24/10/2023
🙏☸️ ত্রিশরণ কাকে বলে? ত্রিশরণের উৎপত্তি? ত্রিশরণে প্রতিষ্ঠিত কাকে বলে? ত্রিশরণ ভঙ্গের কারণ কি? ত্রিশরণের প্রকারভেদ। ত্রিশরণ গ্রহণের ফল ইত্যাদি বিষয়ে অনেকে জানেন না, তাই অনেক দায়ক-দায়িকা, উপাসক-উপাসিকা এমনকি ভিক্ষু-শ্রামণও ত্রিশরণ ভঙ্গ করে থাকে। সকলের সুবিধার্থে এখানে কিছুটা সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরলাম।
#ত্রিশরণ
(উৎপত্তিকথা)
ত্রিশরণ বলতে বুদ্ধরত্ন, ধর্মরত্ব ও সঙ্ঘরত্ন এই ত্রিরত্নের শরণ বা আশ্রয় গ্রহণকে বুঝায়। ত্রিশরণ গ্রহণ, বুদ্ধের ধর্মগ্রহণের একটি “বীজমন্ত্র” স্বরূপ। ত্রিশরণ গ্রহণ দ্বারাই বুদ্ধের ধর্মে প্রবেশ করতে হয়। এ ত্রিশরণ গ্রহণের অর্থ হচ্ছে, স্বীয় জীবনকে বিমুক্তি লাভের অনুকূলে নিয়ন্ত্রণ। ত্রিশরণ কোনো ঋষি, শ্রাবক, শ্রামণ, ব্রাহ্মণ কিংবা কোনো দেবতা ব্রহ্মার প্রদত্ত নয়; এই ত্রিশরণ স্বয়ং ত্রিলোকদর্শী ভগবান সম্যক সম্বুদ্ধেরই প্রজ্ঞাপিত শরণ বা আশ্রয় ।
শাক্যমুনি গৌতম, বুদ্ধত্ব লাভের পর কয়েক সপ্তাহকাল বজ্রাসনের আশেপাশে ধ্যানসুখে অতিবাহিত করে যখন ধ্যান হতে উঠলেন, তখন “তপস্সু-ভল্লিক” নামক দুজন উৎকল বা উরিষ্যা (মতান্তরে ব্রহ্ম) দেশীয় বণিক বুদ্ধকে ছাতু ও মধুপিণ্ড (ঘৃত, মধু ও গুড় সংমিশ্রিত শক্ত লাড্ডু) দান করে অভিবাদন পূর্বক- “বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি, ধম্মং সরণং গচ্ছামি” উচ্চারণ করে বুদ্ধ ও ধর্মের শরণ গ্রহণ করলেন। এই বণিকদ্বয় বৌদ্ধসাহিত্যে “দ্বিবাচিক উপাসক” নামে পরিচিত। তখনও সংঘ প্রতিষ্ঠা হয়নি বলে তাঁরা ত্রিশরণের পরিবর্তে দ্বিশরণ গ্রহণ করেছিলেন। অতপর বুদ্ধ বারাণসী ঋষিপতন মৃগদাবে গিয়ে পাঁচজন ব্রাহ্মণ তাপসকে (যাঁরা বুদ্ধের কঠিন তপস্যার সময় প্রাণঢালা সেবা করেছিলেন) নবলব্ধ বুদ্ধ-জ্ঞান “ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র” দেশনা করলেন। তাঁরা বুদ্ধের সেই সুমধুর উপদেশ শুনে অচিরেই অর্হত্ত্ব-মার্গ ফলে উপনীত হলেন এবং ভিক্ষুত্বও লাভ করলেন। এই পাঁচজন ভিক্ষু বৌদ্ধ ইতিহাসে “পঞ্চবর্গীয় শিষ্য" (কোল্ডাঞো, বম্প, ভদ্রিয়, মহানাম ও অশ্বজিৎ) নামে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তারপর যশঃ নামক বারাণসীর জৈনক শ্রেষ্ঠীপুত্র বুদ্ধের কাছে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা গ্রহণ করে তিনিও অর্হত্ত্ব-ফলে প্রতিষ্ঠিত হলেন। এই শুভ সংবাদ শুনে যশের ৫৪ জন হিতৈষী বন্ধু তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন। তাঁরাও বুদ্ধের কাছে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা গ্রহণ করে অচিরে সকলেই অর্হত্ব মার্গফল সাক্ষাৎ করলেন। যশের পিতা এই সংবাদ শুনে ছুটে গেলেন বুদ্ধের কাছে বারাণসী ঋষিপতন মৃগদাবে। তিনি বুদ্ধের অমৃতময় ধর্মবাণী শুনে “বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি, ধম্মং সরণং গচ্ছামি, সঙ্ঘং সরণং গচ্ছামি” উচ্চারণ করে ত্রিশরণ গ্রহণ করলেন। তিনিই সর্ব প্রথম ত্রিশরণ উচ্চারণ করে ত্রিপিটকের পাতায় প্রথম “ত্রিবাচিক উপাসক”-রূপে প্রখ্যাত হলেন। অতি স্বল্পতম সময়ে পঞ্চবর্গীয় শিষ্য, যশ, যশের ৫৪ জন বন্ধু ও বুদ্ধপ্রমুখ জগতে ৬১ জন অর্হত্ব ফলে প্রতিষ্ঠিত হলেন। তখন বর্ষাব্রত সমাপনের পর বুদ্ধ তাঁর ধর্মে দীক্ষিত অর্হৎ ভিক্ষু শিষ্যগণকে আহ্বান করে বললেন– "হে ভিক্ষুগণ! বহুজনের হিতের জন্য এবং বহুজনের সুখের জন্য তোমরা দিকে দিকে বিচরণ করো। জগতের প্রতি অনুকম্পাপরবশ হয়ে দেব-মনুষ্যের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের জন্য তোমরা দেশ-দেশান্তরে বিচরণ করো। কিন্তু এক পথে দুজন যাবে না। হে ভিক্ষুগণ! তোমরা পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ ব্রহ্মচর্য প্রদর্শন করে অর্থযুক্ত ও ব্যঞ্জনযুক্ত ধর্মদেশনা করো; যে ধর্মের আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ এবং অন্তে কল্যাণ সাধন হয়ে থাকে, সে ধর্ম জন-সমাজে প্রচার করো। এ প্রসঙ্গে বুদ্ধ আরও বলেন- যাঁরা প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা প্রার্থী তাঁদেরকে প্রথমে ত্রিশরণ গ্রহণ করিয়ে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা প্রদান করবে। তখন থেকে এই ত্রিশরণের উৎপত্তি হয়।
বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত ত্রিশরণাপন্ন ব্যক্তিই পাপ-পঙ্ক হতে উদ্ধার হয়ে আর্যসত্যের সন্ধান লাভ করতে পারে। সেজন্য বলা হয়েছে;
যো চ বুদ্ধঞ্চ ধৰ্ম্মঞ্চ, সঙ্ঘঞ্চ সরণং গতো;
চত্তারি অরিয সচ্চানি সম্মপঞঞায পস্সতি।
এতং খো সরণং খেমং এতং সরণং মুত্তমং, এতং সরণং মাগম্ম সব্বদুক্খা পদ্ধতি।
অর্থাৎ যে ব্যক্তি বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের শরণাপন্ন হয়, চারি আর্য-সত্য সম্যক জ্ঞানের সাথে দর্শন করেন, এটাই তাঁর পক্ষে নিরাপদ আশ্রয়, উত্তম আশ্রয়। এই আশ্রয় অবলম্বন করলে, সকল দুঃখ হতে প্রমুক্ত হওয়া যায়। এজন্য ত্রিশরণের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। শরণ-গমনরূপ মার্গ দিয়েই দেব-মনুষ্যেগণের উপাসকত্ব লাভ, প্রব্রজ্যা গ্রহণ এবং বৃদ্ধশাসনে প্রবেশের মার্গস্বরূপ প্রধান উপায়।
#শরণে_প্রতিষ্ঠিত
ত্রিরত্নের প্রতি যাঁর ভক্তি অচলা, যিনি ত্রিরত্ন হতে অন্য কোনো দেব-ব্রহ্মাকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন না, ত্রিরত্নের গুণ মহিমা যিনি নিয়ত চিন্তা করেন, এমন দৃঢ় চিত্তসম্পন্ন ব্যক্তিকেই প্রকৃত শরণে প্রতিষ্ঠিত বলা যায়। যিনি শরণে প্রতিষ্ঠিত তিনি ত্রিরত্ন ব্যতীত অন্য কাউকেও পূজা করবেন তা কল্পনাতীত। বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের গুণ যাঁর হৃদয় কন্দরে প্রবেশ করবে, তিনি অন্যের গুণে মোহিত হতে পারেন এটা একান্তই অসম্ভব। অর্থাৎ মিথ্যাদৃষ্টি প্রসূত তন্ত্র-মন্ত্র ও পূজাদি বিষয় তাঁর অন্তরে কখনো স্থান পেতে পারে না।
্গের_কারণ
মানবগণের উৎপন্ন ভয় অপনোদন ও অপায়-দুঃখ বিনাশ করতে “ভগবান সর্বজ্ঞ সম্যক সম্বুদ্ধ হতে অধিকতর সমর্থবান শাস্তা অন্য ধর্মেও আছেন এবং অমুক অমুক দেবতা বা ব্রহ্মা আছেন” এরূপ বিভ্রান্তিমূলক ধারণার বশবর্তী হয়ে তাদেরকে আত্মসমৰ্পণ, অভিবাদন, পূজা-সৎকারাদি করা; সুগত দেশিত নবলোকুত্তর ধর্ম হতে অন্য শ্রেষ্ঠ ধর্ম আছে; সুপ্রতিপন্নাদি নবগুণ সম্পন্ন অষ্ট আর্যপুদ্গাল তথা সঙ্ঘরত্ন হতেও অধিক সৎগুণশালী দাক্ষিণ্যেয় অন্য ধর্মে আছেন ইত্যাদি ধারণা করে ভ্রান্তবিশ্বাসী (মিথ্যাদৃষ্টি) হয়ে অভিবাদন, আত্মসমর্পন ও পূজা-সৎকারাদি করলে ত্রিশরণ ভঙ্গ হয়।
#শরণের_প্রকারভেদ
শরণ প্রধানত দ্বিবিধ : লৌকিক ও লোকোত্তর। পৃথকজনের শরণ লৌকিক। এই লৌকিক শরণ যে-কোনো মূহূর্তে ভঙ্গ হতে পারে। রত্নত্রয়ের সারগর্ভতা না জেনে তৎসম্বন্ধে সন্দেহসূচক মিথ্যাজ্ঞান মিথ্যাবিতর্ক ও মিথ্যা কল্পনাদির দ্বারা লৌকিক শরণাগমন ক্লিষ্ট বা দূষিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ লৌকিক শরণপরায়ণ কোনো ব্যক্তি সম্যক সম্বুদ্ধ হতে শ্রেষ্ঠ কোনো দেবতা বা ব্রহ্মার অস্তিত্ব স্বীকার করলে অথবা কর্মফল অস্বীকার করে অন্য কোনো দেবতা বা ব্রহ্মা মোক্ষ প্রদানের সমর্থ বলে বিশ্বাস বা স্বীকার করলে শরণাগমন ভঙ্গ হয়। লৌকিক শরণ শ্রেণিভেদে চারি ভাগে বিভক্ত। যথা : ১. অত্তসন্নিযাতনেন, ২. তপ্পরাযণতায, ৩. সিস্সভাবুপগমনেন ও ৪. প্রণিপাতেন।
১. অত্তসন্নিযাতনেন : আত্মসমর্পণ। আমি আজ থেকে নিজেকে ত্রিরত্ন পূজার জন্য উৎসর্গ করছি বা আমি আজ থেকে নিজেকে বুদ্ধরত্ন, ধর্মরত্ন ও সঙ্ঘারত্ন- এ রত্নত্রয়ের উদ্দেশ্যে আত্মসমর্পণ করছি। এ প্রকারে শরণ গ্রহণকে “আত্মসমর্পণ শরণ” বলা হয়। পুনশ্চ, ভগবানের উদ্দেশ্যে নিজকে পরিত্যাগ করছি, জীবনদান করছি, বুদ্ধই আমার আশ্রয় মূল, বুদ্ধই আমার ত্রাণকর্তা, আমি নিয়ত বুদ্ধপরায়ণ। এরূপ ধারণাযুক্ত শরণগ্রহণ করাকে “আত্মসমর্পণ শরণ" বলা হয়।
২. তপ্পরাযণতায : তৎপরায়ণ। আজ থেকে আমি ত্রিরত্নে মগ্ন হলাম, আমি ত্রিরত্ন হতে পৃথক হবো না এবং আজীবন শ্রেষ্ঠ শরণরূপে ত্রিরত্নকে গ্রহণ করলাম। এরূপ শরণ “তৎপরায়ণশরণ" নামে অভিহিত। আবার, আজ থেকে আমি ত্রিরত্বপরায়ণ হচ্ছি, আমাকে ত্রিরত্নপরায়ণ বলে মনে করুন। এ প্রকারে শরণ গ্রহণকেও “তৎপরায়ণশরণ” বলা হয়। পুনশ্চ, আলবক যক্ষাদির শরণ গ্রহণের মতো আমি সম্যক সম্বুদ্ধ ও ধর্মের উত্তর ধর্মতাকে নমস্কার করতে করতে গ্রাম হতে গ্রামান্তরে, নগর হতে নগরান্তরে বিচরণ করবো। এরূপ শরণ গ্রহণকে “তৎপরায়ণশরণ” বলা হয়।
৩. সিস্সভাবুপগমনেন : শিষ্যভাব প্রাপ্তি শরণ। আজ থেকে আমি বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করছি, ধর্মের শিষ্যত্ব গ্রহণ করছি ও সঙ্ঘের শিষ্যত্ব গ্রহণ করছি। আমাকে একান্ত ত্রিরত্নের শরণাগত শিযা বলে ধারণা করুন। এভাবে শরণগ্রহণ করাকে “শিষ্যভাব প্রাপ্তি শরণ” বলা হয় । পুনশ্চ, মহাকাশ্যপ স্থবিরের মতো আজ হতে আমিও বুদ্ধাদি রত্নত্রয়ের শিষ্য হলাম। অর্থাৎ শ্রদ্ধা প্রযুক্ত চিত্তে জীবনের শেষ সীমা পর্যন্ত ত্রিরত্নের শিষ্যত্ব গ্রহণ করা। এ প্রকারে সর্বান্তঃকরণে ভগবৎ চরণে আত্মনিবেদন করার নামই "শিষ্যভাব প্রাপ্তি শরণ"।
৪. প্রণিপাতেন : প্ৰণিপাত। আমি আজ হতে বৃদ্ধাদি রত্নত্রয়কে অভিবাদন, প্রভ্যূত্থান, অঞ্জলিকর্ম ও সমীচিনকর্ম করবো। আমাকে ত্রিরত্ন পূজক বলে ধারণা করুন। এরূপে বুদ্ধাদির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাপরায়ণ হয়ে উক্ত চার প্রকার কার্যের মধ্যে যে-কোনোটি করলে “প্রণিপাতশরণ" গৃহীত হয়; বা “প্রণিপাতশরণ” বলা হয়। পুনশ্চ, একসময় ব্রাহ্মায়ু ব্রাহ্মণ ভগবানের শরণগ্রহণ করতে গিয়ে ভগবানের পদদ্বয়ে নিপতিত হয়ে পদযুগল চুম্বন করেছিলেন ও হাতের দ্বারা মর্দন করেছিলেন। আবার ভগবৎ গৌতম "আমি ব্ৰাহ্মণ ব্রাহ্মায়ু, আমি ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মায়ু বলে নিজের নাম জ্ঞাপন করেছিলেন। এ প্রকারে শরণগ্রহণ করাকে "প্রণিপাতশরণ" বলিয়া অবিহিত হইয়াছে।
#লোকোত্তর_শরণ : আর্যগণের শরণ লোকোত্তর। লোকোত্তর শরণ ভঙ্গ হয় না; ভঙ্গ হওয়ার কারণও বিদ্যমান থাকে না। যেহেতু লোকোত্তর শরণসম্পন্ন আর্যশ্রাবক জীবনান্তেও অন্য শান্তার শরণাগত হন না। লোকোত্তর শরণ গ্রহণ সম্যক প্রকারে চতুরার্য সত্য অববোধকারীদের আর্যমার্গ লাভ ক্ষণে শরণ ভঙ্গের যা উপক্লেশ আছে, তৎসমস্ত প্রহীন হয়ে যায়। তখন তাঁর একমাত্র নির্বাণই লক্ষ্য হয়ে থাকে আর তাঁরা ত্রিরত্নের প্রতি অচলা শ্রদ্ধাসম্পন্ন ও অবিচলিত প্রসাদসম্পন্ন হন।
শ্রামণাফল সূত্র বর্ণনায় উক্ত হইয়াছে, আবার কূটদন্ত সূত্র বর্ণনায়ও বলা হয়েছে, আর্যশ্রাবক জন্মান্তর লাভ করা পর্যন্ত; প্রাণিহত্যা ও সূরা পান করেন না। এমনকি স্বীয় জীবন রক্ষার জন্যও তা লঙ্ঘন করেন না। সূরা এবং দুধ মিশ্রিত করে মুখে দিলে দুধমাত্র আর্যশ্রাবকের মুখে প্রবেশ করে থাকে, সূরা প্রবেশ করে না। হংসকে যেমন জলমিশ্রিত দুধ দিলে জলবিহীন দুধমাত্র পান করে থাকে। তদ্রূপ আর্যশ্রাবকগণও সূরাবিহীন দুধমাত্র পান করে থাকেন। এটা আর্যধর্মের স্বভাবসিদ্ধ গুণবিশেষ।
#মূল : শরণগমন_বিধি
বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি।
ধম্মং সরণং গচ্ছামি।
সঙ্ঘং সরণং গচ্ছামি।
দুতিযম্পি বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি।
দুতিযম্পি ধম্মং সরণং গচ্ছামি।
দুতিযম্পি সঙ্ঘং সরণং গচ্ছামি।
ততিযম্পি বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি।
ততিযম্পি ধম্মং সরণং গচ্ছামি।
ততিযম্পি সঙ্ঘং সরণং গচ্ছামি।
#অনুবাদ :
বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করছি।
ধর্মের শরণ গ্রহণ করছি।
সঙ্ঘের শরণ গ্রহণ করছি।
দ্বিতীয় বার বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করছি।
দ্বিতীয় বার ধর্মের শরণ গ্রহণ করছি।
দ্বিতীয় বার সঙ্ঘের শরণ গ্রহণ করছি।
তৃতীয় বার বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করছি।
তৃতীয় বার ধর্মের শরণ গ্রহণ করছি।
তৃতীয় বার সঙ্ঘের শরণ গ্রহণ করছি।
#ত্রিশরণ_গ্রহণের_ফল
অনেকে ত্রিশরণ আবৃত্তি করেন। কিন্তু শরণ গ্রহণের ফল কি তা বোধ হয় অনেকে জানেন না। এজন্য এখানে ত্রিশরণের ফল বর্ণনা করা উচিত মনে করছি :
১. চারি শ্রামণ্যফল (স্রোতাপত্তি মার্গফল, সকৃদাগামী মার্গফল, অনাগামী মার্গফল ও অর্হত্ত্ব মার্গফল) সমস্ত দুঃখ ক্ষয়কারী লোকোত্তর শরণ গমনের ফল। লৌকিক শরণ গমনের ফল ভবসম্পত্তি লাভ। সেজন্য বলা হয়েছে,
“যে কেচি বুদ্ধং ধম্মং সঙ্ঘং সরণং গতাসে, ন তে গমিস্সন্তি অপামং ভূমিং
পহায মানুসং দেহং দেবকায়ং পরিপূরেস্সন্তি'।
অর্থাৎ যে-কেউ বুদ্ধ-ধর্ম-সংঘের শরণাপন্ন হয়, তাঁরা অপায়ে (তির্যক, অসুর, প্রেত ও নরক) গমন করেন না। মনুষ্য দেহ ত্যাগ করে তাঁরা দেবলোক পরিপূর্ণ করেন।
২. ত্রিশরণ গ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে অঙ্গুত্তর নিকায়ের বেলামসূত্রে ও দীর্ঘনিকায়ের কুটদন্ত সূত্রে এরূপ বলা হয়েছে, জম্বুদ্বীপের একপ্রাপ্ত হতে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত যদি আর্যপুদ্গলগণকে বসানো হয়, সেখানে থাকবেন স্রোতাপন্ন দশ লাইন, সকৃদাগামী পাঁচ লাইন, অনাগামী সাড়ে তিন লাইন, অর্থৎ আড়াই লাইন, পচ্চেক বুদ্ধ এক লাইন এবং একজন সম্যক সম্বুদ্ধ।
একজন অর্হৎকে দান দেওয়ার চেয়ে একজন সম্যক সম্বুদ্ধকে দান দেওয়া অত্যধিক পুণ্য। সম্যক সম্বুদ্ধকে প্রদত্ত দানের পুণ্য হতে উপরি-উক্ত সম্যক সম্বুদ্ধপ্রমুখ আর্যপুদ্গল ভিক্ষুসংঘকে দান দিলে সেই দানের ফল মহাফলদায়ক। তার চেয়ে অধিক ফল লাভ হয় একটি ধাতুচৈত্য নির্মাণ করলে। ধর্মশ্রবণে আরও অধিক ফল। তার চেয়েও অধিক ফল লাভ হয় চতুর্দিক আগতানাগত ভিক্ষুসংঘের উদ্দেশ্যে অন্তত চারহাত পরিমিত একটি পর্ণশালারূপ বিহারনির্মাণ করে দান করলে।
ত্রিরত্নের শরণ গ্রহণ বিহার দান হতেও অধিকতর ফলদায়ক। শরণাগমন ও শীলের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েই শীলপালন করতে হয়। সেজন্য শীল হতে শরণাগমন শ্রেষ্ঠ। সেই শরণ কীরূপ হতে হবে? ত্রিরত্নের উদ্দেশ্যে জীবন সমর্পন করে শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম শরণ। তাই বুদ্ধ বন্দনায় বলা হইয়াছে, “বুদ্ধং জীবিত যেব মহাপরিনির্ব্বাণ পরিযত্তাং সরণং গচ্ছামি। নথিমে সরণং অঞং বুদ্ধো মে সরণং বরং। ধম্মং সঙ্ঘং........... ইত্যাদি।”
৩. রাজা মহানাম শাক্যের পাঠরাণী শশীপ্রভা। শশীপ্রভার ছিল একজন দাসী। নাম তার রোহিকা। বড়ই অনুগতা, দক্ষা, নিরলসা, সুব্রতা, বিনীতা, ভদ্রা এই দাসী। শশীপ্রতা ছিলেন রূপ-লাবণ্যে অদ্বিতীয়া। রাজার প্রধানা মহিষী বলে তার অভিমানও কম ছিল না। তিনি দাসীকে কত উৎপীড়ন, নিপীড়ন, নিন্দা, তিরস্কার, গালি, ভৎর্সনা করতেন; কিন্তু দাসী তা নীরবেই সহ্য করতো। একসময় রাজ্ঞী শশীপ্রভা দাসীসহ ধর্মশ্রবণের জন্য বিহারে গমন করলেন। সেখানে চারি পরিষদে ভগবান তথাগত বুদ্ধ-লীলায় নৈর্বানিক ধর্মের নিগূঢ় তত্ত্ব পরিবেশন করছিলেন। শ্রোতাগণও তা একাগ্রমনে শুনছিলেন। তৎমধ্যে দাসী রোহিকার মনোযোগটা ছিল সর্বাধিক। সে অতি তন্ময় হয়ে ধর্মের অমৃতবাণী শুনছিল। কোনো দিকে তার ভূক্ষেপ ছিল না। সে অপলক দৃষ্টিতে অমৃতবারি তীর্থে অবগাহন করছিল। এমন সময় তাকে অপ্রত্যাশিতভাবে শশীপ্রভার মুক্তার হারটি আনার জন্যে সভাস্থল ত্যাগ করে যেতে হয়। কারণ দাসী জীবন উপায় নেই। প্রভু পত্নীর কথা পালন করতে হবে। নতুবা আদেশ লঙ্ঘনে শিরচ্ছেদ। অগত্যা সে প্রভু-পত্নীর আদেশ পালন করতে গিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করলো। কিন্তু মহান বুদ্ধের অনন্ত গুণানুস্মরণ এবং ত্রিরত্নের প্রতি প্রগাঢ়চিত্ত প্ৰসা সম্পন্ন হয়ে ধীর পদক্ষেপে মন্থরগতিতে চলতে লাগলো রোহিকা। তখন অকস্মাৎসে এক তরুনা সবৎসা গাভী দ্বারা আক্রান্ত হয়। অতর্কিত আক্রমনে রোহিকা আত্মরক্ষার উপায় ছিল না। তখনো সে তনয় হয়ে ত্রিরত্নের মহান গুণাবলী স্মরণ করতে করতে সেই অবস্থাতেই তার প্রাণবিয়োগ ঘটিল এবং প্রাণ বিয়োগান্তে তার জন্ম লাভ হলো ধর্মরাজ্য সিংহলে রাজকন্যা “মুক্তালতা"রূপে। ত্রিরত্নের প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধাহেতু তার জীবনের মোড় ফিরে গিয়ে দাসী জীবনের অবসান ঘটল। শাস্ত্রেও বলা হইয়াছে,
চলমান.....
সংগৃহীত পোস্ট.....☸️🙏
☸️ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক ☸️........…...........................................
#ত্রিশরণ #রাজবন_বিহার #রাজবনবিহার #রাঙ্গামাটি