24/03/2025
ইউসুফ জুলেখার প্রেমের কাহিনি কারেই বা না জানা।আমিও জানতাম না কিছু বছর আগে, খুবই কোতুহলী হয়ে পড়া শুরু করলাম প্রেমের কিছু পাব বলে।কিন্তু যখন আমার পড়া শেষ হলো উপন্যাস, তখন প্রেমের উপন্যাস মনে হলো না তেমন। পুরো উপন্যাস এ অনেকগুলি লাইফ লেসন শিখলাম, তার মধ্যে আজকে আপনাদের একটা লেসন শেয়ার করলাম।
জুলেখা ইউসুফের সাথে সামনাসামনি সাক্ষাৎ হওয়ার আগে পুরো জীবনে তিন বার সপ্নে দেখে।প্রথম রাতে সে শুধু ইউসুফের দিকে তাকিয়েই ছিল, কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রথম রাতের সপ্নের শেষ হয়।জুলেখার পুরো দিন অস্থিরতার মধ্যে কাটলো, পরের দিন রাতে সে খুব তারাতাড়ি ঘুমিয়ে গেল, ইউসুফকে দেখার ইচ্ছা নিয়ে।অবশেষে ইউসুফ তার সপ্নে আসলো, সে প্রথম দিনের মতোই হতস্তব্দ হয়ে সে তাকিয়ে তাকলো ইউসুফের দিকে, কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই প্রথম দিনের মতোই সপ্ন ভেঙে গেল।পরের দিন সকালে জুলেখা নিস্তব্ধ হয়েই কাটালো, কারো কাথে কথা বলছেনা,খাওয়া-দাওয়া করছেনা।মনে শুধু একটা প্রশ্নই তাকে বার বার উঁকি দিচ্ছে কেন জিজ্ঞেস করলাম না তার নাম কি, বাড়ি কোথায়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, আজ যদি তাকে সপ্নে দেখি এই প্রশ্ন গুলো তাকে আমি করবোই।
তৃতীয় দিন রাতে সে দ্বিতীয় দিনের মতোই ঘুমাতে গেল, ঘুমের এক পযার্য় সে ইউসুফকে আবারো সপ্নে দেখে, সপ্নের শুরুতেই সে ইউসুফকে প্রশ্ন করে বসলো, হে সুশ্রী আজ তিন দিন আপনি আমার সপ্নে আসতেছেন, কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সপ্ন ভেঙে যাচ্ছে, দয়া করে বলুন আপনার নাম ঠিকানা পরিচয় কি? তখন ইউসুফ বললো, আমার নাম হচ্ছে ইউসুফ, আমি আজিজে মিসর (মিসরের বাদশা)।মিসরের প্রসাদে গেলই আমার দেখা তুমি পাবে।এতটুকু কথা শেষেই জুলেখা সপ্ন ভেঙে গেল।
পরবর্তীতে ইউসুফকে সাক্ষাৎ এর আশাই, তার বাবাকে পাঠাল মিসরের বাদশার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, প্রথমে বাবা রাজি হননি কিন্তু পরে অটেল ধনকুবের একমাত্র মেয়ে হওয়ায়, মেয়ের কথা পেলতে পারেননি বাবা।নির্লজ্জ বেহায়ার মত বাবা মিসরে গেল, বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে মিসরের বাদশা কাছে।সব কিছু শুনার পর বাদশা কঠিন একটা শর্ত দিল, আপনার কথা মতে আপনার মেয়ে সুন্দরী হয়ে থাকে আমি তাকে বিয়ে করতে রাজি, কিন্তু আপনার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য আমি আপনার দেশে যাব না, আপনারকেই মেয়েকে নিয়ে মিসর আসতে হবে এবং আপনার কথা মত যদি মেয়ে সুন্দরী না হয় তাহলে আপনাদের দুজনকেই আপনার দেশে ফিরে যেতে হবে।
বাদশা কঠিন শর্ত নিয়ে বাবা দেশে ফেরত আসলো এবং মেয়েকে সব কিছু বলল।তখন জুলেখা বাবাকে বলল, যেহেতু আব্বা এইটা আমার জীবন মরনের কথা আমি এই কঠিন শর্তেও রাজি কিন্তু সমস্যা বাবার, বাবা বলল যদি বাদশা কোন কারনে তোমাকে বিয়ে না করে তাহলে আমি সমাজের কাছে মুখ দেখাবো কি করে।এই বলে বাবা তার সাথে যেতে রাজি হলো না এবং বলল যেহেতু তোমার জীবন মরনের বিষয়, তুমি তোমার সখিকে (জুলেখার সেবিকা) নিয়ে মিসর চলে যাও।
পরদিন সকালে জুলেখা তার সখিকে নিয়ে মিসর রওনা দেয়।মিসর যাওয়ার পর জুলেখা যখন বাদশা প্রসাদে সামনে যায়, জুলেখার চোখ যখন বাদশার চোখের দিকে পড়ে আর বাদশার চোখ যখন জুলেখার চোখের দিকে পড়ে নিস্তব্ধ প্রসাদ কম্পন শুরু করলো।জুলেখা তার সখিকে বলল এইটা তো আমার সপ্নে দেখা যুবক নয়।কিন্তু ইউসুফ (আ:) বাস্তবিক পক্ষে মিসরের সিংহাসনে থাকার কথাও নয়, ইউসুফ (আ:) তখন কেনানের কুপে জিবরাঈল (আ;) খুশ গল্প করছে।জুলেখা ইউসুফকে সপ্নে দেখেছিল প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় কিন্তু ইউসুফ (আ:) এর বয়স ছিল তখন সবে মাত্র এগারো বছর। ইউসুফ (আ :) ভাইয়েরা চক্রান্ত করে কেনানের কুপে ফেলে দিয়েছিল ইউসুফকে।অন্যদিকে বাদশা চিন্তা করল এমন সুশ্রী সুন্দরী যুবতী আমি আমার জীবনে দেখিনি, যদি তাকে পাওয়ার জন্য আমার পুরো বাদশাহি দিতে হয় তাও আমি দিতাম এই বলে বাদশা জুলেখার দিকে আসতে লাগলো, প্রতিমধ্যে সখি জুলেখাকে বলল বাদশা তোমার দিকে আসতেছে, জুলেখা সখিকে বলল হায় আফসোস আমি বরবাদ হয়ে গেলাম এখন আমার কি হবে।তখন সখি জুলেখা উদ্দেশ্য বলতেছে, যেহেতু সপ্নে দেখা বন্ধু যখন তোমাকে মিসরের বাদশার কথা বলেছে, হয় সে মিসরের বাদশা হবে পরবর্তীতে। এখন যদি তুমি তাকে বিয়ে না করে মিসর ছেড়ে চলে যাও তো জীবনের আর তোমার বন্ধুর দেখা পাবে না। আর যদি তাকে বিয়ে করে মিসর থেকে যাও হয়ত তোমার বন্ধুর সাথে তোমার দেখা হতেও পারে।
চলবে.........
মুন্না....🖋️🖋️