর বিমানবন্দর (৪৫-৫০ কিমি) দূরত্বে ,বিদেশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি দ্রুত পরিবহনযোগ্য।
🛥️ নৌপথ:
✅ বর্ষায় তিস্তা নদী ব্যবহার করে চরাঞ্চল থেকে সরাসরি নৌযোগাযোগ সম্ভব। স্থানীয় স্টিমার ও ফেরি ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা চর পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে। বিগত বছর গুলিতে নদী এলাকায় ছোট ছোট স্টিমার বিতরন করা হয়েছে। (নীলসাগর-১)
৭. ডিজিটাল কানেক্টিভিটি
✅ ডিমলায় 4G মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে, এবং ভবিষ্যতে 5G বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
✅ টেলিমেডিসিন, অনলাইন কনসালটেশন ও ডিজিটাল হেলথ রেকর্ড ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে।
৮. আন্তর্জাতিক সংযোগের সম্ভাবনা
✅ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ভুটান সীমান্ত ডিমলার নিকটে ভবিষ্যতে মেডিকেল ট্যুরিজম ও আন্তঃদেশীয় স্বাস্থ্যসেবা চালু করা সম্ভব। যেহেতু চিলাহাটি ও বুড়িমারী স্থলবন্দর নিকটবর্তী।
✅ আঞ্চলিক স্বাস্থ্য-সহযোগিতায় একটি কৌশলগত কেন্দ্র হতে পারে।
৯. নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা
✅ ডিমলা থানাসহ স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে — নিরাপত্তা দ্রুত নিশ্চিতযোগ্য।
✅ দোয়ানি ফাঁড়ি থানা কাছেই — প্রয়োজন হলে সীমান্ত নিরাপত্তাও দ্রুত মোতায়েন করা যাবে।
✅ বিজিবি’র তিস্তা ব্যাটালিয়নের উপস্থিতি হাসপাতালের নিরাপত্তায় বড় আশ্বাস।
✅ বিদেশি চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করা সহজ হবে।
১০. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতি
✅ ডিমলা, জলঢাকা ও হাতিবান্ধা তিনটা উপজেলার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে জরুরি সেবা দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব।
✅ হাসপাতাল দুর্ঘটনা বা অগ্নিকাণ্ডে দ্রুত প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে।
পরিশেষে বলা যায়,ডিমলায় ১০০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন শুধু একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান নয় ,এটি একটি আঞ্চলিক উন্নয়ন কেন্দ্র, একটি স্বাস্থ্যসেবা বিপ্লব, এবং একটি ভবিষ্যত রাষ্ট্রীয় কৌশলগত বিনিয়োগ। চীনের সহায়তা এ স্থাপনাটিকে আন্তর্জাতিক গুরুত্বের স্থানেও পৌঁছে দিতে পারে। এলাকার উন্নয়ন করতে হলে আওয়াজ তুলুন । শেয়ার করুন।
#আলমগীরহোসেন(সমাজকর্মী)